Recent Tube

তাফসীরে যাকারিয়াতে' শায়েখ যাকারিয়া কর্তৃক প্রদত্ত 'রেফারেন্স' এর ময়নাতদন্ত ও সহীহ জালিয়াতি: Tanzil Islam ইসলামি চিন্তাবিদ ও লেখক।

-----------------------------------------------------------------
যখন প্রকাশ্যভাবে এ কথা প্রমাণিত হল যে, শায়খ যাকারিয়া তাফহীমুল কুরআন থেকে শত শত আয়াতের তাফসীর নকল করেছেন, কিন্তু 'তাফহীমুল কুরআন' কোনো রেফারেন্স দেননি তখন শায়খের অন্ধ ভক্তগণ দাবী করে বসলেন যে, অামাদের শায়খ বিনা রেফারেন্সে তাফসীর কপি/নকল করেনি বরং মওদুদী (রাহঃ) প্রাচীন তাফসীর গ্রন্থ থেকে রেফারেন্স ছাড়াই তাফসীর নকল করেছেন। আর শায়খ 'তাফহীমুল কুরআন' থেকে কপি করেন নি বরং মওদুদী (রাহঃ) যাদের থেকে নিয়েছেন তিনিও তাদের থেকে নিয়েছেন। তাই মিলে গেছে! বিষয়টি আমরা একটু তদন্ত করে দেখি যে, সর্বনাশ! এতো মহা জালিয়াতি। কোন তাফসীর গ্রন্থে যা নেই 'তাফহীমুল কুরআন' থেকে সহীহ ভাবে নকল করে তা ঐ গ্রন্থের নামে চালিয়ে দেওয়া হলো মিথ্যাচার। যা তাফসীরের নামে সহীহ ধোঁকা ও বিশুদ্ধ প্রতারণা। হ্যাঁ! দূঃখজনক হলেও সত্য যে, শায়খ 'তাফহীমুল কুরআন' থেকেই হুবাহু তাফসীর নকল করেছেন কিন্তু দুর্নাম ও দুর্নীতি থেকে রক্ষা পেতে খুবই চতুরতার সাথে তিনি কুরতুবী, ফাতহুল কাদীর, ইবনে কাসীর ইত্যাদি তাফসীর গ্রন্থের ভূয়া রেফারেন্স দেন, যদিও সেসব গ্রন্থের সাথে মিল পাওয়া যায় না। সুতরাং এ কথা সহীহ ভাবে বলা যায় যে, এটি শায়খের সহীহ জালিয়াতি। প্রমাণ হিসাবে আমরা দু'টি তথ্য পেশ করছি-
.
(ক) সূরা ত্বহা, আয়াত নং ৫৭
قَالَ أَجِئْتَنَا لِتُخْرِجَنَا مِنْ أَرْضِنَا بِسِحْرِكَ يَا مُوسَىٰ.
"বলতে লাগলো, “হে মূসা! তুমি কি আমাদের কাছে এ জন্য এসেছো যে, নিজের যাদুর জোরে আমাদের দেশ থেকে আমাদের বের করে দেবে?" (ত্বহা: ২০/৫৭)
.
