Recent Tube

রাষ্ট্রশক্তি ছাড়া দ্বীন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়ঃ মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

       রাষ্ট্রশক্তি ছাড়া দ্বীন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়ঃ
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَقُلْ رَبِّ أَدْخِلْنِي مُدْخَلَ صِدْقٍ وَأَخْرِجْنِي مُخْرَجَ صِدْقٍ وَاجْعَلْ لِي مِنْ لَدُنْكَ سُلْطَانًا نَصِيرًا.
(হে নবী) বল, ‘হে আমার রব, আমাকে প্রবেশ করাও উত্তমভাবে এবং বের কর উত্তমভাবে। আর তোমার পক্ষ থেকে আমাকে সাহায্যকারী রাষ্ট্রশক্তি দান কর’।
(সূরা বানী ইসরাঈলঃ১৭/৮০)

.
     অত্র আয়াতের তাফসীরে আল্লামা ইবনে কাসীর রাহঃ বলেন,
إن نبي (ص) علم أن لا طاقة له بهذا الأمر إلا بسلطان، فسأل سلطانا نصيرا لكتاب الله، ولحدود الله، ولفراءض الله، ولإقامة دين الله، فإن السلطان رحمة من الله جعله بين أظهر عباده، ولولا ذلك لأغار بعضهم عل بعض فأكل شديدهم ضعيفهم. قال مجاهد سلطانا نصيرا حجة بينة، واختار ابن جرير قول الحسن وقتادة، وهو الأرجح لأنه لا بد مع الحق من قهر لمن عاداه وناوأه، ولهذا يقول تعالي: لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ- إلي قوله وَأَنْزَلْنَا الْحَدِيدَ- [الحديد:٢٥] وفي الحديث: ان الله ليزع بالسلطان ما لا يزع بالقران.
"এটা তো নবী কারীম (সা) জানতেই পেরেছিলেন যে, রাষ্ট্রীয় বিজয় ছাড়া দ্বীনের প্রচার, প্রসার এবং শক্তিলাভ সম্ভবপর নয়। এ জন্যেই তিনি মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য ও বিজয় কামনা করেছিলেন যাতে তিনি আল্লাহর কিতাব, তাঁর হুদূদ, শরীয়তের ফরজ সমূহ এবং لإقامة دين الله আল্লাহ দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। 
এই বিজয় দানও আল্লাহ তা'আলা এক বিশেষ রহমত। এটা না হলে একে অপরকে খেয়ে ফেলতো এবং সবল দূর্বল কে শিকার করে নিতো। কেউ কেউ বলেছেন যে, 'সুলতান নাসীর' দ্বারা 'স্পষ্ট দলীল' বুঝানো হয়েছে। কিন্তু প্রথম উক্তিই বেশি উত্তম। কেননা সত্যের সাথে বিজয় ও রাষ্ট্রশক্তিও জরুরী। যাতে সত্যের বিরোধীরা জব্দ থাকে। এই জন্যেই আল্লাহ তা'আলা লোহা অবতীর্ণ করার অনুগ্রহকে কুরআন কারীমে বিশেষ  ভাবে উল্লেখ করেছেন।
একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে- 'সালাতানাত' বা রাষ্ট্রশক্তির বলে আল্লাহ তা'আলা এমন কিছুর উচ্ছেদ ঘটান, কুরআনের মাধ্যমে যেগুলো উচ্ছেদ ঘটান না।" (তাফসীরে ইবনে কাসীর)
.
        উক্ত আয়াতের তাফসীরে আল্লামা মওদুদী রাহঃ বলেন,
"(হে আল্লাহ) তুমি নিজেই আমাকে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা দান করো অথবা কোন রাষ্ট্র ক্ষমতাকে আমার সাহায্যকারী বানিয়ে দাও, যাতে তার ক্ষমতা ব্যবহার করে আমি দুনিয়ার বিকৃত ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধন করতে পারি, অশ্লীলতা ও পাপের সয়লাব রুখে দিতে পারি এবং তোমার ন্যায় বিধান জারি করতে সক্ষম হই। হাসান বাসরী ও কাতাদাহ এ আয়াতের এ ব্যাখ্যাই করেছেন। ইবনে জারীর ও ইবনে কাসীরের ন্যায় মহান তাফসীরকারগণ এ ব্যাখ্যাই গ্রহণ করেছেন। 
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিম্নোক্ত হাদীস থেকেও এরই সমর্থন পাওয়া যায়ঃ
إن الله ليزع بالسلطان ما لا يزع بالقران.
“আল্লাহ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বলে এমনসব জিনিসের উচ্ছেদ ঘটান কুরআনের মাধ্যমে যেগুলোর উচ্ছেদ ঘটান না।”
.
      এ থেকে জানা যায়, ইসলাম দুনিয়ায় যে সংশোধন চায় তা শুধু ওয়াজ-নসিহতের মাধ্যমে হতে পারে না বরং তাকে কার্যকর করার জন্য রাজনৈতিক ক্ষমতারও প্রয়োজন হয়। তারপর আল্লাহ নিজেই যখন তাঁর নবীকে এ দোয়া শিখিয়েছেন তখন এ থেকে একথাও প্রমাণ হয় যে, দ্বীন প্রতিষ্ঠা ও শরীয়তী আইন প্রবর্তন এবং আল্লাহ প্রদত্ত দণ্ডবিধি জারী করার জন্য রাষ্ট্র ক্ষমতা হাসিল করার প্রত্যাশা করা এবং এজন্য প্রচেষ্টা চলানো শুধু জায়েযই নয় বরং কাংখিত ও প্রশংসিতও এবং অন্যদিকে যারা এ প্রচেষ্টা ও প্রত্যাশাকে বৈষয়িক স্বার্থ পূজা ও দুনিয়াদারী বলে আখ্যায়িত করে তারা ভুলের মধ্যে অবস্থান করছে। কোন ব্যক্তি যদি নিজের জন্য রাষ্ট্র ক্ষমতা লাভ করতে চায় তাহলে তাকে বৈষয়িক স্বার্থ পূজা বলা যায়। কিন্তু আল্লাহর দ্বীনের জন্য রাষ্ট্র ক্ষমতা লাভের প্রত্যাশা করা বৈষয়িক স্বার্থ পূজা নয় বরং আল্লাহর আনুগত্যের প্রত্যক্ষ দাবী।" (তাফহীমুল কুরআন)
-----------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলানা। 

Post a Comment

0 Comments