Recent Tube

আল্লাহর গযব থেকে রক্ষা পেতে সুন্নাতি তরিকায় জিকির: মোহাম্মদ তানজিল ইসলাম।


     
বর্তমানে সমগ্র বিশ্বে আল্লাহর সবচেয়ে বড় দুনিয়াবি গযব করোনাভাইরাস। আর আল্লাহ তা'য়ালার আযাব বা গযব থেকে রক্ষা পেতে এবং দুনিয়া ও আখিরাত জীবনে সফলতা অর্জনের জন্য যাবতীয় ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি সুন্নাহ পন্থায় 'আল্লাহর জিকির' এর গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, 
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اذْكُرُوا اللَّهَ ذِكْرًا كَثِيرًا. وَسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا.
"হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর। আর সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা কর কর।" (সূরা আহযাবঃ ৩৩/৪১-৪২) তিনি আরো বলেন,
وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ.
"আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফল হতে পার।" (সূরা জুমুআহ ৬২/১০)
.
মুয়াজ ইবনে জাবাল (রাঃ) বলেন,
ما شيء أنجى من عذاب الله من ذكر الله. 
"আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা পেতে আল্লাহর জিকিরের চেয়ে উত্তম কোন আমল নেই।" (জামে তিরমিযী হাঃ ৩৩৭৭, সুনান ইবনে মাজাহ হাঃ ৩৭৯০, মুসনাদে আহমদ হাঃ ২১১৯৫, ২১৫৭৪, মুয়াত্তা মালিক হাঃ ৪৯০, মুস্তাদরাক হাকীম ১/৬৭৩, সহীহুত তারগীব ২/৯৬)
.
জিকির' ذكر অর্থ স্মরণ করা বা করানো। যে কোন প্রকারে মনে, মুখে, অন্তরে, কর্মের মাধ্যমে, আদেশ পালন ও নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে আল্লাহর নাম, গুণাবলী, বিধিবিধান, তাঁর পুরুষ্কার, শাস্তি ইত্যাদি স্মরণ করা বা এ সকল বিষয়ে আহ্বান (দাওয়াহ) বা আলোচনা করে অন্যকে স্মরণ করানো সবই আল্লাহর জিকির। তবে কুরআন ও হাদীসে বিশেষ ইবাদত হিসাবে জিকিরের পারিভাষিক অর্থ হলো রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর শেখানো আল্লাহর মর্যাদা জ্ঞাপক বিশেষ বাক্যাদি মুখে উচ্চারণ ও জপ করাকে আল্লাহর জিকির বলে। আমি এখানে এ জিকির সম্পর্কেই আলোচনা করতে যাচ্ছি। সামুরা ইবনে জুনদুব (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন,
َ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحَبُّ الْكَلَامِ إِلَى اللَّهِ أَرْبَعٌ سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ.
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় চারটি বাক্য: সুবহানাল্লাহ ওয়াল-হামদুলিল্লাহ্ ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার। (আল্লাহ অতীব পবিত্র, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ)। (সহীহ মুসলিম হাঃ ২১৩৭, মুসনাদে আহমদ হাঃ ১৯৬০৯, ১৯৭৩২)
.
 আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, 
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَأَنْ أَقُولَ سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِمَّا طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “সুবহানাল্লাহ ওয়াল-হামদুলিল্লাহ্ ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার” (আল্লাহ অতীব পবিত্র, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আল্লাহ ছাড়া কোন মা'বূদ নেই, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ) বলা আমার কাছে যে সকল জিনিসের উপর সূর্য উদিত হয় তা (অর্থাৎ সমগ্র পৃথিবীর সব কিছু) হতে বেশি পছন্দনীয়। (সহীহ মুসলিম হাঃ ২৬৯৫, জামে তিরমিযী হাঃ ৩৫৯৭, রিয়াযুস স্বালিহীন হাঃ ১৪১৭)
.
সুতরাং সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, জিকিরের জন্য আল্লাহ তা'য়ালা ও তাঁর রাসূল (সাঃ) এর নিকট সবচেয়ে প্রিয় বাক্য হচ্ছে سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ. এ বাক্যগুলোর শ্রেষ্ঠত্বের উপর আরো অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। (উদাহরণসরূপ দেখুনঃ- সহীহ বুখারী হাঃ ৭৫৬৩, সহীহ মুসলিম হাঃ ২১৩৭, ২৬৯৫ জামে তিরমিযী হাঃ ৩৫০৯, নাসায়ী হাঃ ৯২৪, আবূ দাউদ হাঃ ৮৩২, ইবনে মাজাহ হাঃ ১৩৮৬, আহমদ হাঃ ৭৯৫২, ৮০৩২, ১০৯১১, ১০৯৩৪, ১৫০৭৭, মুয়াত্তা মালিক হাঃ ৪৮৯, দারেমী হাঃ ১০০০, ২৬৮৭) এছাড়াও মাসনূন জিকিরের অন্যান্য বাক্যের মধ্যে রয়েছে, "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর, লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ ইত্যাদি।
.
কোন কোন দ্বীনদার মানুষ জিকির'কে অবহেলা করেন,গুরুত্ব দেন না। অথচ তাকওয়া অর্জনের জন্য, বাতিলশক্তির বিরুদ্ধে ঈমানী শক্তি মজবুত করার জন্য, দুনিয়ার বহুমুখী প্রলোভন থেকে আত্মশক্তি অর্জনের জন্য ও সর্বোপরি আল্লাহর নৈকট্য ও মুহাব্বত অর্জনের জন্য সুন্নাত পদ্ধতিতে আল্লাহর জিকির করা সহজতম ও শ্রেষ্ঠতম ইবাদত। 
 অন্যদিকে আরেক ধরণের দ্বীনদার জিকির করতে ভালোবাসেন কিন্তু তাদের জিকির রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও সাহাবাগণের জিকিরের সাথে মেলে না। জিকিরের শব্দ পদ্ধতি বানোয়াট। এ ক্ষেত্রে তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রদর্শিত তরিকা বর্জন করে বিভিন্ন যুক্তি তর্ক দিয়ে তাদের পীরের বানোয়াট তরিকায় জিকির করেন। যেমন, হা, হু বা ইল্লাল্লাহ ইত্যাদি। এভাবে তারা যুক্তি তর্কের ছুরি দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সুন্নাত জবাই করে।
.
প্রশ্ন হলো- সুন্নাত থাকতে যুক্তি তর্কের দরকার কী? তাই আসুন! সকল যুক্তি তর্ক বাদ দিয়ে সুন্নাতের পরিপূর্ণ অনুসরণ করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন। আমিন!
----------------------------------------------
মোহাম্মদ তানজিল ইসলাম
 ইসলামি চিন্তাবিদ ও লেখক।

Post a Comment

0 Comments