Recent Tube

কুরআন ও হাদীসের আলোকে গীবত কি? গীবতের ভয়ানক পরিণতি ও পরিত্রাণের উপায়। শামীম আজাদ।


কুরআন ও হাদীসের আলোকে গীবত কি?  গীবতের ভয়ানক পরিণতি ও পরিত্রাণের উপায়।
------------------------------------------------------------      

গীবত করার যুক্তিই হলো।

আমি তো সত্যি কথাই বলছি! অথচ সে গীবত করলো 

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআ'লা বলেছেন, 

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ 
মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।  
সূরা হুজরাতঃ ১২

وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ. الَّذِي جَمَعَ مَالًا وَعَدَّدَهُ . يَحْسَبُ أَنَّ مَالَهُ أَخْلَدَهُ. كَلَّا لَيُنبَذَنَّ فِي الْحُطَمَةِ
প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর দুর্ভোগ, যে অর্থ সঞ্চিত করে ও গণনা করে, সে মনে করে যে, তার অর্থ চিরকাল তার সাথে থাকবে! কখনও না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে পিষ্টকারীর মধ্যে।  
সূরা হুমাযাহঃ ১-৪

আমরা অনেক সময় গল্প করার উদ্দেশ্যে একের দোষ-ত্রুটি বা বিভিন্ন কথা অন্যের কাছে বলি। আর অন্যরা সবাই মিলে তা শোনে। অন্যের সমালোচনা ছাড়া যেন গল্পের আসর জমেই না। এই ধরনের গল্পে কোন ফায়দা তো নেই-ই। বরং এই সাময়িক আনন্দ পরকালের কঠিন আযাবের কারণ হতে পারে। তাই আমাদের উচিত নিজেদের এ থেকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে এই ব্যাপারে ভালমতো জেনে নেওয়া।

গীবত শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে দোষারোপ করা, অনুপস্থিত থাকা, পরচর্চা করা, পরনিন্দা করা, কুৎসা রটনা করা, পিছে সমালোচনা করা ইত্যাদি।

গীবতের সর্বোত্তম সংজ্ঞা রাসুল (সা.) দিয়েছেন। 
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ الْقَعْنَبِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ، - يَعْنِي ابْنَ مُحَمَّدٍ - عَنِ الْعَلاَءِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّهُ قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا الْغِيبَةُ قَالَ ‏"‏ ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهُ ‏"‏ ‏.‏ قِيلَ أَفَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ فِي أَخِي مَا أَقُولُ قَالَ ‏"‏ إِنْ كَانَ فِيهِ مَا تَقُولُ فَقَدِ اغْتَبْتَهُ وَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِيهِ مَا تَقُولُ فَقَدْ بَهَتَّهُ ‏"‏ ‏.
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে প্রশ্ন করা হলো, গীবত কী? তিনি বললেন, তোমরা ভাইয়ের ব্যাপারে তোমার এমন কিছু বলা যা শুনলে সে অসন্তুষ্ট হয়। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, আমি যা বলি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে বর্তমান থাকে? তিনি বললেন, তুমি যা বলো তা যদি তার মধ্যে থাকে তাহলেই তুমি তার গীবত করলে। আর তুমি যা বলো তা যদি তার মধ্যে না থাকে তবে তুমি তাকে মিথ্যা অপবাদ দিলে।
মুসলিম ২৫৮৯, তিরমিযি ১৯৩৪, আবু দাউদ ৪৮৭৪, আহমদ ৭১০৬, ৮৭৫৯, ২৭৪৭৩, ৯৫৮৬, দারেমি ২৭১৪

অর্থাৎ কারও মধ্যে যদি দোষ থাকে তবে সেটা বর্ণনা করাও গীবত। অনেকে মনে করে সত্য কথা বললে বুঝি গীবত হয় না। যদি বলা হয়: আপনি থামুন। এটা গীবত হচ্ছে। প্রতিত্তুরে সে বলে: আমি তো সত্যি কথাই বলছি!

