Recent Tube

এতো সহজ! তারপরেও আমাদের প্রচেষ্টাটুকু নেইঃ জিয়াউল হক।

        এতো সহজ! তারপরেও 
     আমাদের প্রচেষ্টাটুকু নেই
    
       সুরা কুরাইশে বলা হচ্ছে আল্লাহপাক মক্কাবসীকে ভয় ভীতি থেকে নিরাপদ রেখেছেন আর তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করেছেন। দুটো বিষয়; এক, তিনি মক্কাবাসীকে ভয় ভীতি থেকে কিভাবে নিরাপদ রেখেছেন? দুই; তাদের খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থাটি কীভাবে হচ্ছে?

     বিশাল মরু এলাকার মধ্যবর্তি অঞ্চলে মক্কার অবস্থান। পশ্চিমে দীর্ঘ পাহাড়ি পাথুরে অঞ্চল ও মরুভুমি, উত্তরের দূর্গম পাহাড়ী অঞ্চল ও মরুভূমি, আবার একইভাবে পূর্ব, পূর্বদক্ষিণে এবং দক্ষিণে বিশাল মরু এলাকার শত শত, এমনকি, হাজার মাইল পাড়ী দিয়ে আরবদের আক্রমণ করতে আসা তৎকালীন সব পরাশক্তির পক্ষেই অসম্ভব ছিল। 

    আক্রমণের প্রচেষ্টাা যে হয়নি, তা নয়। তৎকালীন বিশ্বের সুপার পাওয়ার রোমান জেনারেল (Augustus) এর নেতৃত্বে ৬৫ খৃষ্টপূর্ব সালে রোম আরবে অভিযান চালিয়েছিল, বর্তমান ইরাকের উত্তরাংশ পর্যন্ত আসতেই তাদের পুরো সৈন্যবাহিনী পারসিকদের হাতে নি:শেষ হয়েছে। মক্কা পর্যন্ত পৌছুতেই পারেনি। 

    পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে রোমানরা এর প্রায় তিরিশ বৎসর পরে; খৃষ্টপূর্ব ২৪ সালে সম্রাট অগাস্টাসের (Augustus) সময়ে তার মিশরীয় জেনারেল Aelius Gallus এর নেতৃত্বে এক বিশাল বাহিনী আবারও এসেছিল মক্কা অভিমুখে। এবারেও উত্তর আরবের মরুভুমি পাড়ী দিতেই তাদের ছয় মাস লেগে যায়। 

    পথিমধ্যেই অধিকাশ সৈন্য সামন্ত শেষ হলেও অনড় জেনারেল এগুতেই থাকে এবং খাইবার পর্যন্ত আসতে আসতেই রসদ ও পানির অভাবে তার বাঁকি সৈন্যরাও মৃত্যুবরণ করে। কেবলমাত্র কয়েকজন অতি বিশ্বস্থ রক্ষী নিয়ে হতভাগ্য জেনারেল আরব জয়ের ইচ্ছা ত্যাগ করে নজরান হয়ে কোনমতে প্রাণ নিয়ে পৌছায় মিশরে।
 
     মাত্র তিরিশ বৎসরে তৎকালিন বিশ^পরাশক্তির বিশাল সেনাবাহিনীর দ্বারা পর পর দু’বার আক্রান্ত হয়েও কোনেরকম প্রতিরোধ ছাড়াই মক্কাবাসীরা নিরাপদ থেকে যায়। মক্কার ভৌগলিক অবস্থান ও ভূ-প্রকৃতিই তাকে বহিশত্রুর আক্রমণ ও আগ্রাসন থেকে নিরাপত্তা প্রদান করেছে। 

      দ্বিতীয় বিষয়টি; ক্ষুধায় পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ করার বিষয়টি। আরবের মরুভূমি, ভূ-প্রকৃতি এবং আবহাওয়া কৃষির জন্য উপযুক্ত নয়। এই আধুুনিক যুগেও অতি উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারে যে যৎসামান্য ফসল উৎপাদিত হয়, সেকালে এটুকুও ছিল না। খাদ্যের জন্য তাদেরকে বরাবরই আমদানীর উপরে নির্ভর করতে হয়েছে। 

     তাছাড়া তাদের খাদ্যাভ্যাসও ভিন্ন ধাঁচের করতে হয়েছে। এখানে প্রচুর পরিমানে খেজুর উৎপন্ন হয়, খেজুরে মানুষের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্ঠি ও খাদ্যগুণের চমৎকার সন্নিবেশন ঘটেছে। 
হেজাজের খেজুরে পুষ্ঠিমাত্রা সবচেয়ে বেশি। বিভিন্ন শাকশব্জী ও ফলমূলে যে সব পুষ্ঠি ও ভিটামিন থাকে, আরবরা খেজুরেই  সেগুলো অধিকাংশই পায়। খেজুরে প্রচুর Laxative,/Purgative রয়েছে। ফলে পর্যাপ্ত শাকশব্জী না খেলেও আরবদের কোষ্ঠকাঠিন্যে ভূগতে হয় না। 

