Recent Tube

দেওবন্দী চরমনাই ভাইদের বাড়াবাড়ি বিষয়ে কিছু কথা ও নবী সম্পর্কে তাদের আকিদা তদন্ত: মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

               -------------------------------------
    দেওবন্দী ফিরকার অন্তর্গত চরমনাই পীরের মুরীদগণ ইদানিং আবারও হিংসাত্মক মনোভাব নিয়ে আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) এর বিভিন্ন লেখনী কাটছাঁট ও কনভার্ট করে নিজেদের ইচ্ছামত বিকৃত অর্থ করে তা মওদুদী (রাহঃ) এর ভ্রান্ত আকিদা বলে প্রচার করছে। আমি তাদের বলব, ভাই! অযথা অন্যের দোষ তালাশ না করে নিজের দোষত্রুটির দিকে তাকান। আমরা যদি আপনাদের ভ্রান্ত আকিদা তুলে ধরে তাহলে ট্যাগাল দিতে গিয়ে বিপদে পড়বেন। আপনাদের বড় একটি অভিযোগ হল- মওদুদী (রাহঃ) নবীদের মাসুম বা নিষ্পাপ বলে মনে করেন না। একটি ডাহামিথ্যে অভিযোগ। বরং দেওবন্দীরাই 'নবীগণ পাপী ও গুনাহগার' এ আকিদা লালন করে। 
.
    দেওবন্দীদের বিশাল আলেম, শাইখুল ইসলাম মাওলানা হুসাইন আহমাদ মাদানী নবীগণ এর বিষয়ে বলেনঃ
   "মাসুমের দ্বারা যদিও ইচ্ছাকৃত ভাবে কোনো পাপ কার্য হতে পারেনি, কিন্তু ভুল বুঝাবুঝিতে অনেক সময়ে তাঁদের দ্বারা বড় বড় পাপ কার্য (তথা কবীরা গুনাহ) হয়ে গেছে। কিন্তু বাহ্যত সেগুলো পাপ কাজ বলে মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে সেগুলো পাপ নয়।
   কাজেই সেগুলো প্রকৃত পাপ কাজ বলা যেতে পারে না। যেমন, উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে যে, হযরত মুসা (আ) তদীয় ভ্রাতা হযরত হারুন (আ) এর চুল ও দাড়ি ধরে টেনেছিলেন। এ কাজটি দ্বারা একজন নবী, যিনি তাঁর বড় ভাইও ছিলেন তাঁকে অপমান করা হয়েছে। এ কাজ অন্যের দ্বারা সংঘটিত হলে কুফরী বরং মারাত্মক ধরণের কুফরী বলে বিবেচিত হতো।
অনুরূপ হযরত মুসা (আ) তাওরাত লিখিত পাথর ফলক ছুড়ে মেরেছিলেন। যেমন পবিত্র কুরআনে আছে:
ﻭَﻟَﻤَّﺎ ﺭَﺟَﻊَ ﻣُﻮﺳَﻰٰٓ ﺇِﻟَﻰٰ ﻗَﻮْﻣِﻪِۦ ﻏَﻀْﺒَٰﻦَ ﺃَﺳِﻔًﺎ ﻗَﺎﻝَ ﺑِﺌْﺴَﻤَﺎ ﺧَﻠَﻔْﺘُﻤُﻮﻧِﻰ ﻣِﻦۢ ﺑَﻌْﺪِﻯٓۖ ﺃَﻋَﺠِﻠْﺘُﻢْ ﺃَﻣْﺮَ ﺭَﺑِّﻜُﻢْۖ ﻭَﺃَﻟْﻘَﻰ ﭐﻟْﺄَﻟْﻮَﺍﺡَ ﻭَﺃَﺧَﺬَ ﺑِﺮَﺃْﺱِ ﺃَﺧِﻴﻪِ ﻳَﺠُﺮُّﻩُۥٓ ﺇِﻟَﻴْﻪِۚ .
