Recent Tube

নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, তাসবীহ, তিলাওয়াত ট্রেনিং কোর্সঃ ১ম পর্ব, মুহাম্মদ তানজিল ইসলা।

নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, তাসবীহ, তিলাওয়াত ট্রেনিং কোর্সঃ ১ম পর্ব,
------------------------------------------
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ.
"আমি জিন ও মানুষ জাতিকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমারই ইবাদাত করবে।" (সূরা যারিয়াতঃ৫১/৫৬)
  .
ইবাদত শব্দটি আরবী  'আবদ' عبد হতে উদ্ভূদ হয়েছে, যার অর্থ দাস ও গোলাম। অতএব 'ইবাদত' শব্দের অর্থ হবে গোলামী ও দাসত্ব করা।
এ আয়াতে ‘ইবাদত’ শব্দটিকে শুধু নামায রোযা এবং এ ধরনের অন্যান্য ইবাদাত অর্থে ব্যবহার করা হয়নি। তাই কেউ এর এ অর্থ গ্রহণ করতে পারে না যে জিন ও মানুষকে শুধু নামায পড়া, রোযা রাখা এবং তাসবীহ তাহলীল করার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। এ অর্থটিও এর মধ্যে শামিল আছে বটে, তবে এটা তার পূর্ণাংগ অর্থ নয়। এর পূর্ণাংগ অর্থ হচ্ছে, জিন ও মানুষকে আল্লাহ ছাড়া অন্যের পূজা, আনুগত্য, আদেশ পালন ও বিনীত প্রার্থনার জন্য সৃষ্টি করা হয়নি। অন্য কারো সামনে নত হওয়া, অন্য কারো নির্দেশ ও বিধান পালন করা, অন্য কাউকে ভয় করা, অন্য কারো রচিত দ্বীন বা আদর্শের অনুসরণ করা, অন্য কাউকে নিজের ভাগ্যের নিয়ন্তা মনে করা এবং অন্য কোন সত্তার কাছে প্রার্থনার জন্য হাত বাড়ানো তাদের কাজ নয়। (তাফহীমুল কুরআন)
.
সকল নবী ও রাসূলগণের যাবতীয় শিক্ষার সারকথা হলো-
أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ.
"আল্লাহর ইবাদাত কর এবং তাগুতকে বর্জন করো।" (সূরা নাহলঃ১৬/৩৬)
অর্থাৎ সকল নবী রাসূলের মূল মিশন ছিল সকল ধরণের তাগুতী শাসনব্যবস্থা ও দাসত্ব উৎখাত করে একমাত্র আল্লাহর দাসত্ব প্রতিষ্ঠা করা। কেননা, দাসত্ব ও আনুগত্য লাভের যোগ্য সারা জাহানে একজনই মাত্র প্রভু আছেন- তিনি হচ্ছে আল্লাহ তা'আলা। অনুসরণযোগ্য মাত্র একটি বিধান বা আইন আছে- তাহলো আল্লাহর দেয়া জীবনব্যবস্থা এবং একটি মাত্র সত্তাই আছে, যার পূজা-উপাসনা, আরাধনা, গোলামী করতে হবে। আর সেই সত্তাই হচ্ছে একমাত্র আল্লাহ তা'আলা।
সকল সময় আল্লাহর আনুগত্য করা, তাঁর হুকুম পালন করা, তাঁর বিরুদ্ধে মনে কোন কথার স্থান না দেয়া, তাঁর বিধান পরিত্যাগ করে অন্য কারো বিধান পালন না করাই বান্দা তথা গোলামের কর্তব্য। গোলাম সব সময়ই গোলাম; বান্দার এ কথা বলার কোন অধিকার নেই যে, আমি আল্লাহর এ আদেশ মানবো আর অমুক আদেশ মানবো না। কিংবা আমি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আল্লাহর গোলাম আর অন্যান্য সময় তাঁর গোলামী হতে সম্পূর্ণ মুক্ত।
.
  কোন বান্দা যদি আল্লাহর নির্ধারিত হুকুম ও বিধান পালন না করে বরং লক্ষ বার তাঁর নাম জপ করে তাকে আপনি কি বলবেন? অাল্লাহ তা'আলা বলেন,
اتَّبِعُوا مَا أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ مِنْ رَبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ.
"তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে (বিধানসরূপ) যা নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য কোন মনিব/শাসক/নেতা/অভিভাবকের অনুসরণ করো না। (সূরা আ'রাফঃ৭/৩)
কিন্তু বান্দা যদি আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান বর্জন করে তাগুতী বিধান মানে, কুফুরী শাসন মানাকে ফরয বলে সেই বান্দা সম্পর্কে আপনার ধারণা কি?
.
আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেন,
وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوا أَيْدِيَهُمَا جَزَاءً بِمَا كَسَبَا نَكَالًا مِنَ اللَّهِ.
"চোর পুরুষ হোক ও নারী তাদের উভয়ের হাত কেটে দাও তাদের অর্জনের প্রতিদান ও আল্লাহর পক্ষ থেকে শিক্ষণীয় আযাবস্বরূপ।" (সূরা মায়িদাঃ৫/৩৮)
আরো নির্দেশ বলছেন,
الزَّانِيَةُ وَالزَّانِي فَاجْلِدُوا كُلَّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ ۖ وَلَا تَأْخُذْكُمْ بِهِمَا رَأْفَةٌ فِي دِينِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ.
"ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী তাদের প্রত্যেককে একশ’টি করে বেত্রাঘাত কর। আর যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান এনে থাক তবে আল্লাহর দ্বীন কার্যকরের ব্যাপারে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে পেয়ে না বসে।" (সূরা নূরঃ২৪/২)
এখন কোন বান্দা যদি তাহাজ্জদে দাড়িয়ে সুললিত কণ্ঠে এ নির্দেশ তিলাওয়াত করতে থাকে কিন্তু সে এমন শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে না যার অধীনে আল্লাহর বিধান কার্যকর করা সম্ভব হবে। এমন বান্দা সম্পর্কে কি মন্তব্য করবেন?
.
  আল্লাহ বান্দাকে হুকুম করছেন,
أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ.
 "তোমরা দ্বীন কায়েম করো আর এতে বিভেদ করো না।" (সূরা শুরাঃ৪২/১৩)
এ বিষয়ে তিনি আরো বলছেন,
وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّهِ.
"তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর যতক্ষণ না ফিতনার অবসান হয় এবং দ্বীন পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। (সূরা আনফালঃ৮/৩৯; বাকারাঃ২/১৯৩)
কিন্তু কোন বান্দা যদি তওহীদ বা নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাতের বাহিরে ইসলামের কোন বিধানকে দ্বীন বলে বিশ্বাস না করে (যদিও অাল্লাহ নিজেই ফৌজদারী আইনকে দ্বীন বলেছেন- সূরা নূরঃ২৪/২) বরং ইকামতে দ্বীন তথা দ্বীন প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করে আবার সালাতে কুরআনের আয়াতগুলো তিলাওয়াত করে নিজেদের সহীহ আকিদার ডিলার ভাবে বা একমাত্র নাজাতপ্রাপ্ত জান্নাতি দল ভাবে। এমন বান্দাদের বিষয়ে আপনি বলতে পারেন যে, তারা প্রকৃতপক্ষে অাল্লাহর দাসত্ব, গোলামী (ইবাদত) করছে? এরা সকল রাত্রি পর্যন্তু (নামায ও নামাযের বাহিরে) পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলার শত শত হুকুম তিলাওয়াত করে কিন্তু সেগুলো পালন করার এবং কাজে পরিণত করার জন্য একটুও চেষ্টা করে না। বরং কেবল নফলের পর নফল পড়তে থাকে, হাজার বার আল্লাহর নাম জপতে থাকে এবং মধুর কণ্ঠে কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করতে থাকে। অথচ তারা রাত দিন আল্লাহর আইন ভঙ্গ করে, কুফুরী শাসন মেনে চলে, নিজের বাস্তব জীবনে আল্লাহর বিধানের কোন পরোয়া করে না বরং আল্লাহোদ্রহী তাগুতশক্তির খেদমত করে; তাদের নামায, রোযা, তাসবীহ, তিলাওয়াত, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি দেখে সাধারাণ জনগণ তাদের বড় আবেদ, আল্লাহ ভীরু, মুত্তাকী, মাওলানা, পীর, শাইখ, আল্লাহর মকবুল বান্দা, জান্নাতি বলে ভূষিত করে।
.
    এরা যদি আল্লাহ ভীরু মুত্তাকী, জান্নাতি ব্যক্তি হয় তাহলে সব চেয়ে বড় আবেদ, মুত্তাকী, জান্নাতি ব্যক্তি মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই আল-মাদানী সবার আগে জান্নাতে যাবে। প্রকৃত ব্যাপার এই যে, আল্লাহ তা'আলা যে ইবাদতের জন্য মানুষ জাতিকে সৃষ্টি করেছেন তা এই যে, জীবনের প্রত্যেকটি মুহূর্তেই আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করে তাঁর দাসত্ব করতে হবে। আল্লাহর আইন বিরোধী এ দুনিয়ায় যত তাগুতী বিধান প্রচলিত আছে তা অনুসরণ করতে একেবারেই অস্বীকার করতে হবে এবং তাগুতী বিধান অপসরণ করে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করতে হবে যাতে করে অনায়াসে আল্লাহর বিধান পালন করা যায়। কেননা, চেতনা লাভের পর থেকে মৃত্য পর্যন্ত আল্লাহর আইন অনুযায়ী চলা এবং তাঁরই নির্ধারিত বিধান অনুযায়ী জীবনযাপন করাই হচ্ছে আল্লাহর ইবাদত। আর নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, তাসবীহ, তিলাওয়াত হচ্ছে ট্রেনিং কোর্স যেগুলো প্রতি মুহূর্তে সকল তাগুতী বিধান বর্জন করে একমাত্র আল্লাহর বিধান পালন করে তাঁর দাসত্ব ও গোলামী করতে প্রশিক্ষণ দেয়।
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামিচিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা  ও মাওলা।। 

Post a Comment

0 Comments