Recent Tube

মরুভূমির হাতছানি, মুহিউল ইসলাম মাহিম চৌধুরী।



 মরুভূমির হাতছানি  
                    -পর্ব-৭ 
      ========®©®=======
    মাগরিবের সালাত অাদায় করলাম মসজিদে নববীতে । ইমামতি করলেন শায়েখ ডঃসালেহ অাল বুদাইর । তিনি মদীনার অাদালতের একজন জাস্টিস।  এত সূন্দর তেলাওয়াত করলেন মনে হল যেন অাল্লাহ তাঁদেরকে তৈরীই করেছেন দুই হারামের (মক্কা-মদীনা)  ইমাম হওয়ার জন্য৷। 

    সালতুল মাগরিব অাদায়ের পর অার দেরী সহ্য হলোনা । অগ্রসর হতে থাকলাম রাসূলুল্লাহ (স) এর রওজা মোবারকের দিকে । ভীড় লেগে অাছে । সারা দুনিয়ার হাজীরা উদগ্রীব হয়ে থাকেন প্রিয় নবী (স) এর রওজা মোবারক জিয়ারাতের জন্য । ভীড় ঠেলে অাস্তে অাস্তে হুজুর (স) এর মাক্ববারার একদম পাশে যখন  চলে গেলাম তখন কি যে এক অাবেগ অার হৃদয়মথিত অনুভবের মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেললাম তা কাগজের বুকে তুলে ধরার মত নয় । যেই নবীর কারণে অামরা দ্বীন পেয়েছি । যিনি ক্বিয়ামাতের দিন অাল্লাহর অনুমতিক্রমে অামাদের শাফায়াতকারী হবেন । যেদিন সূর্য মাথার উপরে প্রখর উত্তাপ ছড়াবে । ঘিলু বিগলিত হতে থাকবে। যেদিন অারশের ছায়া ছাড়া কোন ছায়া থাকবেনা । ময়দানে পানি পানি বলে  ত্রাহিত্রাহি রব ছড়িয়ে পড়বে সেদিন  অাশা করা যায় যিনি অামাদেরকে হাউজে কাওসারের পানি পান করাবেন ।  সেই নবী (স) এর বারজাখী ঘরবাড়ির দিকে অামি ক্রমশঃ ধাবমান । শতভাবনার মাঝেই পৌছে গেলাম প্রিয় নবী (স) এর রওজা মোবারকের একদম সামনে । প্রাণ উজাড় করে সালাত ও সালাম পেশ করলাম । 
অাসসালাতু অাসসালামু অালাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ । অাসসালাতু অাসসালামু অালাইকা ইয়া হাবিবাল্লাহ। 
অাসসালাতু অাসসালামু অালাইকা ইয়া খাইরিল খালকিল্লাহ।  
    হুজুরের পাশেই অারাম করে চিরনিদ্রায় শায়িত অাছেন  অামিরুল মু'মিনীন অাবু বকর সিদ্দীক (রা)।  তাঁরই পাশে খালিফাতুল মুসলিমিন ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা)। 
হযরত ওমর (রা) নবী পরিবার  থেকে এই জায়গাটুকু চেয়ে নিয়েছিলেন । তাঁর মনে বড় অাশা ছিল, হুজুর (স) যেখানে শায়িত অাছেন সেখানেই তিনি সমাহিত হবেন। 
 ইসলামে হযরত ওমরের  অবদন অনেক বেশী মনে করে এই জায়গাটুকু তাঁর জন্য ছেড়ে দেওয়া হয় । 
      প্রিয় নবীর মাক্ববারার সামনে থেকে যেতে মন চাইছিলোনা কিন্তু বেশী সময় নিলে অন্য মু'মীনের হক নষ্ট হবে তাই অাস্তে অাস্তে অগ্রসর হয়ে সালাম দিলাম অামিরুল মু'মিনীন অাবু বকর (রা) কে ।  অতঃপর সালাম পেশ করলাম দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা) কে । 
কিছুটা সামনে গিয়ে রওজাকে সামনে পেছনে না রেখে কি্বলামুখী হয়ে দু'হাত তোলে শুকরিয়া বাক্য পাঠ করে মুনাজাত করলাম । মুনাজাত শেষ করে পেছন ফিরতেই একজন সৌদী পুলিশ অামাকে বাহুডেরে জড়িয়ে কপালে চুমু দিতে থাকলো। কিন্তু কেন এই মুহাব্বাত, তাঁকে জিজ্ঞেস করিনি তবে বুঝতে পেরেছি । 
কারণ হিসেবে যা বুঝেছি সেটি হল, বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশের অধিকাংশ মানুষ অাবেগে ভুল করে। অার সেটি হল হুজুর (স) এর রওজার দিকে মুখ করে হাত তোলে মুনাজাত করতে থাকে।  এতে করে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ এবং কিছু হাইলি কোয়ালিফাইড স্কলারগণ (প্রশাসনিক দায়িত্বরত) বিদয়া, বিদয়া বলতে থাকেন । এই ক্ষেত্রে পুলিশ বুঝতে পেরেছে অামি সহীহভাবে জিয়ারাত সম্পন্ন করেছি এবং দোয়া করেছি। তাই সে খুশী হয়ে অামাকে চুম্বন করেছে ।
      জিয়ারত শেষ করে বিকল্প গেট দিয়ে  মসজিদে অাবারও প্রবেশ করলাম। অাসর থেকে এশার নামাজের পর পর্যন্ত মসজিদে মানুষের ভীড় থাকে বেশী । অামরা প্রতিদিন অাসরের সময় যেতাম অার এশার সালাত অাদায় করে ঘরে ফিরতাম । এশার পর খাওয়া দাওয়া শেষ করে অাবার চলে যেতাম মসজিদ চত্বরে।  খুব ভাল লাগতো । এ সময়ে মদীনার অনেক বাচ্চারা মসজিদে নববীর চত্বরে দৌড়াদৌড়ি করে । প্রিয় নবীর প্রিয় শহরের এই শিশুরা অনেক নম্র ও ভদ্র  প্রকৃতির । (Will run)
---------------------------------------------------------
লেখকঃ প্রবন্ধলেখকও কলামিস্।      

Post a Comment

0 Comments