     মূসা রাগাম্বিত বিক্ষুদ্ধ অবস্থায় নিজ জাতির নিকট ফিরে এসে বললঃ আমার চলে যাওয়ার পর তোমরা কত নিকৃষ্ট প্রতিনিধিত্ব করেছ, তোমরা তোমাদের প্রভুর নির্দেশের পূর্বেই কেন তাড়াহুড়া করতে গেলে? অতঃপর সে (তাওরাত লিখিত) ফলকগুলি ফেলে দিল এবং স্বীয় ভাইয়ের মস্তক (চুল) ধরে নিজের দিকে টানতে লাগল। (সূরা আ'রাফঃ১৫০)
    আল্লাহর কিতাবকে তাও আবার সেই কিতাব যা স্বয়ং তাঁর উপরেই নাযিল করা হয়েছিল তা ছুড়ে মারা নিঃসন্দেহে বড় পাপ কাজ। যদি মাসূম নবীগণ বড় বড় অপরাধমূলক কার্যে লিপ্ত হয়ে পড়তে পারেন তবে যারা মাসূম বা নিষ্পাপ নয় তারা যত বড় গুণিই (ব্যাক্তি) হোক না কেন তারা তা পারবেন না।"
(মাকতুবাতে শায়খুল ইসলাম ১ম খন্ড, পৃঃ২৫৯ ও মালফুজাতে শায়খুল ইসলাম ১ম খন্ড, পৃঃ৪৭)
.
     হোসাইন আহমদ মাদানী হযরত মূসা (আ) সম্পর্কে আরো বলেনঃ
"মূসা (আ) এর হাতে 'কিবতী' এর নিহত হওয়া নছলী আসাবিয়াত তথা বংশীয় পক্ষপাতিত্বের কারণে হয়েছিল।" (মাকতুবাতে শাইখুল ইসলাম ১/২৪৩-২৪৪; তাফহীমুল মাসাইল ১/৩১৫)
.
      এখানে মাদানী সাহেব হযরত মূসা (আ) কে স্বজনপ্রীতি ও বংশীয় পক্ষপাতিত্বের দোষে অভিযুক্ত করেছেন। একজন শ্রেষ্ঠ নবীর নামে 'নছলী আসাবিয়াত' শব্দ প্রয়োগ করা অমার্জনীয় অপরাধ ও সম্পূর্ণ হারাম। কারণ, আসাবিয়াত অন্যায় ও যুলুম। নবী জুলুম করতে পারে না। হাদীসে আছে-
ﻟﻴﺲ ﻣﻨﺎ ﻣﻦ ﺩﻋﺎ ﺇﻟﻰ ﻋﺼﺒﻴﺔ، ﻭﻟﻴﺲ ﻣﻨﺎ ﻣﻦ ﻗﺎﺗﻞ ﻋﺼﺒﻴﺔ، ﻭﻟﻴﺲ ﻣﻨﺎ ﻣﻦ ﻣﺎﺕ ﻋﻠﻰ ﻋﺼﺒﻴﺔ
"ঐ ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়, যে আসাবিয়তের দিকে ডাকে, সেও আমাদের দলভুক্ত নয়, যে আসাবিয়তের কারণে লড়াই করে এবং সে-ও নয়, যে আসাবিয়তের উপর মৃত্যুবরণ করে।" (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস:৫১২১)
.
 অন্য হাদীসে আছে-
ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ! ﻣﺎ ﺍﻟﻌﺼﺒﻴﺔ؟ ﻗﺎﻝ : ﺃﻥ ﺗﻌﻴﻦ ﻗﻮﻣﻚ ﻋﻠﻰ ﻇﻠﻢ .
"হে আল্লাহর রাসূল! আসাবিয়ত কী? তিনি (সা) বললেন, নিজের কওমকে তার অন্যায় অবিচারের বিষয়ে সাহায্যকরা।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস:৫১১৯)
.
