Recent Tube

শাইখ বিন বায (রাহঃ) এর দৃষ্টিতে আল্লাহর আইন বাস্তবায়নের গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা: মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

     -------------------------------------
    ইসলাম বিশ্ব মানবের একমাত্র জীবন বিধান। দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতে মুক্তির জন্য দীন ইসলামের কোন বিকল্প নাই। ইসলামের ব্যাপ্তি, সর্বজনীনতা ও গ্রহণযোগ্যতা তাকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। ইসলামের এ শ্রেষ্ঠত্বের বহিঃপ্রকাশ মানব সমাজে বাস্তবায়ন ছাড়া সম্ভব নয়। তাই ইসলাম প্রিয় প্রতিটি (ঈমানদার) মানুষের কাছে তার দাবী হচ্ছে ইসলামী (আইন) শরীয়তকে আল্লাহর জমিনে বাস্তবায়ন করা। মানব জীবনের সর্বক্ষেত্রেই ইসলামের বিধান কে বাস্তবায়ন করা (ফরজ) অপরিহার্য কর্তব্য। 
.
এ বিষয়ে  শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুফতি ও আরব বিশ্বের অন্যতম আলেম শাইখ আল্লামা আব্দুল আযীয বিন বায (রাহঃ) 
وجوب تحكيم شرع الله ونبذ ما خالفه.
"আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন এর পরিপন্থী বিষয় বর্জনের অপরিহার্যতা"
নামক ছোট্ট একটি কিতাব লিখে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। 
.
   শাইখ আল্লামা আব্দুল আযীয বিন বায বলেনঃ
"আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেছেন যে, আল্লাহর আইন অনুযায়ী শাসন পরিচালনা না করা জাহেলী শাসন। আল্লাহর আইন থেকে বিমুখ হওয়া তাঁর এমন শাস্তি ও পাকড়াওয়ের কারণ যা যালিম কওম থেকে অপসারিত হয় না। তিনি বলেন:
.
ﻭَﺃَﻥِ ﺍﺣْﻜُﻢْ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﺑِﻤَﺎ ﺃَﻧْﺰَﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺘَّﺒِﻊْ ﺃَﻫْﻮَﺍﺀَﻫُﻢْ ﻭَﺍﺣْﺬَﺭْﻫُﻢْ ﺃَﻥْ ﻳَﻔْﺘِﻨُﻮﻙَ ﻋَﻦْ ﺑَﻌْﺾِ ﻣَﺎ ﺃَﻧْﺰَﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺇِﻟَﻴْﻚَ ﻓَﺈِﻥْ ﺗَﻮَﻟَّﻮْﺍ ﻓَﺎﻋْﻠَﻢْ ﺃَﻧَّﻤَﺎ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻥْ ﻳُﺼِﻴﺒَﻬُﻢْ ﺑِﺒَﻌْﺾِ ﺫُﻧُﻮﺑِﻬِﻢْ ﻭَﺇِﻥَّ ﻛَﺜِﻴﺮًﺍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻟَﻔَﺎﺳِﻘُﻮﻥَ ﺃَﻓَﺤُﻜْﻢَ ﺍﻟْﺠَﺎﻫِﻠِﻴَّﺔِ ﻳَﺒْﻐُﻮﻥَ ﻭَﻣَﻦْ ﺃَﺣْﺴَﻦُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺣُﻜْﻤًﺎ ﻟِﻘَﻮْﻡٍ ﻳُﻮﻗِﻨُﻮﻥَ
.
     তুমি আল্লাহর নাযিল করা বিধান অনুযায়ী লোকদের যাবতীয় পারস্পরিক ব্যাপারে ফয়সালা কর এবং তাদের প্রবৃত্তির চাহিদার অনুসরণ করো না। সাবধান থাক, তারা যেন তোমাকে ফেতনায় নিক্ষেপ করে আল্লাহর নাযিল করা বিধান থেকে এক বিন্দু পরিমাণ বিভ্রান্ত করতে না পারে। আর তারা যদি বিভ্রান্ত হয় তবে জেনে রাখ যে, আল্লাহ তাদের কোন কোন গুনাহের শাস্তি স্বরূপ তাদেরকে (জাহান্নামের) কঠিন আযাবে নিক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। বস্তুত অনেক লোকই ফাসেক। তারা কি জাহেলী আইন কানুন চায়? যারা আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখে তাদের নিকট আল্লাহ অপেক্ষা উত্তম বিধানদাতা আর কে হতে পারে? 
(আল মায়েদা : ৪৯ ও ৫০)।
.
     এ আয়াতের পাঠক একটু চিন্তা করলে দেখতে পাবেন যে, আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী শাসন পরিচালনার নির্দেশকে আটটি উপায়ে তাকীদ করা হয়েছে।
