Recent Tube

"ভ্রান্তির বেড়াজালে ইক্বামতেদ্বীন" বই পড়ে আমার অনুভূতি:লিখেছেন মুহতারাম Saad Abdi সম্পাদনায় আমি Tanzil Islm.

     
      “ভ্রান্তির বেড়াজালে ইক্বামতে দ্বীন” নামক একটা বই বাংলাদেশের খুব ভালো একজন আলেম(?) শায়খ মোযাফফর বিন মুহসেনের লেখা। তিনি এই বইটার মাধ্যমে গোটা জামাআতে ইসলামীর দৃষ্টি দর্শন যেটাকে “তেহরীকে ইক্বামতে দ্বীন” নামে মাওলানা মাওদূদী (র) পরিচিত করেছেন, তার দাঁত ক্ষয় করা জবাব দেয়ার জন্য লিখেছেন বলে আমার মনে হয়েছে। এই বইটার মাধ্যমে জামাআতের সমস্ত লেটারেচার, মাওলানা মাওদূদী (র) এর সমস্ত সন্দর্শন, মাওলানা সদরুদ্দীন ইসলাহী (র) এর “ফারযিয়্যাত ই ইক্বামতে দ্বীন” তথা “ইসলামি রাস্ট্র প্রতিষ্ঠার দ্বায়িত্ব ও প্রফেসর গোলাম আযম (র) এর “ইক্বামতে দ্বীন” ইত্যাদির জবাব দেয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা করেছেন তিনি এবং তা করতে যেয়ে নিতান্তই শিশু সুলভ অথচ সপ্রগলভ গবেষক হিসেবে নিজেকে জাহির করেছেন।
        আমি এই নব্য মাদখালী গ্রুপ তথা বাংলাদেশে বোমা মেরে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার মানসিকতা সম্পন্ন আহলে হাদীসের পথহারা এই গ্রুপের তাকব্বরি ও বাকওয়াস অনেক শুনেছি, এদের পাশে বসে কথা বলার চেষ্টা করেছি, এদের লেটারেচার ও রাত জেগে পড়ে বোঝার চেষ্টা করেছি। আমি বুঝতে পেরেছি এদের যে চক্র বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বিকল্প হয়ে দাঁড়াতে চায় তা তারা করতে যেয়ে হাতির মত সাদা দাঁত বের করে দিয়ে যথেষ্ঠ হাসির খোরাক দিয়েছেন জামায়াতের অভ্যন্তরে।
          যাহোক, জামায়াতের লেটারেচার গুলোর বিকল্প বের করতে তাদের শায়খ ডঃ আসাদুল্লাহিল গালিবই জামায়াতের চিন্তা চুরির অপপ্রয়াস চালান এবং জামায়াতকে ঠেকাতে এক্কেবারে একই শীরোনামের, একই চিন্তায়, একই দর্শনের আলোকে তার শুব্বান গ্রুপ নামক একটা “আহলে হাদীস” মেশিন বানান। আমাদের এই বই এর লেখক সেই মেশিনের তৈরী সুন্দর প্রোডাক্ট, সন্দেহ নেই।
.
      ওস্তাদ গোলাম আযম (র) ‘ইক্বামতে দ্বীন’  লিখেছেন, কাজেই মুযাফফার সাহেব এই বই লিখবেন, তাতে আমার তাজ্জব মনে হয়নি। কিন্তু আমি মারত্মক তাআজ্জবের শিকার হয়েছি, যখন দেখলাম এই গবেষক সাহেব তার গোটা বইতে “গবেষণা” শব্দের সঠিক কাজ করতে যেয়ে নাকাল হয়েছেন। মনে রাখতে হবে “গবেষণা” শব্দের সন্ধি বিচ্ছেদ হলোঃ গো+এষণা। বা গরু খোঁজা। তিনি পড়া শুনা বাদ দিয়ে যে আসলে গরু খুঁজে বেড়ায়েছেন তা নিচের পয়েন্ট গুলো একটু দেখলে বুঝতে পারবেন।
.
