Recent Tube

জালিমদের জন্য ভালবাসা, দোয়া, আস্থা-সম্মতি জ্ঞাপন, পক্ষপাতিত্ব ও আনুগত্যের প্রতি ঝুঁকে পড়ার শরয়ী বিধানঃ Tanzil Islam ইসলামী চিন্তাবিদ ও লেখক।


------------------------------------------------------------------
আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
وَلَا تَرْكَنُوا إِلَى الَّذِينَ ظَلَمُوا فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ مِنْ أَوْلِيَاءَ ثُمَّ لَا تُنْصَرُونَ.
"আর যারা জুলুম করেছে (জালিম) তোমরা তাদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না; অন্যথায় জাহান্নামের আগুন তোমাদেরকে স্পর্শ (গ্রাস) করবে এবং আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোন অভিভাবক থাকবে না। অতঃপর তোমরা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না।" (সূরা হুদ ১১/১১৩)
.
অত্র আয়াতে মানুষকে জাহান্নাম থেকে রক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়ে বলা হচ্ছে: “জালিমদের দিকে একটুও ঝুঁকবে না, তাহলে কিন্তু তাদের সাথে সাথে তোমাদেরকেও জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে।" এখানে তাদের প্রতি সামান্যতম ঝোঁকা বা আকৃষ্ট হওয়া এবং তাদের প্রতি আস্থা বা সম্মতি জ্ঞাপন করাও নিষেধ করা হয়েছে। এই ঝোঁকা ও আকর্ষণের অর্থ সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের কয়েকটি উক্তি বর্ণিত হয়েছে।
(১) ইবনে আব্বাস বলেন, "জালিমদের চাটুকার হবে না"। অন্য বর্ণনায় তিনি বলেন, "তাদের শিরকী-কুফরী কর্মকাণ্ডের পক্ষপাতিত্ব করবে না।" (ইবন কাসীর) 
(২) কাতাদাহ বলেন, এর অর্থঃ “পাপিষ্ঠদের সাথে বন্ধুত্ব করবে না, তাদের কথামত চলবে না, আনুগত্য করবে না।" (কুরতুবী)
(৩) ইবনে জুরাইজ বলেন, এর অর্থঃ “পাপিষ্ঠদের প্রতি আদৌ আকৃষ্ট হবে না, সাপোর্ট করবে না।" (কুরতুবী)
(৪) আবুল আলিয়া বলেনঃ “তাদের কার্যকলাপ ও কথাবার্তা পছন্দ করো না, ভালবেসো না।” (কুরতুবী, ইবন কাসীর) 
(৫) সুদ্দী বলেনঃ “জালিমদের চাটুকারিতা করবে না, পক্ষপাতিত্ব করবে না।” (তাবারী)
(৬) ইকরিমা বলেনঃ “তাদের আনুগত্য করবে না, মেনে চলবে না।” (বাগভী)
(৭) ইবনে যায়দ বলেন,! তাদের কুফরী কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করা পরিত্যাগ করবে না।" (তাবারী)
(৮) ইবনে আব্বাস থেকে অপর বর্ণনায় এসেছে, "তোমরা জালিমদের পক্ষ নিও না। তাদের সাহায্য নিও না, তাহলে মনে হবে যেন তোমরা তাদের অন্যান্য কর্মকাণ্ডের সাথে সন্তুষ্ট রয়েছে।" (ইবনে কাসীর) 
.
উপরোক্ত আয়াত ও তাফসীর দ্বারা প্রমাণিত যে, জালিমদের প্রতি ভালবাসা রাখা, আস্থা-সম্মতি জ্ঞাপন করা, পক্ষপাতিত্ব করা, চাটুকারিতা, দালালী করা ও আনুগত্য হারাম, যা জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম কারণ। একই ভাবে তাদের পক্ষ নিয়ে মায়া কান্না করে তাদের জন্য সমানে দোয়া করাও জায়েয নেই। কেননা, এতে তাদের প্রতি ভালবাসা ও পক্ষপাতিত্ব প্রকাশ পায়। আর জালিমদের জন্য দোয়া করলে, তাদের পক্ষপাতিত্ব ও চাটুকারিতা করলে তাদের জুলুমকে সাপোর্ট করা হয় এবং এর ফলে অন্যান্য জালিমরাও তাদের সীমালঙ্ঘন ও জুলুমের কাজে উৎসাহ পায়, যা এক ধরনের সহযোগীতা। মহান আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا... وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ.
"হে মুমিনগণ, তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার কাজে পরস্পরের সহযোগীতা কর। মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগীতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে কঠোর।" (সূরা মায়িদাঃ ৫/০২)
.
বিঃদ্রঃ সত্যনিষ্ঠ আলেমদের মধ্যে অনেকেই সূরা হুদের উপরোক্ত আয়াতটিকে কাফির ও কথিত মুসলিম সব ধরনের জালিমদের ক্ষেত্রেই ব্যাপক বলে মন্তব্য করেছেন। (ইবনে তাইমিয়া, মাজমু ফাতাওয়া: ১৩/২০৩; মিনহাজুস সুন্নাহ: ৬/১১৭)

Post a Comment

0 Comments