.
  প্রথম: আল্লাহর আইন অনুযায়ী শাসনের নির্দেশ প্রদান
ﻭَﺃَﻥِ ﺍﺣْﻜُﻢْ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﺑِﻤَﺎ ﺃَﻧْﺰَﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ
“তুমি আল্লাহর নাযিল করা বিধান অনুযায়ী লোকদের মধ্যে ফায়সালা কর।”
.
   দ্বিতীয়: কোন অবস্থাতেই যেন মানুষের প্রবৃত্তি, ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষা আল্লাহর আইন অনুযায়ী শাসন করার পথে প্রতিবন্ধক না হয়।
ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺘَّﺒِﻊْ ﺃَﻫْﻮَﺍﺀَﻫُﻢْ
“তাদের নফসানী খাহেশাতের অনুসরণ করো না।”
.
       তৃতীয়: কম বেশী ও ছোট বড় সকল বিষয়ে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী শাসন না করার ব্যাপারে সতর্ক ও সাবধান থাকার নির্দেশ
ﻭَﺍﺣْﺬَﺭْﻫُﻢْ ﺃَﻥْ ﻳَﻔْﺘِﻨُﻮﻙَ ﻋَﻦْ ﺑَﻌْﺾِ ﻣَﺎ ﺃَﻧْﺰَﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺇِﻟَﻴْﻚَ
“সাবধান থাক, তারা যেন তোমাকে ফেৎনায় নিক্ষেপ করে আল্লাহর নাযিল করা বিধান থেকে সামান্য পরিমাণে বিভ্রান্ত করতে না পারে।”
.
       চতুর্থ : আল্লাহর আইন থেকে বিমুখ হওয়া বড় ধরনের অপরাধ এবং কঠিন শাস্তির কারণ:
ﻓَﺈِﻥْ ﺗَﻮَﻟَّﻮْﺍ ﻓَﺎﻋْﻠَﻢْ ﺃَﻧَّﻤَﺎ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻥْ ﻳُﺼِﻴﺒَﻬُﻢْ ﺑِﺒَﻌْﺾِ ﺫُﻧُﻮﺑِﻬِﻢْ
“আর তারা যদি (আল্লাহর আইন থেকে) মুখ ফিরায়ে নেয় তাহলে জেনে রাখ যে আল্লাহ তাদের কিছু গুনাহের শাস্তিস্বরূপ (জাহান্নামের) কঠিন বিপদে নিক্ষেপ করতে চান।”
.
       পঞ্চম: আল্লাহর আইন থেকে বিমুখদের আধিক্য দেখে অহমিকা প্রদর্শনের ব্যাপারে সতর্ক ও সাবধান করা হয়েছে। আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কৃতজ্ঞদের সংখ্যা কমই হয়ে থাকে।
ﻭَﺇِﻥَّ ﻛَﺜِﻴﺮًﺍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻟَﻔَﺎﺳِﻘُﻮﻥَ
“বস্তুত মানুষের মধ্যে অনেকেই ফাসেক।”
.
     ষষ্ঠ: আল্লাহর আইন ছাড়া অন্য আইন অনুযায়ী শাসন করাকে জাহেলী শাসন বলা হয়েছে।
ﺃَﻓَﺤُﻜْﻢَ ﺍﻟْﺠَﺎﻫِﻠِﻴَّﺔِ ﻳَﺒْﻐُﻮﻥَ
“তারা কি জাহেলী আইন কানুন চায়?”
.
   সপ্তম: আল্লাহর আইন ও বিধান সর্বশ্রেষ্ঠ বিধান ও সবচেয়ে ইনসাফপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
ﻭَﻣَﻦْ ﺃَﺣْﺴَﻦُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺣُﻜْﻤًﺎ
“আল্লাহ থেকে উত্তম বিধানদাতা আর কে হতে পারে?”
.
      অষ্টম: আল্লাহর প্রতি ঈমান ও বিশ্বাসের অনিবার্য দাবী হলো এ কথা অনুধাবন করা যে, আল্লাহর আইন সর্বশ্রেষ্ঠ, পরিপূর্ণ এবং সবচেয়ে বেশী ইনসাফপূর্ণ। এ আইনকে সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করা এবং এর প্রতি অনুগত হওয়া অত্যাবশ্যক।
ﻭَﻣَﻦْ ﺃَﺣْﺴَﻦُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺣُﻜْﻤًﺎ ﻟِﻘَﻮْﻡٍ ﻳُﻮﻗِﻨُﻮﻥَ
“যারা আল্লাহর প্রতি ইয়াকীন ও বিশ্বাস রাখে তাদের নিকট আল্লাহ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ বিধানদাতা আর কে হতে পারে?”
[আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন এবং পরিপন্থী বিষয় বর্জনের অপরিহার্যতা, পৃঃ২৩-২৬]
.
 শাইখ আল্লামা আব্দুল আযীয বিন বায (রাহঃ) আরো বলেনঃ