অথচ হাদীস থেকে জানা যায় এই সত্যি কথাটাই গীবত হবে। অতএব উক্ত হাদীস থেকে আমরা দেখতে পাই যে, গীবতের হলো বিনা প্রয়োজনে কোনো মুসলিম ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার সম্পর্কে ‘এমন কিছু’ বলা যা শুনলে সে পছন্দ করবে না। অর্থাৎ গীবত হতে হলে ৫টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। যেমন:

১) বিনা প্রয়োজনে—প্রয়োজনের খাতিরে কারও সম্পর্কে খারাপ কথা বললে তা গীবত হবে না। 

২) মুসলিম ব্যক্তির নিন্দা করলে তা গীবত হবে, অন্যথায় নয়। কেননা রাসুল (সা.) হাদীসে ‘তোমার ভাই’—এই শব্দটি ব্যবহার করেছেন যার দ্বারা কোনো মুসলিম ভাইকে বুঝায়।

৩) অনুপস্থিতিতে—ব্যক্তির সামনে নিন্দা করা গীবত নয়। তবে, সেটাও পাপ। আল্লাহ তায়ালা সূরা হুমাযাহে বলেন, ‘ধ্বংস তাদের যারা মানুষের সম্মুখে ও পশ্চাতে নিন্দা করে।’

৪) এমন কিছু দ্বারা খারাপ কিছুকে বোঝানো হচ্ছে। প্রশংসার উদ্দেশ্যে ভালো কথা বললে তা গীবত হবে না।

৫) শুনলে অপছন্দ করবে—যদি কথাটি এমন হয় যে, ব্যক্তি কিছুই মনে করবে না তবে সেটাও গীবত নয়।

অপবাদ ও চুগলখোরি গীবতের মতোই তবে, তার চেয়েও ভয়াবহ দুটি অপরাধ। অপবাদ দেওয়ার অর্থ হলো কোন মুসলিমের সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলা। আর নামিমাহ বা চুগলখোরি এর অর্থ হলো কারও কাছে অন্য একজনের নামে এমন কিছু বলা যার কারণে তাদের দুজনের মধ্যে সমস্যা ও বিরোধ সৃষ্টি হয়। 

গীবতের পরিধি

আমরা অনেক কিছুকেই গীবত মনে করি না অথচ সেগুলো গীবত। কথায় কথায় মানুষের নামে সামান্য কথা থেকে শুরু করে অনেক গুরুতর খারাপ কথাও বলে থাকি। অথচ কত সামান্য বিষয়কেও রাসুল (সা.) তিরস্কার করেছেন! 
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، وَعَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ، قَالاَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ الأَقْمَرِ، عَنْ أَبِي حُذَيْفَةَ، وَكَانَ، مِنْ أَصْحَابِ ابْنِ مَسْعُودٍ عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ حَكَيْتُ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم رَجُلاً فَقَالَ ‏"‏ مَا يَسُرُّنِي أَنِّي حَكَيْتُ رَجُلاً وَأَنَّ لِي كَذَا وَكَذَا ‏"‏ ‏.‏ قَالَتْ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ صَفِيَّةَ امْرَأَةٌ وَقَالَتْ بِيَدِهَا هَكَذَا كَأَنَّهَا تَعْنِي قَصِيرَةً ‏.‏ فَقَالَ ‏"‏ لَقَدْ مَزَجْتِ بِكَلِمَةٍ لَوْ مَزَجْتِ بِهَا مَاءَ الْبَحْرِ لَمُزِجَ ‏"‏ ‏.‏

‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, কোন এক সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি জনৈক ব্যক্তির চালচলন নকল করে দেখালাম। তিনি বললেনঃ আমাকে এই পরিমাণ সম্পদ প্রদান করা হলেও কারো চালচলন নকল করা আমাকে আনন্দ দেয় না। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! সাফিয়্যা তো বামন মহিলা লোক, এই বলে তিনি তা হাতের ইশারায় দেখালেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি এমন একটি কথার দ্বারা বিদ্রুপ করেছো, তা সাগরের পানির সাথে মিশালেও তা উক্ত পানিকে দূষিত করে ফেলতো।
মিশকাতঃ ৪৮৫৩, ৪৮৫৭, গাইয়াতুল মারাম (৪২৭)।
জামে' আত-তিরমিজিঃ ২৫০২

