Recent Tube

দীন কায়েমে ইসলামী রাষ্ট্রের গুরুত্বঃ মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

দীন কায়েমে ইসলামী রাষ্ট্রের গুরুত্বঃ
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ (دين) জীবন ব্যবস্থা। মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ 

إِنَّ ٱلدِّينَ عِندَ ٱللَّهِ ٱلْإِسْلَٰمُۗ.
.
নিশ্চয়ই ইসলামই আল্লাহর নিকট একমাত্র (গ্রহণযোগ্য দীন) জীবন ব্যবস্থা। 
(সূরা আলি ইমরানঃ১৯)
  অর্থাৎ ইসলামের প্রত্যেকটি বিষয় দীনের অন্তর্ভুক্ত। ইসলাম কোন বিধানই দীনের বহির্ভূত নয়। সুুতরাং দীন কায়েম বলতে ইসলামের প্রত্যেকটি বিধান কায়েম করাকে বুঝায়। 
ধর্মীয় জীবন থেকে শুরু করে ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, অর্থনৈতিক জীবন, রাজনৈতিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, আন্তর্জাতিক জীবন এক কথায় মানব জীবনের সকল দিক ও বিভাগ সম্পর্কে ইসলামে রয়েছে সুস্পষ্ট আইন ও বিধান। জীবনের এমন কোন দিক বা বিভাগ উল্লেখ করা যেতে পারে না, যে বিষয়ে ইসলামের কোন নির্দেশ পাওয়া যায় না। আল্লাহ তা'য়ালা ইসলামের প্রধান সংবিধান কুরাআন মাজীদে বলেনঃ

مَّا فَرَّطْنَا فِى ٱلْكِتَٰبِ مِن شَىْءٍۚ.

 আমি কিতাবে কোন বিষয়ই লিপিবদ্ধ করতে বাদ রাখিনি। 
(সূরা আনআমঃ৩৮)
  মুসলিম জাতি শুধু ধর্মীয় জীবনে আল্লাহর দাসত্ব ও গোলামী করবে আর অন্যান্য দিক ও বিভাগে তারা স্বাধীন, যে কোন নীতি বা বিধান গ্রহণ করতে পারবে- এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত এবং এর পরিণতি জাহান্নাম। আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ 

وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ ٱلْإِسْلَٰمِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِى ٱلْءَاخِرَةِ مِنَ ٱلْخَٰسِرِينَ 

   আর যে কেহ ইসলাম ব্যতীত অন্য দীন (জীবন বিধান) অন্বেষণ করে তা কখনই তার নিকট হতে গৃহীত হবেনা এবং পরলোকে সে (জাহান্নামে) ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
(সূরা ইমরানঃ৮৫)

  আল্লাহ তা'য়ালা পরিপূর্ণ ভাবে ইসলামের সকল বিধান মেনে নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেনঃ 

يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱدْخُلُوا۟ فِى ٱلسِّلْمِ كَآفَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا۟ خُطُوَٰتِ ٱلشَّيْطَٰنِۚ إِنَّهُۥ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ 

  হে মু’মিনগণ! তোমরা পরিপূর্ণ রূপে ইসলামে প্রবিষ্ট হও এবং শাইতানের পদাংক অনুসরণ করনা, নিশ্চয়ই সে তোমাদের জন্য প্রকাশ্য শত্রু।
(সূরা বাকারাঃ২০৮)

  শয়তানের বিধান না মেনে পরিপূর্ণ রূপে ইসলামের বিধান মানতে হলে ইসলামী শরীয়তের বিধি-বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র কায়েম করা অপরিহার্য। 

তাছাড়া রাসূলুল্লাহ (সা) কে প্রেরণ করার উদ্দেশ্য সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
ﻫُﻮَ ﭐﻟَّﺬِﻯٓ ﺃَﺭْﺳَﻞَ ﺭَﺳُﻮﻟَﻪُۥ ﺑِﭑﻟْﻬُﺪَﻯٰ ﻭَﺩِﻳﻦِ ﭐﻟْﺤَﻖِّ ﻟِﻴُﻈْﻬِﺮَﻩُۥ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟﺪِّﻳﻦِ ﻛُﻠِّﻪِۦ

