Recent Tube

মুসলিম জাতিকে তাগুতের বান্দায় পরিণত করতে কথিত আহলে হাদীসে সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্রঃ মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

    তাগুতের বান্দা, বর্তমান জামানার কথিত আহলে হাদীসগং সবসময় তাগুতশক্তিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় দেখতে চায়, তারা কখনোই চায় না, কোন নবী বা নবীর প্রকৃত অনুসারীরা ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করে রাষ্ট্রীয় শক্তির বলে সার্বিকভাবে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করুক এবং রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি সহ সর্বক্ষেত্রেই বান্দার আনুগত্য ও দাসত্ব শুধু আল্লাহর জন্য হোক। তারা তাগুতের কুফুরী শাসন জারী রেখে সাধারণ মুসলিম জাতিকে তাদের ন্যায় তাগুতের বান্দায় পরিণত করতে চায়। যারা আল্লাহকে কেবল সৃষ্টিকর্তা হিসাবে মানে কিন্তু আইন ও বিধানের ক্ষেত্রে দাসত্ব করে তাগুতের, তাদের তওহীদ হলো আবু জাহেলদের তওহীদের ন্যায়। আর এই আবু জাহেলদের তওহীদ প্রতিষ্ঠা করার জন্য তারা নবী-রাসূলগণের প্রতি মিথ্যাচার করতেও দ্বিধাবোধ করে না। ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের বিরোধীতা করাই তাদের আন্দোলনের মূল কথা। যেমন- আহলে হাদীস আন্দোলনের আমীর, তাগুতপন্থী দরবারী আলেম আসাদুল্লাহ আল গালীব বলেন,
    "একজন পথভোলা মানুষের আক্বীদা ও আমলের পরিবর্তন রাষ্ট্রশক্তি পরিবর্তনের চাইতে অধিক গুরুত্বপূর্ণ।" (ইক্বামতে দ্বীন: পথ ও পদ্ধতি, পৃঃ ৩৮)
তিনি আরো বলেন, 
"ইমাম মাহদীর আগমনের ফলে ও ঈসা (আ) এর অবতরণ কালে পৃথিবীর কোথাও 'ইসলাম' ব্যতীত আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। ইসলামের এই অগ্রযাত্রা তার রাষ্ট্রশক্তির বলে হবে না, বরং এটা হবে তার তাওহীদী দাওয়াতের কারণে।" (ইক্বামতে দ্বীন: পথ ও পদ্ধতি, পৃঃ ৩৭)
.
    হযরত ঈসা (আ) এর অবতরণ, দাজ্জাল নিধন, পৃথিবীতে ইসলামী রাজ্য স্থাপন এবং রাষ্ট্রশক্তির বলে সমগ্র পৃথিবীতে দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি বিষয়ে সহীহ ও মুতাওয়াতির হাদীস সমূহ বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং  কাফির, মুনাফিক, তাগুতের বান্দারাই ঈসা (আ) এর 'রাষ্ট্রশক্তি' কে অস্বীকার করতে পারে, কোন মুমিন বান্দা নয়।
    মূলত দাজ্জালের ফিতনা থেকে মুসলিম উম্মাহকে হেফাজত করার জন্য এবং সমগ্র পৃথিবীতে ইসলামী রাজত্ব কায়েম করার জন্য মহান আল্লাহ তা'য়ালা হযরত ঈসা (আ) কে আবার পৃথিবীতে পাঠাবেন। (সহীহ বুখারী হাঃ ২২২২, ৩৪৪৮; সহীহ মুসলিম হাঃ ২৯৩৭; তিরমিযী হাঃ ২২৪০, ৪০০১; আবূ দাউদ হাঃ ৪৩২১; ইবনে মাজাহ হাঃ ৪০৭৫; আহমদ হাঃ ৭৬৮৩, ১৭১৭৭) 
     কিয়ামত প্রাক্কালে ইমাম মাহদী ও হযরত ঈসা (আ) এর নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক বিজয় সংঘটিত হবে এবং সারা পৃথিবী শান্তির রাজ্যে পরিণত হবে। (আহমাদ, মিশকাত হাঃ৪২; তিরমিযী, মিশকাত হাঃ৫৪৭৫, আবূ দাউদ, মিশকাত হাঃ৫৪৫৩-৫৪; মুসলিম, মিশকাত হাঃ৫৫০৭) 
.
   আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَيُوشِكَنَّ أَنْ يَنْزِلَ فِيكُمْ ابْنُ مَرْيَمَ حَكَمًا مُقْسِطًا فَيَكْسِرَ الصَّلِيبَ وَيَقْتُلَ الْخِنْزِيرَ وَيَضَعَ الْجِزْيَةَ وَيَفِيضَ الْمَالُ حَتَّى لاَ يَقْبَلَهُ أَحَدٌ.
শপথ সেই সত্তার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ। অচিরেই তোমাদের মাঝে ন্যায়পরায়ণ (রাষ্ট্রপ্রধান) শাসকরূপে মারইয়ামের পুত্র ঈসা (আ.) অবতরণ করবেন। তারপর তিনি (দাওয়াতের মাধ্যমে নয় বরং রাষ্ট্রশক্তির বলে) ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবেন, শূকর হত্যা করবেন, জিযিয়া কর রহিত করবেন এবং ধন-সম্পদের এরূপ প্রাচুর্য হবে যে, কেউ তা গ্রহণ করবে না। (সহীহ বুখারী হাঃ ২২২২, ২৪৭৬, ৩৪৪৮; সহীহ মুসলিম হাঃ ১৫৫, ২৪৩; মুসনাদে আহমাদ হাঃ ৭৬৮৩) 
.
    হযরত ঈসা (আ) আগমন করে মুহাম্মদ (সা) এর শরীয়ত অনুসরণ করে সমগ্র পৃথিবী শাসন করবেন। সে সময় তিনি রাষ্ট্রশক্তির বলে ইসলাম ছাড়া বাকী সমস্ত কুফুরী শাসন মিটিয়ে দিবেন। এই জন্যই তিনি খ্রিষ্টান ধর্মের প্রতীক হিসাবে ব্যবহৃত ক্রুশ চিহ্ন ভেঙে ফেলবেন, কাফিরদের নিকট থেকে জিযিয়া গ্রহণ প্রত্যাখ্যান করবেন ইসলাম অথবা হত্য ছাড়া কোন কিছুই গ্রহণ করবেন না। মোটকথা আল্লাহর দ্বীনকে নতুন ভাবে সংস্কার করার জন্য এবং সর্বশেষ নবীর আদর্শকে বাস্তবায়ন করার জন্য তিনি পৃথিবীতে আগমণ করবেন। (ইমাম কুরতুবী, তাযকিরা ২/৭৯২) এভাবে ন্যায়পরায়ণ শাসকরূপে হযরত ঈসা (আ) ৪০ বছর পৃথিবীতে অবস্থান করে মৃত্যুবরণ করবেন। (মুসনাদে আহমদ ২/৪০৬; আবূ দাউদ, হাঃ ৪৩২৪; সহীহুল জামে হাঃ ৫২৬৫) মদীনায় নবী (সা) কবরের পাশে তাঁর কবর হবে। (লাওয়ামেউল আনওয়ার ২/১১৩) 
.
    তবে কিয়ামত পর্যন্ত একদল হক্বপন্থী লোক তাগুতী শাসনের বিরুদ্ধে এবং আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য প্রকাশ্যে নবীদের ন্যায় সংগ্রামী মিশন চালিয়ে যাবেন। অবশেষে ইমাম মাহদী ও ঈসা (আ) তাদের নেতৃত্ব দিবেন। হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেছেনঃ
لاتزال طاءفة من أمتي يقاتلون علي الحق ظاهرين إلي يوم القيامة، فينزل عيي ابن مريم فيقول أميرهم: تعال صل لنا، فيقول: لا، إن بعضكم علي بعض أمراء، تكرمة الله هذه الأمة. 
   কিয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মাতের একদল লোক প্রকাশ্যে (দ্বীনে) হক্ব (তথা আল্লাহ প্রদত্ত সত্য বিধান) প্রতিষ্ঠার জন্য লাড়াই করে যাবে। অবশেষে হযরত ঈসা (আঃ) অবতরণ করবেন। তখন তাদের আমীর (ইমাম মাহদী) বলবেন: আসুন! সালাতে আমাদের ইমামত করুন। তিনি বলবেন: না, আপনাদেরই একজন অন্যদের জন্য ইমাম। এ হল আল্লাহ জন্য প্রদত্ত এ উম্মাতের সম্মান। (সহীহ মুসলিম, হাঃ ১৫৬; ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাঃ ২৯২; বাংলাদেশ ইসলামীক সেন্টার, হাঃ ৩০৩)
.
  আল্লাহ তা'আলা আমাদের সেই দলে শামিল হওয়ার তৌফিক দান করুক, যারা আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেন। (আমিন)
----------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ, গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলানা।

Post a Comment

0 Comments