Recent Tube

''বিতিকিচ্ছা-১৩: নুর মুহাম্মদ চৌধূরী।

বৃদ্ধাশ্রমকে না বলি:
---------------------------------------- 
      বাংলাদেশে বন্য পশু, পাখী ও হাওরের মাছের জন্য আছে অভয়াশ্রম। এদের অনেকেরই স্বভাব-জাত হিংস্রতা থেকে মানুষ, গৃহ পালিত জন্তু, ক্ষেতের ফসল ইত্যাদি নিরাপদ না থাকলেও মানুষ থেকে এদেরকে নিরাপদ করার জন্যই এ ব্যবস্থা।  প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষন হেতু এই অভয়াশ্রমে যাদেরকে আশ্রয় দেওয়া হয় তারা কিন্তু মানুষের  থাবা থেকে নিরাপত্তা পেলেও স্ব-জাতীয়দের হিংস্রতা থেকে কখনওই নিরাপদ থাকে না। অথচ মানুষের জন্য এদের অনেক জাতি, প্রজাতিকে আল্লাহ পাক শিকার ও তাদের গোস্ত ভক্ষন হালাল করে দিয়েছেন। ওরা আমাদের বনে, আমাদের ধানে লালিত হয়ে কলিজা করে পোক্ত।  আর পশ্চিমাদের ডাইনিং টেবিলে শোভা হয় ওর গোস্ত। বিষয়টি আক্ষেপের নয় কি?

         অপরদিকে এইসব আত্নকেন্দ্রীক পশ্চিমারা তাদের পরিবারের সবচাইতে  বয়োজৈষ্ট অক্ষম সদস্যটিকে বৃদ্ধাশ্রম নামক অভয়াশ্রমে রেখে দিয়ে অনাদরে আর অবহেলায় শেষ বিদায় দিতে কোন হীনমন্যতায় ভোগে না। কেন এই বৃদ্ধাশ্রম?  সম্ভবত এজন্যই যে এদেরকে সরানো তাদের নিজেদের অভয়াশ্রমের ব্যবস্থার জন্য, নিরাপত্তা ও আরাম আয়েশের অন্তরায় না হওয়ার জন্য*-এমনটা ভাবলে মিথ্যা হবে কি? 

          যুগটা এখন এমন যে, মানুষের হিংস্রতাকে পরিমাপ করে বলা আজ খুবই দুরুহ। তাই নীজ গৃহে পরবাসী হওয়ার চেয়ে অভয়াশ্রমবাসী হওয়াটাই তাদের জন্য যুক্তিযুক্ত টেকে। অথচ চলমান ঘড়ির কাঁটা প্রতিনিয়ত বলেই যাচ্ছে,"হে মানুষ- তুমিও একদা সে পথ মাড়াবে যেথা আজ ওর ভাগ্য। কদাচ নয় তা, নিঃশ্চিত জেনো -ইতিহাস দিছে সাক্ষ্য। তোমাকেও একদা করবে ত্যাগ তোমারই প্রীয় পরিজন। তুমিও একদা এ অভয়াশ্রমকে করতেই হবে আপন।"

       আমরা বলতে চাই বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এ বনু-আদম গুলোকে পারিবারিক পরিমণ্ডলে রেখে সঠিক সম্মান জনক পরিচর্যা করতে তোদের আন্তরিকতায় যদি এতই ঘাটতি হয়ে যায়, তবে দিয়ে দাও তাদেরকে আমাদের হেফাজতে। দেখো কতটা বন্ধু সূলভ আর পুত্র সূলভ মমতা দিয়ে আমাদের পরিবারের সদস্য করে নিয়ে তাদেরকে আমরা লালন করি। আমরা এদেরকে আমাদের অতি আপনজনদের একজন করে নিয়ে জীবনের শেষ দিনগুলো পার করে দিতে পারি কি না। বয়োবৃদ্ধ এই এক একটি মানুষের তরে মানবতার পরশমাখা ভালবাসা দিয়ে আমরা মহান রবের সান্যিধ্য লাভ করতে কতইনা আন্তরিক হই। আসলেই বাংলাদেশে এখনও পারিবারিক,  সামাজিক কৃষ্টি-কালচারে  যথেষ্ট রক্ষণশীল সমাজ কাঠামো বিরাজমান। এখানে একজন বৃদ্ধ আমৃত্যু তার প্রাপ্য মর্যাদায় থেকে থেকে মর্যাদার সাথেই সমাহিত হন। সময় ঘনিয়ে এলে অথবা প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে কেউ এখানে ফেলনা হয়ে যায় না। তারপরও এদেশে প্রৌঢ়দের জন্য আছে তরুণ যুবকদের পরিচালনায় অসংখ্য সেবা সংস্থা। কেননা প্রবীনদের সাথে বেশী বেশী সৌজন্য সাক্ষাৎ আমাদের জন্য একটি সৎকর্ম বিশেষ। যা আমরা ইহ ও পরকালীন কল্যান লাভের আশায়ই করে থাকি।

        আসলে,
 ""যাদের ঘামে গড়া এই বাগান, তারা কেন রবে দূরে। অনাদর কিবা  অবহেলা কেন জুটিবে তাদের কর্মক্লান্ত করে। এসো বিশ্ব বাজারে যত বৃদ্ধাশ্রম ভেঙ্গে দিতে করি পণ, নিবাসীরে তার বুকেতে জড়ায়ে করে নেই সবে আপন। অভয়াশ্রমে পশুপাখি থাক মানুষেরা থাক ঘরে। বৃদ্ধাশ্রমকে 'না' বলি মোরা সবাই উচ্চস্বরে""।
------------------------------------------------
লেখকঃ কবিতা ও রম্য লেখ।      

Post a Comment

0 Comments