১। এই ভদ্র গবেষক মহাশয় চেষ্টা করা করেছেন “ইক্বামতে দ্বীন” এর সালাফী অর্থের বিপরীতে দাঁড়াতে। সালাফের উলামারা মনে করেন ইক্বামতে দ্বীনের অর্থ ইক্বামতে ইসলাম, তথা আক্বীদাহ, আহকাম, তথা যে সব বিষয় একজন মানুষকে মুমিন বা মুসলিম বানায় তা প্রতিষ্ঠা করা। এর মধ্যে তাওহীদ যেমন আসে, রিসালাত আসে, আখিরাতের বিষয় আসে, আহকামী যেন্দেগী, যেমন আরকানুল ইসলামও আসে। কিন্তু এই ভদ্র লোক বলেছেন এই
     ইক্বামতে দীনের অর্থ শুধু তাওহীদ
প্রতিষ্ঠা করা, ইসলামী রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা করে হুকুম আহকাম ও শারীয়াত প্রতিষ্ঠা নাকি এর মধ্যে গণ্য না।
এই শায়খ এইটা প্রমান করার জন্য গরখোঁজ করতে যেয়ে চৈত্রের নিদাঘ দুপুরে মাথায় আওলা ঝাওলাকারী ঝড়ের পাল্লায় পড়ে খাবি খেয়েছেন। বইয়ের ভূমিকার (১ম প্রকাশ ২০১৪) ৭ম পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ “ইক্বামতে দ্বীন” আল্লাহর একটি বিশেষ নির্দেশ। ইসলামের যাবতীয় আহকাম মানব জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করাই এর মৌলিক লক্ষ্য। কিন্তু বর্তমানে এই
“ইক্বামতে দ্বীন” বিভ্রান্তির ফাঁদে শৃংখলিত।”
এই একটা কথায় তার সেলফ কন্ট্রাডিকশানটা স্পষ্ট করে তোলে। মূলত গত চৌদ্দ শত বছরের তাফসীর গুলো পড়লে ইক্বামতে দ্বীনের ৪টা অর্থ দেখা যায়ঃ
     প্রথমতঃ মূল ধারা সালাফের তাফসীরঃ
তারা মনে করেছেনঃ এর অর্থ দ্বীন বলতে যা বুঝায় তা প্রতিষ্ঠা করা। ইমাম তাবারী এইটা ইমাম সুদ্দির প্রবচনে বলেছেনঃ
ﻫﻮ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﻛﻠﻪ
তথা দ্বীনের সবটাই, শুধু তাওহীদ নয়। এই কথার ব্যাখ্যা ইমাম তাবারী নিজেই বলেছেন, আক্বীমুদ্দীন হলোঃ
ﺃﻗﻴﻤﻮﺍ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﺃﻱ ﺃﻋﻤﻠﻮﺍ ﺑﻪ ﻋﻠﻰ ﻣﺎ ﺷﺮﻉ ﻟﻜﻢ ﻭﻓﺮﺽ
অর্থাৎ তোমার জন্য শরীয়াত করে দেয়া হয়েছে, বা যা ফরয করা হয়েছে তা সবই আমল করো।
ইমাম মুজাহিদ (মৃত ১০৪) ছিলেন তাবেয়ী। তিনি বলেনঃ আল্লাহ এমন কোন নবী পাঠান নি, যাকে সালাত ক্বায়েমের, যাকাত প্রদানের, আল্লাহকে আনুগত্যের স্বীকারোক্তি ইত্যাকার বিষয়ের নির্দেশ দেন নি। এটাই তো আল্লাহর শারীয়াত দেয়া দ্বীন। ইমাম সা’লাবী বলেন, এই মতটা ওয়ালী (রা) ও ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন। (সা’লাবী)
.
    বক্তব্য সংক্ষেপ হয়ে ওঠে যদি আমরা
আজকের এই সব সালাফীদের ইমাম আব্দুর রহমান ইবন নাসের ইবন আসসা’দী এর তাফসীর তায়সীরুল কারীম আলমান্নান টা দেখি। এখানে তিনি বলেছেনঃ
ﻓﻠﻮﻻ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﺍﻹﺳﻼﻣﻲ، ﻣﺎ ﺍﺭﺗﻔﻊ ﺃﺣﺪ ﻣﻦ ﺍﻟﺨﻠﻖ، ﻓﻬﻮ ﺭﻭﺡ ﺍﻟﺴﻌﺎﺩﺓ، ﻭﻗﻄﺐ ﺭﺣﻰ ﺍﻟﻜﻤﺎﻝ، ﻭﻫﻮ ﻣﺎ ﺗﻀﻤﻨﻪ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﺍﻟﻜﺮﻳﻢ، ﻭﺩﻋﺎ ﺇﻟﻴﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﺘﻮﺣﻴﺪ ﻭﺍﻷﻋﻤﺎﻝ ﻭﺍﻷﺧﻼﻕ ﻭﺍﻵﺩﺍﺏ. ﻭﻟﻬﺬﺍ ﻗﺎﻝ : } ﺃَﻥْ ﺃَﻗِﻴﻤُﻮﺍْ ﭐﻟﺪِّﻳﻦَ { ﺃﻱ : ﺃﻣﺮﻛﻢ ﺃﻥ ﺗﻘﻴﻤﻮﺍ ﺟﻤﻴﻊ ﺷﺮﺍﺋﻊ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﺃُﺻﻮﻟﻪ ﻭﻓﺮﻭﻋﻪ، ﺗﻘﻴﻤﻮﻧﻪ ﺑﺄﻧﻔﺴﻜﻢ، ﻭﺗﺠﺘﻬﺪﻭﻥ ﻓﻲ ﺇﻗﺎﻣﺘﻪ ﻋﻠﻰ ﻏﻴﺮﻛﻢ، ﻭﺗﻌﺎﻭﻧﻮﻥ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺒﺮ ﻭﺍﻟﺘﻘﻮﻯ ﻭﻻ ﺗﻌﺎﻭﻧﻮﻥ ﻋﻠﻰ ﺍﻹﺛﻢ ﻭﺍﻟﻌﺪﻭﺍﻥ . } ﻭَﻻَ ﺗَﺘَﻔَﺮَّﻗُﻮﺍْ ﻓِﻴﻪِ { ﺃﻱ : ﻟﻴﺤﺼﻞ ﻣﻨﻜﻢ ﺍﻻﺗﻔﺎﻕ ﻋﻠﻰ ﺃﺻﻮﻝ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﻭﻓﺮﻭﻋﻪ، ﻭﺍﺣﺮﺻﻮﺍ ﻋﻠﻰ ﺃﻥ ﻻ ﺗﻔﺮﻗﻜﻢ ﺍﻟﻤﺴﺎﺋﻞ ﻭﺗﺤﺰﺑﻜﻢ ﺃﺣﺰﺍﺑﺎً، ﻭﺗﻜﻮﻧﻮﻥ ﺷﻴﻌﺎً ﻳﻌﺎﺩﻱ ﺑﻌﻀﻜﻢ ﺑﻌﻀﺎً ﻣﻊ ﺍﺗﻔﺎﻗﻜﻢ ﻋﻠﻰ ﺃﺻﻞ ﺩﻳﻨﻜﻢ . ﻭﻣﻦ ﺃﻧﻮﺍﻉ ﺍﻻﺟﺘﻤﺎﻉ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﻭﻋﺪﻡ ﺍﻟﺘﻔﺮﻕ ﻓﻴﻪ، ﻣﺎ ﺃﻣﺮ ﺑﻪ ﺍﻟﺸﺎﺭﻉ ﻣﻦ ﺍﻻﺟﺘﻤﺎﻋﺎﺕ ﺍﻟﻌﺎﻣﺔ، ﻛﺎﺟﺘﻤﺎﻉ ﺍﻟﺤﺞ ﻭﺍﻷﻋﻴﺎﺩ، ﻭﺍﻟﺠُﻤَﻊ ﻭﺍﻟﺼﻠﻮﺍﺕ ﺍﻟﺨﻤﺲ ﻭﺍﻟﺠﻬﺎﺩ، ﻭﻏﻴﺮ ﺫﻟﻚ ﻣﻦ ﺍﻟﻌﺒﺎﺩﺍﺕ ﺍﻟﺘﻲ ﻻ ﺗﺘﻢ ﻭﻻ ﺗﻜﻤﻞ ﺇﻻّ ﺑﺎﻻﺟﺘﻤﺎﻉ ﻟﻬﺎ ﻭﻋﺪﻡ ﺍﻟﺘﻔﺮﻕ .
