Recent Tube

রাসূলুল্লাহ (সা) এর নামে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মিথ্যাচার: নবীয়ে কারীম (সা) রাষ্ট্রীয় শিরকের বয়ান করেননিঃ মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

রাসূলুল্লাহ (সা) এর নামে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মিথ্যাচার: নবীয়ে কারীম (সা) রাষ্ট্রীয় শিরকের বয়ান করেননিঃ
    বর্তমান জামানার নব্য সালাফি, কথিত আহলে হাদীসের শায়েখ মতিউর রহমান মাদানী সাহেব  এক প্রশ্নের জবাবে রাসূলুল্লাহ (সা) এর উপর মিথ্যারোপ করে বলেন, 

"নবীয়ে কারীম (সা) এর কাছে রাষ্ট্রীয় শিরকের বয়ান ছিল না।" (নাউযূবিল্লাহ) তিনি আরো বলেন, "নবীয়ে কারীম (সা) বলতেন, 'তোমরা দেবদেবীর পূঁজা ছাড়ো, আর এক আল্লাহর ইবাদত করো।"
.
পর্যালোচনাঃ
   এটি তার বিরোধপূর্ণ এবং গোমড়াহী বক্তব্য। এক আল্লাহর ইবাদত করার অর্থই হলো আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত না করা। আসল কথা হলো 'ইবাদত' এর সংজ্ঞা ও পরিধি সম্পর্কে আহলে হাদীসের অনেক শায়েখরা জাহেলিয়াতের পরিচ দিয়েছেন । যার কারণে তারা রাষ্ট্রীয় শিরকে নিমিজ্জিত।
রাসূলুল্লাহ (সা) রাষ্ট্রীয় শিরকের বয়ান করেছেন কি না, তা জানতে হলে আগে জানতে হবে রাষ্ট্রীয় শিরক কি?
  সহজ ভাষায় বলা যায়, যে শিরক রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত সেটাই রাষ্ট্রীয় শিরক।
.
এবার দেখুন- নবীয়ে কারীম (সা) রাষ্ট্রীয় শিরকের বয়ান করেছেন কি না। 
মহান আল্লাহ বলেনঃ 
ﭐﺗَّﺨَﺬُﻭٓﺍ۟ ﺃَﺣْﺒَﺎﺭَﻫُﻢْ ﻭَﺭُﻫْﺒَٰﻨَﻬُﻢْ ﺃَﺭْﺑَﺎﺑًﺎ ﻣِّﻦ ﺩُﻭﻥِ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻭَﭐﻟْﻤَﺴِﻴﺢَ ﭐﺑْﻦَ ﻣَﺮْﻳَﻢَ ﻭَﻣَﺎٓ ﺃُﻣِﺮُﻭٓﺍ۟ ﺇِﻟَّﺎ ﻟِﻴَﻌْﺒُﺪُﻭٓﺍ۟ ﺇِﻟَٰﻬًﺎ ﻭَٰﺣِﺪًﺍۖ ﻟَّﺎٓ ﺇِﻟَٰﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﻫُﻮَۚ ﺳُﺒْﺤَٰﻨَﻪُۥ ﻋَﻤَّﺎ ﻳُﺸْﺮِﻛُﻮﻥَ.
"তারা (আহলে কিতাবরা) আল্লাহকে ছেড়ে নিজেদের আহবার ও রুহবানদের (তথা ধর্মীয়নেতা ও রাষ্ট্রীয়নেতাদের) রব বানিয়ে নিয়েছে এবং মারইয়ামের পুত্র মসীহকেও। অথচ তাদের প্রতি শুধু এই আদেশ করা হয়েছে যে, তারা শুধুমাত্র এক ইলাহর ইবাদাত করবে যিনি ব্যতীত ইলাহ হওয়ার যোগ্য কেহই নয়। তিনি তাদের শিরক স্থির করা হতে পবিত্র।"
(সূরা তওবাঃ৯/৩১) 
.
    প্রসিদ্ধ সাহাবী আদী ইবনু হাতিম (রা) প্রাথমিক পর্যায়ে মতিউর রহমান মাদানীদের মতই শুধুমাত্র রুকু, সিজদা, মানত, কুরবানি ইত্যাদি উপাসনা করাকেই ইবাদত মনে করতেন।  আল্লাহর বিধানের পরিবর্তে ধর্মীয়নেতা বা রাষ্ট্রীয়নেতাদের বিধান স্বতঃস্ফূর্তে মেনে চলাও যে ইবাদত আর এটি যে রাষ্ট্রীয় শিরক তা তিনি জানতেন না। তাই তিনি বলেনঃ 
"আমি যখন রাসূলুল্লাহ (সা) এর কাছে পৌঁছি তখন তিনি সূরা (তওবা) বারআর আয়াত ﭐﺗَّﺨَﺬُﻭٓﺍ۟ ﺃَﺣْﺒَﺎﺭَﻫُﻢْ ﻭَﺭُﻫْﺒَٰﻨَﻬُﻢْ ﺃَﺭْﺑَﺎﺑًﺎ ﻣِّﻦ ﺩُﻭﻥِ ﭐﻟﻠَّﻪ তিলওয়াত করছিলেন"। আমি বললাম: 
ﻗﻠﺖ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻧﺎ ﻟﺴﻨﺎ ﻧﻌﺒﺪﻫﻢ ﻓﻘﺎﻝ ﺃﻟﻴﺲ ﻳﺤﺮﻣﻮﻥ ﻣﺎ ﺃﺣﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﺘﺤﺮﻣﻮﻧﻪ ﻭﻳﺤﻠﻮﻥ ﻣﺎ ﺣﺮﻡ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﺘﺤﻠﻮﻧﻪ؟ ﻗﺎﻝ ﻗﻠﺖ ﺑﻠﻲ ﻗﺎﻝ ﻓﺘﻠﻚ ﻋﺒﺎﺩﺗﻬﻢ . 
