'বিতি কিচ্ছা' পর্ব -২৩
রাষ্ট্র যখন তার সীমাবদ্ধতা র গণ্ডি পেরিয়ে অসীম ক্ষমতাধর ত্রাসরুপ মুর্তি নিয়ে আভির্ভূত হয় জনগনের উপর, তখন বিপ্লবের বীজ অঙ্কুরিত হয় রাষ্ট্রের প্রতি ইঞ্চি ভুমিতে। এই অাগাগোড়া সম্পর্কহীন একটি কথাতে পর্যাপ্ত রং চং মাখিয়ে নিয়ে একটি সন্ত্রাসী সরকার নিমিষেই যে কেউকে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসাবে সাব্যস্ত করে নিয়ে লাল ঘরে জায়গা করে দিতে পারে। কারণ সন্ত্রাসী সরকার কোন গঠমমুলক সমালোচনাকেও সহ্য করতে পারে না। ছোটবেলায় বেতারে একটি গান বড় বেশী শোনা যেত, গানটি এখনও অনেকেই ভুলে যাননি "তুমি চোররে কও চুরি করো পুলিশ হইয়া ধরো- সর্প হইয়া দংশন করে ওঝা হইয়া ঝাড়ো।" প্রয়াত গীতিকার যাকে উদ্দেশ্য করে এই চয়নটি রচনা করেছেন আমি মোটেও তার সমর্থক নই। তবে যদি বলি তৎকালীন সময়ে বহুল বাজার পাওয়া ( বর্তমান যুগের পরিভাষায় যাকে বলে ভাইরাল হওয়া) এই ছন্দটি আজিকার সন্ত্রাসী রাষ্ট শক্তিকে উদ্দেশ্য করে রচিত হয় তবে তা মানানসই হত বৈ কি।
অনেকে বলেন রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ে এবং শীর্ষ পর্যায় থেকে জনস্বার্থ বিধ্বংসী ক্রীয়া কর্মের প্রণোদনা আছে। আবার জনস্বার্থ সংরক্ষণের নামে একাধীক রাষ্ট্রীয় সংস্থা আছে যা রাষ্ট্রের পক্ষ হয়ে অথবা সয়ং রাষ্ট্র হয়ে জনগনের উপর চড়াও হবে- সেই ব্যবস্থাও আছে। অপরাধ নির্মূলের আন্তরিক কোন কর্মসূচী না থাকলেও অপরাধ দমনের নামে আছে আইন। যার সুযোগ নিয়ে শতত গৃহীত হয় রাষ্টীয় সন্ত্রাস তথা দমন অভিযান। এই দমন অভিযান যাদের দ্বারা পরিচালিত হয় তাদেরকে মানুষ বললে ভুল হবে, রীতিমত ফেরেস্তা। এখানে অপরাধীর সাজা যা তামিল হয় তা নিতান্তই ব্যাক্তির সাধ্যের অতীত হয়ে থাকে। আর ইহারই ব্যাখ্যা করলে দাঁড়ায় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের ব্যবহারিক নমুনা। এতএব জনমনে সৃষ্টি হয় অসন্তোষ, শুরু হয় আইন অমান্য করার প্রবনতা। এদিকে প্রশাষক ফেরেস্তা কর্তৃক আইন অপ-প্রয়োগের উপুর্যুপুরী চেষ্টা থেকেই রুপিত হয় বিপ্লবের বীজ। অথচ নিজেরাই উপর তলায় বসে আস্ফালন করেন,"এমন জাতি নিয়ে বেশী দুর আগানো সম্ভব না"।
কিছুদিন আগে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালকের উপর চড়াও হল মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীরা। এই সব অভিযানের নামে মুলত রাষ্ট্রশক্তির সহযোগীতায় অদমনীয় চাঁদাবাজি হয়ে থাকে। নেপত্যে থাকে সংশ্লিষ্ট চাঁদাবাজের স্ত্রীর উচ্ছাবিলাসি বায়না। যা বিশেষ করে পবিত্র ঈদ মওসুমেই চরিতার্থ হয়ে থাকে। কে না জানে যে এই সমস্ত অভিযানে সরকারের কোষাগারে যুক্ত হওয়ার চেয়ে অভিযান সংশ্লিষ্টদের কোষাগারই পুষ্ট হয় বেশী। আর ভুক্তভোগী জনতা, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, বিষ খেয়ে তা হজম করে হন খতিগ্রস্ত। যতদিন পর্যন্ত সরকার জনগনের খাদিম না হয়ে মালিক হয়ে থাকতে চাইবে ততদিন পর্যন্ত এই ভোগান্তি থেকে আমাদের রেহাই নেই।
------------------------------------------------
0 Comments