আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
" خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ، وَفِّرُوا اللِّحَى، وَأَحْفُوا الشَّوَارِبَ ".
তোমরা মুশরিকদের বিরোধীতা করো, দাড়ি বড় করো এবং গোঁফ ছোট করো।
.
وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ إِذَا حَجَّ أَوِ اعْتَمَرَ قَبَضَ عَلَى لِحْيَتِهِ، فَمَا فَضَلَ أَخَذَهُ.
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার যখন হাজ্জ বা ‘উমরাহ করতেন, তখন তিনি তাঁর দাড়ি মুষ্টি করে ধরতেন এবং মুষ্টির বাইরে যতটুকু বেশি থাকত, তা কেটে ফেলতেন। (সহীহ বুখারী হাঃ ৫৮৯২; সহীহ মুসলিম হাঃ ২৫৯; মুসনাদে আহমাদ হাঃ ৪৬৫৪)
.
হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দশটি কাজ ফিতরাতের অন্তভুক্ত- গোঁফ ছোট করা, দাড়ি বড় করা, মিসওয়াক করা, নাকে পানি দেয়া, নখ কাটা, নাক কানের ছিদ্র এবং আঙ্গুলের গিরাসমুহ ধোয়া, বগলের পশম উপড়ে ফেলা, নাড়ির নিচের পশম কাটা এবং পানি দ্বারা ইসতিনজা করা। হাদীসের রাবী মুস’আব বলেন, দশম কাজটির কথা আমি ভুলে গিয়েছি। সম্ভবত সেটি হবে কুলি করা। (সহীহ মুসলিম, কিতাবুত তাহারাত, ইফাবা, হাঃ ৪৯৫)
.
আরবীতে (ﻓﻄﺮﺓ ) 'ফিত্বরাত' শব্দের অর্থ স্বভাব, অভ্যাস। তো হাদীস থেকে বোঝা যাচ্ছে, গোঁফ কাটা ও দাড়ি রাখা হচ্ছে পুরুষের স্বাভাবিক অবস্থা এবং রাসূলুল্লাহ (সা) এর সুন্নাহ ও আদর্শ।
.
বর্তমান বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ইসলামী স্কলার আল্লামা ড. ইউসুফ আল কারযাভী বলেন,
দাড়ি মুন্ডন সম্পর্কে তিন কথা (মত রয়েছে)। একটি কথা দাড়ি মুন্ডন করা হারাম। দ্বিতীয় কথা, দাড়ি মুন্ডন করা মাকরূহ।
এ কথাটি (সহীহ বুখারী শরাহ) ফাতহুল বারী গ্রন্থে কাযী ইয়াযের নামে উদ্ধৃত করা হয়েছে। আর তৃতীয় কথা হচ্ছে তা জায়েয।
.
এ কালের বেশ কিছু সংখ্যক আলেম এ মত পোষণ করলে এর মধ্যে মাঝারি, সত্য নিকটবর্তী ও অধিক ইনসাফ পূর্ণ কথা হচ্ছে, দাড়ি মুন্ডন করা মাকরূহ, হারাম নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা) এর যে কোন আদেশই নিরংকুশ ভাবে ওয়াজিব হয়ে যায় না, যদিও কাফির মুশরিকদের বিরোধীতা করার কারণ ভিত্তি হিসাবে উদ্ধৃতি হয়েছে। তার অতি দৃষ্টান্ত ইয়াহূদী খ্রিষ্টানদের বিরোধীতা করার জন্যে খেজাব লাগিয়ে বার্ধ্যক্যের শ্বেতবর্ণ পাল্টে দিতে আদেশ করেছেন। (সহীহ বুখারী ৩৪৬২, ৫৮৯৯, সহীহ মুসলিম ২১০৩, নাসায়ী ৫০৬৯, ৫০৭১, ৫০৭২, ৪২০৩, ইবনু মাজাহ ৩৬২১, আহমাদ ৭২৩২, ৭৪৮৯, ৮০২২, ৮৯৫৬) কিন্তু কোন কোন সাহাবী এ আদেশ পালন করতে গিয়ে তা করেন নি। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, এ পর্যায়ের আদেশ মুস্তাহাব পর্যায়ের।
.
এ কথা সত্য যে, আগের কালের কোন মুসলমান দাড়ি মুন্ডন করেছেন বলে জানা যায় না। তা এ জন্যেও হতে পারে যে, সেকালের লোকেরা দাড়ি মুন্ডন প্রয়োজন মনে করতেন না, বরং তা রাখাই তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিল।
(ইসলামে হালাল হারামের বিধান, পৃঃ ১৩৭)
.
আল্লামা ড. ইউসুফ আল কারযাভী এর উপরোক্ত আলোচনা থেকে থেকে পরিষ্কার যে, দাড়ি রাখার তিনটি মত রয়েছে।
(১) ওযাজিব (দাড়ি মুন্ডন করা হারাম)
(২) সুন্নাত (দাড়ি মুন্ডন করা মাকরূহ)
(৩) মুবাহ (দাড়ি মুন্ডন করা জায়েয)
তৃতীয় মতের কোন ভিত্তি আছে বলে আমার জানা নেই। তবে আল্লামা ড. ইউসুফ আল কারযাভী এর মতে দাড়ি রাখা ওয়াজিবও নয় মুবাহও নয় বরং সুন্নাত।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে কোন মতামত প্রদান না করে আল্লামা মওদুদী রাহঃ এর গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে শেষ করছি।
.
আল্লামা মওদুদী রাহঃ দাড়ি রাখা বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে লিখেন,
"আমি জরুরী ও অজরুরীর পার্থক্য বুঝিনা। আমি কেবল এতোটুকুই বুঝি যে, রাসূলুল্লাহ (সা) এর (দাড়ি রাখার) নির্দেশ দিয়েছেন। আমি যখন তাঁর আনুগত্য কবুল করে নিয়েছি, তখন তাঁর নির্দেশ পালন করা আমার জন্য অবশ্য কর্তব্য।"
তিনি আরো বলেন, "আমরা পূর্ণভাবে কেবল সেই পথেই চলতে চাই, যে পথে চলে গেছেন রাসূলে পাক (সা)। তাঁর সকল হুকুম বিধান আমাদেরকে পালন করতে হবে যা তিনি আমাদেরকে দিয়ে গেছেন।" (রাসায়েল ও মাসায়েল, ১ম খন্ড, পৃঃ ১১৩-১১৪)
.
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَاب.
রাসূল (সা) তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও এবং আল্লাহকেই ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি প্রদানে কঠোর। (সূরা হাশরঃ৫৯/৭)
-----------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ ও মাওলান।
0 Comments