Recent Tube

দেওবন্দী ওলামায়ে কেরামগণের দৃষ্টিতে সাহাবাগণ (রা) কি সত্যের মাপকাঠি? মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

   সত্যের মাপকাঠি কে? এর জবাব মুমিনদের ঈমানী কালিমার দ্বিতীয়াংশ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ. "মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল।" (সূরা ফাতাহঃ৪৮/২৯) -এর মাঝেই প্রস্ফুটিত হয়ে আছে উজ্জ্বল আলোর মতো। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে সকল মত, পথ ও ব্যক্তির ঊর্ধ্বে তুলে ধরার মধ্যে নিহত রয়েছে এ বাণীর যথার্থতা। তিনিই 'সত্যের মাপকাঠি'। তাঁর রিসালাতই হচ্ছে সত্যতা যাচাই এর মানদণ্ড। 
.
     "মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল।"- এর প্রতি ঈমান আনার অনিবার্য দাবী ও স্পষ্ট চাহিদার প্রেক্ষিতে আল্লামা মওদুদী রাহঃ বলেন,
"রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ছাড়া অন্য কোন মানুষকে 'মিয়ারে হক' বা সত্যের মাপকাঠি মানবে না, কাউকে তানকীদ বা যাচাই-বাছাই এর ঊর্ধে মনে করবে না, কারো অন্ধ অনুসরণে লিপ্ত হবে না। বরং প্রত্যককে আল্লাহর দেওয়া ঐ 'সত্যের মাপকাঠি'তে যাচাই ও পরখ করবে এবং এ মাপকাঠি'র দৃষ্টিতে যার যে মর্যাদা হবে তাকে তাকে সেই মর্যাদা দিবে অর্থাৎ যিনি যেই স্তরের হবেন তাকে সেই স্তরেই রাখবে।" (সাইয়েদ মওদুদী কা আহাদ :৮১; সত্যের মাপকাঠি পৃঃ ৫৪)
.
      দেওবন্দীদের চুনাপুঁটি আলেম সাহাবীদের 'সত্যের মাপকাঠি' বলে প্রচার করলেও দেওবন্দীদের শীর্ষস্থানীয় আলেমগণ একমাত্র রাসূলুল্লাহ (সা)-কেই 'সত্যের মাপকাঠি' হিসাবে গ্রহণ করে সাহাবীদের কথা ও কর্মকে রাসূলুল্লাহ (সা) এর কথা ও কর্ম দ্বারা পরিমাপ করেন। এ বিষয়ে কতিপয় দলিল পেশ করছি। -
.
১. শাইখুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী বলেনঃ "এটা একটি সাহাবীর কথা, এটি হানাফীদের জন্য দলীল হতে পারে না।" (তাকারির শাইখুল হিন্দ পৃঃ৪৩)
.
২. তিনি আরো বলেন, 
"যখন এটা সাহাবীদের কর্ম, তখন সেটা হুজ্জাহ/দলীল নয়।" (তাকারীর শাইখুল হিন্দ পৃঃ৩০)
.
৩. যাফর আহমেদ থানভী দেওবন্দী বলেনঃ
"(রাসূলুল্লাহ সাঃ এর বাণী) মারফূ হাদীসের মুকাবিলায় সাহাবীদের কওল দলীল হয় না।"(ইলাউস সুনান:১/৪৬৩)
.
৪. সায়েদেনা আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) ফজরে দোয়ায়ে কুনুত পড়ত , তো এ ব্যাপারে শাইখুল হাদীস ত্বকী উসমানী দেওবন্দী বলেনঃ
"এই রেওয়াত মওকূফ সুতরাং এ দ্বারা দলীল হবে না।" (দারসে তিরমিযি ২/১৬৯)
.
৫. ত্বকী উসমানী সাহেব আরো বলেনঃ
"প্রথমত এটা আবু হুরাইরা (রাঃ) এর ব্যাক্তিগত ইজতেহাদি আমল, রাসূল (সাঃ) এর মারফু হাদীসের সামনে এটি হুজ্জাত নয়।" (দারসে তিরমিযি ২/৮৪)
.
৬. ত্বকী উসমানী দেওবন্দী বলেনঃ
"এবার রয়ে গেলো শুধু হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) এর আছার। এর জবাব হলো, প্রথমতো এতে প্রচন্ড ইজতেরাব রয়েছে। দ্বিতীয়ত যদি এটাকে সূত্রগতভাবে সহীহ মেনেও নেওয়া হয় তবুও এটি একজন সাহাবির ইজতিহাদ হতে পারে, যা মারফূ হাদীসের বিপরীতে প্রমান নয়।" (দারসে তিরমিযী ১/২৮৩)
.
৭. তিনি আরো বলেনঃ
"বাকি রইলো দ্বিতীয় সূত্রটি। সেটিও সহীহ। তবে এর দ্বারাও শাফেঈ মতাবলম্বী প্রমুখের মাজহাবের ওপর কোনো স্পষ্ট মারফু দলিল প্রতিষ্ঠিত হয় না। কেননা, এটা হজরত উবাদা (রাঃ) এর নিজস্ব ইজতিহাদ।
অর্থাৎ তিনি --- বিশিষ্ট
হাদীসটিকে ইমাম এবং মুক্তাদির উভয়ের জন্য ব্যাপক মনে করেছেন। এর ফলে এই হুকুম উৎসারণ করেছেন যে, মুক্তাদির উপর সূরা ফাতেহা পড়া আবশ্যক। তবে তার এ উৎসারণ (রাসূলুল্লাহ সাঃ এর বাণী) মারফু হাদীসগুলোর বিপরীতে দলীল
হতে পারে না।" (দারসে তিরমযী ২/৭৫)
.
৮. সারফারায খান সাফদার দেওবন্দী সাহেব লেখেনঃ
"(রাসূলুল্লাহ সাঃ এর বাণী) মারফু হাদীসের বিরোধিতায় (সাহাবীদের বাণী) মাওকূফ কোনো দলীল নয়।"(খাযাইন আস-সুন্নাহ (১/১৭৯)
.
৯. ইমাম বুখারী (রহঃ) হযরত আনাস (রাঃ), হাসান বসরী এবং কাতাদা (রহঃ) এর কওল নকল করেছেন যে সেজদা সাহু এর পরে তাশাহুদ হবে না। (দেখুন- সহীহ বুখারী খন্ড ১ পৃঃ১৬৩)।
কিন্তু সারফারায সাফদার দেওবন্দী সাহেব বলেনঃ 
"ইমাম বুখারী (রহঃ) এর এই ইস্তেদলাল খুবই দুর্বল। কারণ এটা মাউকূফ এবং তার বিরোধীতায় (রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে) সারিহ, সহীহ মারফু রেওয়াত আছে, এগুলোর বিরোধিতায় মঊকূফ রেওয়াত দিয়ে কি হবে?" (খাযাইন আস-সুনান ২/১৪৩)

