Recent Tube

বিতিকিচ্ছা-১২ নুর মুহাম্মদ চৌধূরী।


     
          নবেল ডাকাতিঃ"কথা বলো-গাছ"
                 *********************
        মাটির পৃথিবীর উপর  দু'পায়ে ভর করে চলতে পারে মানুষ, ডানা মেলে হাওয়ায় উড়ে চলে যায় পাখী, আর সাঁতরে চলে জলোর মাছ। তবে চলতে পারে না গাছ। ওদের সাবারই কিন্তু জীবন আছে, তাই সবাই ওরা জীব। আছে কি কোথাও বলতে পারে কেউ,'হে গাছ তুমি নিস্প্রান, তুমি নির্জীব'।

     তবে প্রাণী বিজ্ঞানে  এড়িয়ে যাওয়া হয় গাছের কথা। ওরা জড় এবং বাক শক্তি হীন বলেই এমনটি। জড় হোক আর গতিপ্রবন হোক,- প্রাণ থাকলে প্রাণী তাকে বলতেই হবে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, গাছের যে প্রাণ আছে, তা কোন বিজ্ঞানী মহোদয় নাকি হঠাৎ আবিষ্কার করে জেঁকে বসলেন মসনদে। এ মশাইয়ের আগে নাকি পৃথিবীব্যাপী মানব মণ্ডলীর  কেউই তা জানতো না। আমি কিন্তু এ মশাইয়ের এমন আবিস্কারের জন্য তাকে ধন্য বলতে নারাজ। কারণ শিশুকাল থেকেই দেখে আসছি যা- গাছেরও শিশুকাল আছে, আছে যৌবন, আছে বার্ধক্য, আছ খাদ্য গ্রহনের প্রয়োজনীয়তা,আছে রোগ-বালাই, আছে মৃত্যু। তার পরিচর্যার দরকার হয়, উপযুক্ত পরিবেশ ছাড়া তার বেড়ে উটা সাবলীল হয় না, ইত্যাদী। হালে একদিন মশাই ঘুম থেকে উটে হঠাৎ অবলোকন করলেন "গাছের প্রাণ আছে"
 আর ঘুমিয়ে থাকা পৃথিবী তোড়জোড়ে জেগে উটে ধুমাধূম চিৎকার শুরু করল," সাবাস, সাবাস জগদীশ, সাবাস সাবাস চমৎকার। এবার কিন্তু তোমারই জন্য নবেল ডবেল পুরষ্কার"।
    আজগুবি কাণ্ড, তেলেসমাতি কারখানা। পরিকল্পিত মাতামাতি ও আন্দোলন। আর হটকারী নির্বাচন ও পুরষ্কার প্রদান। এগুলো সবই এক কৌশলী গোষ্ঠীর সূদুর প্রসারি চক্রান্তের ফসল।
      তবে চক্রান্ত হোক আর যা ই হোক- কাজ কিন্তু আগেই সারা হয়ে গেছে। নবেল হারিয়ে গেছে হটকারীদের নিপূন ক্রীয়ায়। এতে সমাজ জাগানীয়া, বিদ্রোহী,  বিপ্লবীরা হয় উপেক্ষীত, আর তেলেগু চাটকবাজ চামচারা তথা মানুষ ও মানবতার শত্রুরা হয় পুরুষ্কৃত। 
      তবে, 'গাছ', সে তো নির্বিকার। সে বোবা হয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইল। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের মানবতার চিত্র দেখেইকি সে বোবা বনে গেল? আমরাতো জানি, বোবার শত্রু নাই। কিন্তু এ তো স্পষ্ট শত্রুতা। তারপরও তার এই নির্বাক হবার সুবিধাটুকু নিয়ে মানবজাতির কতইনা নির্মমতা! আহারে গাছ! কথা বলো গাছ, কথা বলো। গাছ, তুমি হয়ত বলবে, কি লাভ বলো কথা বলে? কথাতো তোমরাও বলছো, কিন্তু সব কথাতো স্থান পায় না খাতায়। কথার জোর থাকতে হয়। দেখোনা ক্ষীন কণ্ঠে কথা বলে সে কথার প্রতিষ্ঠা লাভ হয় না। দেখোনা ক্ষীন কণ্ঠে কথা বলে ইতিহাস বিকৃতির ধারা কি ঠেকানো যাচ্ছে? কত মুক্তি যোদ্ধের ইতিহাস হচ্ছে বিকৃত, কত স্বাধীনতার ইতিহাস হচ্ছে কলংকিত। কত  সংগ্রামী, কত বিপ্লবী হচ্ছে দালাল, আর কত দালাল হচ্ছে মহানায়ক। সুতরাং কি লাভ বলো কথা বলে?
      নির্বাক গাছ নিয়ে বিশ্ব মোড়লদের অপতৎপরতা যখন ষোলকলায় পর্যবসিত হল,তখন আগের যুগের অন্ধরা  কস্মিন কালে না দেখে থাকলেও এখন কিন্তু ঠিকই দেখবে- গাছের শিশুকাল আছে, যৌবন, বার্ধক্য আছে, খাদ গ্রহন ও মৃত্যু সবই আছে, গাছেরও প্রাণ আছে।
তবে গাছ চলতে পারে না, যায় না হাঠে, তাই বলে তাকে প্রাণহীন ভাবার ব্যর্থ  চেষ্টা করা হয় বারবার। কিন্তু সে তো নড়ছে। প্রতিনিয়ত তার হৃদ-স্পন্দন, কত না ছন্দ-হিন্দোল নড়া। তার নড়ন চড়নে কতনা ভাবুক কবির মনে কবিতার চারা শীকড় গজায়।  আর সৃষ্টি হয় নতুন ধাঁচে সমাজ সাজানোর যুগান্তকারী ক্রীয়াকলাপ। 
        তবে পার্থক্য যদি করতেই হয়- একটা বিষয় যায় না এড়িয়ে যাওয়া। তা হচ্ছে কথা বলার শক্তি। হে গাছ তুমি কথা বলো। দেখছো না তোমায় নিয়ে হাদারামদের কতইনা ঋণাত্বক বাদানুবাদ। কতইনা ভেলকীবাজের বাহারি কাণ্ড কারখানা। তুমি কি এভাবে নিরব থেকে থেকে সয়ে যাবে সব যুগ যুগ ধরে। তুমি বললে না কথা, তাই তোমার বিষয়ে আজগুবি কিছু কথা বলে নবেল হাতিয়ে নিয়ে যায় আন্তর্জাতিক চাটুকার চক্র। কথা বলো হে গাছ,  বলো; হে মানব সমাজ, সুবোধ সুশীল প্রাণী। তোমাদের মত আমরাও কিন্তু প্রাণ-সর্বস্ব, আমরাও বটে প্রাণী।
------------------------------------------------
লেখকঃ কবি ও রম্য লেখ।  

Post a Comment

0 Comments