এ আয়াতের তাফসীরে আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) বলেন, (জালিয়াতি ধরার সুবিধার্থে বাক্যের সিরিয়াল নং দিয়েছি) -
"(১) যাদু বলতে এখানে বুঝানো হয়েছে লাঠি ও সাদা হাতকে। (২) সূরা আ’রাফ ও সূরা শূ’আরায় বিস্তারিতভাবে একথা বর্ণনা করা হয়েছে যে, হযরত মূসা প্রথম সাক্ষাতের সময় প্রকাশ্য দরবারে একথা পেশ করেছিলেন। (৩) এ মু’জিযা দেখে ফেরাউন যে রকম দিশেহারা হয়ে পড়েছিল তা কেবলমাত্র তার এ একটি বাক্য থেকেই আন্দাজ করা যেতে পারে যে, “তোমার যাদুর জোরে তুমি আমাদের দেশ থেকে আমাদের বের করে দিতে চাও।” (৪) কোন যাদুকর যাদুর জোরে কোন দেশ জয় করে নিয়েছে, দুনিয়ার ইতিহাসে পূর্বে কখনো এ ধরনের ঘটনা ঘটতে এবং পরবর্তী কালেও ঘটতে দেখা যায়নি। (৫) ফেরাউনের নিজের দেশে শত শত যাদুকর ছিল, যারা যাদুর খেলা দেখিয়ে পুরস্কার নেবার জন্য হাত পাততো। (৬) এ জন্য ফেরাউনের এদিকে হযরত মূসাকে যাদুকর বলা এবং অন্যদিকে তিনি তার রাজ্য ছিনিয়ে তিতে চান বলেআশঙ্কা প্রকাশ করা তার স্পষ্ট দিশেহারা হয়ে যাবার আলামত পেশ করে। (৭) আসলে হযরত মূসার ন্যায়সঙ্গত ও যুক্তিপূর্ণ বক্তৃতা এবং মু’জিযাগুলো দেখে সে বুঝতে পেরেছিল যে, শুধুমাত্র তার সভাসদরাই নয় বরং তার সাধারণ অসাধারণ নির্বিশেষে সকল প্রজাই এ থেকে প্রভাবিত না হয়ে পারবে না। (৮) তাই সে মিথ্যা, প্রতারণা ও হিংসার পথে কার্যোদ্ধারের চেষ্টা শুরু করলো। (৯) সে বললো, এসব মু’জিযা নয়, যাদু এবং আমার রাজ্যের প্রত্যেক যাদুকরই এভাবে লাঠিকে সাপ বানিয়ে দেখাতে পারে। (১০) সে বললোঃ হে জনতা! ভেবে দেখো, এ ব্যক্তি তোমাদের বাপ-দাদাদেরকে পথভ্রষ্ট ও জাহান্নামী গণ্য করছে। (১১) সে আরো বললোঃ হে জনতা! সাবধান হয়ে যাও, এ ব্যাক্তি নবী-টবী কিছুই নয়, এ আসলে ক্ষমতালোভী। (১২) এ ব্যক্তি ইউসুফের যামানার মতো আবার বনী ইসরাঈলকে এখানে শাসন কর্তৃত্বে বসিয়ে দিতে এবং কিবতীদের হাত থেকে কর্তৃত্ব ক্ষমতা কেড়ে নিতে চায়। (১৩) এসব অস্ত্র ব্যবহার করে ফেরাউন সত্যের দাওয়াতকে হেয় প্রতিপন্ন করতে চাচ্ছিল।" (তাফহীমুল কুরআন, ত্বহা: ২০/৫৭, টীকা নং ৩০)
.
এ আয়াতের তাফসীরে শায়খ যাকারিয়া 'তাফহীমুল কুরআন' থেকে ১ম তিন বাক্য হুবাহ নকল করেন, তারপর মাঝের কয়েকটি বাক্য বাদ দিয়ে তাফহীম থেকে ৯ নং বাক্য থেকে "সে বললো" শব্দ দু'টি বাদ দিয়ে বাকি টুকু কপি করেন। এরপর তাফহীম থেকে ৭ নং বাক্য ইডিট করে 'ইবনে কাসীর' এর রেফারেন্স দেন। দেখুনঃ -
"জাদু বলতে এখানে বুঝানো হয়েছে লাঠি ও সাদা হাতকে। সূরা আল-আশরাফ ও সূরা আশ-শু'আরায় এসেছে যে, মূসা প্রথম সাক্ষাতের সময় প্রকাশ্য দরবারে একথা পেশ করেছিলেন। এ মু'জিযা দেখে ফির’আউন যেরকম দিশেহারা হয়ে পড়েছিল তা কেবলমাত্র তার এ একটি বাক্য থেকেই আন্দাজ করা যেতে পারে যে, "তোমার জাদুর জোরে তুমি আমাদের দেশ থেকে আমাদের বের করে দিতে চাও।"
এসব মু'জিযা নয়, জাদু এবং আমার রাজ্যের প্রত্যেক জাদুকরই এভাবে লাঠিকে সাপ বানিয়ে দেখাতে পারে। সুতরাং তুমি যা দেখাচ্ছ তা যেন তোমাকে প্রতারিত না করে। [ইবন কাসীর]"
মজার বিষয় হল- ইবনে কাসীরে হুবাহু এ তাফসীর খুঁজে পাইনি। স্কীনশর্ট দেওয়া হয়েছে, দেখে নিতে পারেন।
.
