Recent Tube

১৯৭১ সালে জামায়াতের কি এমন অপরাধ ছিল যার কারণের জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে- মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।


১৯৭১ সালে জামায়াতের কি এমন অপরাধ ছিল যার কারণের জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে-

     মূল আলোচনার পূর্বে কল্পনার জগত থেকে ঘুড়ে আসি। মনে করুন, আ'লীগের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়নি- এই অজুহাতে উত্তরবঙ্গের জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গ আলাদা করতে স্বাধীনতার ডাক দিয়ে বলল, স্বৈরাচার সরকারের কবল থেকে আমরা উত্তরবঙ্গ স্বাধীন করতে চাই। এমনতাবস্থায় বাংলাদেশের জনগণ দু'দলে বিভক্ত হয়ে একদল স্বাধীনতার পক্ষে, অপর দল স্বাধীনতার বিপক্ষে যুদ্ধ শুরু করলো। আর এক শ্রেণির জনদরদী তৃতীয়পক্ষের লোক ছিল যারা স্বাধীনতার পক্ষে বিপক্ষে যুদ্ধ করনি। তারা অখন্ড বাংলার পক্ষে ছিল, বাংলার মুসলিমদের মধ্যে পারস্পারিক যুদ্ধের বিপক্ষে ছিল। আবার স্বৈরা শাসকেরও বিপক্ষে ছিল। তারা আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ছাড়াই দুই পক্ষকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে এবং বাংলাকে বিভক্তির হাত থেকে রক্ষা করতে।
.

  তারা (তৃতীয়পক্ষ) যুদ্ধ করার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। কারণ-
১. উভয় পক্ষে ছিল মুসলিম। আর মুসলিমদের মধ্যে যুদ্ধ বাধলে তারা দুর্বল হয়ে পড়বে, যা ইসলামে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَا تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ ۖ وَاصْبِرُوا ۚ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ.
আর তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর এবং পরস্পর দ্বন্দ্ব করো না, তাহলে তোমরা সাহসহারা হয়ে যাবে এবং তোমাদের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে। আর তোমরা ধৈর্য ধর, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। (সূরা আনফালঃ৮/৪৬)
.
২. এক মুসলিম অপর মুসলিমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হারাম। আবূ বাক্রাহ নুফাই ইবনু হারেস সাক্বাফী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
"ﺇﺫ ﺍﻟﺘﻘﻰ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﺎﻥ ﺑﺴﻴﻔﻴﻬﻤﺎ ﻓﺎﻟﻘﺎﺗﻞ ﻭﺍﻟﻤﻘﺘﻮﻝ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﺎﺭ " ﻗﻠﺖ ﻳﺎﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ، ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻘﺎﺗﻞ ﻓﻤﺎ ﺑﺎﻝ ﺍﻟﻤﻘﺘﻮﻝ؟ ﻗﺎﻝ : "ﺇﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﺣﺮﻳﺼﺎً ﻋﻠﻰ ﻗﺘﻞ ﺻﺎﺣﺒﻪ " ‏( ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ ‏) .

  ‘‘যখন দু’জন মুসলিম তরবারি নিয়ে আপোসে যুদ্ধ করে, তখন হত্যাকারী ও নিহত দু’জনই জাহান্নামে যাবে।’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! হত্যাকারীর জাহান্নামে যাওয়া তো স্পষ্ট; কিন্তু নিহত ব্যক্তির ব্যাপার কী?’ তিনি বললেন, ‘‘সেও তার সঙ্গীকে হত্যা করার জন্য লালায়িত ছিল।’’ (সহীহ বুখারী ৩১, ৬৮৭৫, ৭০৮৩, মুসলিম ২৮৮৮, নাসায়ী ৪১১৭, ৪১২০, ৪১২১, ৪১২২, ৪১২৩, আবূ দাউদ ৪২৬৮, ইবনু মাজাহ ৩৯৬৫, আহমাদ ১৯৯১১, ১৯৯২৬, ১৯৯৫৯, ১৯৯৮০, ১৯৯৯৫)
.
৩. যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে দেশ দু'ভাগ হবে, মুসলিম উম্মাহর শক্তি নিঃশেষ হবে। অথচ অাল্লাহ তা'আলা মুসলিম উম্মাহকে শক্তি সঞ্চয় করার নির্দেশ দিয়ে বলেন,
وَأَعِدُّوا لَهُمْ مَا اسْتَطَعْتُمْ مِنْ قُوَّةٍ وَمِنْ رِبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدُوَّ اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ وَآخَرِينَ مِنْ دُونِهِمْ لَا تَعْلَمُونَهُمُ اللَّهُ يَعْلَمُهُمْ.
আর তাদের মুকাবিলার জন্য তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী শক্তি ও অশ্ব বাহিনী প্রস্তুত কর, তা দ্বারা তোমরা ভয় দেখাবে আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদেরকে এবং এরা ছাড়া অন্যদেরকেও, যাদেরকে তোমরা জান না, আল্লাহ তাদেরকে জানেন। (সূরা আনফালঃ৮/৬০)
.
১৯৭১ সালে স্বাধীনতার যুদ্ধে জামায়াত তৃতীয়পক্ষের অবস্থানে ছিল। জামায়াত পাকিস্তানী স্বৈরা শাসকের পক্ষে ছিল না। বরং স্বৈরা শাসকের অন্যায় অত্যাচারের বিরোধীতা করে ছিল। এমনকি ৭০ এর নির্বাচনে বিজয়ী শেখ মুজিব সাহেবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য জামায়াত পাকিস্তানের সরকারের কাছে অনুরোধ ও চাপ সৃষ্টি করেছিল।
.
    আবার জামায়াত স্বৈরা শাসকের স্বৈরাচারীতার অজুহাতে যুদ্ধের ডাক দেওয়ার পক্ষেও ছিল না। তারা চায়নি মুসলিমদের মধ্যে যুদ্ধ বাধুক, আর সেই যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মুসলিম নিহত হোক, হাজার হাজার মা বোন নির্যাতিত হোক। তারা চায়নি যুদ্ধের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ পরস্পরকে হত্যা করে দুর্বল হয়ে পড়ুক এবং মুসলিম কান্ট্রি দ্বিখণ্ডিত হোক। কারণ জামায়াত ছিল জাতির কল্যাণকামী।
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا.
আর যদি মুমিনদের দু’দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। (সূরা হুজুরাতঃ৪৯/৯)
তাই জামায়াত আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ছাড়াই দুই পক্ষকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা তথা সমস্যার সমাধান করতে এবং মুসলিম কান্ট্রিকে দ্বিখণ্ডিত ও মুসলিম জাতিকে দুর্বল হওয়া থেকে রক্ষা করতে।
.
    আফসোসের বিষয় হলো- যে জামায়াত জাতির কল্যাণের কথা বিবেচনা করে যুদ্ধ ছাড়া আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের জন্য তৃতীয় পক্ষের ভূমিকা পালন করলো, সেই জামায়াতকে জাতির কল্যাণকামী হওয়ার অপরাধে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে! এর চেয়ে বড় আফসোসের বিষয় আর কি হতে পারে?
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গবেষক ও মাওলানা।          

Post a Comment

0 Comments