Recent Tube

বাবা কে নিয়ে বাস্তবতা সম্পন্ন এক আবেগঘন লিখনি যা প্রবন্ধ কিংবা কলাম যাই বলিনা কেন নেক সন্তানের সাক্ষ্যই এখানে ফুটে উঠেছে!



আমার দেখা বাংলাদেশে একজন #হযরত_ওমর
যিনি শির্ক বেদায়াতে কঠোর সোচ্চার চিলেন।
গত কাল ০৯/৭/২৫ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
আজ আমাদের পরিবারের সবচেয়ে উজ্জ্বল তাঁরকা কে কবরের গহীন অন্ধকারে মাকফুন করে আসলাম!

আব্বা র জন্ম ২ রা জানুয়ারি ১৯৫৬ খৃষ্টাব্দ। প্রিয় দাদা-দাদুর ঘর আলোকিত করে তাদের প্রথম পুত্র সন্তান পৃথিবীতে আসেন আজ থেকে প্রায় ৭১ বছর পূর্বে। শৈশবের দুরন্তপনা পার করে আব্বা কৈশরে পা রাখলেন। একে একে আরও ৭ জন ভাই-বোনের সমাহার হলো। বিশাল পরিবার। এদিকে প্রিয় দাদার জীবনের পড়ন্ত বিকেল। আব্বার কাঁধে সেই কৈশরে পুরো পরিবারের দায়িত্ব চাপে। তিনি ভয় পান নি। শক্ত হাতে হাল ধরেছিলেন। ভাইদের তিনি ভাই ভাবতেন না। ভাবতেন সন্তানতূল্য স্নেহাশিস। শাসন করতেন। প্রাণ ভরে সবার কল্যাণের জন্য নিজের সর্বোচ্চ বিলিয়ে দিতেন। স্বার্থপরতা আমার আব্বার জীবনের ডিকশনারিতে ছিলো না আলহামদুলিল্লাহ। অকাতরে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছেন জীবনভর।

শিক্ষা জীবনে আব্বা ছিলেন তুখোড় মেধাবী, আত্নপ্রত্যয়ী এবং দৃঢ় মনোবলের অধিকারী। তিনি ১৯৭০ সালে ঘিলাছড়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। তারপর ঢাকার তেঁজগাঁও কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে এডমিশন নেন। বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারনে পরে কুলাউড়া কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। এর পর সিলেট ল কলেজে কিছুদিন পড়াশুনা করেন, পরবর্তীতে কিছুদিন হোমিওপ্যাথিক ডিএইচএমএস কোর্স করেন। তারপর সিলেট মদন মোহন কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করেন।

আব্বা ১৯৮১ সালে প্রথম আদালত প্রঙ্গনে চাকুরীজীবন শুরু করেন। একাধারে জকিগঞ্জ, হবিগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট এবং সবশেষে সিলেট জেলা জজ আদালতের সম্মানিত সেরেস্তাদার হিসেবে যোগ্যতার সাথে দায়িত্ব পালন করে ২০১৫ সালে চাকুরী থেকে অবসর গ্রহন করেন।

পারিবারিক পরিমন্ডলে আব্বা ছিলেন একজন আন্তরিক শিক্ষাগুরু। আমাদের বৃহত্তর পরিবারের সকল ভাইবোনদের ইসলামী শিক্ষার হাতেখড়ি আব্বার হাতে। আব্বা প্রতি সন্ধ্যায় আমাদের বাড়িতে ইসলামী শিক্ষার আসর বসাতেন। সূরা মুখস্ত করাতেন। দোয়া দুরুদ শিক্ষা দিতেন। নৈতিকতা, সাহসীকতার সবক দিতেন। প্রত্যয় যোগাতেন।

সামাজিক পরিমন্ডলে আব্বা ছিলেন একজন দায়িত্বশীল, দৃঢ়চেতা, সমাজনেতা। সামাজিক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগে আব্বা অগ্রণী ভূমিকা পালন করতেন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে সচেষ্ট থাকতেন। ইসলামী শিক্ষা-সংষ্কৃতির প্রসারে মসজিদভিত্তিক বিভিন্ন এক্টিভিটিতে নেতৃত্ব দিতেন। উদ্যোগ নিতেন। আব্বার শেষ মসজিদ কেন্দ্রিক তৎপরতা ছিলো একটি মসজিদ নির্মাণ। যেই মসজিদে আজ উনার নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হলো। আলহামদুলিল্লাহ। আমার আব্বা সফল।

আব্বার সিমীত আর্নিং কখনও তার মনকে এতোটুকু ছোট করে দেয়নি। উনার হৃদয়টা ছিলো ধন দৌলতে ভরপুর, স্বচ্ছ, শক্তিশালী। আমরা চার ভাই এক বোনের সংসারে আব্বাকে কখনও চিন্তিত হতে দেখিনি। সাহসীকতার সাথে সমস্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছেন। ধীর স্থির থেকেছেন। মনোবল যোগীয়েছেন। কখনও পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়লে / খারাপ রেজাল্ট হলে আব্বা আশ্চর্য শক্তিশালী একটি কথা বলতেন "পরাজয়ে ডরে না বীর।" বুঝাতেন মুমিনের ভীত হওয়ার কিছু নেই।

সততা, স্বচ্ছতা, আমানতদারীতা আব্বার সহজাত বৈশিষ্ট্য ছিলো। আমাদের ভাইবোনদের নৈতিক চরিত্র গঠনে আব্বার স্বচ্ছ-সৎ চরিত্রের গভীর প্রভাব ছিলো, আছে আমৃত্যু থাকবে।

আমাদের ৪ ভাইয়ের একাডেমিক/প্রফেশনাল সাকসেসের পেছনে আব্বার অবদান সীমাহীন। আজ আব্বা নেই। আমাদের কলিজার টুকরো কে মাটির ভেতরে চিরজীবনের জন্য দাফন করে আসলাম। প্রাণমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে। আব্বা ও করেছেন। জীবনের কোন এক ভোঁর কিংবা সন্ধায় আমাদেরকেও ছেড়ে চলে যেতে হবে এই রঙ্গমঞ্চ। হাজিরা দিতে হবে মহাপ্রভুর দরবারে।

আজ আব্বার এই বিদায়ের দিনে ফরিয়াদ করি হে রব, আমার আব্বার নেক আ'মলের উসিলায় উনার জীবনের সকল ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে জান্নাতুল ফিরদাউসের সুউচ্চ মাকাম দান করুন। আমাদেরকে আব্বার জন্য সাদাকায় জারিয়া হিসেবে কবুল করুন। আমীন।

১০ জুলাই, ২০২৫, রাত ০২: ১৫।

✍️মুছা ভাই

Post a Comment

0 Comments