এতে তিনি দ্বার্থ হীন ভাবে দ্বীনের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যেখানে তাওহীদ, ইবাদাতের আমাল সমূহ, আখালাক্বী দিক সমূহ এবং আদাবের ক্ষেত্র সমূহ সব এসে যায় বলে মন্তব্য করেছেন। এই তাফসীরে তিনি আরো দ্বার্থ হীন ভাবে বলছেন, “আন আক্বীমুদ্দীন” এর অর্থ হলো    “তোমরা দ্বীনের সমস্ত শারীয়াত প্রতিষ্ঠা করো, সেটা দ্বীনের মৌলিক বিষয় হোক অথবা প্রশাখা বিষয় হোক”। তিনি তাওহীদ শুধু নয় শারীয়াত কেও নিয়ে এসেছেন। এমন কি হাজ্জ, ঈদ, সালাত, জিহাদ ইত্যাদির মত ইবাদাত যা একতাবদ্ধ হয়ে করতে হয়, তার বিষয়টাও ইক্বামতে দ্বীনের আদেশের মধ্যে গণ্য করেছেন।
    আমি শায়খ মুযাফফরের মূর্খতার জন্য হেসেছি। তিনি ইমাম তাবারীর যে বক্তব্য তার বই এর ১৯৩ উল্লেখ করেছেন, এবং তাদের ইমাম সালাফী শায়খ আব্দুর রহমান সা’দীর বক্তব্য ১৯৪ লিখেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই দুজনের বক্তব্য যে তার মতের বাইরে যাচ্ছে তাও তিনি বুঝেন নি। মোটা দাগের খেয়ান্ত ছিল শায়খ সা’দীর মূল আলোচনা অর্ধেক কেটে তিনি বর্ণনা করেছেন। সত্যিকারার্থে এই জন্য আমি তাকে গবেষণা কর্মের নামে “গরু খোঁজা” কর্মচারী হিসেবে মনে করেছি।
.
    দ্বিতীয়তঃ কিছু সালাফ ও দার্শনিকগণের যুক্ত তাফসীরঃ
এই ধারার মুফাসসিরগণের এই তাফসীর শুরু হয়েছে মুক্বাতিল (মৃ ১৫০) থেকে। তিনি ইবনে আব্বাসের আরেকটি বক্তব্য তুলে ধরে বলেছেন ‘দ্বীন ক্বায়িম’ করার অর্থ তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করা। এই কথাটা সামারকান্দী (৩৭৫হি) সা’লাবি (৪২৭হি), ওয়াহিদি (৪৬৮হি), ইবন আতিয়্যাহ (৫৪৬হি) একই ভাষায় উল্লেখ করেছেন। এর পর আসে মু’তাযিলি ইমাম যামাখশারী (মৃ ৫৩৮হি)। তিনি ইসলামের ইতিহাসে প্রথম মুফাসসির যিনি এই বক্তব্যকে দর্শনের রঙ দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ
{ ﺃَﻥْ ﺃَﻗِﻴﻤُﻮﺍْ ﭐﻟﺪّﻳﻦَ ﻭَﻻَ ﺗَﺘَﻔَﺮَّﻗُﻮﺍْ ﻓِﻴﻪِ { ﻭﺍﻟﻤﺮﺍﺩ ﺇﻗﺎﻣﺔ ﺩﻳﻦ ﺍﻹﺳﻼﻡ ﺍﻟﺬﻱ ﻫﻮ ﺗﻮﺣﻴﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻃﺎﻋﺘﻪ، ﻭﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ﺑﺮﺳﻠﻪ ﻭﻛﺘﺒﻪ، ﻭﺑﻴﻮﻡ ﺍﻟﺠﺰﺍﺀ، ﻭﺳﺎﺋﺮ ﻣﺎ ﻳﻜﻮﻥ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺑﺈﻗﺎﻣﺘﻪ ﻣﺴﻠﻤﺎً، ﻭﻟﻢ ﻳﺮﺩ ﺍﻟﺸﺮﺍﺋﻊ ﺍﻟﺘﻲ ﻫﻲ ﻣﺼﺎﻟﺢ ﺍﻷﻣﻢ ﻋﻠﻰ ﺣﺴﺐ ﺃﺣﻮﺍﻟﻬﺎ، ﻓﺈﻧﻬﺎ ﻣﺨﺘﻠﻔﺔ ﻣﺘﻔﺎﻭﺗﺔ . ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ } ﻟِﻜُﻞّ ﺟَﻌَﻠْﻨَﺎ ﻣِﻨﻜُﻢْ ﺷِﺮْﻋَﺔً ﻭَﻣِﻨْﻬَـٰﺠﺎً {ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ 48
আক্বীমুদ্দ্বীন এর অর্থ হলো দ্বীন আল ইসলামের কেবল তাওহীদ ও তাআত বা আল্লাহর আনুগত্য, রাসুলগণের উপর, কিতাবের উপর, ক্বিয়ামতের দিনের উপর তথা যে সব বিষয় গুলো আমল করলে একজন মানুষকে মুসলিম বলা যায়, তা সব প্রতিষ্ঠা করো। এই বক্তব্যে আল্লাহ ইসলামী শরীয়াত কে বুঝাননি। এই শারীয়াত হলো বিভিন্ন মানুষের অবস্থা অনুযায়ী কোন মাসলাহা বা ভালো কাজের প্রচলন। আর এই সব ভালো কাজ “মাসলাহা” বিভিন্ন ও
