Recent Tube

মরুভূমির হাতছানি : পর্ব -৯ ‌ মুহিউল ইসলাম মাহিম চৌধুরী

মরুভূমির হাতছানি 
          পর্ব-৯
  
------------------------ ®^‌®------------------------ 
  মসজিদে নববীর অভ্যন্তরে রয়েছে অনেকগুলো ফজিলতওয়ালা স্থান । 
এর মধ্যে ''রিয়াদুল জান্নাত''অত্যন্ত গুরুত্ববহ । কারণ,নবীজি (স) বলেছেন,অামার ক্ববর অার অামার মিম্বরের মধ্যবর্তি স্থানটি হল ''জান্নাতের বাগান''। 

    হুজরা মোবারক ও মিম্বারের পাশের জায়গাটি ‘ রিয়াদুল জান্নাত । এখানে নামাজ এবং জিকর অাজকারের বিশেষ ফজিলত আছে । পুরো মসজিদের কার্পেটের রং লাল। তবে রিয়াদুল জান্নাহর অংশের কার্পেটের রং অনেকটা জলপাই রঙ্গের । যা এ স্থানটিকে চিনার জন্য সহায়ক । 
এখানে বলে রাখি নবীজির মাক্ববারাটাই শুধু রওজা নয় বরং ক্ববর থেক মিম্বর পর্যন্ত এর পুরোটাই জান্নাতের বাগান  বা রওজা মোবারক। 
 রাসুলুল্লাহর (স) কবরের পর থেকে রাসুলুল্লাহর মসজিদের মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থান, যেখানে আল্লাহর রাসুলের মূল মসজিদ অবস্থিত ছিলো। 

   রিয়াদুল জান্নাত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "আমার ঘর ও মিম্বার-এর মধ্যবর্তী স্থানটুকু জান্নাতের বাগানগুলোর মধ্যে একটি বাগান।" সহীহ আল-বুখারীঃ ১১৯৫।
    নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, "আমার ঘর ও মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থান জান্নাতের বাগানগুলোর একটি বাগান, আর আমার মিম্বর অবস্থিত আমার হাউযে (কাউসার)-এর উপরে ।" সহীহ আল-বুখারীঃ ১১৯৬।

     যারা মসজিদে নববীতে নামায পড়ার জন্য আসেন তারা চেষ্টা করেন ছোট্ট এই জায়গাতে অন্ততঃ দুই রাকায়াত নামাজ ও দুয়া করার জন্য । এই জায়গাটা অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ, যেখানে ইবাদত করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি ও দয়া নাযিল হয়। কিছু আলেমের মতে এখানে ইবাদত করলে তা বান্দাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। আবার অনেক বিদ্ধান ব্যাক্তিদের মতে, এই স্থানটুকু সত্যিই আখিরাতে জান্নাতের সাথে যুক্ত করা হবে। 

     মসজিদে নববীতে ছোট্ট এই একটা ফযীলতপূর্ণ জায়গায় ইবাদতের জন্য অনেকে ভীড় করেন, এ কারণে সেখানে প্রবেশ করা কিছুটা কঠিন, বিশেষ করে রমযান এবং হজ্জের মৌসুমে রিয়াজুল জান্নাতে প্রবেশ করতে পারা আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত। রিয়াদুল জান্নাতে ইবাদত করে বিশেষ প্রশান্তি ও আল্লাহর নৈকট্য অনুভব করা যায়, যা "মাতাফ" অর্থাৎ কাবা শরীফের চতুর্দিকে তাওয়াফের স্থান, লায়লাতুল ক্বদরের রাতে, সিজদা....বা এমন বিশেষ মুহূর্তগুলোতে অনুভব করা যায়। 

    এশার নামাযের পর পর্দা দিয়ে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় নারীদেরকে রিয়াদুল জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ  দেওয়া হয় । 
     যারা এখানে প্রবেশের সুযোগ পান তাদের ভাগ্য অনেক সুপ্রসন্ন । বিশেষ করে মদীনা অাল মুনাওয়ারার  সম্মানিত ইমাম যেমন আলি আল-হুযাইফী, আব্দুল মুহসিন আল-ক্বাসিমসহ সেই সকল সৌভাগ্যবান ব্যাক্তিবর্গের কথা ভাবলাম যাঁরা  ফযীলতপূর্ণ এই জায়গায় প্রতিদিন ফরয নামাযে উপস্থিত সমস্ত মুসল্লিদের ইমামতি করছেন, জুমুয়াহর খুতবাহ দিচ্ছেন।  আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়াতে কত সম্মানিত করেছেন । 

     কোন রকমে ভীড় ঠেলে রাসূল (স) ঘোষিত সেই জান্নাতের টুকরোয়  দাঁড়িয়ে প্রতিপালককে কয়েকটি সেজদা দিতে পেরেছিলাম । পেশ করতে পেরেছিলাম মনের অাকুতি। পাঠ করেছিলাম নবীজির তরে সালাতও সালাম । 