     মাদানী হযরত ইউনুস (আ) সম্পর্কে বলেনঃ
"আযাব দেখার পর ঈমান আনলে এ ঈমান উপকারে আসেনা। ইউনুস (আ) এর সম্প্রদায় কেবল এর ব্যাতিক্রম। এর কারণ হচ্ছে এই যে, তাদের উপরে মূলত আযাবই আসেনি। বরং হযরত ইউনুস (আ) এর জলদ বাজীর প্রেক্ষিতে আযাবের আকার পরিদৃষ্ট হয়েছিল।" (মালফুজাতে শাইখুল ইসলাম ১/৪৪, মাকতুবাতে শাইখুল ইসলাম ১/৮৩)
.
     এখানে মাদানী হযরত ইউনুস (আ) কে জলদবাজ বললেন। নাউযূবিল্লাহ!
সম্মানিত পাঠক! লক্ষ করুন হুসাইন আহমদ মাদানী কত আপত্তিকর ভাষায় নবীগণ এর সমালোচনা করেছেন। তিনি বাহ্যত নবীদের মাসূম বলেছেন আর কার্যত তাদেরকে বড় বড় পাপ ও অপরাধ মূলক কাজে লিপ্ত বলে কড়া সমালোচনা করেছেন। (নাউযুবিল্লাহ!)
.
'    নবীগণ পাপী ও গুনাহগার' এ আকিদা চরমোনাই পীর ও তাদের অনুসারীগণও লালন করেন। চরমনাই পীর তার রচিত  'আশেক মাশুক বা এস্কে এলাহী' বইয়ে বলেনঃ
"বাবা আদম খাইলেন গন্দম শয়তান দিল ধোঁকা।
আসমান সকল ভেদ করিয়া, পাঠাইলেন এই জঙ্গলে।
পাপে না ছাড়িল আমার বাবা (আদম) কে,
তিন শত বৎসর কান্দাইলেন ময়দানে।
তখন হইতে হুকুম হইল কান্দে জারে জার,
শত গুনাহ করে কান্দা আরাফাত মাঝার।"
(প্রমাণঃ আশেক মাশুক বা এস্কে এলাহী, পৃষ্ঠা নং ২৮) 
.
      তাহলে জানা গেল চরমনাই পীরের মতে হযরত আদম (আ) পাপী ছিলেন, শুধু এতো টুকুই নয় বরং শত গুনাহ করেছেন। নাউযূবিল্লাহ! এই হলো নবী রাসূলদের বিষয়ে দেওবন্দী ও চরমোনাইদের হক্কানী আকিদা। তাই বলি, অযথা হিংসার বশে মওদুদী (রাহঃ) কে বিদ্রূপ করেন না, হতে পারে আপনাদের চেয়ে আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) আল্লাহ তা'য়ালার নিকট উত্তম। আর হবেও তাই, ইনশাআল্লাহ! কেননা, আপনাদের চেয়ে আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) এর দ্বীনের খেদমত কম নয়। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِنْ قَوْمٍ عَسَىٰ أَنْ يَكُونُوا خَيْرًا مِنْهُمْ وَلَا نِسَاءٌ مِنْ نِسَاءٍ عَسَىٰ أَنْ يَكُنَّ خَيْرًا مِنْهُنَّ ۖ وَلَا تَلْمِزُوا أَنْفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ ۖ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ ۚ وَمَنْ لَمْ يَتُبْ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ.
"হে ঈমানদারগণ, কোন সম্প্রদায় যেন অপর কোন সম্প্রদায়কে বিদ্রূপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রূপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর কোন নারীও যেন অন্য নারীকে বিদ্রূপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রূপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর তোমরা একে অপরের নিন্দা করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ উপনামে ডেকো না। ঈমানের পর মন্দ নাম কতইনা নিকৃষ্ট! আর যারা তাওবা করে না, তারাই তো জালিম।" (সূরা হুজুরাত : ৪৯/১১)
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলান।         

Post a Comment

0 Comments