Recent Tube

আহলে হাদীসের সহীহ-ভ্রান্ত ফতুয়া ও পর্যালোচনাঃ -১, মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

আহলে হাদীসের সহীহ-ভ্রান্ত ফতুয়া ও পর্যালোচনাঃ -১
----------------------------------
আহলে হাদীসের শীর্ষস্থানীয় শায়খ ড. আসাদুল্লাহ আল গালীব বলেন,
"মুসলিম হৌক বা অমুসলিম হৌক প্রতিষ্ঠিত কোন সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ইসলামের নীতি নয়।" (জিহাদ ও ক্বিতাল পৃঃ ৪২ এবং পৃঃ ৯২)
.
পর্যালোচনাঃ -১
    তিনি যাকে ইসলামের নীতি নয় বলে কুফুরী নীতির দিকে ইঙ্গিত করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছেন, মূলত সেটাই ইসলামের নীতি। অর্থাৎ শাসক হোক, প্রজা হোক ইসলাম কাফিরদের তিনটি অপশনের মধ্যে যেকোন একটি অপশন গ্রহণের সুযোগ দেয়। (এর বাহিরে কোন অপশন নেই)
১. ইসলাম গ্রহণ করা
২. জিযইয়া প্রদান করে ইসলামী রাষ্ট্রের অধীন থাকা।
৩. যুদ্ধের ফায়সালা মেনে নেওয়া।
(সূরা তওবাঃ৯/২৯; সহীহ বুখারী হাঃ ৩১৫৯; সহীহ মুসলিম, ইফা হাঃ ৪৩৭২; তিরমিযী হাঃ ১৫৫৩; মুসনাদে আহমদ ৫/৪৪০-৪৪১)
.
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
قَاتِلُوا الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلَا يُحَرِّمُونَ مَا حَرَّمَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَلَا يَدِينُونَ دِينَ الْحَقِّ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ حَتَّىٰ يُعْطُوا الْجِزْيَةَ عَنْ يَدٍ وَهُمْ صَاغِرُونَ.
তোমরা যুদ্ধ কর আহলে কিতাবের সে সব লোকের সাথে যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসে ঈমান রাখে না এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম মনে করে না, আর সত্য দ্বীন গ্রহণ করে না, যতক্ষণ না তারা স্বহস্তে নত হয়ে জিযইয়া দেয়। (সূরা তওবাঃ৯/২৯)
.
   আয়াতে বলা হয়েছেঃ
 حَتَّىٰ يُعْطُوا الْجِزْيَةَ عَنْ يَدٍ وَهُمْ صَاغِرُون.
“যতক্ষণ না তারা স্বহস্তে নত হয়ে জিযইয়া প্রদান করে"। এ বাক্য দ্বারা যুদ্ধ-বিগ্রহের একটি সীমা ঠিক করে দেয়া হয়। অর্থাৎ তাবেদার প্রজারূপে জিযইয়া কর প্রদান না করা পর্যন্ত কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। (তাফসীরে সা'দী)
.
  হযরত ‘উমার (রাঃ) তাঁর শাসনামলে কাফির মুশরিক এবং তাদের প্রতিষ্ঠিত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন বড় বড় শহরের দিকে সৈন্য দল প্রেরণ করেন। মুজাহিদের এক দল যখন প্রতিষ্ঠিত সরকার তথা বাদশাহ কিসরার দেশে পৌঁছিলে কিসরার এক সেনাপতি চল্লিশ হাজার সৈন্য নিয়ে মুজাহিদদের মুকাবিলায় আসে। আলোচনার এক পর্যায়ে মুগীরাহ ইবনু শু‘বাহ (রাঃ) প্রতিষ্ঠিত সরকারের সেনাপতিকে বললেন, 
فَأَمَرَنَا نَبِيُّنَا رَسُوْلُ رَبِّنَا صلى الله عليه وسلم أَنْ نُقَاتِلَكُمْ حَتَّى تَعْبُدُوْا اللهَ وَحْدَهُ أَوْ تُؤَدُّوْا الْجِزْيَةَ.