"তাগুতের দাসত্ব ও অনুসরণ থেকে মুক্ত হয়ে জীবনের সকল ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত বা দাসত্ব কালেমায়ে শাহাদাতের অনিবার্য দাবী। কালেমায়ে শাহাদাতের মধ্যদিয়ে একজন লোক এ ঘোষণাই দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, কোন বিষয়ে কেউ তাঁর শরীক নেই এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল। শাহাদাতের এ ঘোষণার অর্থ হলো একমাত্র আল্লাহই মানুষের রব এবং তাদের ইলাহ। তিনিই তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই তাদেরকে নির্দেশ দিবেন ও নিষেধ করবেন। জীবন মৃত্যুর মালিক একমাত্র তিনি। তিনিই হিসেব নিবেন। কাজের প্রতিদান দিবেন। অতএব আনুগত্য ও দাসত্বও একমাত্র তারই অধিকার, অন্য কারো জন্য নয়। আল্লাহ এরশাদ করেছেন:
ﺃَﻟَﺎ ﻟَﻪُ ﺍﻟْﺨَﻠْﻖُ ﻭَﺍﻟْﺄَﻣْﺮُ
“জেনে রাখ, সৃষ্টি এবং বিধান তাঁরই” (আল আরাফ: ৫৪)।
যেহেতু তিনিই এককভাবে সৃষ্টি করেছেন সেহেতু আইন ও বিধান দেওয়ার অধিকার একমাত্র তাঁরই। অতএব তাঁর আইন বিধানের অনুসরণ করতে হবে।"
[আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন এবং পরিপন্থী বিষয় বর্জনের অপরিহার্যতা, পৃঃ১৯]
.
    শাইখ বিন বায রাহিমাহুল্লাহ এর উল্লেখিত আলোচনায় এ কথা সুস্পষ্ট হলো যে. আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করা, সে আইন অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করা, “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।” এ সাক্ষ্যের অনিবার্য দাবী। সুতরাং আল্লাহর আইনের বিপরীতে তাগুত বা তাগুতপন্থী শাসকের আইন মেনে নেয়া মহান আল্লাহর প্রতি ঈমানের পরিপন্থী। আর তা কুফরী, জুলুম ও ফাসেকী।
.
   আল্লাহ এ প্রসঙ্গে এরশাদ করেন:
ﻭَﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﺤْﻜُﻢْ ﺑِﻤَﺎ ﺃَﻧْﺰَﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓَﺄُﻭﻟَﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻜَﺎﻓِﺮُﻭﻥَ... ﻓَﺄُﻭﻟَﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟﻈَّﺎﻟِﻤُﻮﻥَ... ﻓَﺄُﻭﻟَﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻔَﺎﺳِﻘُﻮﻥَ.
.
“আল্লাহর নাযিল করা বিধান অনুযায়ী যারা শাসন করেনা তারাই কাফের... তারা জালেম... তারা ফাসেক।” 
(আল-মায়েদা :৪৪, ৪৫ও ৪৭)
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলান।        

Post a Comment

0 Comments