    খেজুরে প্রচুর Soluble Fibers  এবং Insoluble Fibers থাকায় টাটকা শাকশব্জী ও ফলমূল না খেয়েও ঐ খেজুরেই অন্ত্রনালী পরিস্কার ও জীবানুমুক্ত থাকে। এতে রয়েছে ওৎড়হ ফলে রক্তশুন্যতায় আরবরা ভূগে না। রয়েছে প্রচুর পরিমান ঋষঁড়ৎরহব, ফলে দাঁতের ক্ষয় রোগ (Tooth Decays) থেকে বেঁচে যায়। এতে পর্যাপ্ত পরিমানে Antioxidant flavonoids, থাকায় আরবরা অন্ত্র, কোলোন, স্তন, প্রষ্টেট, লিভার ও অগ্নাশয় ক্যানসার থেকে নিরাপদ।
 
    আরও রয়েছে প্রচুর Amino Acids, Sugar, Fats, Proteins এবং Vitamins যা মানব শরীরের শক্তি জোগায় এবং বিভিন্ন রোগ থেকে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। রয়েছে প্রচুর পরিমানে Potassium ও Vitamin A, ফলে হৃপিন্ড ও চোখ যেমন সুস্থ থাকে তেমনি চামড়ারও রং, উজ্জলতা ও গঠন ঠিক থাকে। কাজেই আমরা দেখতে পাচ্ছি, শাক শব্জি না থাকার অভাবটা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এক খেজুর দিয়েই পূরণ করে দিয়েছেন। 

   আরও রয়েছে সবচেয়ে বিষ্ময়কর বস্তু; জমজমের পানি। পানির প্রয়োজন তো মিটছেই, তাছাড়াও এ পানিতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, যা আমরা ভাত কিংবা রুটি থেকে পেয়ে থাকি।
আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক লক্ষ্যণীয়। আরবের ভৌগলিক অবস্থানটাই এমন যে, প্রাচীন গ্রিক, রোমান সা¤্রাজ্যের সাথে প্রাচ্যের চীনা ও ভারতীয় বাণিজ্যের সকল কাফেলাকে এদের বুকের উপর দিয়ে যেতে হতো। 

    একই কথা খাটে তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত নৌ বন্দর এডেন থেকে শাম-সিরিয়া ও আলেকজান্দ্রিয়ার বেলাতেও। বিশ্ববিখ্যাত সিল্ক রোড দিয়ে পুবের চীন, ভারত ও জাভা থেকে রোম, এথেন্স, দামেশক, আলেকজান্দ্রিয়া যেখানেই যে রসদই যাক না কেন, যেতে হতো লোহিত সাগর তীর ঘেঁসে অথবা আরবের বুকের উপরে দিয়ে।
 
    উভয় পথই ছিল আরবদের নিয়ন্ত্রণে। মরুর বুকে রসদ বহর নিয়ে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিতে প্রয়োজন হতো মরুভূমির মধ্যে কেবল পথই চিনবে না, পানির উৎসও জানবে, এমন গাইড। এমন দক্ষতা ও যোগত্যসম্পন্ন গাইড একমাত্র আরবরাই। আবার যাত্রাপথে এসব রসদ বহরের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন হতো মার্সিনারি সৈন্য। সে সৈন্যও ছিল আরবরাই। 

     ফলে রোমান বা পারসিক, গ্রিক বা মিশরীয় কিবত্বী, সবারই প্রয়োজন হতো আরবদের। তারা নিজেদের স্বার্থেই আরবদের নিরাপত্তা দিত যে কোনো বহি:শত্রুর আক্রমণের মুখে। প্রিয় রাসুল সা: এর দাদা আব্দুল মুত্তালেব আর বাবা হাশেমকেও এরকম সহায়তা প্রদান করেছিলেন বাইজান্টাইন স¤্রাট, সে তথ্যও ইতিহাসে দেখি।

     ঐতিহাসিক এসব তথ্য ও বাস্তবতা যদি গভীরভাবে চিন্তা করার পাশপাশি সুরা কুরাইশকে আরও একবার ভালো করে পড়ে দেখুুন তো, আপনার সত্যিই মনে হবে যে, আল্লাহ পাক আসলেই কুরআন বুঝা সহজ করেছেন। এতো সহজ! তারপরেও আমাদের প্রচেষ্টাটুকু নেই! (সংক্ষেপকৃত)
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ও বিশ্লেষক।          

Post a Comment

0 Comments