Recent Tube

জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিনের ইবাদতে লাইলাতুল কদরের সওয়াব পাওয়া যাবে। আল্লামা এ.এন.এম.সিরাজুল.ইসলাম।


 জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিনের ইবাদতে লাইলাতুল কদরের সওয়াব পাওয়া যাবে।
 আমরা জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের ফজীলত ও করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করব। 

      প্রশ্ন হচ্ছে জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের এবাদত উত্তম, না রমজানের শেষ দশকের এবাদত উত্তম? এ ব্যাপারে সৌদি আরবের সিনিয়র ওলামা কাউন্সিলের অন্যতম সম্মানিত সদস্য মরহুম শেখ মোহাম্মদ সালেহ আল উসাইমীনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, কেউ যদি রমজানের শেষ দশকে ১ দিরহাম দান করে কিংবা দুই রাকাত নামাজ পড়ে, সেটা উত্তম, না  জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনে এক দেরহাম দান করা কিংবা দু'রাকাত  নফল নামাজ পড়া উত্তম?  

     তিনি বলেন, জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ দিনেরটাই  উত্তম। প্রমাণ হিসেবে তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  বলেছেন-
 ما من ايام العمل الصالح فيهااحب الي الله من  هذه الايام يعني ايام العشر،قالوا يا رسول الله،ولا الجهاد في سبيل الله؟قال:ولا الجهاد في سبيل الله،الا رجل خرج بنفسه وماله فلم يرجع من ذلك بشيء. 
আল্লাহর কাছে এই দশ দিনের এবাদত অপেক্ষা অন্য কোন সময়ের এবাদত এত বেশি প্রিয় নয়। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহও নয়? তিনি বলেন, না, জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহও নয়। তবে সেই ব্যক্তি ব্যতীত যে নিজের জানমাল নিয়ে বেরিয়ে গেছে, আর ফিরে আসেনি। এ হাদীসটি বুখারী শরীফে বর্ণিত হয়েছে। এ বিষয়ে অন্যান্য আলেমদের মত হচ্ছে, রমজানের শেষ দশকের রাতের ইবাদত বেশি উত্তম। আর জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দশকের দিনের এবাদত বেশী উত্তম। তাহলে জটিলতার অবসান হয়, আর কোন সমস্যা থাকে না। 
এখন এ বিষয়ে আমরা আরো বিস্তারিত আলোচনা করব। যিলহজ মাসের প্রথম দশকে কি কি করনীয় আছে? করণীয় বিষয়ে আলোচনার আগে আমাদেরকে জানতে হবে, প্রথম দশদিন কেন এত মর্যাদাবান? বোখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফতহুল বারীর লেখক আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী লিখেছেন, এই দশ দিনে ইসলামের সবগুলো মৌলিক এবাদত একত্রিত হয় যেটা অন্য কোন সময় হয় না। যেমন অন্য সময় হজ অনুষ্ঠিত হয় না। এটা কেবল জিলহজ মাসেই অনুষ্ঠিত হয়। এই কারণেই এর এত মর্যাদা। এখন আমরা এই দশকের প্রধান প্রধান করণীয় এবং এবাদত গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। 
    প্রথমে সালাত সম্পর্কে আলোচনা করব। ফরজ নামাজের পাশাপাশি মূল্যবান রাত সমূহে কিয়ামুল লাইল পালন খুব বেশি সওয়াবের কাজ। এই মর্মে  আবু হুরায়রা {রাঃ} থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে-
 قال رسول الله صلي الله عليه وسلم،ما من ايام احب الي الله ان يتعبد له فيها من عشر  ذي الحجة،يعدل صيام كل يوم منها بصيام سنة،وقيامكل ليلة منها بقيام ليلة القدر, 
      রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, এই ১০ দিনের এবাদত অপেক্ষা আর কোন এবাদত আল্লাহর কাছে এত বেশী প্রিয় নয়। এই সময় একদিনের রোজা এক বছরের রোজার সওয়াবের সমান এবং এক রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের রাতের এবাদতের সমান। (তিরমিজি শরিফ)। তাহলে আমরা ১০টি কদরের রাতের সমান মর্যাদার সমান সুযোগ পাচ্ছি। আর কদরের রাতের মর্যাদা হচ্ছে ৮৩ বছর ৪ মাসের এবাদতের সমান। সুবহানাল্লাহ এত মর্যাদা এবং ফজিলত আমাদের ছেড়ে দেয়া উচিত নয়।

     দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে রোযা। রোযা সম্পর্কে আরেকটা হাদিস আছে। উম্মুল মুমিনীন হাফসা {রাঃ} বলেছেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু চারটি বিষয় কখনো ছেড়ে দিতেন না। সেগুলো হচ্ছে, আশুরা দিবসের রোজা, জিলহজ মাসের প্রথম ৯ দিনের রোজা, প্রতিমাসে আইয়ামে বীদের ৩টি রোজা এবং প্রতিদিন চাশতের ২ রাকাত নামাজ। এই হাদিসটা মুসনাদে আহমদ, নাসাই এবং ইবনে হিব্বানে বর্ণিত হয়েছে। ইবনে হিব্বান এটাকে সহীহ হাদীস বলেছেন। 
সৌদি আরবের প্রয়াত  মুফতি জেনারেল শেখ আব্দুল আজিজ বিন বাজ রহঃ বলেছেন, যে এ হাদীসটি দুর্বল। আয়েশা সিদ্দিকা {রাঃ} বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো জিলহজ্ব মাসের ৯ দিন রোজা রাখেননি। (মুসলিম শরীফ) ওলামায়ে কেরাম বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর ৯ জন স্ত্রী ছিলেন। আয়েশার ভাগে তার ছিল সপ্তাহে দুই দিন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু সাল্লাম প্রতি ৭ দিন পর আয়েশার ঘরে পালা কাটাতেন। সে সময় তিনি তাকে রোজা রাখতে দেখেন নি। তাই বলে অন্য স্ত্রীরা দেখেননি সেটা হতে পারে না। তারা তাকে রোজা রাখতে দেখেছেন বলে বর্ণনা করেছেন। মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থের লেখক আল্লামা ইমাম নওয়ী রহমতুল্লাহ বলেছেন, যিলহজের প্রথম দশকে অর্থাৎ ৮ দিন রোযা রাখাকে  তিনি অস্বীকার করলেও আয়েশা {রাঃ} ৯ তারিখে আরাফা দিবসের রোজা রাখাকে অস্বীকার করেননি।   সকলের কাছে আরাফা দিবসের রোজা স্বীকৃত। এর ফলে একবছর আগের ও একবছর পরের গুনাহ মাফ হয়ে যায়। 

    তৃতীয় বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করব। এই প্রথম দশকের মধ্যেই হজ আদায় করতে হয়। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন- কবুল হজের বিনিময় জান্নাত ছাড়া আর কিছু নেই। যার মধ্যে রয়েছে জিহাদের ট্রেনিং। মিনার জামরায় কংকর নিক্ষেপকে সৈনিকের চাঁদমারির সাথে তুলনা করা যায়। হজে অর্থ ব্যয় করতে হয়। এখানে যাকাতের মত  আর্থিক এবাদত -দান-সদকার সওয়াব পাওয়া যায়। 

   চতুর্থ নম্বর হচ্ছে কোরবানি করা। আল্লাহ বলেন, তোমরা তোমাদের রবের জন্য নামাজ পড়ো এবং কোরবানী কর। (সূরা কাউসার) কোরবানির ফজিলত অনেক বেশি। কোরবানির পশুর গায়ে যত পশম আছে সেই পরিমাণ সওয়াব পাওয়া যাবে। কোরবানি ওয়াজিব হওয়া সত্বেও কোরবানি না করলে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু বলেছেন, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে। 
    পঞ্চম এবাদত সম্পর্কে আমরা আলোচনা করব। সেটি হচ্ছে তাকবির। তাকবীর হল: আল্লাহু আকবার বলা। আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহা, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ। তাকবীর আরো ভিন্ন রকম  ও আছে। এটা হচ্ছে বেশি বিশুদ্ধ। সব সময় বেশী বেশী তাকবীর বলতে হয়। এটাকে তাকবিরে মোতলক বলা হয়। আর ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরয নামাযের পরে তাকবীর বলাকে  তাকবীর মোকাইয়াদ বলে। ইবনে ওমর {রাঃ} ও আবু হোরায়রা {রাঃ} তাকবীর বলার জন্য বাজারে যেতেন।তাদের তাকবীর শুনে লোকেরা ও তাকবীর বলত।

    ছষ্ট নম্বর এবাদত হচ্ছে, আল্লাহ তায়া'লার তাসবীহ অর্থাৎ পবিত্রতা ও হামদ তথা প্রশংসা বর্ণনা করা।
-------------------------------------------  
লেখকঃ- বিজ্ঞ আলেমেদ্বীন, গ্রন্থপ্রনেতা, অনুবাদক, সাংবাদিক এবং পরিচালক বাংলা বিভাগ, জেদ্দা রেডিও, সৌদী আরব।

Post a Comment

0 Comments