Recent Tube

ইকামাতে দ্বীন বিদ্বেষী অস্বীকারকারীরাই যুগে যুগে ইকামতে দ্বীনের বিরুদ্ধে ক্ষমতা দখলের অপবাদ দিয়েছে, আজও যারা এ অপবাদ দিচ্ছে তারা কারাঃ??? মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

ইকামাতে দ্বীন বিদ্বেষী অস্বীকারকারীরাই  যুগে যুগে ইকামতে দ্বীনের বিরুদ্ধে ক্ষমতা দখলের অপবাদ দিয়েছে, আজও যারা এ অপবাদ দিচ্ছে তারা কারাঃ???

   আল্লাহ তা'য়ালা দ্বীন কায়েমের নির্দেশ দিয়ে বলেনঃ 
أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ. 
"তোমরা দ্বীন কায়েম করো এবং এ ব্যাপারে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।" (সূরা শুরাঃ ৪২/১৩) নবীগণ আল্লাহর এ নির্দেশ পালন করেছেন। তাঁরা শুধু তওহীদের দাওয়াত দিয়েই ক্ষান্ত হননি বরং আনুগত্য করে তাঁদের নেতৃত্ব মেনে নিতেও আহ্বান জানিয়েছেন। নবীদের দাওয়াত ছিল- 
فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ. 
 ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর’।  (সূরা শুআরাঃ ২৬/১০৮, ১১০, ১২৬, ১৩১, ১৪৪, ১৫০, ১৬৩, ১৭৯)

     নবীদের দাওয়াতের বিরোধীতা করে নেতৃত্বস্থানীয় কাফির ও তাদের অনুসারীরা বলত-
وَلَئِنْ أَطَعْتُمْ بَشَرًا مِثْلَكُمْ إِنَّكُمْ إِذًا لَخَاسِرُونَ.
"যদি তোমরা তোমাদের মতই একজন মানুষের (তথা নবীর) আনুগত্য কর, তবে তোমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।" (সূরা মু'মিনুনঃ ২৩/৩৪)
কাফির নেতারা যখন আশঙ্কা করলো, জনগণ নবীর পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্ব এবং হৃদয়গ্রাহী কথায় প্রভাবিত হয়ে যাবে এবং তাদের প্রভাবিত হয় যাবার পর আমাদের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব আর কাদের ওপর চলবে তখন তারা নিজেদের বক্তৃতার মাধ্যমে এসব কথা জনগনের সামনে তুলে ধরে তাদেরেক বিভ্রান্ত করতে থাকলো। তারা বলতো, আল্লাহর পক্ষ থেকে এসব নবুওয়াত টবুয়ত কিছুই দেয়া হয়নি এটা হচ্ছে আসলে ক্ষমতা লিপ্সা, এরই মোহে অন্ধ হয়ে এ ব্যক্তি এসব আবোল তাবোল বলছে। 

