Recent Tube

মাওলানা আশরাফ আলী থানভীর জীবন বৃত্তান্ত বনাম মাওলানা শামসুল হক ফরীদপুরীর আকিদা পর্যালোচনাঃ মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

মাওলানা আশরাফ আলী থানভীর রহঃ জীবন
বৃত্তান্ত বনাম মাওলানা শামসুল হক ফরীদপুরীর  আকিদা পর্যালোচনাঃ
------------------------------------------
    মাওলানা শামসুল হক ফরীদপুরী রহঃ মাওলানা থানভীর প্রসিদ্ধ কিতাব 'বেহেশতী জেওর' এর অনুবাদ করতে গিয়ে শুরুতেই মাওলানা থানভীর জীবনী আলোচনা করেন। ফরীদপুরী 'জীবন বৃত্তান্ত' শিরনাম দিয়ে বলেনঃ -

    হাকীমুল উম্মাত হযরত মাওলানা থানভীর জীবন বৃত্তান্ত অলৌকিক ঘটনার সহিত জড়িত। তাঁহার পিতার কোন পুত্র সন্তান জীবিত  থাকিত না। তদুপরি তিনি এক দূরারোগ্য চর্মরোগে আক্রান্ত হইয়া চিকিৎসকের পরামর্শে এমন এক ঔষধ সেবন করেন যাহাতে তাঁহার প্রজনন ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে রহিত হয়ে যায়। ইহাতে হাকীমুল উম্মতের মাতামহী নেহায়েত বিচলিত হইয়া পড়েন। একদা তিনি হাফেয গোলাম মোর্তজা ছাহেব পানিপতীর খেদমতে এ বিষয়টি আরজ করেন। তিনি বলিলেনঃ "ওমর ও আলীর টানাটানিতেই পুত্র সন্তানগুলি মারা যায়। এবার পুত্র সন্তান জন্মিলে হযরত আলীর সোপার্দ করিয়া দিও। ইনশাআল্লাহ জীবিত থাকিবে ।" তাঁহার এই হেঁয়ালী কেউ বুঝিতে পারিলেন না। পূর্ণ কথার সারমর্ম একমাত্র মওলানার বুদ্ধিমতী জননীই বুঝিলেন। আর তিনি বলিলেন, হাফেয ছাহেবের কথার অর্থ সম্ভাবতো: এই যে, ছেলেদের পিতৃকুল ফারুকী, আর আমি হযরত আলীর বংশধর। এযাবৎ পুত্র সন্তানদের নাম রাখা হয়েছিল পিতার নামানুকরনে অর্থাৎ হক শব্দ যোগে রাখা হইয়াছিল। যেমনঃ- আবদুল হক, ফজলে হক ইত্যাদি। এবার পুত্র সন্তান জন্মিলে মাতৃকুল অনুযায়ী নাম রাখিতে-।  ইহা শুনিয়া হাফেয ছাহেব সহাস্যে বলিয়া উঠিলেন, বাহবা! মেয়েটি বড়ই বুদ্ধিমতী বলিয়া মনে হয়। আমার উদ্দেশ্য ইহাই ছিল। ইহার গর্ভে দুইটি ছেলে হইবে। ইনশাআল্লাহ উভয়ই বাঁচিয়া থাকিবে এবং ভাগ্যবান হইবে। একজনের নাম রাখিবে আশরাফ আলী, অপর জনের নাম রাখিবে আকবর আলী। একজন হইবে আমার অনুসারী, সে হইবে আলেম ও হাফেয। অপর জন হইবে দুনিয়াদার। বস্তুতঃ তাহাই হইয়াছিল।
(শামসুল হক ফরিদপুরীর অনুবাদকৃত 'বেহেশতী জেওর' এর থানভীর জীবনী দ্রষ্টব্য) 
.
     পর্যালোচনাঃ পুরা কিসসাই ভ্রান্ত বলে মনে হয়। থানভী সাহেবের পিতার প্রজনন ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে রহিত হয়ে যাওয়ার পরেও তার দুই ছেলে হলো কি করে? বিষয়টি বুঝতে পারলাম না।
.
বলা হয়েছে, হযরত ওমর ও আলী (রা) এর টানাটানিতে ছেলে সন্তানগুলি মারা যায়। তাঁরা টানাটানি করতে যাবেন কেন? তাঁরা কি পরস্পরের শত্রু? এটা তো শিয়াদের ভ্রান্ত আকিদা।
.
      উপরোক্ত কথাগুলোর মধ্যে হযরত ওমর ও আলী (রা) এর জীবন দান ও মৃত্য ঘটনার ক্ষমতা ফরিদপুরী সাহেব সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। অর্থাৎ ফরীদপুরী সাহেবের মতে, হযরত ওমর ও আলী (রা) জীবন দান ও মৃত্য ঘটনোর ক্ষমতা আছে। (নাউযূবিল্লাহ) এটা সুস্পষ্ট শিরক। কেননা পবিত্র কুরআন আল্লাহর সম্পর্কে বলেনঃ
.
وَأَنَّهُۥ هُوَ أَمَاتَ وَأَحْيَا 
.
আর নিশ্চয় তিনিই মৃত্যু দেন এবং তিনিই জীবন দেন। 
(সূরা আন নাজমঃ৪৪)