আমাদের নাবী ও আমাদের রবের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন, যে পর্যন্ত না তোমরা (ইসলাম গ্রহণ করে) এক আল্লাহ্ তা‘আলার ‘ইবাদাত কর কিংবা (ইসলামী রাষ্ট্রের অনুগত হয়ে) জিযইয়া দাও।
(সহীহ বুখারী হাঃ ৩১৫৯; ইফাঃ ২৯৩৪)
.
    প্রতিষ্ঠিত কুফফার সরকারের বিরুদ্ধে যদি যুদ্ধ করা ইসলামের নীতি না হতো তাহলে রাসূলুল্লাহ (সা) এবং সাহাবাগণ সহ লক্ষ লক্ষ মুসলিম কি কাফিরদের রাষ্ট্রে যুদ্ধ করে কুফুরী নীতি গ্রহণ করেছেন। (নাউযুবিল্লাহ)! তাছাড়া আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যেখানে কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদেশ করেছেন, সেখানে গালীব এটা "ইসলামের নীতি নয়" বলার সাহস পেলেন কোথায়?  সরকারের পোষা দরবারী আলেমদের জন্য ইসলাম যত বেশি ক্ষতি হচ্ছে তত বেশি ইসলামের প্রকাশ্য দুশমনদের দ্বারাও হয় না।
.
    হযরত যিয়াদ বিন হুদায়র বলেন, আমাকে একদিন হযরত ওমর (রা) বললেন, 
هل تعرف ما يهدم الاسلام؟ قلت لا، قال يهدمه زلت العالم وجدال المنافق بالكتاب وخكم الأءمة المضلين.
তুমি কি জানো কিসে ইসলাম ধ্বংস করবে? আমি বললাম, না। ওমর (রা) বললেন, আলেমদের পদস্খলন, আল্লাহর কিতাব নিয়ে মুনাফিকের ঝগড়া এবং পথভ্রষ্ট নেতাদের শাসনই ইসলামকে ধ্বংস করবে। (সুনানে দারেমী, হাঃ ২১৪; মিশকাত, হাঃ ২৬৯; সনদ সহীহ)
.
    আল্লাহ তা'আলা বলেন, 
أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللَّهُ الَّذِينَ جَاهَدُوا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِينَ.
তোমরা কি মনে কর যে, তোমরা এমনি এমনি জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ এখনো জানেননি তাদেরকে যারা তোমাদের মধ্য থেকে জিহাদ করেছে এবং জানেননি ধৈর্যশীলদেরকে। (সূরা আলি ইমরানঃ৩/১৪২)
.
    জিহাদের উদ্দেশ্য হলো কাফিরদের শান-শওকত ভেঙে দেওয়া এবং ইসলামের শান-শওকত প্রতিষ্ঠা করা এবং আল্লাহর কালিমা (বিধান) বুলন্দ করা। যার অর্থ আমরা এটা বরদাশত করে নিবো যে, তোমরা যদি ইসলাম গ্রহণ না করো, তাহলে ঠিক আছে, ইসলাম গ্রহণ করো না। এর জন্য পরকালে তোমাদের শাস্তি ভোগ করতে হবে। তবে তোমরা স্বীয় কুফুর এবং জুলুমের আইন আল্লাহর জমিনে বাস্তবায়িত করবে, আর আল্লাহর বান্দাদেরকে স্বীয় গোলামে পরিণত করবে, তাদেরকে তাদেরকে অত্যাচারের লক্ষ্যবস্তু বানাবে এবং আল্লাহর আইনের পরিপন্থী কুফুরী আইন বাস্তবায়িত করবে, সেসব আইনের মাধ্যমে ফাসাদ ছড়াবে, সেটার অনুমতি আমরা তোসাদের দিবো না। সুতরাং হয় তোমরা ইসলাম গ্রহণ করো, আর যদি ইসলাম গ্রহণ না করো তাহলে তোমাদের ধর্মের উপর থাকো। তবে জিযইয়া প্রদান করো। এর অর্থ হলো আমাদের ও আমাদের ইসলামী আইনের বুলন্দ মেনে নাও। যে আইন তোমরা চালু করেছো, তা বান্দাকে বান্দার গোলাম বানানোর আইন। আমরা এমন আইন চালু থাকতে দিবো না। আল্লাহর আইনে আল্লাহর জমিনে কানুন বাস্তবায়িত হবে। আল্লাহর কালিমাই থাকবে সুউচ্চ। (দারসে তিরমিযী ৫/৪৭৯)
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলানা।

Post a Comment

0 Comments