Recent Tube

দরবারী আলেমঃ , মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

         
                      দরবারী আলেম
 আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ مِنَ الْكِتَابِ وَيَشْتَرُونَ بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا ۙ أُولَٰئِكَ مَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ إِلَّا النَّارَ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

     নিশ্চয় যারা কিতাব হতে গোপন করে আল্লাহ যা (বিধানসরূপ) নাযিল করেছেন এবং এর বিনিময়ে সামান্য মূল্য গ্রহণ করে, তারা শুধু আগুনই তাদের উদরে পুরে। আর আল্লাহ কিয়ামতের দিনে তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব।
(সূরা বাকারাঃ১৭৪)

১। “দরবারী আলেম” বলতে কাদেরকে বুঝানো হয়???
-যেসব আলেম দ্বীন কায়েমের কথা বলেনা, রাষ্ট্রীয়ভাবে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করার কথা বলেনা, জালিম ও কুফফার শাসকদের বিরুদ্ধে কথা বলে না, বরং যারা দ্বীন কায়েমের জন্যে প্রাণপণ চেষ্টা করছে, জালিম-কুফফার শাসকদের বিরুদ্ধে কথা বলছে, নবী রাসূলদের ন্যায় জালিম শাসকের নিযার্তনের শিকার হচ্ছে এসি রুমে বসে উল্টো তাঁদের বিরুদ্ধে ফতোয়া দেয়, তাগুতপন্থী আল্লাহদ্রোহী জালিম শাসকদের আনুগত্য করা ফরজ, তাঁদের বিরুদ্ধে হক্ব কথা বলা হারাম বলে ফতোয়া দেয় তারাই হচ্ছে “দরবারী আলেম” তথা জালেম আল্লাহদ্রোহী শাসকদের পা চাটা আলেম। তাগুতপন্থী শাসকগোষ্ঠী, নেতাগোতা এদের কোন কর্মকান্ডে বাঁধা দেয় না বরং এ সকল দরবারী আলেমদের প্রোগ্রাম মাহফিলে তাগুতপন্থী শাসকের এমপি মন্ত্রীগণ প্রধান অতিথি হয়, সাহায্য সহযোগীতা করে। যেখানে রাসূলুল্লাহ (সা) এর দ্বীনের কার্যক্রমে তাগুতপন্থী নেতাগোতারা বাঁধা দিত সেখানে এদের সাহায্য করা হয়।

    আমরা ঢালাওভাবে সকলকে “দরাবারী আলেম” বলিনা এমনকি সে যদি দ্বীন কায়েমের কথা না বলে, ইসলামী রাষ্ট্রের কথা না বলে, জালিম-কুফফার শাসকদের ভয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে কথা না বলে তাও। আমরা তখনি একজন আলেমকে “দরবারী আলেম/ দুনিয়াবী আলেম” বলি যখন সে, ইকামতে দ্বীনের বিরুদ্ধে এবং যারা দ্বীন কায়েমের জন্যে প্রাণপণ চেষ্টা করছে তাঁদের বিরুদ্ধে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে আল্লাহর আইন কার্যকর করার বিরোধিতা করে ফতোয়া দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে।

২। এইসব দরাবারী আলেমদের ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী কি??
-তাঁদের এহেন জঘন্য শরিয়ত বিরোধী কার্যকলাপের পরেও তাঁদের ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী হচ্ছে-ভারসাম্যপূর্ণ, শুধুমাত্র তা বৃহত্তর ফেতনা এড়ানোর জন্যে। তাঁদের যেসব কথা ও কাজ ভালো, কোরআন হাদিসের সাথে সংঘর্ষিক না সেগুলো মেনে নিতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। যেমন তারা নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত, বিবাহ, পারিবারিক জীবন নিয়ে অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলে থাকেন। সেগুলো কেউ মেনে নিলে আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু কেউ যদি তাঁদের কাছ থেকে দ্বীন কায়েম, ইসলামী রাষ্ট্র ইত্যাদি বিষয়ে তাঁদের মতকে গ্রহণ করে এবং সেগুলোকে দলীল হিসেবে পেশ করে তখন আমাদের প্রবল আপত্তি আছে। কেননা যে ব্যক্তি নিজে দ্বীন কায়েমের চেষ্টা করেনা, জালিম ও কুফফার শাসকদের বিরুদ্ধে কথা বলেনা বরং ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করে সেই ব্যক্তি কিভাবে দ্বীন কায়েম, আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন নিয়ে আপনাকে সঠিক বক্তব্য দিবে?

৩। এইসব দুনিয়ালোভী “দরবারী আলেম”দের ব্যাপারে কোরআন-হাদিস কি বলে???