সত্যি বলতে কেউ আমার অনুপস্থিতিতে সম্পর্কে সামান্য কোনো খারাপ কথা বলবে- এটাও আমরা পছন্দ করি না। অথচ আমরা নিজেরা অন্য ব্যক্তিদের নামে কত কিছুই না বলি।   

গীবতের ভয়াবহতা

গীবত খুবই গুরুতর একটি অপরাধ এবং কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। কোন মুসলিমকে অপমান করে বা তার প্রতি অবজ্ঞা করে কথা বলা এবং তার সম্মানে আঘাত আনা মারাত্মক অন্যায়। এর জন্য ব্যক্তির জন্য নির্ধারিত রয়েছে কঠিন শাস্তি।

গীবত এতটাই ভয়াবহ যে, স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা একে মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়ার মতো নিকৃষ্ট কিছুর সাথে তুলনা করেছেন। আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেনঃ 

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ
‘তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে, তোমাদের কেউ কি চায় যে, সে তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করবে? তোমরা তো এটাকে ঘৃণাই করে থাকো’। 
সূরা হুজুরাতঃ ১২

একটি হাদীসে এসেছে আব্দুল্লাহ্‌ ইবন মাসউদ (রা) বলেন: একদিন আমরা নবী কারীম (সা)-এর নিকটে ছিলাম। এমতাবস্থায় একজন ব্যক্তি উঠে চলে গেল। তার প্রস্থানের পর একজন তার সমালোচনা করল। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সা) তাকে বললেন: তোমার দাঁত খিলাল করো। লোকটি বলল: কি কারণে দাঁত খিলাল করব? আমিতো কোন গোশত ভক্ষণ করিনি। তখন তিনি বললেন: নিশ্চয়ই তুমি তোমার ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করেছ অর্থাৎ ‘গীবত’ করেছ। (ত্বাবারানী, ইবন আবী শায়বা, হাদিস সহীহ)

সবচেয়ে বড় ধরনের রিবা (সুদ) হলো কোন মুসলিমের সম্মানে আঘাত করে কথা বলা।

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَوْفٍ، حَدَّثَنَا أَبُو الْيَمَانِ، حَدَّثَنَا شُعَيْبٌ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أَبِي حُسَيْنٍ، حَدَّثَنَا نَوْفَلُ بْنُ مُسَاحِقٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ زَيْدٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ إِنَّ مِنْ أَرْبَى الرِّبَا الاِسْتِطَالَةَ فِي عِرْضِ الْمُسْلِمِ بِغَيْرِ حَقٍّ ‏"‏ ‏.
সাঈদ ইবনু যায়িদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

নাবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, অন্যায়ভাবে  কোন মুসলিমের মানসম্মানে হস্তক্ষেপ করা ব্যাপকতর সুদের অন্তর্ভুক্ত (মহাপাপ)। [আহমাদ]
আবু দাউদঃ ৪৮৭৬

সত্যি বলতে গীবতে নারীরা পুরুষদের চেয়ে এগিয়ে আছে। কয়েকজন নারী একত্রিত হলেই গীবত শুরু হয়ে যায়। তবে, অনেক পুরুষও গীবত করতে খুব পছন্দ করে। এই প্রসঙ্গে একটি হাদীসে এসেছে, 

