Recent Tube

কওমীদের সাথে জামায়াতের দ্বন্দ্বটা আসলে কোথায়? ইবনে যুবাইর।

কওমীদের সাথে জামায়াতের দ্বন্দ্বটা আসলে কোথায়?
 

  কওমী ও ইসলামী সমমনা দলগুলোর এক তরফা জামায়াত আক্রমন নিয়ে জামায়াত নেতাগণ কখনই মুখ খুলেননি।জামায়াতের এই "নীরব" থাকার নীতি নিয়ে দলটির তৃণমূল পর্যায়ে অনেক প্রশ্ন আছে,আছে ক্ষোভ-অভিমানও। 

   তবে এই নিয়ে তৃণমূলে কখনো কোন দিন উচ্চবাক্য হয়েছে এমনটা ভাববার সৃযোগ নেই।এইটি দলটির তৃণমূলে ঘরোয়া আলোচনা,ঘরেই শেষ হয়ে যায়,বাইরে যায়না,দরকারও পড়েনা। 

  কওমীদের সাথে জামায়াতের দ্বন্দ্বটা আসলে কোথায়? তাদের বিষ মাখানো তীরের টার্গেট কেন মাওলানা মওদূদী ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত জামায়াত?

  ১৯২৪ সাল। তখন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় জাতীয়তা আন্দোলন তথা অখন্ড ভারতে রামরাজ্য স্হাপনের আন্দোলনে মুসলিম জাতী বিভ্রান্ত পথ হারা হয়ে পড়েছিল।

কারণ,কংগ্রেস চেয়েছিল সকল জাতীর সমন্বয়ে একটা ভৌগলিক ও আঞ্চলিক জাতি গঠন এবং সমগ্র ভারতে এক জাতীয়তা সৃষ্টি করে তারই ভিত্তিতে দেশের স্বাধীনতা লাভ।দেওবন্দী আলিমগণ কংগ্রেসের এই আন্দোলনকে সমর্থন জানালেন।
কংগ্রেস তার আপন লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য একজন শ্রেষ্ঠ আলিমকে কাজে লাগালো।তারা ভারতের শ্রেষ্ঠতম ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র দেওবন্দ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী(রহঃ)-কে দিয়ে 'এক জাতীয়তাবাদ' নামে একটি বই লিখালো।
উক্ত বইতে তিনি প্রমাণ করার চেষ্টা করেন ভারতীয় উপমহাদেশে বসবাসকারী হিন্দু,মুসলিম,খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ ও জৈন সবাই একই জাতী।

   কিন্তু মাওলানা মওদূদী এই সর্বনাশা আন্দোলন মেনে নিতে পারেননি।বরং কংগ্রেস থেকে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে মুসলমানদের একটা স্বতন্ত্র আদর্শবাদী দল বা জাতী হিসাবে বসবাস করতে হবে-এ ছিল তার বক্তব্য।

   এই যগ সন্ধিক্ষণে মাওলানা মওদূদীও বসে থাকতে পারেননি।তিনি চিন্তা করলেন,হিন্দু-মুসলিম কখনো এক জাতী ও ভাই হতে পারেনা।এটা ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে নিষিদ্ধ।এরপর অনেক চড়াই উৎরায়ের পর দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হল এবং মাওলানা মওদূদী (রহঃ) হয়ে গেলেন দেওবন্দী আলিমদের বিষমিশ্রিত তীরের নিশানা।

  সেই থেকেই মাওলানাকে হেয় করার উদ্দেশ্যে কাফির,শিয়া ইহুদীর দালাল বিভিন্ন অভিযোগ অপবাদ দেওবন্দী ও কওমী আলিগণ দিয়ে আসছেন এবং আজও তা অব্যাহত রয়েছে। মাওলানা মওদূদী(রহ.)-এর স্বরুপ উদঘাটন করার জন্য প্রতি বছর বড় বড় প্যান্ডেল সাজানো হয়।

  প্রশ্ন হল, যুগ যুগ ধরে মাওলানা মওদূদী(রহ.)-এর স্বরুপ উদঘাটন করে তাদের অর্জনটা কি?তারা রাজনীতি হারাম বলে তাগুতের হাতে রাজনীতি তুলে দিলেন,রাষ্ট্রশক্তির দরকার নেই বলে রাষ্ট্রক্ষমতা তুলে দিলেন তাগুতের হাতে এবং ইসলামকে সীমাবদ্ধ করে দিলেন মসজিদ ও মাদরাসায়।

    ইসলামের জন্য এ দেশের জমিনকে এতটায় সংকৃর্ণ করে তোলা হল যে,মসজিদ মাদরাসাও ইসলাম আজ টিকতে পারে না।মসজিদকে বলা হচ্ছে অবৈধ,মাদরাসাকে বলা হচ্ছে জঙ্গি তৈরির আঁতুড় ঘর।মসজিদ মাদরাসাও মুসলমানদের জন্য আজ নিরাপদ নয়।
কওমী ভাইদের আত্নসমালোচনা করা উচিত। জাতির প্রত্যশা পূরণের জন্য তাদের ভূমিকা কি?একটি জাতির কর্ণধার হচ্ছে আলেম সমাজ।তারা সমাজ ও রাষ্ট্রকে কি দিলেন, জাতিকে কি দিলেন,ইসলামকে কি দিলেন-এই আত্নসমালোচনা।আরও আত্নসমালোচনা করা উচিত যে,কওমী সমাজ কেন এত দল উপদলে বিভক্ত হল?এই প্রশ্নের মীমাংসায় আসা তাদের উচিত।

   অধ্যাপক গোলাম আজম (রহ.) তাঁর 
"ইকামাতে দ্বীন"বইতে বলেছেন,"বাংলাদেশে ততটুকু ইসলাম বেঁচে আছে, যতটুকু ইসলাম বাতিলরা স্বীকৃতি দিয়েছে, যতটুকু ইসলাম থাকলে বাতিলের সমস্যা হয় না।"

   আলেম সমাজের দ্বিধাবিভক্তি কারণেই তাগুতের পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছেন।আলেম সমাজ এর দায় কোনভাবেই এড়াতে পারেন না।দেশে ঈমান আমল নিয়ে বেঁচে থাকতে হলে দ্বিধাবিভক্তির শিকড়ের অণুসন্ধানে ব্রত হতে হবে।দ্বিধাবিভক্তির বিষবৃক্ষের শিকড় বাকড় উপড়ে ফেলতে হবে।একটি ইসলামী সমাজ ব্যবস্হা বিনির্মানের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে ময়দানে দাঁড়াতে পারলেই একটি বিল্পব সাধিত হবে।
-------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট।              

Post a Comment

0 Comments