কুরআন চ্যালেঞ্জ করে বলছেঃ 
.
ٱللَّهُ ٱلَّذِى خَلَقَكُمْ ثُمَّ رَزَقَكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيكُمْۖ هَلْ مِن شُرَكَآئِكُم مَّن يَفْعَلُ مِن ذَٰلِكُم مِّن شَىْءٍۚ سُبْحَٰنَهُۥ وَتَعَٰلَىٰ عَمَّا يُشْرِكُونَ 
.
      আল্লাহ সেই সত্তা যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তোমাদেরকে রিয্ক দিয়েছেন। এরপর তিনি তোমাদের মৃত্যু দেবেন, পরে আবার তোমাদের জীবন দেবেন। তোমাদের শরীকদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি, যে এ থেকে কোন কিছু করতে পারবে? তিনি পবিত্র এবং তারা যাদের শরীক করে তা থেকে তিনি ঊর্ধ্বে।
(সূরা আর-রূমঃ৪০)
.
    পীর সাহেব থানভী ও তার ভাইয়ের জন্মের ভবিষ্যৎবাণী করেছেন এবং তাদের ভাগ্য নির্ধারনেরও ভবিষ্যৎবাণীও করেছেন। আর ফরিদপুরী তা নির্দ্বিধায় মেনে নিয়েছেন। অথচ এটাও একটি সুস্পষ্ট শিরক। কেননা ইলমুল গায়িব একমাত্র আল্লাহই জানেন। তিনি ছাড়া কেই গায়েব জানেন না। 
দেখুনঃ-
إِنَّ ٱللَّهَ عِندَهُۥ عِلْمُ ٱلسَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ ٱلْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِى ٱلْأَرْحَامِۖ وَمَا تَدْرِى نَفْسٌ مَّاذَا تَكْسِبُ غَدًاۖ وَمَا تَدْرِى نَفْسٌۢ بِأَىِّ أَرْضٍ تَمُوتُۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌۢ 
.
   নিশ্চয় আল্লাহর নিকট কিয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। আর তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং মাতৃগর্ভে যা আছে, তা তিনিই জানেন। আর কেউ জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন্ স্থানে সে মারা যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।
(সূরা লুকমানঃ৩৪) 

   কিন্তু পীর সাহেব বলে দিলেন মাতৃগর্ভে কি আছে, কয়টি সন্তান আছে, ছেলে হবে না মেয়ে হবে, দুনিয়াদার হবে না দ্বীনদার হবে সব কিছুই তিনি বলে দিলেন। আর ফরিদপুরী তা মেনে নিলেন। কিন্তু আল্লাহর কথা মানলেন না বরং পদদলিত করলেন। (নাউযূবিল্লাহ)!
.
আল্লাহ তা'য়ালা আরো বলেনঃ 
.
قُل لَّا يَعْلَمُ مَن فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ ٱلْغَيْبَ إِلَّا ٱللَّهُۚ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ 
.
   বল, ‘আল্লাহ ছাড়া আসমানসমূহে ও যমীনে যারা আছে তারা গায়েব জানে না। আর কখন তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে তা তারা অনুভব করতে পারে না’।
(সূরা আন নামলঃ৬৫)
.
   আল্লাহ তা'য়ালা বলছেন এক কথা আর ফরিদপুরী পীর সাহেবের মাধ্যমে শুনাচ্ছেন আরেক কথা। যা সম্পূর্ণ সুস্পষ্ট শিরক। 
আহ! যদি ফরিদপুরী অন্যের ভুল সংশোধনের জন্য সময় ব্যয় না করে নিজের ভুল সংশোধনের চেষ্টায় সময় লাগাতেন, নিজের ঈমান কে যদি শিরক মুক্ত করতেন কত না ভাল হতো! তিনি এমন মারাক্তক (শিরকের) পাপ করে মরেছেন যার মাফ নাই।
.
আল্লাহর ভাষায় -

إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِۦ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ وَمَن يُشْرِكْ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱفْتَرَىٰٓ إِثْمًا عَظِيمًا 
.
নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে অবশ্যই মহাপাপ রচনা করে।
(সূরা আন নিসাঃ৪৮)
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলান।         

Post a Comment

0 Comments