ইয়াযীদ বিন মুয়াবিয়া কি ক্ষমাপ্রাপ্ত?
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
أَوَّلُ جَيْشٍ مِنْ أُمَّتِيْ يَغْزُوْنَ مَدِيْنَةَ قَيْصَرَ مَغْفُوْرٌ لَهُمْ.
আমার উম্মাতের প্রথম যে দলটি রোমকদের রাজধানী আক্রমণ করবে, তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত। (সহীহ বুখারী হাঃ ২৯২৪)
.
এ হাদীসের সূত্র ধরে কোনো কোনো নাসেবী ইয়াযীদ বিন মুয়াবিয়ার মর্যাদা ও ফজিলত প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন। নাসেবীদের দাবী ইয়াযীদ ইমাম হুসাইন (রা) ও তাঁর সাথীদের নির্মমভাবে হত্যা করা মদীনায় আক্রমণ করে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়ে হত্যাকাণ্ড করা সহ মৃত্যু পর্যন্তু যত পাপ করেছে তা সব মাপ হয়েছে! এ বিষয়ে শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী তাঁর প্রণীত সহীহ বুখারীর শরাহ তারাজিমে বলেন:
قوله مغفور لهم تميك بعض الناس بهذا الحديث في نجاة يزيد لانه كان من جعلة هذا الجش الثاني بل كان رأسهم رءيسهم علي مايشهد به التواريخ والصحيح انه لايثبت بهذا الحديث الاكونه مغفورا له ما تقدم من ذنبه علي هذه الغزوة لان الجهاد من الكفارت دشأن الكفراات ازالة أثار الذنوب السابقة عليها لا الواقعة بعدها نعم لو كان مع هذا الكلام انه مغفور له الي يوم القيامة لدل علي نجاته وليس فليس بل امره مفوض الي الله تعالي فيما ارتكبه من القباءح بعد هذا الغزوة من قتل الحسين عليه السلام وخريب المدينة والاصرار علي شرب الخمر ان شاء عفا عنه وان شاء عذبه كما هو مطرد في حق ساءر اعصاة علي ان الاحاديث الواردة شان من استخف بايعتره الطاهرة والملحد في الحرم والمبدل للسنة تبقي مخصصات لهذا العموم لوفرض شموله لجميع الذنوب-
.
"তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত مَغْفُوْرٌ لَهُم রাসূলুল্লাহ (সা) এর এ বাণীকে দলিল বানিয়ে কোনো কোনো লোক ইয়াযীদের নাজাতপ্রাপ্ত প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন। কেননা, সেও অন্যান্য সৈন্যদের সাথে দ্বিতীয় দলের অন্তর্ভুক্ত বরং ইতিহাসের সাক্ষ্য অনুযায়ী সেনাপতি ছিল। কিন্তু সঠিক কথা হলো, এ হাদীস দ্বারা শুধু এতোটুকু প্রমাণ হয় যে, ইয়াযীদের যুদ্ধের আগে কৃত গুণাহ ক্ষমা করা হয়েছে। কেননা, জিহাদ গুনাহর কাফফারা হয়ে থাকে। আর কাফফারা কেবল অতীত বা পেছনের গুনাহ দূরীভূত হওয়ার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট পরের ব্যাপারে নয়। হ্যাঁ, রাসূলুল্লাহ (সা) এর বাণীতে যদি কিয়ামত পর্যন্ত মার্জার কথা বর্ণিত থাকতো, তাহলে (জাহান্নাম থেকে) তার মুক্তিলাভ প্রমাণ হওয়ার কথা ছিল। এরূপ বাক্য যেহেতু হাদীসে উল্লেখ নেই, তখন নাজাত পাওয়ার কথাও প্রমাণ হতে পারে না। বরং প্রসঙ্গটি আল্লাহর উপর সোপর্দ করাই শ্রেয়। এ যুদ্ধের পর সে যে ধরণের পাপ কাজে লিপ্ত হয়েছে অর্থাৎ হুসাইন (রা) এর হত্যা, মদীনা শরীফের ধ্বংস ও হত্যাকাণ্ড এবং মদ্যপানে অভ্যস্ত থাকা। অন্যান্য পাপাচারীদের ন্যায় ইচ্ছা করলে আল্লাহ তা'আলা তাকে ক্ষমা করতে পারেন আবার ইচ্ছা করলে শাস্তিও দিতে পারেন। অন্যান্য গুনাহগারের দলে তার অন্তর্ভুক্তির কথা মেনে নিলেও তাদের জন্যে নির্ধারিত সাধারণ নীতি ইয়াযীদের বেলায় প্রযোজ্য হওয়ার কারণ নেই; বরং আহলে বাইতের অবমাননা, হারাম শরীফে পাপাচার অনুষ্ঠান এবং সুন্নাত পরিবর্তন পরিবর্ধনকারীদের জন্যে হাদীস সমূহে যে শাস্তির ও দণ্ডের হুঁশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছে ইয়াযীদের ক্ষেত্রে সেটাই কার্যকর হওয়ার সম্ভবনা ঘোলআনা।" (شرح تراجم ابواب صحيص البخاري- ٢٦٨)
.
আর শুধু মকবুল বান্দার মাধ্যমেই আল্লাহ তা'আলা তাঁর দ্বীনকে শক্তিশালী করেন না। বরং পাপীষ্ঠ ব্যক্তির দ্বারাও এসব কাজ করান। কেননা, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন,
ﻭَﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﻟَﻴُﺆَﻳِّﺪُ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺪِّﻳﻦَ ﺑِﺎﻟﺮَّﺟُﻞِ ﺍﻟْﻔﺎﺟِﺮِ.
"মহান আল্লাহ্ ফাজির বা ফাসিক লোক দ্বারা এ দ্বীনকে শক্তিশালী করেন।" (সহীহ বুখারী হাঃ ২৮৯৭সহীহ মুসলিম হাঃ ১১১)
.
অষ্টম হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ ইতিহাস ও হাদীস বিশারদ আল্লামা শামসুদ্দীন যাহাবী তাঁর রচিত বিখ্যাত 'সিয়ারু আ'লামিন নুবালা' গ্রন্থে বলেছেনঃ
ﻋﻦ ﻧﻮﻓﻞ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺍﻟﻔﺮﺍﺕ ، ﻗﺎﻝ : ﻛﻨﺖ ﻋﻨﺪ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻌﺰﻳﺰ ﻓﻘﺎﻝ ﺭﺟﻞ : ﻗﺎﻝ ﺃﻣﻴﺮ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﻳﺰﻳﺪ ، ﻓﺄﻣﺮ ﺑﻪ ﻓﻀﺮﺏ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺳﻮﻃﺎ .
‘'নওফাল বিন ফুরাত বলেন, আমি উমর ইবনে আবদুল আযীযের কাছে ছিলাম৷ তখন এক লোক এজিদের আলোচনা করতে গিয়ে বললো, ‘আমীরুল মুমিনীন এজিদ বলেছেন।’ এটি শুনে উমর ইবনে আবদুল আযীয সে লোককে চাবুক মারার জন্য আদেশ করলেন৷ ফলে তাকে বিশটি চাবুক মারা হলো।’' (ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আ'লামিন নুবালা, খ- ৪, পৃ- ৩৯)
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গবেষক ও মাওলানা।
0 Comments