Recent Tube

হযরত উমার (রা) কতৃক নিজ পুত্র আবূ শাহমাকে দোররা মারা:- মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

হযরত উমার (রা) কতৃক নিজ পুত্র আবূ শাহমাকে দোররা মারা:-


     প্রচলিত আছে যে, উমার (রা) তাঁর নিজ পুত্র আবূ শাহমাকে ব্যভিচারের অপরাধে ১০০ বেত্রাঘাত করেন। এতে পুত্রের মৃত্যু হয়। এ ব্যভিচার উদঘাটন, স্বীকারোক্তি, শাস্তি, পিতা-পুত্রের কথাবার্তা ইত্যাদি নিয়ে লম্বা চওড়া কাহিনী বলা হয়, যা শুনলে সাধারণ শ্রোতাগণের চোখে পানি আসে। মুহাদ্দিসগণ একমত যে, এগুলো ভিত্তিহীন মিথ্যা গল্প। ইবনুল জাওযী বলেন, ‘‘সাধারণ শ্রোতাদেরকে কাঁদানোর জন্য জাহিল ওয়ায়িযগণ এগুলো বানিয়েছে।’’[1]. অর্থাৎ ঘটনাটি জাল।

  উল্লেখিত জাল ঘটনাটি বর্ণনা করার পর শায়খ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমুল্লাহ বলেনঃ
ইতিহাসে পাওয়া যায়, উমারের পুত্র আব্দুর রাহমান আবূ শাহমা মিশরের সেনাবাহিনীতে যুদ্ধরত ছিলেন। একদিন তিনি নাবীয বা খেজুর ভিজিয়ে তৈরি করা ‘শরবত’ পান করেন। কিন্তু এ খেজুরের শরবতে মাদকতা এসে গিয়েছিল, ফলে আবূ শাহমার মধ্যে মাতলামি আসে। তিনি মিশরের প্রশাসক আমর ইবনুল আস (রা)-এর কাছে আগমন করে বলেন, আমি মাদক দ্রব্য পান করেছি, কাজেই আমাকে আপনি মাদক পানের শারীয়হ নির্ধারিত শাস্তি (বেত্রাঘাত) প্রদান করুন। আমর (রা) তাকে গৃহাভ্যন্তরে বেত্রাঘাত করেন। উমার (রা) তা জানতে পেরে আমরকে (রা) তিরস্কার করেন এবং বলেন সাধারণ মুসলিম নাগরিককে যেভাবে জনসমক্ষে শাস্তি প্রদান করা হয়, আমার পুত্রকেও সেভাবে শাস্তি প্রদান করা উচিত ছিল। আবূ শাহমা মদীনা ফিরে গেলে তিনি নিজে পুনরায় তাকে শাস্তি প্রদান করেন। এর কিছুদিন পরে আবূ শাহমা ইন্তেকাল করেন।[2]

শিক্ষাঃ
১। ইসলামী আইন ও নীতিমালা প্রয়োগের ব্যাপারে কোনো আপোষের অবকাশ
নেই।
২। সাহাবাগণ (রা) এর তাকওয়ার স্তর ছিল সর্বোচ্চ। তাই, হযরত উমার (রা) এর পুত্র নিজেই তাঁর অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য শরীয়তের বিধান প্রয়োগ করার জন্য অনুরোধ করেন।
৩। ইসলামের আইন সবার জন্যই সমান। সে হোক না কেন খলিফার পুত্র। ফলে হযরত উমার (রা) হযরত আমরকে (রা) তিরস্কার করেন এবং বলেন সাধারণ মুসলিম নাগরিককে যেভাবে জনসমক্ষে শাস্তি প্রদান করা হয়, আমার পুত্রকেও সেভাবে শাস্তি
প্রদান করা উচিত ছিল। 
এমন কি উমার (রা) এর পুত্র আবূ শাহমা
মদীনা ফিরে গেলে তিনি নিজে
পুনরায় তাকে শাস্তি প্রদান করেন। 
_______________________

[১] ইবনুল জাওযী, আল-মাউদূ‘আত ২/৪৪২।
 [২] ইবনুল জাওযী, আল-মাউদূ‘আত ২/৪৩৮-৪৪৩; ইবনু হাজার, আল-ইসাবা ৪/৩৩৯, ৫/৪৪; সুয়ূতী, আল-লাআলী ২/১৯৪-১৯৮; ইবনু আর্রাক, তানযীহ ২/২২০।
তথ্যসূত্রঃ ডঃ খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, হাদীসের নামে জালিয়াতি।
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলানা।        

  

Post a Comment

0 Comments