১. প্রশ্নঃ মুহতারাম শাইখ! মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন,
إِنَّا أَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ بِمَا أَرَاكَ اللَّهُ ۚ وَلَا تَكُنْ لِلْخَائِنِينَ خَصِيمًا.
"নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি যথাযথভাবে কিতাব নাযিল করেছি, যাতে করে তুমি মানুষের মধ্যে শাসন-ফয়সালা কর সে অনুযায়ী যা আল্লাহ তোমাকে দেখিয়েছেন। আর তুমি খিয়ানতকারীদের পক্ষে বিতর্ককারী হয়ো না।" (সূরা নিসাঃ৪/১০৫)
.
এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর বিধান অনুযায়ী মানুষ জাতিকে শাসন-ফয়সালা করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা'আলা কুরআন নাযিল করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করে কুরআন (আল্লাহর বিধান) অনুযায়ী আরব বিশ্ব শাসন করেছেন। অাল্লাহর বিধান কায়েম করার উদ্দেশ্যে অনেকেই গণতন্ত্রকে উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করে। সৌদির শাইখ ইবনে উমাসীন, শাইখ বিন বায, শাইখ আব্দুর রাজ্জাক আফিফি, শাইখ আব্দুল্লাহ গুদইয়ান, শাইখ আব্দুল্লাহ কুয়ুদ সহ বিভিন্ন শাইখ ফতোয়া প্রদান করেছেন যে, কুফুরী বা তাগুতী শাসন অপসরণ করে ইসলামী শাসন কায়েম করার উদ্দেশ্য গণতান্ত্রিক কায়দায় নির্বাচন করা জরুরী। তাদের মতে দ্বীন কায়েমের জন্য গণতন্ত্রকে উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করার শুধু জায়েজই নয় বরং দ্বীনের স্বার্থে ফরজ।
.
যেমন- আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে গণতান্ত্রিক নির্বাচনে অংশ নেয়ার হুকুম সম্পর্কে শাইখ মুহাম্মদ বিন উসাইমীন রাহঃ কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জবাবে বলেন:
"আমি মনে করি এ নির্বাচনগুলোতে
অংশ নেয়া ফরজ। আমরা যাকে ভাল
মনে করি তাকে সহযোগিতা করা ফরজ। কারণ ভাল লোকেরা যদি ঢিলেমি করে তাহলে এ স্থানগুলো কে দখল করবে? খারাপ লোকেরাই দখল করবে কিংবা এমন লোকেরা দখল করবে যাদের কাছে না আছে ভাল; না আছে খারাপ; যারা সুবিধাবাদী। তাই আমাদের উচিত যাকে যোগ্য মনে করি তাকে নির্বাচিত করা।"
[শাইখ মুহাম্মাদ বিন উসাইমীন, লিকাআতুল বাব আল-মাফতুহ]
.
এখন আমার প্রশ্ন হলো- যারা দ্বীন কায়েমের উদ্দেশ্যে গণতন্ত্রকে উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করা যাবে কি? আর যারা ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করার স্বার্থে গণতান্ত্রিক নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করাকে ফরজ বা জরুরী বলেছেন এবং তাদের সহযোগীতা করার যে ফতোয়া প্রদান করেছেন তা কি সহীহ?
.
জবাবঃ গণতন্ত্র বৈধ নয় বরং তা হারাম ও শিরক। সুতরাং দ্বীন কায়েমের জন্য গণতন্ত্রকে উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করার প্রশ্নই আসে না। আর যারা ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করার স্বার্থে গণতান্ত্রিক নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করাকে ফরজ বা জরুরী বলেছেন এবং তাদের সহযোগীতা করার যে ফতোয়া প্রদান করে গণতন্ত্রের বৈধতা দিয়েছেন তারা গোমড়াহীতে রয়েছে। সুতরাং তাদের ফতোয়ার ভ্রুক্ষেপ করা যাবে না।
.
২. প্রশ্নঃ মুহতারাম শাইখগণ! আপনারা সহীহ ফতোয়া দিলেন যে, গণতন্ত্র হারাম ও শিরক। তাই দ্বীনের স্বার্থে গণতন্ত্রকে উপকরণ হিসাবেও ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু আমাদের আহলে হাদীসের উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান (এমপি ও আ'লীগ উপদেষ্টা), এ কে এম রহমতুল্লাহ (এমপি), মোহাম্মদ সাঈদ খোকন (মেয়র) প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ ইসলাম বিরোধী কুফুরী মতবাদ সেকুলারিজম কায়েমের উদ্দেশ্যে গণতান্ত্রিক নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন এবং আমাদের আহলে হাদীসের ভাই ও বোনেরা তাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। এখনও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সেকুলার শাসকরের আনুগত্য করা ফরজ মনে করে তাদের আনুগত্য করছেন। এটা কি হারাম ও শিরক নয়? যদি হারাম ও শিরক হয়ে থাকে তাহলে আমাদের আহলে হাদীসের শাইখগণ কেন তাদের কুফুরী শাসন মেনে চলাকে ফরজ বলে?
.
জবাবঃ দ্বীন কায়েমের উদ্দেশ্যে গণতন্ত্রকে উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করা হারাম হলেও সেকুলারিজম কায়েমের জন্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন করা ও ভোট দেওয়া হারাম বা শিরক নয়। এ বিষয়ে আপনাকে একটি উসূল জানিয়ে দেওয়া প্রয়োজন মনে করছি, তা হলো- "গণতন্ত্র শুধু দ্বীন কায়েম বা ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হারাম ও শিরক; অন্য ক্ষেত্রে নয়।" তাই সেকুলারিজম প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য গণতন্ত্র ব্যবহার করা জায়েয ও বৈধ এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সেকুলার শাসক ও সরকারও বৈধ। এ জন্য তাদের ভোট দেওয়া ও সহযোগীতা করাও বৈধ ও জায়েয। এমনকি (কুরআন বিরোধী) সেকুলার শাসক ও সরকারের আনুগত্য করা শুধু জায়েজই নয় বরং ফরজ। পক্ষান্তরে যারা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ইসলামী শাসন কায়েম করতে চায়, তাদের সহযোগীতা করা ও ভোট দেওয়া হারাম। কেননা দ্বীন কায়েমের স্বাথে গণতন্ত্র কে ব্যবহার করা হারাম।
.
ফাতাওয়ায়ে আহলে হাদীস,
খলীফাতুশ শয়তান এবং রূহানী সন্তান
আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই আল-মাদানী।
------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবি,
লেখক ও মাওলানা।
0 Comments