Recent Tube

ইসলামের সন্ধানে 'হাইব্রিড মুসলমান": জিয়াউল হক।

********************************************
       প্রায় পচিশ বছর আগে কুয়েতে অত্যন্ত জনপ্রিয় এক বাংলাদেশি আলেমের ঘরে রাতের খাবার খাচ্ছিলাম। বাংলাদেশ থেকে আগত জাতিয় পর্যায়ের এক রাজনৈতিক নেতা, কুয়েতে বাংলাদেশের তৎকালীন মান্যবর রাষ্ট্রদূত 'সহ আমরা সাত আটজন ছিলাম সেই ভোজে। নানাপদের খাবার আইটেমের মধ্যে দুম্বার মাংসও ছিল। প্রতিটা পদই দারুণ রান্না হয়েছিল। 

    সে কথাটা বলেছিলাম কিন্তু আমার মুখে দুম্বার মাংসের স্বাদটা অসাধারণ ঠেকেছিল বিধায় সেটার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করে বলেছিলাম, যে দুম্বার মাংসটা অসাধারণ দক্ষতায় রান্না করা হয়েছে। খাবার টেবিলে সকলের সামনেইমেজবান উক্ত মাওলানা বেশ উষ্মা মিশিয়ে বলেছিলেন; আমরা 'মাংস' খাই না, 'গোশত' খাই!
  শ্লেষমিশ্রিত কন্ঠে তার সেই জবাবটা আজও আমার কানে বাজে। 
বিব্রত হয়ে এক প্রকার রাগ ও ক্ষোভেই চুপ করেছিলাম এর পরে। কিন্তু তিনি বোধহয় কিছুটা আঁচ করতে পেরে ব্যাখা করে বুঝিয়ে দেবার চেস্টা করেছিলেন বাংলা ভাষার ব্যাকারণকে ভিত্তি করে মাংসের সমাস বিশ্লেষণ করে। বলেছিলেন; 'মাংস' হিন্দুরা বলে কারণ, তারা গরুকে মা মনে করে, তাই গরুর গোশতকে তারা 'মায়ের অংশ' মাংস বলে। আমি তার সাথে আর কোন বিতর্কে জড়াই নি। রুচিই হয়নি। চুপ থেকেছি। কারণ একজন আলেমের সাথে বিতর্কে জড়াতে চাইনি। 

   চাইলে অনেক কিছুই বলা যেতে পারতো। গরুকে তারা মা মনে করলেও ছাগল খাশি, মুরগী এসব তো আর মা নয়! 'মাংস' যে 'মায়ের অংশ' নয় সেটা বলতে পারতাম, বলতে পারতাম বাংলা ব্যাকারণের সমাস বিশ্লেষণেও মায়ের অংশ 'মাংশ' হলেও হতে পারে। কিন্তু তা কোনমতেই মাংস হতে পারে না।    

     হঠাৎ করেই সে ঘটনাটা মনে পড়লো, কারণ, কয়েকদিন আগে সোস্যাল মিডিয়াতে একটা ভিডিও দেখলাম। মাওলানা ড: যাকারিয়া সাহেব কোন এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত শ্রোতাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত লিখিত প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন। এক শ্রোতা তাঁকে প্রশ্ন করেছেন 'গোশত'কে 'মাংস' বলা যাবে কি না? 'মাংস' বলাটা ইসলামসম্মত হবে কিনা? সুন্দর ও যৌক্তিক জবাব দিয়েছেন ড: যাকারিয়া।

     পচিশ বছর পেরিয়েও আমার বিষ্ময় কাটেনি। জাতি হিসেবে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক স্তর কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে? দেশের আনাচে কানাচে খৃষ্টান মিশনারী পাদ্রিরা দ্বারে দ্বারে গিয়ে খৃষ্টধর্ম প্রচার করছে, অজ্ঞ, হতদরিদ্র মুসলমানরা দলে দলে খৃষ্টান হয়ে যাচ্ছে! সে বিষয়ে এসব যুবকদের কোন মাথাব্যাথা নেই। বিগত ৯ই জুলাই জাতিয় পত্রিকা মানবজমিনের এক রিপোর্টে দেখলাম ঢাকায় সমকামীদের ক্লাব প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। সারাদেশে তাদের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। 