পৃথক। আল্লাহ সূরা মায়েদাহ ৪৮ তে বলেছেনঃ আমি তোমাদের সবার শারীয়াত ও মেথোড বা চলার পথা একেক জনের জন্য একেক রকম করেছি। 
.
     এই বক্তব্যের পরে আসে ব্যপাক শোরগোল। তার এই বক্তব্যকে কৌট করা শুরু করে মুফাসসিরগণের একটা বিশাল অংশ। মজার ব্যাপার হলো আপনি যদি ইমাম রাযী (৬০৬হি), ইমাম কুরতুবী (৬৭১), বায়দাওয়ী (৬৮৫), ইমাম নাসাফী (৭১০হি), খাযিন (৭২৫হি) প্রমুখের তাফসীর গুলো পড়েন তবে দেখবেন তাদের বক্তব্য অনেকাংশে অক্ষরে অক্ষরে যামাখশারীর বক্তব্য। এই একই বক্তব্য হলো ইবাদিয়্যাহ নামক খাওয়ারিজদের মুফাসসিরে কিরামের বক্তব্য। পড়ে দেখুন হাওয়ারী (৩য় শতাব্দী), আতফীস (মৃ১৩৮৫)। এই একই মত হলো সুফীদের ১০০% মুফাসসিরীনদের। দেখুন তাসতারী (২৮৩হি), কুশায়রী (৪৬৫হি), ইবন আরাবী (৬৩৮), ইসমাঈল হাক্কী (১১৭০হি)। 
    এব্যাপারে আমি সম্পূর্ণ দ্বায়িত্বশীলতা নিয়েই বলছি ইক্বামতে দ্বীনের তাফসীর “ইক্বামতে তাওহীদ” সালাফের মূলধারার
তাফসীর নয়, বরং অধিকাংশ দার্শনিক, ফাক্বীহ, ইসলামের মাঝে আসা অন্যন্য দৃষ্টিভংগীর অনুসারীদের ই কথা।
.
     তৃতীয়তঃ আমার মনে হয় এই বিপদ থেকে বাঁচার জন্য ইমাম ইবনে কাসীর শুধু তাওহীদ শব্দ টা না বলে ইক্বামাতুদ্দ্বীন বলতে তিনি বুঝাচ্ছেন “ইক্বামাতুল ইবাদাত”কে।
ﻭﺍﻟﺪﻳﻦ ﺍﻟﺬﻱ ﺟﺎﺀﺕ ﺑﻪ ﺍﻟﺮﺳﻞ ﻛﻠﻬﻢ ﻫﻮ ﻋﺒﺎﺩﺓ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺣﺪﻩ ﻻ ﺷﺮﻳﻚ ﻟﻪ ﻛﻤﺎ ﻗﺎﻝ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ } ﻭَﻣَﺂ ﺃَﺭْﺳَﻠْﻨَﺎ ﻣِﻦ ﻗَﺒْﻠِﻚَ ﻣِﻦ ﺭَّﺳُﻮﻝٍ ﺇِﻵ ﻧُﻮﺣِﻰۤ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﺃَﻧَّﻪُ ﻻۤ ﺇِﻟَـٰﻪَ ﺇِﻻَّ ﺃَﻧَﺎْ ﻓَﭑﻋْﺒُﺪُﻭﻥِ { ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ .25 ﻭﻓﻲ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ " ﻧﺤﻦ ﻣﻌﺸﺮ ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ ﺃﻭﻻﺩ ﻋﻼﺕ، ﺩﻳﻨﻨﺎ ﻭﺍﺣﺪ " ﺃﻱ ﺍﻟﻘﺪﺭ ﺍﻟﻤﺸﺘﺮﻙ ﺑﻴﻨﻬﻢ ﻫﻮ ﻋﺒﺎﺩﺓ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺣﺪﻩ ﻻ ﺷﺮﻳﻚ ﻟﻪ، ﻭﺇﻥ ﺍﺧﺘﻠﻔﺖ ﺷﺮﺍﺋﻌﻬﻢ ﻭﻣﻨﺎﻫﺠﻬﻢ ﻛﻘﻮﻟﻪ ﺟﻞ ﺟﻼﻟﻪ } ﻟِﻜُﻞٍّ ﺟَﻌَﻠْﻨَﺎ ﻣِﻨﻜُﻢْ ﺷِﺮْﻋَﺔً ﻭَﻣِﻨْﻬَـٰﺠﺎً }
এতে তিনি ইক্বামতে দ্বীনের আরেকটা অর্থ বলেছেন তা হলোঃ
     ইক্বামাতু ইবাদাতিল্লাহু ওয়াহদাহু। বা এক আল্লাহর ইবাদাত ক্বায়িম করো। তবে তিনি ইসলামের ইতিহাসে খুবই গভীর জ্ঞানের মুফাসসির ছিলেন। তিনি হাজার হাজার আয়াতের ব্যাখ্যা দিতে যেয়ে সালাফের তাফসীর কৌট করেন, অথচ এই একটা আয়াত পাই যেখানে তিনি তাদেরকে অনুসরণ করেন নি। তিনি নিজেই এর অর্থ করেছেন। আমি হেসেছি, যখন মুযাফফার সাহেব এই সুন্দর ব্যতিক্রমটা উনার গরু খোঁজায় বুঝতে পারেননি। ইবনে কাসীর (র) শুধু তাওহীদ প্রতিষ্ঠাই ‘ইক্বামতে দ্বীন’ বললে যামাখশারীর গর্তে পড়তে হতো, এবং কুরতবীর মত কষ্ট পেতে হত। মনে রাখবেন মোযাফফর সাহেব, তাওহীদ কিন্তু মু’তাযিলাদের ৫ মূলনীতিমালার একটা ছিলো। তাছাড়া যামাখশারী ও কুরতুবী তওহীদের পাশাপাশি আল্লাহর আনুগত্য প্রতিষ্ঠার কথাও উল্লেখ করেছেন। দেখুন- ﻫﻮ ﺗﻮﺣﻴﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻃﺎﻋﺘﻪ
