Recent Tube

মওদুদী রাহঃ এর তাফসীরে ভয়ঙ্কর ভুল ধরলেন মুযাফফর বিন মুহসিন: মুহাম্মাদ তানজিল ইসলাম।


কুরআনের ১ম সূরা ফাতিহার ৫ নং আয়াত:
اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ
আমাদের সোজা পথ দেখাও। (সূরা ফাতিহাঃ০১/৫)
.
উক্ত আয়াতের তাফসীরে আল্লামা মওদুদী রাহঃ বলেন,
"জীবনের প্রত্যেকটি শাখা প্রশাখায় এবং প্রত্যেকটি বিভাগে, চিন্তা, কর্ম ও আচরণের এমন বিধি-ব্যবস্থা আমাদের শেখাও, যা হবে একেবারেই নির্ভুল, যেখানে ভুল দেখা, ভুল কাজ করাও অশুভ পরিণামের আশঙ্কা নেই, যে পথে চলে আমরা সাফল্য ও সৌভাগ্যের অধিকারী হতে পারি। কুরআন অধ্যয়নের প্রাক্কালে বান্দা তার প্রভু, মালিক, আল্লাহর কাছে এই আবেদনটি পেশ করে। বান্দা আর্জি পেশ করে, হে আল্লাহ! তুমি আমাদের পথ দেখাও। কল্পিত দর্শনের গোলকধাঁধার মধ্য থেকে যথার্থ সত্যকে উন্মুক্ত করে আমাদের সামনে তুলে ধর। বিভিন্ন নৈতিক চিন্তা-দর্শনের মধ্য থেকে যথার্থ ও নির্ভুল নৈতিক চিন্তা-দর্শন আমাদের সামনে উপস্থাপিত কর। জীবনের অসংখ্য পথের মধ্য থেকে চিন্তা ও কর্মের, সরল ও সুস্পষ্ট রাজপথটি আমাদের দেখাও।" (তাফহীমুল কুরআন, ১ম খন্ড, পৃঃ ৪৩, সূরা ফাতিহাঃ০১/৫ তাফসীর)
.
আহলে হাদীসের শায়খ মুযাফফর বিন মুহসিন আল্লামা মওদুদী রাহঃ এর উক্ত তাফসীরের সমালোচনা করতে "ছিরাতে মুস্তাক্বীম'-এর রাজনৈতিক ব্যাখ্যা" শিরনাম দিয়ে বলেন, "মাওলানা ছাহেব সূরা ফাতিহার তাফসীর করতে গিয়ে 'ছিরাতে মুস্তাক্বীম'-এর ব্যাখ্যায় বলেন, 'জীবনের অসংখ্য পথের মধ্য থেকে চিন্তা ও কর্মের সহজ, সরল ও সুস্পষ্ট রাজপথটি আমাদের দেখাও'।"
.
আল্লামা মওদুদী রাহঃ এর সমালোচনা করে মুযাফফর সাহেব আরো বলেন, 
"মাওলানা মওদুদী রাজনৈতিক চোখ দ্বারা তাফসীর করতে গিয়ে শুধু রাজপথটিই দেখতে পেয়েছেন। ইসলামের আক্বীদা ও আমল সমূহ দেখার চেষ্টা করেননি। এটা তার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ও দলীয় ব্যাখ্যা, যা পৃথিবীর কোন বিদ্যান করেননি।" (ভ্রান্তির বেড়াজালে ইক্বামতে দ্বীন, পৃঃ ১৫৩-১৫৪)
.
পর্যালোচনাঃ
১. মুযাফফর সাহেব বলেছেন, আল্লামা মওদুদী রাহঃ নাকি আকিদা ও আমল সমূহ দেখার চেষ্টা করেন নি! এতে মুযাফফর সাহেবের হিংসাত্মক মনোভাব ও জাহালত (অজ্ঞতা) ফুটে ওঠেছে। তাই তিনি মওদুদী রাহঃ এর তাফসীরে আকিদা ও আমল খুঁজে পাননি। আকিদা (عقيدة) শব্দটির বহুবচন আকাইদ। যার অর্থ বিশ্বাসমালা।  মানুষের নৈতিক চিন্তাচেতনা-দর্শনই আকিদা। অর্থাৎ যে চিন্তা-দর্শন মানুষ লালন করে বা বিশ্বাস করে তাকেই আকিদা বলে। আর আমল মানে কাজ বা কর্ম, সেটাতো একটা ১০ বছরের বাচ্চারও জানার কথা। অথচ আহলে হাদীসের বিশাল শায়খ মুযাফফর বিন মুহসিন জানলেন না। এই যদি হয় শায়খের অবস্থা তাহলে অনুসারী বা মুকাল্লিদগণের অবস্থা কেমন ভেবে দেখুন।
.
