Recent Tube

শেষ আমল' বিষয়ক হাদীসের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাঃ Tanzil ঈস্লাম.

কতিপয় পাঠক আমার সংকলিত المختارات من السنة তথা "নির্বাচিত হাদীস" বইয়ের 'শেষ আমল' বিষয়ক হাদীসের ব্যাখ্যা চেয়েছেন। তাদের উদ্দেশ্যে আমি হাদীসটি পেশ করে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দেওয়া চেষ্টা করছি।
সাহল ইবনে সা'দ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন,
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالْخَوَاتِيمِ.
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "শেষ আমলই নির্ভরযোগ্য।" (সহীহ বুখারী হাঃ ৬৬০৭, সহীহ মুসলিম হাঃ ১১২, জামে তিরমিযী হাঃ ২১৩৭, মুসনাদে আহমদ হাঃ ২২৩২৮, মিশকাত হাঃ ৮৩, আল-মুখতারাতু মিনাস সুন্নাহ হাঃ ১৩৬; সংগৃহীত: নির্বাচিত হাদীস পৃঃ ৪৮)
.
ব্যাখ্যাঃ إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالْخَوَاتِيمِ. শেষ আমলই নির্ভরযোগ্য। অর্থাৎ সর্বশেষ আমলই ধর্তব্য। কোন ব্যক্তির আমলের ভালো-মন্দ নির্ভর করবে তার শেষ অবস্থার উপর। উদাহরণসরূপ বলা যায়, হযরত উমার (রাঃ) পূর্বে ছিলেন কট্টর কাফির, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জানের দুশমন। তাই তো তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে হত্যা করতে বের হয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি তাঁর ভুল বুঝতে পেরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর হাতে ইসলাম গ্রহণ এবং আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূলুল্লাহ প্রদর্শিত বিধানকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এবং বিজয়ী রাখার জন্য আজীবন সংগ্রাম করেন। এমনতাবস্থায় পূর্বের কুফুরী আমলের উপর তাঁর বিচার করা হবে না বরং তাঁর বিচার হবে অামলের শেষ অবস্থার উপর।
.
আবার দেখুনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর সঙ্গে থেকে যে সমস্ত মুসলিম যুদ্ধ করেছেন তাঁদের মাঝে একজন ছিল ভীষণ বেগে আক্রমণকারী। নাবী (সাঃ) তার দিকে তাকিয়ে বললেনঃ যে ব্যক্তি কোন জাহান্নামীকে দেখতে পছন্দ করে সে যেন এই লোকটার দিকে তাকায়। লোকদের ভিতর থেকে এক লোক সেই লোকটির অনুসরণ করল। আর সে তখন ভীষণভাবে মুশরিকদের সঙ্গে মুকাবিলা করছিল। সে যখম হয়ে তাড়াতাড়ি মৃত্যু কামনা করল। সে তার তরবারীর ধারালো দিকটি নিজের বুকের উপর চেপে ধরল। এমন কি দু’কাঁধের মাঝ দিয়ে তরবারী বক্ষ ভেদ করল। (তখন) লোকটি নাবী (সাঃ) -এর কাছে দৌড়ে এসে বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি (সত্যিই) আপনি আল্লাহর রাসূল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কী হল? লোকটি বলল, আপনি অমুক ব্যক্তি সম্পর্কে বলেছিলেনঃ ‘‘যে ব্যক্তি কোন জাহান্নামী লোক দেখতে পছন্দ করে সে যেন এ লোকটাকে দেখে নেয়।’’ অথচ লোকটি অন্যান্য মুসলিমের চেয়ে তীব্র আক্রমণকারী ছিল। তাই আমার ধারণা ছিল এ লোকটির মৃত্যু এমন অবস্থায় হবে না। যখন সে আঘাত পেল, তাড়াতাড়ি মৃত্যু কামনা করল এবং আত্মহত্যা করে দিল। 
فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عِنْدَ ذَلِكَ إِنَّ الْعَبْدَ لَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ النَّارِ وَإِنَّهُ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ وَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ الْجَنَّةِ وَإِنَّهُ مِنْ أَهْلِ النَّارِ وَإِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالْخَوَاتِيمِ.
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একথা শুনে বললেনঃ নিশ্চয় কোন বান্দা জাহান্নামীদের ‘আমাল করেন, কিন্তু আসলে সে জান্নাতী। আর কোন বান্দা জান্নাতের অধিবাসীর ‘আমল করেন কিন্তু আসলে সে জাহান্নামী। নিশ্চয়ই ‘আমলের ভাল-মন্দ নির্ভর করে তার শেষ অবস্থার উপর। (সহীহ বুখারী, তাকদীর অধ্যায়, হাঃ ৬৬০৭, আধুনিক প্রকাশনী হাঃ ৬১৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন হাঃ ৬১৫৪)
.
অত্র হাদীসে সর্বদা আনুগত্যের উপর অটল থাকতে এবং অন্যায় কাজ থেকে বিরত থেকে সময়ের হেফাজত করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। কেননা, যে  কোন সময়ে মৃত্যু হতে পারে। আর তাই যে কোন সময়ের আমলই 'শেষ আমল' হতে পারে। 
অনুরূপ ভাবে ভালো কাজ করতে পেরে অহংকার করা থেকে সতর্ক করা হয়েছে। কেননা, সে অবহিত নয় যে, পরবর্তীতে কি ঘটবে। তাই হিদায়াতের উপর অটল থাকতে বিনয়ের সাথে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতে হবে।
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً ۚ إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ.
হে আমাদের রব, আপনি হিদায়াত দেয়ার পর আমাদের অন্তরসমূহ বক্র করবেন না এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন। নিশ্চয় আপনি মহাদাতা। (সূরা আলি ইমরান ৩/৮)
--------------------------------------------
মোহাম্মদ তানজিল ইসলাম।
ইসলামি চিন্তাবিদ ও লেখক।

Post a Comment

0 Comments