(খ) সূরা কামার আয়াত নং ০৭:
خُشَّعًا أَبْصَارُهُمْ يَخْرُجُونَ مِنَ الْأَجْدَاثِ كَأَنَّهُمْ جَرَادٌ مُنْتَشِرٌ.
"তারা তাদের দৃষ্টি অবনত অবস্থায় কবর থেকে বের হয়ে আসবে। মনে হবে যেন তারা বিক্ষিপ্ত পঙ্গপাল।" (সূরা কামার: ৫৪/০৭)
.
এ অায়াতের ব্যাখ্যায় ৭ নং টীকায় আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) বলেন, 
"মূল শব্দ হচ্ছে خشعا ابصارهم অর্থাৎ তাদের দৃষ্টি আনত থাকবে। এর কয়েকটি অর্থ হতে পারে। এক, ভীতি ও আতঙ্ক তাদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে। দুই, তাদের মধ্যে লজ্জা ও অপমানবোধ জাগ্রত হবে এবং চেহারায় তার বর্হিপ্রকাশ ঘটবে। কারণ, কবর থেকে বেরিয়ে আসা মাত্র তারা বুঝতে পারবে যে, এটিই সে পরকালীন জীবন যা আমরা অস্বীকার করতাম। যে জীবনের জন্য আমরা কোন প্রস্তুতি গ্রহণ করে আসিনি এবং যে জীবনে এখন আমাদেরকে অপরাধী হিসেবে আল্লাহ‌র সামনে হাজির হতে হবে। তিন, তারা হতবুদ্ধি হয়ে তাদের চোখের সামনে বিদ্যমান সে ভয়াবহ দৃশ্য দেখতে থাকবে। তা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়ার হুঁশও তাদের থাকবে না।"
.
শায়খ যাকারিয়া তাফহীমুল কুরআনের ৭ নং টীকা থেকে মাঝের দু'টি বাক্য বাদ দিয়ে সহীহ ভাবে হুবাহু কপি করে তথ্যসূত্র দিয়েছেন ফাতহুল কাদীর ও তাফসীরে কুরতুবীর। দেখুনঃ -
অর্থাৎ তাদের দৃষ্টি অবনতে থাকবে। এর কয়েকটি অর্থ হতে পারে। এক, ভীতি ও আতঙ্ক তাদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে। দুই, তাদের মধ্যে লজ্জা ও অপমানবোধ জাগ্রত হবে এবং চেহারায় তার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। তিন, তারা হতবুদ্ধি হয়ে তাদের চোখের সামনে বিদ্যমান সে ভয়াবহ দৃশ্য দেখতে থাকবে। তা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়ার হুঁশও তাদের থাকবে না।
 [দেখুন, কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]
.
তবে আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে শায়খ জাকারিয়া ৭নম্বর আয়াতের যে ব্যাখ্যা পেশ করেছেন তা তাফহীমের কপি, ফাতহুল
কাদীর ও কুরতুবীতে এই ধরণের কোনো
  1. ব্যাখ্যা নেই। নিম্নে দুটি (আরবী) তাফসীরের স্ক্রিনশট দেওয়া হল দেখে নিতে পারেন। কি বিশুদ্ধ ধোঁকা ও সহীহ প্রতারণা।

Post a Comment

0 Comments