Recent Tube

মরুভূমীর হাতছানি পর্ব-১৪, মুহিউল ইসলাম মাহিম চৌধুরী।

                     মরুভূমীর হাতছানি 
                           পর্ব-১৪,
                      মসজিদে কুবা-
         
    ইসলামের ইতিহাসে যে মসজিদটি সর্বপ্রথম তাক্বওয়ার উপরে প্রতিষ্টিত হয়েছিল সেই মসজিদটির নাম হলো মসজিদে কুবা । 
দুই হারাম এবং জেরুজালেমের বাইতুল মুক্দ্দাসের পরেই মসজিদে কুবার মর্যাদা । 
যেই মসজিদের কথা সূরা তওবায় মহান অাল্লাহ এভাবে তুলে ধরেছেন -

    তুমি ওর ভিতরে কক্ষনো দাঁড়াবে না (মসজিদে দিরার)। প্রথম দিন থেকেই যে মাসজিদের ভিত্তি তাক্বওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত, তোমার দাঁড়ানোর জন্য সেটাই অধিক উপযুক্ত । সেখানে এমন সব লোক আছে যারা পবিত্রতা লাভ করতে ভালবাসে, আর আল্লাহ পবিত্রতা লাভকারীদের ভালবাসেন।''(সূরা তওবা)। 

      হুজুর (স) যখন মক্কায় ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করেন তখন কোরায়েশরা হুজুর (স) এবং তাঁর সাথীদের উপরে অকথ্য নির্যাতন চালায় । 
  এক পর্যায়ে নবী (স) কে তারা হত্যার পরিকল্পনা করে । 
     এমতাবস্থায় মহান অাল্লাহ তাঁর হাবীবকে জানিয়ে দেন, নবী অাপনি হিজরত করুন । মদীনায় চলে যান । 
অাল্লাহর পক্ষ থেকে অাদিষ্ট হয়ে হুজুর (স) সর্বপ্রথম মদীনা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে কোবা পল্লীর হাররা নামক স্থানে এসে উপনীত হত । 

    কয়েকদিন ধরে মদীনাবাসীরা এই জায়গায় এসে হুজুর (স) এর অাগমনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে অাবার ফিরে যেত । একদিন এক ইয়াহুদী দূর্গের প্রাচীরের উপরে দাড়িয়েছিল । হঠাৎ অনতিদূরে ধুলো উড়তে দেখে বুঝতে পারে নবীজির কাফেলা অাসছে । সে চিৎকার দিয়ে নবীর অাগমনের সুসংবাদ প্রচার করে।  সাথে সাথে সারা মদীনায় (ইয়াসরীব) চাউর হয়ে যায় জমীনের উপরে অাল্লাহর সবচাইতে বড় মেহমান মুহাম্মাদ ইবনে অাব্দুল্লাহ অাসছেন তাদের মাঝে।  

   নারী-পুরুষ, অাবাল বৃদ্ধ বনিতা,শিশু-কিশোরেরা মদীনার এই জায়গায় জড়ো হয়ে হুজুর (স) কে উষ্ণ অভ্যর্থনা  (Warm reception)  জানায় ।

      কুবায় এসে হুজুর (স) গোত্রপতি কুলসুম ইবনে হিদমের অাতিথেয়তা গ্রহন করেন । 
হাদীস দ্বারা যতদূর জানা যায় নবী করীম (স) চৌদ্দ দিন এখানে অবস্থান করেছিলেন । 

     সেই সময় অাল্লাহর রাসূল নিজ হাতে কুলসুম ইবনে হিদম (রা) এর খেজুর শুকানোর  জমিতে মসজিদে কুবার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ।

      চতূর্দিকে খেজুর গাছ পরিবেষ্টিত জায়গায়,অপেক্ষাকৃত কিছুটা উঁচুতে প্রাচীন ইসলামী স্থাপত্যশৈলীসমৃদ্ধ এ মসজিদটির দিকে তাকালে চোখ ফেরানো যায়না । 

    বেশ কয়েকবার মসজিদটি সংস্কার করা হয় । কুবা মসজিদে চারটি মিনার, ৫৬টি গম্বুজ রয়েছে এবং এর পাশেই ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের বাসস্থান পুরোপুরি সজ্জিত করার জন্য প্রসারিত করা হয়েছে। 
   
      একটি গ্রন্থাগার, বাণিজ্য কেন্দ্রে  রয়েছে ১২ টি দোকান  ।  পর্যাপ্ত পরিমানে রয়েছে ওজুখানা ও বাথরুম । যাতে সহজেই জিয়ারতকারীরা রিফ্রেশ হতে পারেন । 
 দৃষ্টিনন্দন গম্বুজ,ইন্টেরিয়র ডিজাইন, এবং সিলিং 
 সাধারণতঃ ক্যালিডোস্কোপিক রঙে সজ্জিত।

       মসজিদে কুবায় পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদের জন্যও রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় নামাজের জন্য অালাদা জায়গা । 

      নবী করীম (সাঃ) অভ্যাসগতভাবে প্রতি শনিবার পায়ে হেঁটে বা উটের পিঠে চড়ে দু’রাক’আত নামায পড়ার জন্য কুবা মসজিদে আসতেন । এখনও মদীনাবাসীরা এ অামল করে থাকেন । 
       হাদীস শরীফে এসেছে,যে ব্যক্তি নিজের ঘর থেকে ওজু সহকারে এই মসজিদে এসে দু'রাকায়াত সালাত অাদায়   করবে সে একটি মক্বুবুল ওমরা হজ্বের সওয়াব পাবে। 

       ধর্মীয় গুরুত্বের পাশাপাশি মুসলিম  সভ্যতা ও ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে কাল থেকে কালে ইসলামের দ্যুতি ছড়াচ্ছে ঐতিহাসিক মসজিদ,  ''মসজিদে কোবা''।

           হুজুর (স) এর স্মৃতিবহ ফজিলতওয়ালা এই মসজিদে দুই রাকায়াত সালাত অাদায়ান্তে ঘুরে ঘুরে কয়েকটি ছবি সংগ্রহ করি । 
অতঃপর সময় হল ফিরে অাসার । চেপে বসি ফিরতি গাড়িতে। 
------------------------------------------------
লেখকঃ কলামিস্ট ও প্রবন্ধ লেখক।        

Post a Comment

0 Comments