Recent Tube

‘ইলমান নাফিয়ান’: সফলতার মন্ত্র- জিয়াউল হক।

        ‘ইলমান নাফিয়ান’: সফলতার মন্ত্র-

     ব্যক্তির বিশ্বাস, চিন্তা ও দর্শনের উপরে নির্ভর করে গড়ে উঠে তার জ্ঞানের গভীরতা। আবার বিশ্বাস, দর্শন, চিন্তা ও চেতনার ধরনটা একটা ছাঁচ পায় ব্যক্তির অর্জিত জ্ঞানের রুপ ও পরিমানের উপরে ভিত্তি করে।

   তার মানে হলো, দুটো একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।মানুষের চিন্তাধারার যে প্যাটার্ন, তাকে আমরা তিনটা ভাগে ভাগ করতে পারি। সেগুলো হলো;
Logical Thought Process,
Psychological Thought Process এবং
Pathological Thought Process

  এর মধ্যে সৃষ্টিগতভাবে একজন মানুষ কেবলমাত্র ‘মানুষ’ হবার কারণে জন্মসুত্রেই যে চিন্তাধারাটা পায়, সেটা হলোLogical Thought Process।

   মিথ্যা বলাটা অন্যায়, অপরের ধন আত্মস্বাৎ করা ঠিক নয়, এরকম মৌলিক দর্শনগুলো এই চিন্তাধারার অন্তর্ভূক্ত এবং জন্মসুত্রেই প্রতিটি মানুষের ভেতরে এর উপস্থিতি থাকে। ইসলামি পরিভাষায় এটাই হলো ‘ফিতরাত’। প্রতিটি মানবশিশু এই ফিতরাতের উপরে জন্ম নেয়।

   জন্মের পরে পারিবারিক আবহ, সামাজিক, সংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ, শিক্ষা কার্যক্রম দ্বারা বা এসবের প্রভাবে এই ফিতরাত শানীত হয়, অথবা ঐ সবের ত্রুটি বা ত্রুটিপূর্ণ প্রয়োগের কারণে তার বিকৃতি ঘটতে থাকে, প্রকৃতিগতভাবে প্রাপ্ত বোধ ও বিশ্বাসকে সে হারাতে থাকে। এর ধারাবাহিকতায় একজন ব্যক্তির ভেতরে গড়ে উঠতে থাকে আরও দুটি অথবা ঐ দুটির যে কোনো একটি চিন্তাধারা; Psychological Thought Process এবং Pathological Thought Process অথবা উভয়টি।

   এ দুটো চিন্তাধারার মধ্যে প্রথমটি অর্থাৎ Psychological Thought Process চিন্তাধারাটি মানুষের আবেগ অনুভুতি নির্ভর। আবেগের বশবর্তি হয়ে তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজ কর্ম করে, বা কথা বার্তা বলে।

  আমাদের স্বাভাবিক বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতাও বলে আবেগের বশবর্তি হয়ে কাজ করাটা অনেক সময়ই নির্বূদ্ধিতার পরিচায়ক, ভুল হবার সম্ভাবনা থাকে, পরে এর জন্য অনুতাপ করতে হয়। ক্ষেত্রবিশেষে এর জন্য নিজ নিজ ডিপার্টমেন্ট প্রধান তথা বস বা আদালতের কাছে জবাবদীহিতার মুখোমুখি হতে হয়, এমনকি, শাস্তিরও মুখোমুখি হতে হয়।

   ইসলাম এই জন্যই আমাদের বলে দিয়েছে; আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে জবাবদীহি করতে হবে, এ ভয়ে যে নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে যা ইচ্ছা করা থেকে নিজেকে নিবৃত রেখেছে, জান্নাতই তার ঠিকানা (মান খ¦ফা মাক্বামা রাব্বিহি ওয়া নাহান্নাফসা আনিল হাওয়া, ফা ইন্নাল জান্নাতা হিয়াল মাওয়া-আল কুরআন)।