أَخْبَرَنَا عَمْرُو بْنُ عَلِيٍّ، قَالَ: حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ الْمَلِكِ بْنُ أَبِي سُلَيْمَانَ، قَالَ: حَدَّثَنَا عَطَاءٌ، عَنْ جَابِرٍ، قَالَ: شَهِدْتُ الصَّلَاةَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي يَوْمِ عِيدٍ، فَبَدَأَ بِالصَّلَاةِ قَبْلَ الْخُطْبَةِ بِغَيْرِ أَذَانٍ وَلَا إِقَامَةٍ، فَلَمَّا قَضَى الصَّلَاةَ قَامَ مُتَوَكِّئًا عَلَى بِلَالٍ، فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ، وَوَعَظَ النَّاسَ وَذَكَّرَهُمْ وَحَثَّهُمْ عَلَى طَاعَتِهِ، ثُمَّ مَالَ وَمَضَى إِلَى النِّسَاءِ وَمَعَهُ بِلَالٌ، فَأَمَرَهُنَّ بِتَقْوَى اللَّهِ وَوَعَظَهُنَّ وَذَكَّرَهُنَّ وَحَمِدَ اللَّهَ، وَأَثْنَى عَلَيْهِ، ثُمَّ حَثَّهُنَّ عَلَى طَاعَتِهِ، ثُمَّ قَالَ: «تَصَدَّقْنَ فَإِنَّ أَكْثَرَكُنَّ حَطَبُ جَهَنَّمَ»، فَقَالَتِ امْرَأَةٌ مِنْ سَفِلَةِ النِّسَاءِ سَفْعَاءُ الْخَدَّيْنِ: بِمَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «تُكْثِرْنَ الشَّكَاةَ، وَتَكْفُرْنَ الْعَشِيرَ»، فَجَعَلْنَ يَنْزِعْنَ قَلَائِدَهُنَّ، وَأَقْرُطَهُنَّ، وَخَوَاتِيمَهُنَّ يَقْذِفْنَهُ فِي ثَوْبِ بِلَالٍ يَتَصَدَّقْنَ بِهِ

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, এক ঈদের দিন আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সালাতে উপস্থিত ছিলাম। তিনি আযান ইকামাত ব্যতীতই খুৎবা দেওয়ার পূর্বে সালাত শুরু করে দিলেন। যখন সালাত শেষ করলেন, বিলাল (রাঃ)-এর উপর ভর করে দাঁড়িয়ে গেলেন, আল্লাহর প্রশংসা এবং গুণ বর্ণনা করলেন, লোকদের ওয়াজ করলেন, তাদের নসীহত করলেন এবং আল্লাহর ইবাদতের প্রতি উদ্বুদ্ধ করলেন। অতঃপর চেহারা ফিরিয়ে নিলেন এবং নারীদের দিকে গেলেন। তাঁর সাথে বিলাল (রাঃ)-ও ছিলেন। তিনি তাদেরকে আদেশ দিলেন আল্লাহকে ভয় করতে, ওয়াজ করলেন, নসীহত করলেন, আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করলেন এবং তাদেরকে আল্লাহর ইবাদতের প্রতি উদ্বুদ্ধ করলেন এবং বললেন, তোমরা দান-খয়রাত করবে, যেহেতু তোমাদের অধিকাংশই জাহান্নামের ইন্ধন। তখন নিম্ন শ্রেণীর একজন মহিলা বলে উঠল যার গণ্ডদ্বয়ে হালকা কাল দাগ ছিল, কেন ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)? তিনি বললেন, তোমরা অত্যধিক গীবত কর এবং স্বামীর নাফরমানী কর। তখন তারা নিজেদের হার, কানের বালী এবং আংটি টেনে টেনে খুলে ফেলতে শুরু করল, যা বিলালের (রা) কাপড়ে ছুঁড়ে মারতে শুরু করল সদকা স্বরূপ।
নাসায়ীঃ ১৫৭৫