.
...   চতূর্থতঃ শিয়া উলামাদের প্রায় ১০০% এই আয়াতের তাফসীরে ইমামাত উযমা বা রাস্ট্র ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। এদের কেও কেও তাওহীদ, ইবাদাত ইত্যাকার শারীয়াতের দিকের সাথে ইমামাত তথা রাস্ট্র শক্তি প্রতিষ্ঠার নির্দেশের কথা বলেছেন। যেমন ইমাম জাফর সাদেক্ব, আলীম আলক্বুমী (৪ শতাব্দী), ইমাম তাবরাসী (৫৪৮) যায়দিয়াদের ফুরাত আলকুফী, আলআ’ক্বাম প্রমূখ।
.
     আমি দৃঢ়তার সাথে বিশ্বাস করি এই বিপদ থেকেই বাঁচার জন্য বর্তমান বিশ্বে সর্ব প্রথম শায়খ আব্দুর রাহমান নাসের আলসা’দীই ইক্বামতের দ্বীন বলতে দ্বীনকে মারাত্মক বিভাজন ও একদেশ দর্শিতার বিভ্রান্তি থেকে আমাদের রেহায় দিয়েছেন। এবং দ্বীন ক্বায়িম বলতে জিহাদকেও সন্নিবিষ্ট করেছেন।
     এই যায়গায় মুযাফফর সাহেব বেশ বেগ
পেয়েছেন। আমার মনে হয় বইটা লেখার পরেই তিনি ভূমিকা লিখেছেন। সে জন্যই, আমার বিশ্বাস, তিনি বলেছেনঃ “ইক্বামতে দ্বীন” আল্লাহর একটি বিশেষ নির্দেশ। ইসলামের যাবতীয় আহকাম মানব জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করাই এর মৌলিক লক্ষ্য। কিন্তু বর্তমানে এই “ইক্বামতে দ্বীন” বিভ্রান্তির ফাঁদে শৃংখলিত”।
এর মানে হলো তিনি তার বই এর ১৯১ পৃষ্ঠা থেকে যে বলেছেনঃ “আর নবী-রাসূলগণের যুগ থেকে আজকের যুগের সকল হকপন্থী মুহাদ্দিস, মুফাসসির, ওলামায়ে কেরামের নিকট “দ্বীন কায়েম” অর্থ হল ‘তাওহীদ’ প্রতিষ্ঠা করা”। এটার মত জলজ্যান্ত বকওয়াস আর থাকতে পারেনা। আরো মজার ব্যপার হলো তিনি তার কথাটা সাপোর্ট করার জন্য ৬ জন বাছাই করা মুফাসসিরের কথা উল্লেখ করেছেন। এটা করতে যেয়ে তিনি মোটেই “আমানাতে ইলিমিয়্যাহ” বা জ্ঞানের আমানাত রক্ষা করেননি। তিনি ইবনে আব্বাসের একটা মত উল্লেখ করেছেন, অথচ সা’লাবী কর্তৃক বর্ণিত ইবনে আব্বাসের আরকটা মত আনেন নি। ইমাম কুরতবীকে তিনি সালাফ বলেছেন, অথচ পরে এসে এই সব মাযহাবীদের প্রকারন্তরে ইসলাম থেকে খারিজ বলেছেন। তিনি বলতে পারেননি ইমাম কুরতবী এই মতটা যে অক্ষরে অক্ষরে যামাখশারীর মত মু’তাযেলীর কাছ থেকে উদ্ধৃত করেছেন। ইবনে কাসীরের আলোচনা করলেও তার তাওহীদ ও ইবাদাতের গূঢ়তা উপলব্ধি করেননি। ইমাম তাবারীর বক্তব্যে যে শারীয়াত ও ফারদ্বিয়্যাত শব্দটির ব্যাপকতা বুঝায়েছে তা বুঝার মত পান্ডিত্য দেখাননি। এখানে ক্বাতাদার বক্তব্য ‘দ্বীন’ এর অর্থ তাহলীলুল হালাল ওয়া তাহরীমুল হারাম, তথা হালালকে হালাকরণ ও হারাম কে হারাম করণ তথা শরীয়াত এর অর্থ বিকৃত করেছেন। এই শায়খ সাহেব কুরতবীর বক্তব্যের অর্থ বুঝলে কাতাদার বক্তব্য উদ্ধৃত করতে পারতেন না। ক্বাতাদাতো আসলে কুরতবীর উল্টোটাই বলেছেন। তাহলীলুল হালাল ও তাহরীমুল হারাম ই শারীয়াত।
.