  তিনি সেই সত্তা, যিনি নিজ রাসূলকে হিদায়াত এবং দীনুল হক্ব (তথা নির্ভুল জীবন বিধান) সহকারে প্রেরণ করেছেন, যেন ওকে অন্যান্য সকল দীনের উপর (তথা বিধানের উপর) বিজয়ী করে দেন।
(সূরা তওবাঃ৩৩, সূরা ফাতাহঃ২৮, সূরা সফঃ০৯)

  অর্থাৎ আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর রাসূল (সা) কে 
সকল মানব রচিত ও শয়তান প্রদত্ত বিধানের উপরে দীন ইসলামের বিধানকে বিজয়ী করার জন্য প্রেরণ করেছেন। আর ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত ইসলামের বিধানকে অন্যান্য বিধানের উপর বিজয়ী করা সম্ভাব নয়। তাই রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর নবুওয়াতী জীবনে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে দীন কায়েম করেন এবং দীন ইসলামকে বিজয়ী করেন। বর্তমানেও ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত দীন কায়েম করা এবং দীন ইসলামকে অন্যান্য মানব রচিত বিধানের উপর বিজয়ী করা সম্ভব নয়।

  এছাড়াও ইসলামের এমন অনেক আইন বিধান রয়েছে যা কার্যকারী করতে হলে রাষ্ট প্রতিষ্ঠা করা ব্যতীত সম্ভব নয়। আল্লাহর বিধান অনুযায়ী মানুষের পরস্পরের বিচার ফায়সালা করা, ইসলামী ফৌজদারি দণ্ডবিধি প্রয়োগ করা এবং আল্লাহর পথে যুদ্ধ করার নির্দেশ রয়েছে কুরাআন হাদীসে। কিন্তু রাষ্ট্র যতক্ষণ পর্যন্ত এ কাজ না করবে ততক্ষণ কোন ব্যক্তি বা সমাজের সাধারণ মানুষের পক্ষে তা করা কিছুতেই সম্ভবপর হতে পারে না। এজন্যই জনগণের উপর আল্লাহর আইন কার্যকারী করার ক্ষমতাসম্পন্ন রাষ্ট্র-ব্যবস্থা একান্তই জরুরী। এ কথাটি বুঝাতে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেছেনঃ

ان ولاية امر الناس اعظم واجبات الدين بل لاقيام للدين الا بها ولان الله تعالي اوجب الامر بالمعروف و النهي عن المنكر ونصرة المظلوم وكذلك ساءر ما اوجبه من الجهاد والعدل واقامة الحدود لا تتم الا بالقوة والامارة.

"জনগণের যাবতীয় ব্যাপার সুসম্পন্ন করা তথা শাসন-ব্যবস্থা কায়েম করা দীনের প্রধান দায়িত্ব। বরং শাসন-ব্যবস্থা (রাষ্ট্র) ছাড়া দীন প্রতিষ্ঠা হতেই পারে না। আরো কথা এই যে, আল্লাহ তা'য়ালা ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধ এবং মজলুমদের সাহায্য করা ওয়াজিব করে দিয়েছেন। এ ভাবে তিনি জিহাদ, ইনসাফ ও আইন-শাসন প্রভৃতি যেসব কাজ ওয়াজিব করে দিয়েছেন তা রাষ্ট্রশক্তি ও শাসন-ব্যবস্থা ছাড়া কিছুতেই হতে পারে না।"
(আস-সিয়াসাতুশ শরইয়্যাহ, পৃষ্ঠাঃ ১৭২-১৭৩)

  অতএব শরীয়তের আইন বিধান জারী ও কার্যকারী করার জন্যে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করা একটি অপরিহার্য জরুরী কর্তব্য, যা শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহর আলোচনা থেকেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। 
   সুুতরাং যারা 'দীন কায়েম করার জন্য রাষ্ট্রের প্রয়োজন নেই' বলে রাষ্ট্রীয় ভাবে আল্লাহর আইন কে পদদলিত করে তাগুতের আইন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মেনে নিচ্ছে তারা মূলত তাগুতেরই গোলাম।
-------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গবেষক ও মাওলানা।          

Post a Comment

0 Comments