Recent Tube

কোথায় সেই সাহসী ঐতিহাসিক? জিয়াউল হক

         কোথায় সেই সাহসী ঐতিহাসিক?
     
         ইতিহাস হলো একটা খবর। ঐতিহাসিকরা তাদের পরবর্তি প্রজন্মকে একটা বিশেষ কাল, গোষ্ঠী ও ঘটনার খবর জানান। আর অন্য যে কোন খবরের মত এই খবরকেও যাচাই বাছাই করে নেওয়া দরকার। তা না হলে বিভ্রান্তিতে পড়ার আশংকা শতকরা একশত ভাগই বিদ্যমান। এ কারণেই কী মহান আল্লাহ পাক কুরআনে নির্দেশ দেন নি আমাদের এই বলে যে;  

         মুমিনগণ! যদি কোন পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ আনে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও ( সুরা হুজুরাত : ৬ )।

       প্রিয় রাসুল সা: ও খোলাফায়ে রাশেদা পরবর্তি সময়কালে গড়ে উঠা 'ইসলামের ইতিহাস' হিসেবে প্রচলিত ও প্রতিষ্ঠিত প্রত্যেকটি ঐতিহাসিক তথ্যকে কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদিসের আলোকে যাচাই করে নিতে হবে। ইতিহাসের কিছু জঞ্জাল রয়েছে, সে জঞ্জাল থেকে ইসলামকে মুক্তি করতে হবে। সেটা করতে হবে আমাদের এবং আমাদের পরবর্তি প্রজন্মের স্বার্থে।   উম্মাহর বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থেই।
  
     কাজটা কঠিন মনে হতে পারে। তবে ততটা কঠিন নয়, যদি আপনি নিষ্ঠা আর আন্তরিকতার সাথে চেষ্টা করেন। আপনি জানেন, ঢাকার রাস্তায় বা আমাদের দেশে যে কোনো শহরের ড্রেন বা নর্দমার পানি যতটা স্বচ্ছ, আমাদের ইতিহাসও সে রকমই স্বচ্ছ!’

   বোধ হয় অবাক হচ্ছেন। কিন্তু এটাই বাস্তবতা। আমাদের, তথা, মুসলমানদের জ্ঞানর্জানের জন্য ইতিহাস নতুন করে পড়তে হবে, নতুন করে জানতে হবে। নতুন করে ইতিহাস লেখতে হবে। 

   প্রচলিত ইতিহাস পূংখানুপূংক্ষভাবে যাচাই করে দেখতে হবে, যাচাই করে তার চর্চা করতে হবে। জানা ইতিহাসের সংশয়পূর্ণ প্রতিটি বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করতে ও তার গ্রহণযোগ্য জবাব বের করে আনতে হবে। ইতিহাস নিয়ে বিশ্বে সবচেয়ে বড় জোচ্চুরি হয়েছে, হয়ে চলেছে।

   আবার নতুন করে ইতিহাস লেখা শুরু করতে হবে। বিশ্বের অনেক নামী দামী লোক, অনেক জ্ঞানী গুণীজনই কথাটা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে বলেছেন। প্রখ্যাত ইংলিশ ঔপন্যাসিক George Orwell  ১৯৮৪ সালে তার এক লেখায় ইতিহাস রচনা ও রচয়িতাদের নিয়ে সুন্দর মন্তব্য করেছেন। লিখেছেন; 

 History is always written by the victors and whoever controls the writing of history books controls the past. 

   একেবারে সরল সোজা অর্থ তিনি বলেছেন; ইতিহাস সব সময়ই বিজয়ীদের দ্বারা লিখিত হয়েছে, এবং যারা ইতিহাস গ্রন্থ লেখা নিয়ন্ত্রণ করে তারাই আপনার অতিত ঐতিহ্য নিয়ন্ত্রণ করে। তিনি আরও লিখেছেন;

 Who controls the past controls the future. Who controls the present controls the past. 

    অর্থাৎ যারা আপনার অতিত নিয়ন্ত্রণ করে, আপনার ভবিষ্যৎ জীবনকেও তারাই নিয়ন্ত্রণ করে,  আর যারা আপনার বর্তমান নিয়ন্ত্রণ করে, তারা আপনার অতিতও নিয়ন্ত্রণ করে।

   ইতিহাস লেখা শুরু করবো কিভাবে যদি ইতিহাসই না জানি? হ্যাঁ  জানা ইতিহাসের বাইরের ইতিহাসকে জানতে হবে। জানতে হবে লুকিয়ে রাখা ইতিহাস। চেপে রাখা ইতিহাস। জানতে হবে ইতিহাসের ইতিহাসকে। ইতিহাস চেপে রাখা যায় বটে, তবে নিমূর্ল করা যায় না। 

      ইসলামের ইতিহাস বলে প্রচলিত ইতিহাসের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেছে। ইতিহাসের নামে ইসলামি শিক্ষার মধ্যে এমনসব বিষয় প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়েছে যে, সেগুলো বিদ্যমান থাকাবস্থায় কষ্মিণকালেও মুসলমানদের মধ্যে কেন্দ্রিয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা ও রক্ষা সম্ভবপর নয়। 

      বিগত প্রায় হাজার বৎসর ধরে সে বাস্তবতা আমাদের চোখের সামনেই বিদ্যমান। বিরাজমান এ বাস্তবতা চোখ খুললেই আমরা প্রতিদিনই দেখছি, এটা বুঝে উঠার জন্য কোনো গবেষণার প্রয়োজন পড়ে না। 

      যে তিনটি সুত্র থেকে আমরা মানবসম্প্রদায় শিক্ষা অর্জন করতে পারি, ইসলাম যে তিনটি সুত্রকে আমাদের শিক্ষার্জনের উৎস হিসেবে নির্ধারিত করে দিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো; ইতিহাস।
 
       ইতিহাস থেকে শিক্ষার্জন করার ক্ষেত্রে মূল ভিত্তিকে যদি দৃষ্টির আড়ালে চলে যেতে দেয় মানুষ, তবে সে পথ হারাবে। হারায়। ইতিহাসের গ্রাস হয়ে পড়ে সে। ইতিহাস তাকে পথচ্যুত, বিভ্রান্ত করে ফেলে। ইতিহাসের আস্তাকূঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়! 
        তখন ইতিহাসকেই সে ধর্ম বলে মনে করে, কিংবা৷  বলা চলে ইতিহাস তার সামনে ধর্মের রুপকে একটা বিশেষ ছাঁচে ঢেলে সাঁজায়, ঠিক সেই রকম একটা সাঁচ, যেমনটাই সে ইতিহাসকে দেখে থাকে বা ভেবে থাকে।

    আমরা আজ সেরকম পরিস্থিতিরই এক অসহায় শিকার। একদল তরুণ গবেষককে বেরিয়ে আসতে হবে মিথ্যে ও বিকৃত ইতিহাসের এই আস্তাকুঁড় থেকে এ উম্মাহকে উদ্ধারের জন্য। কোথায় সেই সাহসী ঐতিহাসিক?
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ও   বিশ্লেষক 

Post a Comment

0 Comments