        এই শায়খ ইমাম শাওকানীর বক্তব্য ১৯৩ পৃষ্ঠায় তুলে ধরে অনুবাদ করেছেনঃ
‘তা হল আল্লাহর তাওহীদ ও তাঁর প্রতি ঈমান আনা, তাঁর রাসূলগণের উপর ঈমান আনা ও আল্লাহর শরীয়াত সমূহ কবুল করা’।
আমি বিস্মিত হচ্ছি এই শায়খের জ্ঞানের গভীরতা দেখে। তিনি প্রমাণ করতে চাইলেন, ইক্বামতে দ্বীন মানে ‘ইক্বামাতে তাওহীদ’ অথচ এই যায়দিয়া পন্থী ইমাম শাওকানী যিনি পরে আহলুসসুন্নাহ হয়েছেন, স্পষ্ট যে বললেন “এতে তাওহীদের সাথে শারীয়াত ও গণ্য হবে”, এটা শায়খ বোঝেননা??!! এত দূর্বল হাতে বই লিখলে যে নাবালেগ মেয়েরাও মুখে কাপড় সেঁধিয়ে দেবে হাসির বন্যা ঠেকাতে।
.
২। শায়খ মুযাফফর তার দীর্ঘ বইয়ে ইসলামি ইতিহাসে অনেক বাতিল ফির্কার আলোচনা করেছেন। কেন? তিনি তো ইক্বামতে দ্বীন নিয়ে লিখতে চাচ্ছিলেন, বাতিল ফির্কা নিয়ে কেন আলোচনা করবেন? এর জবাব তার সূচনাতে খুব প্রগলভতার সাথে তিনি দিয়েছেন। তার মতে, “ঐ সব বিদ’আতী দলগুলো ইসলামের লেবাস পরে ইক্বামতে দ্বীনের নামে মুসলিম জনগোষ্ঠীকে ধোঁকা দিচ্ছে”। (পৃ ৯)
    আমি তো প্রথমে বলেছি, এই লোকটার মাঝে গবেষণা করার ন্যুনতম আহলিয়্যাত নিয়ে, যোগ্যতা নেই, নেই মেথোডোলজি। লিখছেন ইক্বামতে দ্বীন নিয়ে, আর আলোচনা হচ্ছে খাওয়ারেজ, মু’তাযিলা, দেওবন্দ, সুফীপন্থী চার ইমামের মেথোড মানা চার মাযহাবের ভুল নিয়ে। তার জানা উচিৎ ছিলো ইসলামের ইতিহাসে ‘ইক্বামাতে দ্বীন’ এর ব্যাখ্যা নিয়ে কোন দিন কোন দলের উদ্ভব হয়নি। বিশ শতকের মাঝামাঝিতে মাওলানা মাওদূদী (র) এর “তেহরীকে ইক্বামতে দ্বীন” এর আগে বলুন তো আর কোন ব্যক্তি এই শব্দ সামনে নিয়ে এসেছেন? সূরা শুরার ১৩ নাম্বার আয়াতের যে কথা গুলো ছিলো তার তাত্বিক আলোচনা ছাড়া আর কার মাঝে এইটা নিয়ে দল তৈরি হয়েছে? এইখানে এই শায়খ আরেক মার খেয়েছেন, তিনি প্রমান করতে ব্যর্থ হয়েছেন ঐ খাওয়ারিজ, মু’তাযিলা, মুর্জিয়া, ক্বাদরিয়া ইত্যাদিরা ইক্বামাতে দ্বীন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায়েছে। অথচ যে কারো মনে হবে মনে হয় ঐ সব বাতিল ফের্কারা ইক্বামাতে দ্বীন নিয়েই কথা বলেছে।
.