২. মুযাফফর সাহেব "রাজপথ" বলতে রাজনীতি বুঝেছেন। এটাও তার অজ্ঞতার বহিঃ প্রকাশ। রাজপথ এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Highway, Highroad যার অর্থ প্রধান পথ, পথের রাজা। 'রাজ' শব্দটি বিশেষণ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এটি কোন বিশেষ্যের সাথে বসলে তার বড়ত্ব, মহত্ত্ব বা শ্রেষ্ঠত্ব বুঝায়। যেমন- রাজহাঁস, এখানে 'রাজহাঁস' মানে রাজনীতি বুঝানো হয়নি বরং হাঁসের বড়ত্বকে বুঝানো হয়েছে। কোন পাগলেও বলবে না রাজহাঁস মানে রাজনীতি। একই ভাবে "রাজপথ" মানেও রাজনীতি নয়, বরং পথের শ্রেষ্ঠত্বকে বুঝানো হয়েছে। 
বর্তমানে ইসলামের নামে অসংখ্য চোরাপথ তৈরি করেছে শয়তান ও তার অনুসারীগণ। তাই আল্লামা মওদুদী রাহঃ বলেছেন, "জীবনের অসংখ্য পথের মধ্য থেকে চিন্তা ও কর্মের সহজ, সরল ও সুস্পষ্ট রাজপথটি আমাদের দেখাও।"
.
৩. মুযাফফর সাহেবের সমালোচনা থেকে প্রমাণিত যে, তার দৃষ্টিতে রাজনীতিতে হেদায়াত নেই। যারা আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনীতি করে তারা গোমড়া। তাই তিনি রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
আশা করি মুযাফফর সাহেব সহ সকল আহলে হাদীস স্বীকার করবেন যে, অসংখ্য বক্র ও চোরাপথের মধ্যে সোজা রাজপথ একটি সেটা ইসলাম ও হেদায়াতের পথ, যে পথে নবীগণ ও তার অনুসারীগণ চলেছেন। (দেখুন- সূরা নিসাঃ৪/৬৪; মুসনাদে আহমদ, হাঃ ৪১৪২)
.
নবীগণ যদি রাজনীতি বিরোধী হন, তাহলে আমাদেরকেও (মুযাফফর সাব ও আহলে হাদীসদের মত) রাজনীতি বিরোধী হতে হবে। আর যদি নবীগণ দ্বীনের স্বার্থে রাজনীতি করেন, তাহলে আমাদেরকেও দ্বীনের স্বার্থে রাজনীতি করতে হবে। কেননা নবীদের পথই হলো হেদায়াতের রাজপথ। এ বিষয়ে  নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
ﻛَﺎﻧَﺖْ ﺑَﻨُﻮْ ﺇِﺳْﺮَﺍﺋِﻴْﻞَ ﺗَﺴُﻮْﺳُﻬُﻢْ ﺍﻷَﻧْﺒِﻴَﺎﺀُ ﻛُﻠَّﻤَﺎ ﻫَﻠَﻚَ ﻧَﺒِﻲٌّ ﺧَﻠَﻔَﻪُ ﻧَﺒِﻲٌّ ﻭَﺇِﻧَّﻪُ ﻟَﺎ ﻧَﺒِﻲَّ ﺑَﻌْﺪِﻱْ ﻭَﺳَﻴَﻜُﻮْﻥُ ﺧُﻠَﻔَﺎﺀُ . 
"বনী ইসরাঈলের নবীগণ তাঁদের উম্মাতকে (আল্লাহ প্রদত্ত বিধান দ্বারা) শাসন করতেন। যখন কোন একজন নবী মারা যেতেন, তখন অন্য একজন নবী তাঁর খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করতেন। আর আমার পরে কোন নবী নেই। তবে অনেক খলিফা হবে।"
(সহীহ বুখারী, হাঃ ৩৪৫৫; সহীহ মুসলিম হাঃ ১৮৪২; মুসনাদে আহমাদ, হাঃ ৭৯৪৭; ইবনে মাজাহ হাঃ ২৮৭১; ইবনে হাজার, ফাতহুল বারী ৬/৪৯৫, ৮/১১০, ১০/৫৭৭) 
.
বিঃদ্রঃ হাদীসে উল্লেখিত ﺗَﺴُﻮْﺱُ শব্দটি ﺳﻴﺎﺳﺔ 'সিয়াসাহ' থেকে উদগত। যার অর্থ 'রাজনীতি'। সুতরাং যেসকল মর্দে মুজাহিদ আল্লাহর দ্বীনের স্বার্থে (ইসলামী) রাজনীতি করে তারাই প্রকৃত ﻭﺭﺛﺔ ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ নবীদের ওয়ারিছ, তারাই হেদায়াতের রাজপথে অটল রয়েছে। পক্ষান্তরে যারা ইসলামী রাজনীতির বিরোধীতা করে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তারাই পথভ্রষ্ট, গোমড়া।

--------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ,গ্রন্থপ্রণেতা ও মাওলানা। 

Post a Comment

0 Comments