কেবল জীবিতই নয়, বরং কোন মৃত ব্যক্তির নামে গীবত করাও সমান অপরাধ। 

حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ خَالِدٍ قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحِيمِ، عَنْ زَيْدِ بْنِ أَبِي أُنَيْسَةَ، عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْهَضْهَاضِ الدَّوْسِيِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: جَاءَ مَاعِزُ بْنُ مَالِكٍ الْأَسْلَمِيُّ، فَرَجَمَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَ الرَّابِعَةِ، فَمَرَّ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَعَهُ نَفَرٌ مِنْ أَصْحَابِهِ، فَقَالَ رَجُلَانِ مِنْهُمْ: إِنَّ هَذَا الْخَائِنَ أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِرَارًا، كُلُّ ذَلِكَ يَرُدُّهُ، حَتَّى قُتِلَ كَمَا يُقْتَلُ الْكَلْبُ، فَسَكَتَ عَنْهُمُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى مَرَّ بِجِيفَةِ حِمَارٍ شَائِلَةٌ رِجْلُهُ، فَقَالَ: «كُلَا مِنْ هَذَا» ، قَالَا: مِنْ جِيفَةِ حِمَارٍ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «فَالَّذِي نِلْتُمَا مِنْ عِرْضِ أَخِيكُمَا آنِفًا أَكْثَرُ، وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ فَإِنَّهُ فِي نَهْرٍ مِنْ أَنْهَارِ الْجَنَّةِ يَتَغَمَّسُ»

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

মায়েয ইবনে মালেক আল-আসলামী এসে চতুর্থবার (যেনার অপরাধের) স্বীকারোক্তি করলে, নবী (সাঃ) তাকে প্রস্তরাঘাতে হত্যার নির্দেশ দেন। পরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর কতক সহচরসহ তার পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। তাদের মধ্যকার একজন বললো, এই বিশ্বাসঘাতক কয়েকবারই নবী (সাঃ)-এর নিকট এলো এবং প্রতিবারই তিনি তাকে ফিরে যেতে বলেন। পরে তাকে কুকুরের ন্যায় হত্যা করা হলো। নবী (সাঃ) তাদের কথায় কোন মন্তব্য না করে নীরব থাকলেন, শেষে একটি মৃত গাধার নিকট এসে উপনীত হলেন, যার পাগুলো উপরের দিকে উত্থিত ছিল। তিনি বলেনঃ তোমরা দু’জনে এটা থেকে খাও। তারা উভয়ে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মরা গাধার গোশত? তিনি বলেনঃ তোমরা দু’জনে এইমাত্র তোমাদের ভাইয়ের যে মানহানি করেছো তা এর তুলনায় অধিক গৰ্হিত। সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! সে এখন বেহেশতের ঝর্ণাসমূহের মধ্যকার একটি ঝর্ণায় আনন্দে সাতার কাটছে। (আবু দাউদ, নাসাঈ, বুখারীর তারীখ)
আদাবুল মুফরাদঃ ৭৪২

গীবতের শাস্তি

কবরের আযাব:

حَدَّثَنَا يَحْيَى، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنِ الأَعْمَشِ، قَالَ سَمِعْتُ مُجَاهِدًا، يُحَدِّثُ عَنْ طَاوُسٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ مَرَّ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى قَبْرَيْنِ فَقَالَ ‏"‏ إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ، وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ، أَمَّا هَذَا فَكَانَ لاَ يَسْتَتِرُ مِنْ بَوْلِهِ، وَأَمَّا هَذَا فَكَانَ يَمْشِي بِالنَّمِيمَةِ ‏"‏‏.‏ ثُمَّ دَعَا بِعَسِيبٍ رَطْبٍ، فَشَقَّهُ بِاثْنَيْنِ، فَغَرَسَ عَلَى هَذَا وَاحِدًا وَعَلَى هَذَا وَاحِدًا ثُمَّ قَالَ ‏"‏ لَعَلَّهُ يُخَفَّفُ عَنْهُمَا، مَا لَمْ يَيْبَسَا ‏"‏‏.‏