    এইসব দুনিয়ালোভী, জেনেশুনে  আল্লাহর বিধান গোপনকারী “দরবারী আলেমদেরকে” সতর্ক করে আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ

إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ مِنَ الْكِتَابِ وَيَشْتَرُونَ بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا ۙ أُولَٰئِكَ مَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ إِلَّا النَّارَ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيم

    নিশ্চয় যারা আল্লাহর নাযিল করা কিতাবের অংশবিশেষ গোপন করে রাখে এবং সামান্য বৈষয়িক মূল্যে তা বিক্রি করে দেয়, তারা এটা দিয়ে যা হাসিল করে এবং যা দিয়ে তারা নিজেদের পেট ভর্তি করে রাখে তা মূলত আগুন ছাড়া আর কিছুই নয়, শেষ বিচারের দিনে আল্লাহ তাআলা তাদের সাথে কথা বলবেন না, তিনি তাদের পবিত্রও করবেন না, তাঁদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি।"
(সূরা আল বাকারাঃ১৭৪)

    তাছাড়া আল্লাহ রাসুল(সাঃ) জানতেন যে, তারপর একদল আলেমদের জন্ম হবে যারা দ্বীনের ব্যাপারে যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন করবে কিন্তু সে জ্ঞানকে দুনিয়াবানী স্বার্থে ব্যবহার করবে, জেনে শুনে ইলম গোপন করবে, জালেম-কুফফার শাসকদের বিরুদ্ধে কথা বলবেনা। তাই তিনি আমাদেরকে এইসব দুনিয়ালোভী আলেমদের ব্যাপারে সতর্ক করে গেছেন। কারণ এরা দাজ্জালের চেয়েও ভয়ংকর!

  আবূ যার (রাঃ) বলেছেন, 
“আমি নবী (সা) এর নিকটে একদিন উপস্থিত ছিলাম এবং আমি তাকে বলতে শুনেছি, 'এমন কিছু রয়েছে যেটির ব্যাপারে আমি আমার উম্মাহ্-এর জন্য দাজ্জালের অপেক্ষাও অধিক ভয় করি।’ তখন আমি ভীত হয়ে পড়লাম, তাই আমি বললাম,‘হে আল্লাহর রসূল! এটি কোন জিনিস, যার ব্যাপারে আপনি আপনার উম্মাহ্-এর জন্য দাজ্জালের চাইতেও অধিক ভয় করেন?’ তিনি [নবী সা. ] বললেন, ‘পথভ্রষ্ট ’আলিমগণ।’” 
[মুসনাদ আহমাদ হা/২০৩৩৫]

অন্য বর্ণনায় এসেছে: শাদ্দাদ ইবনে আউস রা. থেকে বর্ণিত,

 ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : " ﺇِﻧِّﻰ ﻻَ ﺃَﺧَﺎﻑُ ﻋَﻠَﻰ ﺃُﻣَّﺘِﻰ ﺇِﻻَّ ﺍﻷَﺋِﻤَّﺔَ ﺍﻟْﻤُﻀِﻠِّﻴﻦَ ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻭُﺿِﻊَ ﺍﻟﺴَّﻴْﻒُ ﻓِﻰ ﺃُﻣَّﺘِﻰ ﻟَﻢْ ﻳُﺮْﻓَﻊْ ﻋَﻨْﻬُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﻳَﻮْﻡِ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ 

  নবী ﷺ বলেছেন, “নিশ্চয়ই আমি আমার উম্মাহ্-এর জন্য কোন কিছুরই ভয় করি না, পথভ্রষ্ট আলিমগণ ব্যতীত। এভাবে, যখন আমার উম্মাহ্-এর বিরুদ্ধে তলোয়ার উঠানো হবে, এটা তুলে নেওয়া হবে না বিচার দিবস পর্যন্ত।” 
[মুসনাদ আহমাদ হা/১৬৪৯৩, ২১৩৬০, ৩১৩৫৯, ২০৩৩৪; আদ-দারিমী হা/২১১ ও ২১৬]

   সহীহ হাদীসে আরও বর্ণিত হয়েছে:
তিন শ্রেণীর মানুষকে সর্বপ্রথম জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এর মাঝে প্রথম শ্রেণীটা হচ্ছে-একদল জ্ঞাণী আলেম যারা দুনিয়াবী স্বার্থে ইলম গোপন করতো এবং জালেম শাসকদের বিরুদ্ধে কথা বলতো না।
(জামে আত তিরমিজি ও সহীহ ইবনে হিব্বান।)
      দরবারী এবং দুনিয়ালোভী আলেমদের ব্যাপারে অত্যন্ত কড়া কথা বলেছেন শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ) বলেন-
"যদি কোন শাইখ কুরআন এবং সুন্নাহ হতে অর্জিত শিক্ষা অনুযায়ী আমল ত্যাগ করে এবং এমন বিচারকের অনুসরণ করে যে আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূলের শিক্ষা অনুযায়ী বিচার করেনা, তখন সে একজন ধর্মত্যাগী এবং কাফের হিসেবে বিবেচিত হবে যে দুনিয়া ও আখিরাতে শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত।"
(আল ফতোয়া, ইবন তাইমিয়া, খন্ড-৩৫, পৃষ্টা-৩৭৩)
-------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলানা।         

Post a Comment

0 Comments