Recent Tube

ইসলামের দৃষ্টিতে ছোঁয়াচে রোগ ও করোনাভাইরাস: Tanzil Islam



ইসলাম একটি ভারসাম্যপূর্ণ (দ্বীন) জীবনব্যবস্থা। কোন বিষয়ে বাড়াবাড়ি বা ছাড়াছাড়ি ইসলামে নাই। ছোঁয়াচে রোগ সম্পর্কেও একই নীতি। ছোঁয়াচে রোগ বা রোগের সংক্রমণ নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে। আমরা বাস্তবে দেখতে পাই যে, রোগীর কাছে, সাথে বা চারিপার্শে থেকেও অনেক মানুষ সুস্থ রয়েছে। আবার অনেক সতর্কতার পরেও মানুষ আক্রন্ত হচ্ছে বিভিন্ন রোগে। বস্তুত শুধু রোগজীবাণুর সংক্রমণেই যদি রোগ হতো তাহলে আমরা সকলেই অসুস্থ হয়ে যেতাম। কারণ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রকারের রোগজীবাণু আমাদের দেহে প্রবেশ করছে। রোগজীবাণুর পাশাপাশি মানুষের দেহের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা, রোগজীবাণু কর্মক্ষমতা ইত্যাদি অনেক কিছুর সমন্বয়ে মানুষের দেহে রোগ প্রবেশ করে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) ও ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
 لَا عَدْوَى وَلَا طِيَرَةَ وَلَا هَامَةَ فَقَامَ إِلَيْهِ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ الْبَعِيرُ يَكُونُ بِهِ الْجَرَبُ فَتَجْرَبُ بِهِ الْإِبِلُ قَالَ ذَلِكَ الْقَدَرُ فَمَنْ أَجْرَبَ الْأَوَّلَ.
"ছোঁয়াচে রোগের (মূলত্ব), কুলক্ষণ ও হামাহ বলে কিছু নেই।" এক ব্যক্তি তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে বললো, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! উটের চর্মরোগ হয়, পরে অন্যান্য উট তার সংস্পর্শে এসে চর্মরোগাক্রান্ত হয়। তিনি বলেনঃ "এটা হলো তাকদীর। তাহলে প্রথম উটটিকে কে সংক্রমিত করল?" (সহীহ বুখারী হাঃ ২০৯৯, ৫৭৫৩, ৫৭৭২, সহীহ মুসলিম হাঃ ২২২৫, ইবনে মাজাহ হাঃ ৩৫৪০, আহমাদ হাঃ ৪৭৬১, ৬৩৬৯, মুয়াত্তা মালেক হাঃ ১৮১৭)
পাশাপাশি ছোঁয়াচে রোগ বিষয়ে সতর্ক হতেও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নির্দেশ দিয়েছেন এবং নিজেও সাবধান থেকেছেন। যেমন- 
(১) আইসোলেশন: (Isolation) মহামারী ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে পৃথক রাখাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় আইসোলেশন বলা হয়। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
لَا يُورِدُ الْمُمْرِضُ عَلَى الْمُصِحِّ.
"অসুস্থকে সুস্থদের সংস্পর্শে নেয়া উচিত নয়।" (সহীহ মুসলিম হাঃ ২২২১, আবূ দাউদ হাঃ ৩৯১১, ইবনে মাজাহ হাঃ ৩৫৪১ আহমাদ হাঃ ৯৩২৯) 

শারীদ গোত্রের আমর (রাঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, ছাকীফ গোত্রের প্রতিনিধি দলে এক কুষ্ঠরোগী ছিল। নবী ﷺ তার নিকট লোক পাঠিয়ে বলেনঃ 
ارْجِعْ فَقَدْ بَايَعْنَاكَ.
"তুমি ফিরে যাও, আমি তোমার বাইয়াত গ্রহণ করেছি।" (সহীহ মুসলিম হাঃ ২২৩১, নাসায়ী হাঃ ৪১৮২, ইবনে মাজাহ হাঃ ৩৫৪৪, আহমাদ হাঃ ১৮৯৭৪, ১৮৯৮০)
.
(২) লকডাউন : যে এলাকা মহামারী আক্রান্ত হয় সে এলাকার প্রবেশ ও বাহির বন্ধ করে দেওয়ার নাম লকডাউন। বিশ্ববাসীর কাছে লকডাউন সম্পর্কে সর্বপ্রথম থিউরী পেশ করেছেন বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ)। যেমন তিনি বলেন,
ﺇﺫَﺍ ﺳﻤِﻌْﺘُﻢْ ﺍﻟﻄَّﺎﻋُﻮﻥَ ﺑِﺄَﺭْﺽٍ، ﻓَﻼَ ﺗَﺪْﺧُﻠُﻮﻫَﺎ، ﻭَﺇﺫَﺍ ﻭﻗَﻊَ ﺑِﺄَﺭْﺽٍ، ﻭَﺃَﻧْﺘُﻢْ ﻓِﻴﻬَﺎ، ﻓَﻼَ ﺗَﺨْﺮُﺟُﻮﺍ ﻣِﻨْﻬَﺎ.
“যদি তোমরা শুনতে পাও যে, কোন জনপদে মহামারীর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে তবে তোমরা সেখানে গমন করবে না। আর মহামারীর স্থানে থাকলে সেখান থেকে বেরও হবে না''(সহীহ বুখারী হাঃ ৫৭২৮, সহীহ মুসলিম হাঃ ২২১৯, মুসনাদে আহমদ হাঃ ২১২৯১, ২১৩০৪)
.
এভাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে সংক্রমণ প্রতিরোধে একাধিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন। মু'মিন বিশ্বাস করে যে, সকল বিষয়ের ন্যায় রোগের ক্ষেত্রেও আল্লাহর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এজন্য সংক্রমণের ভয়ে অতি অস্থির বা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই। পাশাপাশি যে সকল রোগ বিস্তারে সংক্রমণ একটি উপায় বলে নিশ্চিত জানা যায় (যেমন- করোনা ভাইরাস) সে সকল রোগের বিস্তার রোধে ও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ঘাড় তেড়ামি করে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলা দেওয়া যাবে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
ﻭَﻟَﺎ ﺗُﻠْﻘُﻮﺍ ﺑِﺄَﻳْﺪِﻳﻜُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺘَّﻬْﻠُﻜَﺔ.
“তোমরা নিজেদেরকে স্বহস্তে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না।” (সূরা বাকারা ২/১৯৫)। 
তিনি আরও বলেন:
ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘْﺘُﻠُﻮﺍ ﺃَﻧْﻔُﺴَﻜُﻢْ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻛَﺎﻥَ ﺑِﻜُﻢْ ﺭَﺣِﻴﻤًﺎ.
“এবং তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের প্রতি দয়াশীল।” (সূরা নিসা ৪/২৯)
-----------------------------
ইসলামি চিন্তাবিদ ও লেখক।

Post a Comment

0 Comments