     আরেকটা কাজ এই মুযাফফর সাহেব করেছেন, তা হলোঃ তিনি খাওয়ারিজ, মু’তাযিলা, শী’আ, ক্বাদারিয়া, মুরজিয়া ইত্যাকার বাতিল দল গুলোর সাথে আরো বেশ কয়েকটি দলের উল্লেখ করেছেন। তিন সুস্পষ্ট ভাবে এটা দেখাতে চেয়েছেন যে এরাও বাতিল ফের্কা, বিভ্রান্ত দল। এই দল গুলোর মধ্যে হলো ৪ মাযহাব। এখানে তিনি প্রায় ৬/৭ পৃষ্ঠা আলোচনা করেছেন ৪ মাযহাব নিয়ে। জানিনা, তার মতিভ্রম হয়েছে কিনা। তা না হলে ৪ মাযহাবকে কেও বাতিল ফের্কা বলে কি করে? দেওবন্দীদের কে বানায়েছেন আরেক বাতিল ফির্কা। অথচ দেওবন্দী কোন ফের্কার
নাম নয়, মাদ্রাসার নাম। যে সিলেবাস হাজার হাজার আহলে হাদীসের ছেলে মেয়েরাও পড়েছে। তাবলীগ জামাআতের কথাও বলেছে। অথচ তার আহলে হাদীসের লক্ষ লক্ষ অনুসারী তাবলীগ করে। ক্বাদিয়ানি মতবাদ কেও তিনি এনেছেন, অথচ ক্বাদিয়ানি বাতিল ফের্কা নয়,
তারা মূলত অমুসলিম, কাফির। তবে মুযাফফরগং তাদের কাফির বলে গণ্য করে না?!!! 
      এরপরে নিয়ে এসেছেন জামাআতে ইসলামীর কথা। সেখানে তিনি মনের মাধুরী দিয়ে সাজায়েছেন। এর আলোচনা গুলো মূলত এসেছে ভারতের আরেক মাদখালী শায়খ মতিউর রাহমান মাদানীর আলোচনা থেকে। তারা উভয়ে প্রমান করতে চেয়েছেন জামাআতে ইসলামি একটা বাতিল ফের্কা। এখানে এই শায়খের আরেক বিভ্রান্তি ধরা পড়ে। তার উচিৎ ছিলো মাওলানা মাওদূদীর ‘ইক্বামতে দ্বীন’ সংক্রান্ত আলোচনার। কিন্তু তা তিনি না করে ৮ টা ভুল(?) নিয়ে আলোচনা করেছেন, যার মধ্যে একটা হলো ‘ইক্বামতে দ্বীন’।
    মূলত মাওলানা মাওদূদী (র) এই সম্পর্কে ইমাম কুরতবীকে খুব কড়া ভাবে সমালোচনা করেছেন। কুরতুবী বলতে চেয়েছেন, ইক্বামতে দ্বীন মানে তাওহীদ ও ঈমানের ৬টি বিষয়ের উপর ঈমান আনার কথা বলেছেন। মাওলানা মাওদূদী বলতে চেয়েছেন এ কথা ঠিক নয়। এতে করে দ্বীন কে ঈমান, ইবাদাত ও শারীয়াত থেকে আলাদা করা হবে। এতে করে সেন্ট পৌলস যেভাবে খৃষ্টানিটিকে ঈসা (আ) এর ইসলাম থেকে আলাদা করে ছিল তা ই করা হবে। তিনি তাই বলতে চেয়েছেন ইক্বামাতে দ্বীন মানে শুধু মাত্র তাওহীদ নয়।
মোযাফফর সাহেব কাটছাঁট করে মাওলানা মাওদূদীর কথার উধৃতি দিয়েছেন নানান বই থেকে। কিন্তু তাফহীমুল কুরআনে যে লম্বা আলোচনা মওদুদী (র) করেছেন এই আয়াত নিয়ে, তার আলোচনা মুযাফফর সাব আনেননি। কারণ সেখানে মওলানা মওদুদী (র) 'ইকামতে দ্বীন' এর তাফসীরে যে দলিল পেশ করেছেন, সেই দলিল খন্ডের শক্তি কোন আহলে হাদীসের নাই। তাছাড়া মাওলানা মাওদূদীর বক্তব্যের পর্যালোচনা এই শায়খ তার পবিত্র(?) বই এর ১৪৭ পৃষ্ঠা হতে যেন আসমান থেকে শুরু করে কাস্পিয়ান সাগর পর্যন্ত লম্বা আলোচনা করেন।
.
.     যাহোক, আমি মাওলানার বক্তব্যে ভুল
আছে কিনা তা বলবোনা এখানে। আমি শুধু বলবো যে ভুলটা(?) করার কারণে এই শায়খ সাহেব একজন মুসলিমকে অমুসলিম বা বাতিল ফের্কা প্রমাণ করতে আদা-জল খেয়ে লেগে গেলেন, সেই ভুল কথা তার উস্তাযের উস্তায সাঊদী আরবের শায়খ আব্দুর রহমান সা’দী তো স্পষ্ট করে বলে গেছেন। তাবারী বলেছেন। শাওকানী দ্বীনের মধ্যে শারীয়াতকেও অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তারাও কি বাতিল ফের্কার অন্তর্ভূক্ত হবেন?
     মজার কথা কি জানেন, ইমাম কুরতুবী কিন্তু কোন সালাফের বক্তব্য উদ্ধার করেননি। তিনি মু’তাযিলা নামক বাতিল ফের্কার মহান ইমাম যামাখশারীর হুবহু শব্দ সহ বাক্য নকল
করেছেন মাত্র। তাহলে ইবনে আব্বাস, সুদ্দী, তাবারী, ইবনে কাসীর, ইবন নাসের আসসা’দী সব বাতিল হয়ে বাকি থাকলেন কুরতুবী ও যামাখসশারী? আরো মজার ব্যাপর হলো ইমাম কুরতুবী ও যামাখসশারী তো তওহীদের পাশাপাশি আল্লাহর আনুগত্যের কথাও বলেন। কিন্তু মুযাফফর সাব শুধু তওহীদ প্রমাণ করতে চেয়েছেন! 