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুটি কবরের পার্শ্ব দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেনঃ নিশ্চ্য়ই এ দু‘জন কবরবাসীকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। তবে বড় কোন গুনাহের কারণে কবরে তাদের আযাব দেয়া হচ্ছে না। এই কবরবাসী প্রস্রাব করার সময় সতর্ক  থাকত না। আর ঐ কবরবাসী গীবত ক‘রে বেড়াত। এরপর তিনি খেজুরের একটি কাঁচা ডাল আনিয়ে সেটি দু‘টুকরো করে এক টুকরো এক কবরের উপর এবং এক টুকরো অন্য কবরের উপর গেড়ে দিলেন। তারপর বললেনঃ এ ডালের টুকরো দু‘টি শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই তাদের শাস্তি কমিয়ে দিবেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫১৩)
বুখারীঃ ৬০৫২

জাহান্নামের শাস্তি:

حَدَّثَنَا ابْنُ الْمُصَفَّى، حَدَّثَنَا بَقِيَّةُ، وَأَبُو الْمُغِيرَةِ، قَالاَ حَدَّثَنَا صَفْوَانُ، قَالَ حَدَّثَنِي رَاشِدُ بْنُ سَعْدٍ، وَعَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ جُبَيْرٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ لَمَّا عُرِجَ بِي مَرَرْتُ بِقَوْمٍ لَهُمْ أَظْفَارٌ مِنْ نُحَاسٍ يَخْمِشُونَ وُجُوهَهُمْ وَصُدُورَهُمْ فَقُلْتُ مَنْ هَؤُلاَءِ يَا جِبْرِيلُ قَالَ هَؤُلاَءِ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ لُحُومَ النَّاسِ وَيَقَعُونَ فِي أَعْرَاضِهِمْ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو دَاوُدَ حَدَّثَنَاهُ يَحْيَى بْنُ عُثْمَانَ عَنْ بَقِيَّةَ لَيْسَ فِيهِ أَنَسٌ ‏.

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মি’রাজের রাতে আমি এমন এক কওমের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম যাদের নখগুলো তামার তৈরী এবং তা দিয়ে তারা অনবরত তাদের মুখমণ্ডলে ও বুকে আচড় মারছে। আমি বললাম, হে জিবরীল ! এরা কারা? তিনি বললেন, এরা সেসব লোক যারা মানুষের গোশত খেতো (গীবত করতো) এবং তাদের মানসম্মানে আঘাত হানতো ।
আবু দাউদঃ ৪৮৭৮

গীবত শোনা

وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ.
প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর দুর্ভোগ।
সূরা হুমাজাহঃ ০১

গীবত শোনাও একই রকম অপরাধ। আমরা উল্লেখিত হাদীস থেকে দেখতে পাই যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) মৃত গাধার দেহটি দেখে দুজন ব্যক্তিকেই তা ভক্ষণ করতে বলেছিলেন যদিও কটূক্তিটি করেছিল তাদের একজন।

তাই কোন ব্যক্তি যদি কারও সামনে এসে গীবত করতে শুরু করে সেক্ষেত্রে কিছুতেই তার কথার প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। 

কেননা হাদীসে এসেছে, 
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: «مَنْ رَأى مِنْكُمْ مُنْكَراً فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ، فَإنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وَذَلِكَ أضْعَفُ الإيمَانِ». رواه مسلم

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন গর্হিত কাজ দেখবে, সে যেন তা নিজ হাত দ্বারা পরিবর্তন করে দেয়। যদি (তাতে) ক্ষমতা না রাখে, তাহলে নিজ জিভ দ্বারা ( উপদেশ দিয়ে পরিবর্তন করে)। যদি (তাতেও) সামর্থ্য না রাখে, তাহলে অন্তর দ্বারা (ঘৃণা করে)। আর এ হল সবচেয়ে দুর্বল ঈমান।’’

বুখারী ৯৫৬, মুসলিম ৪৯, তিরমিযী ২১৭২, নাসায়ী ৫০০৮, ৫০০৯, আবূ দাউদ ১১৪০, ৪৩৪০, ইবনু মাজাহ ১২৭৫, ৪০১৩, আহমাদ ১০৬৮৯, ১০৭৬৬, ১১০৬৮, ১১১০০, ১১১২২, ১১১৪৫, ১১৪৬৬, দারেমী ২৭৪০১, রিয়াদুস সলেহিনঃ ১৮৯
    

