'জামায়াতে ইসলামী'র মৌলিক আকিদা-২:
---------------------------------------
ঈমান ও আকিদার মূল মন্ত্র হলো:
لَا إِلَٰهَ إِلَّا اللَّه (محمد:١٩) مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ ٱللَّهِ (فتح:٢٩)
অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই, মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর রাসূল।
.
ব্যাখ্যা: (খ) এই আকিদার দ্বিতীয় অংশ
مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ ٱللَّهِ (فتح:٢٩)
হযরত মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর রাসূল হওয়ার অর্থ এই যে, বিশ্বের একমাত্র রব আল্লাহর পক্ষ হতে বিশ্বের সকল মানুষের প্রতি সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সা) এর মাধ্যমে একমাত্র নির্ভুল হিদায়াত ও আইন-বিধান প্রেরিত হয়েছে এবং এই হিদায়াত ও আইন-বিধান অনুযায়ী কাজ করে পূর্ণাঙ্গ বাস্তব নমুনা কায়েম করার জন্যই মুহাম্মদ (সা) কে নিযুক্ত করা হয়েছে।
যারা এই পরম সত্য ও প্রকৃত জেনে ও মেনে নিবেন তাঁদের কর্তব্য হবে:
.
(১) হযরত মুহাম্মদ (সা) এর নিকট থেকে যেই হিদায়াত ও আইন-বিধান প্রামাণ্য সূত্রে পাওয়া যাবে তা দ্বিধাহীন ও অকণ্ঠচিত্তে গ্রহণ করা;
.
(২) কোন কাজে উদ্যোগী হওয়া বা কোন নিয়ম পদ্ধতি অনুসরণ থেকে বিরত থাকার জন্য আল্লাহর রাসূল (সা) এর নিকট থেকে প্রাপ্ত আদেশ ও নিষেধকেই যথেষ্ট মনে করা;
.
(৩) আল্লাহর রাসূল (সা) ব্যতীত অপর কারো স্বয়ংসম্পূর্ণ নেতৃত্ব মেনে না নেওয়া, কেননা অন্য কারও আনুগত্য হতে হবে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলুল্লাহ (সা) এর সুন্নাতের অধীন;
.
(৪) জীবনের সকল ব্যাপারেই আল্লাহর কিতাব ও রাসূলুল্লাহ (সা) এর সুন্নাতকে অকাট্য, প্রামাণ্য, বিশ্বস্তসূত্র ও নির্ভুল জ্ঞানের একমাত্র উৎসরূপে গণ্য করা। যেসব ধারণা, খেয়াল, বিশ্বাস কিংবা নিয়ম-নীতি ও পন্থা কুরআন সুন্নাহর বিপরীত তা পরিত্যাগ করা এবং কোন সমস্যার সমাধান প্রয়োজন হলে তার জন্য হিদায়াত লাভের উদ্দেশ্যে এই উৎসের দিকেই ধাবিত হওয়া;
.
(৫) ব্যক্তিগত ও পারিবারিক, বংশীয় ও জাতিগত, দলীয় ও সম্প্রদায়গত, আঞ্চলিক ও ভাষাগত তথা সকল প্রকার হিংসা-বিদ্বেষ ও বিভেদ হতে মন-মগজকে মুক্ত ও পবিত্র করে নেওয়া এবং কারো ভালোবাসা বা অন্ধ ভক্তি এমনভাবে বন্দী না হওয়া যার দরুন তা রাসূলুল্লাহ (সা) এর উপস্থাপিত সত্যের প্রতি ভালোবাসা ও ভক্তির উপর জয়ী কিংবা তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাড়ােত পারে;
.
(৬) হযরত মুহাম্মদ (সা) এর জীবন চরিত্রকে কুরআনের বাস্তব ব্যাখ্যা এবং তাঁকে সকল ব্যাপারে সত্যের একমাত্র মাপকাঠি হিসাবে মেনে নেওয়া। আল্লাহর রাসূল (সা) ব্যতীত আর কাউকে ভুলের ঊর্ধ্বে মনে না করা, কারো অন্ধ গোলামীতে নিমজ্জিত না হওয়া বরং প্রত্যেককেই আল্লাহর দেওয়া এই মাপকাঠিতে যাচাই ও পরখ করে যাঁর যেই মর্যাদা হবে তাঁকে সেই মর্যাদা দেওয়া;
.
(৭) হযরত মুহাম্মদ (সা) এর নবুয়াতের পরে কোন ব্যক্তির এমন কোন মর্যাদা মেনে না নেওয়া যার আনুগত্য করা বা না করার ভিত্তি ঈমান ও কুফর সম্পর্কে ফয়সালা হতে পারে।
[জামায়াতে ইসলামী, গঠনতন্ত্র, ধারাঃ২ থেকে সংগ্রহীত]
.
বিঃদ্রঃ জামায়াতে ইসলামী রাসূলুল্লাহ (সা) কে একমাত্র সত্যের মাপকাঠি হিসাবে গ্রহণ করেছে কারণ স্বয়ং আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
.
مَنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ
যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল।
[সূরা নিসাঃ৪/৮০]
.
وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ وَذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ. وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُهِين.
.
যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে আল্লাহ তাকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতসমূহে, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর এটা মহা সফলতা। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করে এবং তাঁর সীমারেখা লঙ্ঘন করে আল্লাহ তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে স্থায়ী হবে। আর তার জন্যই রয়েছে অপমানজনক আযাব।
[সূরা নিসাঃ৪/১৩-১৪]
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলানা।
0 Comments