Recent Tube

বিতি কিচ্ছা-২৮, নুর মুহাম্মদ চৌধূরী।

    
                               বিতি কিচ্ছা,
                                  পর্ব-২৮
    

      বসূমতি কেন তুমি এতোই কৃপনা, এতো খুড়াখুড়ি করি পাই শশ্য কণা। দিতে যদি চাও তবে প্রসন্ন সহাস। কেন এ মাথার ঘাম পায়েতে বহাস্।" ছাত্র জীবনে ছন্দটির ভাব সম্প্রসারণ করতে হয়েছে শতবার। লিখতে হয়েছে শতাধিক পৃষ্টা। বুঝতে বাধ্য হয়েছি যা, তা হল পরিশ্রম ভিন্ন ফল লাভ হবেই না। কিন্তু আজ বাস্তব জীবনে এসে দেখি, সবার ক্ষত্রে নয় তবে অনেকের ক্ষেত্রেই শতত পঠিত এ সিদ্ধান্ত শততই ব্যর্থ, প্রায়স:ই মিথ্যা। বরাবর করিনু অংক দু'য়ে দু'য়ে চার। অথচ আজকের বাজারে যারা দু'য়ে দু'য়ে পাঁচ দেখাতে পারে না তাদের চাকরীর বাজার সংকুচিত। বলতে গেলে চাকরীই তাদের নাই। বড়জোর কেরানিগিরি। প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর সাহেবকে অর্থমন্ত্রী হিসাবে পছন্দ করেন প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়া। সাক্ষাৎকার গ্রহন করলেন ডিপ্লোম্যাটিক মেধার অধিকারী সাইফুরের। সাইফুরকে প্রশ্ন করেন জিয়া," দু'য়ে দু'য়ে কত?" সাইফুরের উত্তর ছিল, "স্যার আপনি কত চান?"। এই সাইফুর রহমানকেই অর্থমন্ত্রী হিসাবে পছন্দ করেন জিয়াউর রহমান।

         আজিকার যুগে স্কুলের আঙ্গিনা পেরিয়ে বাস্তব জীবনে পদার্পণের সূচনাতেই সকল সুত্র বিসর্জন দিতে হবে, এটাই নাকি নিয়ম। তাই সাইফুরের এ উত্তরটি পছন্দ করেন জিয়া। পরবর্তীতে বাংলাদেশেরর ইতিহাসে সর্বাধীক বার বাজেট উপস্থাপনকারী সফল অর্থমন্ত্রী ছিলেন সিলেটের গর্ব এই সাইফুর। 

         কিন্তু ডিপ্লোম্যাটিকদের হাতে ফোস্কা পড়ে, কপালে পড়ে ভাজ। শততই তারা ক্লান্ত হন আর ছাড়েন দীর্ঘ্যশ্বাস। দু'য়ে দু'য়ে ওরা পাঁচ মিলাতে শতত থাকেন ব্যস্ত। কদাচিৎ কেউ হোচট খান আর লাভে মুলে হন ধৃত। এই রকম বাস্তবতা ইদানিং কালে বাংলাদেশে বেশুমার বটে। সমাজের ছাতি, বংশের বাতি হিসাবে পরিচিত কতজনই যে আজ অসহায়ত্বের সীমায় নেমে চুপসে যাচ্ছেন-তার খবর রাখে ক'জনা। আজ ডাকের কথা সত্য প্রমান হচ্ছে," সুসময়ে বন্ধু বটে অনেকেই হয়, অসময়ে হায় হায় কেহ কারো নয়।" 

        আহমেদুর রহমান হোচট খেয়েছেন।  তিনি নাকি আড়াই শত তলা থেকে পড়ে উনার কোমর ভঙ্গেছেন। দারুণ হোচট খেয়েছেন তিনি। আমিও কি তেমন? আসলে আমার মত অনেকেই তদ্রুপ পঁচিশ তলা দালান থেকে পড়ে আহত হলেন। মরে যাননি আহমেদুর রহমান, মরে যাননি অনেকেই, মরে যাইনি আমি। তবে আমার কথা বাদ দেই। আসলে ডিপ্লোম্যাটিকরা সহজে মরার পাত্র নয়।  আমি মরে যাইনি সম্ভবত এজন্য যে বাস্তবতা দর্শনের জন্য। কি সেই বাস্তবতা? এক সময়ে উপুড় হয়ে থাকা আহমেদুর রহমানের হস্ত আজ আর উপুড় হয়ে রয়নি, হয়েছে পাত্র সদৃশ্য। তবে সেই পাত্রে পড়েনা কাহারো দৃষ্টি। এমন করুণ বাস্তবতা আজ অবলোকন করতেই হয়ত এই বেঁচে থাকা।

         এদিকে আহমেদের সহোদর আজীবন কপর্দক শুন্য মাহমুদ সাহেব মাশা আল্লাহ মক্কায় যাবেন। মোটামুটি ঝাঁকঝমক ভাবে মেয়ের বিয়েও সেরেছেন।   নিয়তির লিখনি বলেই কথা। যার কপালে লিখেছেন আল্লাহ  সে তো যাবেই মক্কা। তবে যাদের সহযোগীতায় এই হজ্ব যাত্রা তাদের দৃষ্টি এই আহমেদের দিকে পড়ে না। তাদের দৃষ্টিতে আহমেদ বট বৃক্ষ। আগেও ছিল,  আজও আছে। দৃষ্টির কেন এই বিভ্রাট, কেন এই সংকীর্ণতা, আমার বুঝে আসে না। যে বট তলায় শতত আশ্রয় লাভ করে যারা জীবনের গ্লানি ভুলে গিয়েছিল, তারাতো নিয়ত:ই আশ্রিত। তারা না হয় নিজের প্রয়োজনেই ভুলে গেল সব, কিন্তু তাকে নিয়ে যারা বংশের বাতি বলে গর্বিত হত তারা কেন ভুলে যাবে। সামান্য যত্ব-আত্তিতে যে বট বৃক্ষ পুনঃ পুর্বাবস্থায় ফিরে যেতে পারে,  আশ্রয় দিতে পারে শত স্বজনকে, তার দিকে নজর দিয়ে আমরা কি একটি ক্ষয়িত বটকে পুনঃ জনসেবায় নামিয়ে দিতে পারি না। এ তো সত্যিই একটি বট বৃক্ষ,  এ যদি দাঁড়িয়ে যায় পুন:র্বার তবে আগের মতই আশ্রয় দিবে শত স্ববজনকে, আশ্রিত হয়ে থাকবেনা আর মাটির ভূ-লোকে।কথায় বলে,  নি-নাইয়ার শতেক নাও। সুতরাং মাহমুদের কোন দরকার নাই বাইবে নৌকা দিনে কিংবা রাতে। আর ফোস্কা ফেলাবে হাতে। এতএব হে ভব সাগরের নাইয়া, হুশিয়ারে বাইওরে নাও আপন  পুঁজি লইয়া।
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ, গ্রন্থপ্রনেতা, গীতিকার ও বিশ্লেষক।          

Post a Comment

0 Comments