     ডঃ মুস্তাফিজুর রহমান প্রায়শঃ বলতেন, তোমরা তাফসীর পড়, কিন্তু দেখনা কোন কথা টা কার কাছথেকে এসেছে। ইবন কাসীর বললেই মনে করো ঐটা তার, কিন্তু হতে পারে আর কেও বলেছেন কথাটা। এখন এই মোযাফফর সাহেব বাতিল ফের্কার মতবাদ শুদ্ধ ধরে সালাফের যে বক্তব্য মাওলানা মাওদুদী (র) বলেছেন তাকে ভুল(?) ধরলেন।
.
৩। শায়খ মোযাফফর বিন মুহসিন সাহেব তার অনবদ্য এই বইটা লিখেছেন ভারতের মাদখালী চক্রের অন্যতম নেতা মতিউর রহমানের ভিডিও খিস্তি খেওর গুলো নামানোর পরে। ফলে দেখা গেছে তার অনেক কথা এই বই এ দিয়েছেন মোযাফফর সাহেব। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামের গণতন্ত্রের অনুসরণ করে ভোটে নির্বাচন করতে যাওয়া নিয়ে মারাত্মক
বিষোদ্গার। জামায়াত কখনো গণতন্ত্রকে ইসলামী পদ্ধতি বলেনি। বরং মাওলানা মাওদুদী (র) এর বক্তব্য এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট। গণতন্ত্রের বেশ কিছু বিষয় আছে যা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। কিন্তু কোন দেশে শাসক নির্বাচনে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মানা যাবে কিনা এই নিয়ে আছে যথেষ্ঠ মতপার্থক্য। জামায়াত তার গতিপথ চেইঞ্জ করে ১৯৫৩ সালে। মাছিগোট সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা দেয় যে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের যে প্রক্রিয়া ইসলামি দেশ গুলোতে শুরু হয়েছে, তাতে জামায়াত একমত। সুদান, মিশর, ইরাক, ইরাণ, কুয়েত, জর্ডান, মরক্কো, আলজেরিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া সহ মুসলিম দেশগুলোর ৯৯% দেশ এই পদ্ধতিতে শাসক নির্বাচনের পথ পরিগ্রহ করে। ইখওয়ান, তুরাবী, পাস, মিল্লি গুরাশ বা রাফাহ, জামায়াত ইসলামী সহ সবাই এতে অংশ
নিতে থাকে। হিযবুততাহরীর হয় এ ব্যাপারে খুব সোচ্চার। তারা মাওলানা মাওদুদীর ১৯৪১ এর ইসলামি বিপ্লবের পথের পদ্ধতি, তথা বিপ্লবের পথে ইসলাম কায়েমের কথা বলে গণতন্ত্রকে হারাম ফতোয়া দেয়। সাঊদী আলিমগণ ও এই একই পথ গ্রহণ করেন। কিন্তু ১৯৯১ সালের পর থেকে হিযবুততাহরীর ও সালাফীদের মাঝে চেইঞ্জ শুরু হয়।
.
     বাংলাদেশে এই মাদখালী গ্রুপ তাদের পছন্দ মত আহলে হাদীসের কেও নির্বাচনে জিতলে ভীষণ খুশী হতো বলে শুনেছি। মিশরে নব্য মাদখালী গ্রুপ আলনূর নামে আত্ম প্রকাশ করে। যারা উত্তরসূরী শায়খ হামেদ আলফাক্বীর জামায়াত আনসার আসসুন্নাহ আলমুহাম্মাদিয়্যা থেকে আলাদা হয়ে সরাসরি রাজনীতিতে অংশ নেয় এবং এদের কেই অর্থ, স্বার্থ, চাকুরি ও বিষয় আশয় দিয়ে সাহায্য করে সৌদি আরব। এরাই এখন ইখওয়ানের বিপরীতে লড়ায়ে রত এবং নির্বাচনে যেতে তাদের আগের সব হাদীস মানসূখ হয়ে গেছে। অথচ এই মোযাফফর সাহেব তার বই এ গণতন্ত্রে যাবার জন্য জামায়াত এ ইসলামকেই বাতিল ফের্কা বানালো। আফসোসের বিষয়!!
.
৪। এর পরেই শায়খ তার বই লেখার মূল কথায় এসেছেন। দেখাতে চেয়েছেন আহলে হাদীস আন্দোলনই একমাত্র হক পন্থী, আর সব আন্দোলন বাতিল। আমি এই ব্যাপারে কিছুই বলবোনা। কারণ তার আহলে হাদীস আন্দোলনের মূলনীতি, কর্মসূচী, কর্ম পদ্ধতি যা যা অনলাইনে দেখতে পেলাম ও তার বই এ পড়লাম তা যে সব জামায়াতের বই গুলো থেকে ধার করা, তা বুঝতে মেট্রিক পাস ও করা লাগবে না। এরা জামায়াতের কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করে জামায়াতকে বাতিল ফের্কা ও আহলে হাদীসকে একমাত্র হকপন্থী বলে প্রমাণ করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছে। শয়তানের খলিফা সেজে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান কায়েমের বিরোধীতা করেও যদি নিজেদের একমাত্র হিদায়াতপ্রাপ্ত বলে মনে করে তাহলে এর চেয়ে বড় তামশার বিষয় আর কি হতে পারে?
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
إِنَّهُمُ اتَّخَذُوا الشَّيَاطِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ اللَّهِ وَيَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ مُهْتَدُونَ.
তারা আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করেছে। আর তারা মনে করে যে, নিশ্চয় তারা হিদায়াতপ্রাপ্ত। (সূরা আ'রাফঃ৭/৩০)
----------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ ও মাওলানা।

Post a Comment

0 Comments