"হে আল্লাহর রাসূল (সা), আমরা তো তাদের 'ইবাদত' করি না!" নবীয়ে কারীম (সা) বয়ান করলেন, "আল্লাহ যা হালাল (বৈধ) করেছেন তারা তা তোমাদের জন্য হারাম (নিষিদ্ধ) করলে তোমরা কি তা হারাম বলে গ্রহণ কর না? আর আল্লাহ যা হারাম (নিষিদ্ধ) করেছেন তারা তা হালাল (বৈধ) করলে তোমরা কি তা হালাল বলে মেনে নাও না?" আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলেন, "এই হলো তাদের ইবাদত করা।" (মুসনাদে আহমদ, তিরমিযী হাঃ৩০৯৫; বায়হাকী হাঃ২৬১, ২০৩৫; সহীহ তিরমিযী আলবানী হাঃ২৪৭১; সহীহাহ হাঃ৩২৯৩ , তাফসীরে তাবারী, সূরা তওবাহঃ৯/৩১, হাঃ১৬৬৩১) 
.
   বর্তমানেও রাষ্ট্রীয় নেতারা (শাসকগোষ্ঠী) আল্লাহর হালাল (যথা: কুরআন সুন্নাহর বিধান) কে হারাম বা নিষিদ্ধ করেছে এবং আল্লাহর হারাম (যথা: সুদ, মদ, পতিতাবৃত্তি) কে হালাল বা বৈধ করেছে। যা রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত। এক শ্রেণীর লোক তা মেনে নিয়ে শাসকের আনুগত্যের নামে 'ইবাদত' করছে। রাসূলুল্লাহ (সা) এর ভাষায় ﻓﺘﻠﻚ ﻋﺒﺎﺩﺗﻬﻢ, যা রাষ্ট্রীয় শিরক। 
এখন প্রশ্ন হতে হলো- আহলে হাদীসের শায়খগণ রাষ্ট্রীয় শিরককে অস্বীকার করছে কেন? এর প্রধান কারণ হলো আহলে কিতাবের মত আহলে হাদীসগণও ﺃَﺭْﺑَﺎﺑًﺎ ﻣِّﻦ ﺩُﻭﻥِ ﭐﻟﻠَّﻪ তথা আল্লাহর পরিবর্তে তাদের শাসকগোষ্ঠীর 'ইবাদত' করে তাদেরকে রব হিসাবে মেনে নিয়েছে। ফলে তারা রাষ্ট্রীয় শিরকের মধ্যে লিপ্ত রয়েছে। যার ভয়াবহতা উল্লেখ করে আল্লাহ তা'আলা বলেন,
إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ ۖ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ.
"নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শিরক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা আগুন। আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই।" (সূরা মায়িদাঃ৫/৭২)
.
       উপরোক্ত দলিলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা অক্যট্যভাবে প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সা) রাষ্ট্রীয় শিরকের বয়ান করেছেন। শুধু রাসূলুল্লাহ (সা) একা নন, স্বয়ং আল্লাহ তা'আলাও রাষ্ট্রীয় শিরকের বয়ান করেছেন। সুতরাং শায়েখ মতিউর রহমান হিন্দুস্থানী যে বলেছেন, "নবীয়ে কারীম (সা) এর কাছে রাষ্ট্রীয় শিরকের বয়ান ছিল না" - এ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি রাসূলুল্লাহ (সা) নামে চরম মিথ্যাচার করেছেন। যার পরিণতি জাহান্নাম। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন,
‏ "مَنْ كَذَبَ عَلَىَّ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ‏"‏‏.
"যে আমার নামে মিথ্যারোপ করবে সে যেন জাহান্নামে তার জায়গা করে নেয়।" (সহীহ বুখারী, হাঃ ১০৭; সহীহ মুসলিম হহাঃ ০৩)‏
.
  বিঃ দ্রঃ আমাদের অনেক দ্বীনী ভাইয়েরা বলে থাকেন যে, আহলে হাদীসগণ হিংসুটে এবং মুনাফিকের আচরণে ভূমিকা পালন করলেও তাদের মধ্যে কোন শিরক বিদয়াত নাই। তারা শিরকের পথে চলেন না। 
আমি তাদের বক্তব্যের প্রবল নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কারণ আহলে হাদীস পরিচয়ে সহীহ হাদিস ও মানহাজের অনুসারী অনেক জাহেলগণ শিরকের পথে চলে, এতোটুকুই নয় বরং তারা শিরক বিদয়াতের সাগরে সাতার কাটছে । আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللَّهِ إِلَّا وَهُمْ مُشْرِكُونَ.
তাদের অধিকাংশ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করে, আবার তাঁর সাথে শিরকও করে। (সূরা ইউসুফঃ১২/১০৬)
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গবেষক ও মাওলানা।          

Post a Comment

0 Comments