    আবেগনির্ভর চিন্তাশক্তির নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারই একজন ব্যক্তির সাফল্যের মূলকথা। পৃথিবীতে বড় বড় যুগান্তকারী ঘটনাগুলো সংঘটিত হবার পেছনে ব্যক্তির আবেগ একটা বড় কাজ করেছে।

    গাজী সালাহউদ্দীনের মনে ইসলাম, নবীপ্রেম ও মানবতার বৃহত্তর কল্যাণের জন্য যে আবেগ ছিল আজীবন, সেটুকু না থাকলে তার পক্ষে জেরুজালেম বিজয় করাটা সম্ভব হতো না। কাজেই আবেগ নির্ভর চিন্তাধারা (Psychological Thought Process) যে সব সময়ই ক্ষতিকারক, সেটা নয়, বরং এর নিয়ন্ত্রণটা নিজের হাতে থাকাটাই হলো ব্যক্তির সফলতা ও বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচতে পারার পূর্বশর্ত।

    এর বিপরিতে আরও একটা চিন্তাধারা রয়েছে, সেটা হলো; Pathological Thought Process। এই চিন্তাধারাটাই হলো অসুস্থ চিন্তাধারা, মানুষের জন্য এক অভিশাপ, তার সর্বনাশের মূল। পৃথিবীতে যা কিছু অকল্যাণকর, তার উৎস হলো এই চিন্তাধারা।

    এ থেকে বাঁচাতে পারা বা সেরকম একটা সক্ষমতা মানুষের মধ্যে যেন তৈরি হয় এবং তা সর্বদা শানীত অবস্থায় থাকে, তার জন্যই শিক্ষা, প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের এমন একটা স্তর মানুষের মধ্যে থাকতে হবে, যার দ্বারা সে এই তিনটা চিন্তাধারাকে জানবে, চিনবে, এর রুপরেখা বুঝবে।

       এ সক্ষমতা অর্জিত হওয়া মানেই হলো, শিক্ষার উদ্দেশ্য অর্জিত হয়েছে। আর এটা অর্জনের জন্য যেটা দরকার, সেটা হলো জ্ঞানের স্বচ্ছতা তথা ‘Clarity of Knowledge ’ ।

    জ্ঞানের ক্ষেত্রে এ স্বচ্ছতা না থাকলে জ্ঞানী ব্যক্তির দ্বারা মানবতার কোন অর্থবহ কল্যাণ না’ও হতে পারে। পৃথিবীতে অনেক ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালিত হয়েছে এমন সব লোকের দ্বারা, যাদের মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে জ্ঞানের কমতি ছিল না, তবে তাদের মধ্যে যে জিনিসটি ছিল না, তা হলো; জ্ঞানের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, তথা কল্যাণকর জ্ঞান। ইসলামের পরিভাষায় ‘ইলমান নাফিয়ান’।

      এই স্বচ্ছ জ্ঞান; এই ইলমান নাফিয়ান অর্জন করাটাই আমার, আপনার, আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। আল্লাহর রাসুল সা: নিজেও আমাদেরকে আল্লাহর কাছে এই কল্যাণকর ও স্বচ্ছ জ্ঞান চাইতে শিখিয়েছেন।

     যারা যুগকে বদলে দিতে চান, যারা মানবতার কল্যাণে কার্যকর কিছু করতে চান, তাদের জন্য এর কোন বিকল্প নেই। এটাই হলো সেই মন্ত্র, যা একজন জ্ঞানীকে কালোত্তির্ণ করে তোলে। আজ প্রতিটি মুসলিম যুবক-যুবতির উচিৎ এই ইলমান নাফিয়ান খুঁজে বেড়ানো, তা অর্জনে তৎপর হওয়া।
------------------------------------------------ 
হে আল্লাহ, আমাদেরকে আপনার পক্ষ হতে ইলমান নাফিয়ান দান করুন।
-------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও বিশ্লেষক।        

Post a Comment

0 Comments