     মসজিদে নববীর ভেতরে কয়েকটি স্তম্ভ রয়েছে, সেগুলোকে রহমতের স্তম্ভ বা খুঁটি বলা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর তৈরি মসজিদে খেজুর গাছের খুঁটিগুলোর স্থলে উসমানী সুলতান আবদুল মাজিদ পাকা স্তম্ভ নির্মাণ করেন। এগুলোর গায়ে মর্মর পাথর বসানো এবং স্বর্ণের কারুকাজ করা । প্রথম কাতারে ৪টি স্তম্ভের লাল পাথরের এবং পার্থক্য করার সুবিধার জন্য সেগুলোর গায়ে নাম লেখা রয়েছে ।
    উস্তুুয়ানা  হান্নানা  বা সুবাস স্তম্ভ- মিম্বারে নববীর ডান পাশে খেজুরগাছের গুঁড়ির স্থানে নির্মিত স্তম্ভের নাম উস্ত্তওয়ানা হান্নানা বা সুবাস স্তম্ভ। নবী করিম (সা.) মিম্বার স্থানান্তরের সময় এ গুঁড়িটি উঁচু স্বরে কেঁদে উঠেছিল এবং সাহাবায়ে কেরাম তা শুনতে পেরেছিলেন । 
মিহরাবে নববী- মিহরাবের ডানে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দাঁড়ানোর জায়গা ছিল ।  এর পাশেই তূর্কিরা একটি মিহরাব স্থাপন করেন । 

   উস্তুয়ায়ানা সারির-এখানে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইতিকাফ করতেন এবং রাতে আরামের জন্য তাঁর বিছানা এখানে স্থাপন করা হতো। স্তম্ভটি হুজরা শরিফের পশ্চিম পাশে জালি মোবারকের সঙ্গে রয়েছে।

    উস্তুয়ানা আয়েশা বা আয়েশা স্তম্ভ- নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আমার মসজিদে এমন একটি জায়গা রয়েছে, লোকজন যদি সেখানে নামাজ পড়ার ফজিলত জানত, তাহলে সেখানে স্থান পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করত।’ স্থানটি চিহ্নিত করার জন্য সাহাবায়ে কিরাম চেষ্টা করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের পর হজরত আয়েশা (রা.) তাঁর ভাগ্নে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা.)-কে সে জায়গাটি চিনিয়ে দেন। এটিই সেই স্তম্ভ। এই স্তম্ভটি উস্তুুয়ানা উফুদের পশ্চিম পাশে রিয়াদুল জান্নাতের ভেতর ।

   উস্তুয়ানা আবু লুবাবা তওবা স্তম্ভ --একটি ভুল করার পর হজরত আবু লুবাবা (রা.) নিজেকে এই স্তম্ভের সঙ্গে বেঁধে বলেছিলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত হুজুরে পাক (সা.) নিজে না খুলে দেবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি এর সঙ্গে বাঁধা থাকব।’ নবী করিম (সা.) বলেছিলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত আমাকে আল্লাহ আদেশ না করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত খুলব না।’ এভাবে দীর্ঘ ৫০ দিন পর হজরত আবু লুবাবা (রা.)-এর তওবা কবুল হয়। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজ হাতে তাঁর বাঁধন খুলে দিলেন। এটিও উস্তুুয়ানা উফুদের পশ্চিম পাশে  অবস্থিত।

   বাবে জিবরাইল--রুহুল ক্বুদস ফেরেশতা হজরত জিবরাইল (আ.) যখনই সাহাবী হজরত দিহইয়াতুল কালবী (রা.)-এর আকৃতি ধারণ করে ওহি নিয়ে হুজুর (স) এর কাছে আসতেন, তখন অধিকাংশ সময় এই দরোজা দিয়েই প্রবেশ করতেন এবং তাঁকে এখানেই একটি খুটির পাশে উপবিষ্ট দেখা যেত। তাই এই স্তম্ভটিকে উস্তুুয়ানা জিব্রাঈল হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে ।

    উস্তুয়ানা উফুদ---নবীজি (স) এর কাছে দূরদেশ থেকে কোন প্রতিনিধিদল বা মেহমান অাসলে  তাদেরকে এখানে বসানো হতো । এখানেই বসে অনেকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে ইসলাম গ্রহণ করতেন এবং এখানে বসেই কথা বলতেন। এ স্তম্ভটিও নবীজির মাক্ববারার জালি মোবারকের সঙ্গে রয়েছে।
চলব,,,,,,,  
=========================== 
লেখকঃ কলামিস্ট ও প্রবন্ধ লেখক।      

Post a Comment

0 Comments