১০.খলীল আহমেদ সাহারানপুরী দেওবন্দী বলেনঃ
"এটা একজন সাহাবীর মাযহাব যেটা একজন ব্যাক্তির
জন্যও দলীল নয়।" (বাযলুল মাযহুদ ৫ম খন্ড ৩৯ পৃঃ)
.
 যাদের কথা দলিল হতে পারে না, যাদের কে যাচাইবাচাই করা হয় রাসূলুল্লাহ (সা) এর কথা ও কর্মের ভিত্তিতে, যাদের আমল মারফু হাদীসের বিরুদ্ধে গেলে মানা হয় না তারা কখনো সত্যের মাপকাঠি হতে পারে না। সুুতরাং দেওবন্দী আলেমগণের দৃষ্টিতেও সাহাবাগণ (রা) সত্যের মাপকাঠি নয় বরং সত্যের মাপকাঠি একমাত্র রাসূলুল্লাহ (সা); যে কারণে তারা রাসূলুল্লাহ (সা) এর বাণী (মারফু হাদীস) কে প্রাধান্য দিয়েছেন, সাহাবাগণ (রা) এর বাণী মারফু হাদীসের বিরোধী বলে গ্রহণ করেননি। আল্লাহ আমাদের সকল কে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুক। (আমিন)
--------------------------------------------
লেখকঃইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা   ও মাওলান।   

Post a Comment

0 Comments