     আজ ১৪ই জুলাই, ২০২০ বিডিটুডে.নেট ফাতিহ২৪ এর একটা রিপোর্ট ছাপিয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে; 'বাংলাদেশের দণ্ডবিধি অনুযায়ী সমকামিতা একটি ফৌজদারি অপরাধ হলেও অনলাইনে প্রকাশ্যেই চলছে এর প্রচারণা। ওয়েবসাইট, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, ব্লগ ইত্যাদি বিভিন্ন মাধ্যমে সমকামিতার পক্ষে কথা বলছেন অনেকেই।'  

      কিছুদিন ধরে দেশে ধর্ষণের মহোৎসব চলছে। কোন নারীই ঘরের বাইরে নিরাপদ নয়। ওয়েবসিরিজের নামে সারা দেশে অশ্লীলতার সয়লাবে ঘর ভাংছে, যুব সমাজ বিপথে ধাবিত হচ্ছে! সে সবে এদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। এরা আছে মাংস বলাটা ইসলামসম্মত হবে কি না। কারণ সমাজ বদলানোর চেষ্টা করাটা রাজনীতি!
  
      মনে পড়ে ১৯৯৫ সালে বসনিয়ায় মুসলমানদের কচুকাটা করছে নারকীয় নৃশংসতায়, তখন মক্কায় ওআইসি’র (OIC) ফতোয়া বোর্ডের বৈঠকে বিশ্বমুসলিম সম্প্রদায়ের মুফতিরা বিশাল জটিল বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন বেশ ক’দিন। এজেন্ডা কী ছিল জানেন? দেখে নিন;
      এক- মহিষ জবাই করা হালাল কি না?
দুই- কাকের মাংশ হালাল না হারাম?
তিন- মুসলমান পুরুষের দাঁড়ি কতটুকু লম্বা হওয়া উচিৎ? এর কোন বৈশ্বিক মান নির্ধারণ করা যায় কি না!
     চার- মেয়েদের নেকাবের মধ্যে এক চোখ বা দুই চোখ খোলা রাখা যায় কী না?
    পাঁচ- কারবালা অভিমূখে যাত্রার প্রাক্কালে ইমাম হোসেন ইসতিখারা করলেন না কেন?
    ছয়- হজ্জের সময় মিনায় শয়তানের উদ্দেশ্যে পাথর ছোঁড়ার ক্ষেত্রে এক বা একাধিক পাথর লক্ষ্যচ্যুত হলে তার কোন কাফফারা দিতে হবে কী না!
    সাত- আধুনিক যুগে ফরজ নামাজ কসর করার বিধান কী হতে পারে?

     ঐ একই সময়ে বসনিয়ার প্রেসিডেন্ট আলিয়া ইজ্জেতবেগভিচ ওআইসি, জাতিসংঘসহ বিশ্বের সকল প্রতিষ্ঠানের কাছে বসনিয়ার মুসলমানদের বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে ফিরছিলেন! বিশ্ব তাঁর সেই আকুতি শোনেনি। কানই দেয়নি সে মর্মস্পর্শী আহ্বানে! বিশ্ব না হয় শোনেনি, বিশ্বের দেড়শত কোটি মুসলমান কেন সেদিন সেই আহ্বানে সাড়া দেয়নি?

     রাজনীতি করা হারাম! তাই ওআইসি'র ফতোয়া বোর্ড সেদিন ‘রাজনীতি’ হতে দুরে থেকেছে! বসনিয়ায় যা হচিছল, তা ছিল রাজনীতি! রাজনীতিতে মুফতিদের মাথাব্যাথা ছিল না বলে তারা আলিজা ইসকোভিচের ডাকে সাড়া দেয় নি! তারা ব্যস্ত ছিল কাকের মাংস হালাল না হারাম, তা নির্ধারণে!

       আজও আধুনিক মুসলিম যুবসমাজ খুঁজে ফিরছে 'মাংস' না 'মাংশে' ইসলাম রয়েছে, সেটি। তারা রাজনীতি থেকে সযত্নে দুরে রয়েছেন! তারা বুঝছেন না যে, রাজনীতি ছাড়া ইসলাম 'ইসলাম'ই নয়। যে ইসলামে রাজনীতি নেই, সে ইসলাম মানবতার কোন উপকারই করতে পারে না। পরাধীনতা থেকে মুক্তি দেয়া তো দুরের কথা। হাইব্রিড মুসলমানরা এ নিরেট সত্যটা বুঝবেন কবে? (সংক্ষেপকৃত)
--------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা,প্রবন্ধ লেখক ও কলামিস্ট।

Post a Comment

0 Comments