       যে কেউ ইকামতে দ্বীনের কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে আসার চেষ্টা করলে সঙ্গে সঙ্গেই কাফিররা তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ এনে বলে, এর উদ্দেশ্য শুধু 'ক্ষমতা দখল' করা। এটি ইকামতে দ্বীনের দুশমনদের একটি পুরাতন অস্ত্র। হযরত নূহ (আঃ) এর বিরুদ্ধে এ অভিযোগটিই আনা হয়েছিল। 
فَقَالَ الۡمَلَؤُا الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا مِنۡ قَوۡمِهٖ مَا هٰذَاۤ اِلَّا بَشَرٌ مِّثۡلُكُمۡ يُرِيۡدُ اَنۡ يَّتَفَضَّلَ عَلَيۡكُمۡؕ 
"তার সম্প্রদায়ের যেসব নেতা তার কথা মেনে নিতে অস্বীকার করলো তারা বলতে লাগলো, 'এ ব্যক্তি আর কিছুই নয় কিন্তু তোমাদেরই মতো একজন মানুষ। এর লক্ষ্য হচ্ছে তোমাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন (ক্ষমতা দখল) করা'।" (সূরা মু'মিনুনঃ ২৩/২৪) ক্ষমতা দখলের অভিযোগটি ফেরাউন হযরত মূসা ও হারুন (আঃ) বিরুদ্ধে এনেছিল। সে বলেছিল,
وَتَكُونَ لَكُمَا الْكِبْرِيَاءُ فِي الْأَرْضِ.
দেশে তোমাদের প্রতিপত্তি (ক্ষমতা) প্রতিষ্ঠা করার জন্য এসেছো? (সূরা ইউনুসঃ ১০/৭৮) এ অভিযোগ হযরত ঈসা (আঃ) এর বিরুদ্ধে আনা হয়েছিল। বলা হয়েছিলঃ এ ব্যক্তি ইহুদিদের বাদশাই হতে চায়। আর কুরাইশ সরদাররাও নবী (সা) সম্পর্কেও এ একই সন্দেহ পোষণ করতো। এ জন্য কয়েকবারই তারা তাঁর সাথে এভাবে সওদাবাজী করতে চেয়েছে যে, যদি তুমি কর্তৃত্ব লাভ করতে চাও, তাহলে তুমি তোমার ইসলামী দল ছেড়ে দিয়ে আমাদের সরকারী দলে এসে যাও। তোমাকে আমরা বাদশাহ বানিয়ে নেবো। 
মজার ব্যাপার হচ্ছে সংস্কারকদের বিরুদ্ধে “ক্ষমতা লোভের” এ অপবাদ চিরকাল ক্ষমতাসীন লোকেরা ও তাদের তোষামোদী দরবারী গোষ্ঠীই লাগিয়ে এসেছে। অর্থাৎ তারা যেন একথা বলতে চায় যে, তারা নিজেরা ও তাদের মহান প্রভুরা যে ক্ষমতা লাভ করেছেতা যেন তাদের জন্মগত অধিকার। তা অর্জন করার ও তা দখল করে রাখার জন্য তারা কোনক্রমে 'ক্ষমতা লোভী' বলে অভিযুক্ত হতে পারে না। 
       এখানে একথাটিও ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে যে, প্রচলিত কুফুরী জীবন ব্যবস্থার দোষ ত্রুটিগুলো দূর করার জন্য যে ব্যক্তিই অগ্রসর হবে এবং এর মোকাবিলায় দ্বীনের সংস্কারমূলক মতাদর্শ ও ব্যবস্থা পেশ করবে তার জন্য অবশ্যই সংস্কারের পথে যেসব শক্তিই প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে তাদেরকে সরিয়ে দেবার জন্য প্রচেষ্টা চালানো এবং যেসব শক্তি সংস্কারমূলক মতাদর্শ ও ব্যবস্থাকে কার্যত প্রবর্তিত করতে পারবে তাদেরকে ক্ষমতাসীন করা অপিরহার্য হয়ে পড়বে। তাছাড়া এ ধরনের লোকের দাওয়াত যখনই সফল হবে, তার স্বাভাবিক পরিণতিতে সে জনগণের ইমাম ও নেতায় পরিণত হবে এবং নতুন ব্যবস্থায় ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের চাবিকাঠি হয় তার নিজের হাতে থাকবে নয়তো তার সমর্থক ও অনুসারীরা জনগণের ওপর কর্তৃত্বশীল হবে। দুনিয়ায় এমন কোন্ নবী ও সংস্কারক ছিলেন যিনি নিজের দাওয়াতকে কার্যত প্রতিষ্ঠিত করা যার প্রচেষ্টার উদ্দেশ্য ছিল না? আর এমন কে আছেন যার দাওয়াতের সাফল্য তাঁকে যথার্থই নেতায় পরিণত করেনি? তারপর এ বিষয়টি কি সত্যিই কারো বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উত্থাপন করার জন্য যথেষ্ট যে, সে আসলে 'ক্ষমতা লোভী' ছিল এবং তার আসল উদ্দেশ্য ছিল নেতৃত্ব লাভ এবং তা সে অর্জন করেছিল? অসৎ প্রকৃতির ইকামতে দ্বীনের দুশমনরা ছাড়া কেউ এ প্রশ্নের জবাবে হাঁ বলবে না। আসলে ক্ষমতার জন্যই ক্ষমতা কাংখিত হওয়া এবং কোন সৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতা কাংখিত হওয়ার মধ্যে রয়েছে আসমান জমিন ফারাক। এটা এত বড় ফারাক যেমন ফারাক আছে ডাক্তারের ছুরির ও ডাকাতের ছুরির মধ্যে। ডাক্তার ও ডাকাত উভয়ই ইচ্ছাকৃতভাবে মানুষের পেটে ছুরি চালায় এবং এর ফলে অর্থ লাভ করে যদি কোন ব্যক্তি শুধুমাত্র এ কারণে উভয়কে একাকার করে ফেলে তাহলে এটা হবে নিছক তার নিজেরই ভ্রান্ত চিন্তা বা মনের ভুল। নয়তো উভয়ের নিয়ত, কর্মপদ্ধতি ও সামগ্রীক কর্মকাণ্ডের মধ্যে এত বেশী পার্থক্য থাকে যে, কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি ডাকাতকে ডাক্তার এবং ডাক্তারকে ডাকাত মনে করার মতো ভুল করতে পারে না। (তাফহীমুল কুরআন)

        যুগে যুগে নবীদের ইকামতে দ্বীনের কাজকে কাফিরেরা 'ক্ষমতা দখল' এর অপবাদ দিয়ে এসেছে। কারণ তারা ইকামতে দ্বীন চিরশত্রু। আফসোসের বিষয় হল, কাফিরদের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের আহলে হাদীস মাদখালী ভাইয়েরাও একই অপবাদ দিচ্ছে। প্রশ্ন হল- আজ যারা ইকামতে দ্বীনের কর্মপন্থাকে 'ক্ষমতা দখল' এর অপবাদ দিচ্ছে তারা কি সেসব কাফিরদের সহীহ অনুসারী ও ইকামতে দ্বীনের দুশমন নয়?
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ,গ্রন্থপ্রনেত, ও মাওলানা।     

Post a Comment

0 Comments