ইমাম নববী (রহ.) বলেন: কেউ যদি কোন মুসলিমের নামে গীবত শুনতে পায় তার উচিত তার মোকাবেলা করা এবং গীবতকারীর তিরস্কার করা। যদি মুখ দিয়ে তা করতে না পারে তবে কাজের দ্বারা তাকে থমাতে হবে (এমন কিছু করা উচিত যেন তার দ্বিমত প্রকাশ পায়)। আর সে যদি কথা বা কাজ কোনটার দ্বারাই কিছু না করতে পারে, তবে তার উচিত সেখান থেকে চলে যাওয়া।   

حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدٍ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْمُبَارَكِ، عَنْ أَبِي بَكْرٍ النَّهْشَلِيِّ، عَنْ مَرْزُوقٍ أَبِي بَكْرٍ التَّيْمِيِّ، عَنْ أُمِّ الدَّرْدَاءِ، عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ مَنْ رَدَّ عَنْ عِرْضِ أَخِيهِ رَدَّ اللَّهُ عَنْ وَجْهِهِ النَّارَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ يَزِيدَ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ ‏.‏

আবুদ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক তার কোন ভাইয়ের মান-সম্মানের উপর আঘাত প্রতিরোধ করে, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্‌ তা‘আলা তার মুখমন্ডল হতে জাহান্নামের আগুন প্রতিরোধ করবেন। 
জামে' আত-তিরমিজিঃ ১৯৩১

কোন ক্ষেত্রে গীবত করা জায়েজ?

لَا يُحِبُّ اللَّهُ الْجَهْرَ بِالسُّوءِ مِنَ الْقَوْلِ إِلَّا مَنْ ظُلِمَ ۚ وَكَانَ اللَّهُ سَمِيعًا عَلِيمًا
আল্লাহ কোন মন্দ বিষয় প্রকাশ করা পছন্দ করেন না। তবে কারো প্রতি জুলুম হয়ে থাকলে সে কথা আলাদা। আল্লাহ শ্রবণকারী, বিজ্ঞ।
সূরা নিসাঃ ১৪৮

বিশেষ কোনো প্রয়োজনে কারও ত্রুটি অন্যকে বলা বৈধ। আলিমগণ এরূপ ছয়টি ক্ষেত্র উল্লেখ করেছেন যেখানে সমালোচনা করা যাবে।

১) জালিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ: নিজের অধিকার আদায়ের জন্য কর্তৃপক্ষ বা শাসকের কাছে পাপাচারীর বিরুদ্ধে বলা। যেমন, কোনো মজলুম ব্যক্তি আদালতে গিয়ে বলতে পারবে অমুক সন্ত্রাসী তার বিরুদ্ধে এই অন্যায় করেছে এবং ন্যায় বিচার চাইতে পারবে। 

হাদীসে এসেছে, 

حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَعَلِيُّ بْنُ مُحَمَّدٍ، وَأَبُو عُمَرَ الضَّرِيرُ قَالُوا حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ جَاءَتْ هِنْدٌ إِلَى النَّبِيِّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أَبَا سُفْيَانَ رَجُلٌ شَحِيحٌ وَلاَ يُعْطِينِي مَا يَكْفِينِي وَوَلَدِي إِلاَّ مَا أَخَذْتُ مِنْ مَالِهِ وَهُوَ لاَ يَعْلَمُ ‏.‏ فَقَالَ ‏ "‏ خُذِي مَا يَكْفِيكِ وَوَلَدَكِ بِالْمَعْرُوفِ ‏"‏ ‏.‏

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

(আবু সুফিয়ানের স্ত্রী) হিন্‌দ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আবু সুফিয়ান খুবই কৃপণ লোক। সে আমার ও আমার সন্তানের জীবন ধারণে যথেষ্ট হওয়ার মত খরচপাতি দেয় না। তাই আমি তার অগোচরে তার সম্পদ থেকে কিছু নেই (যাতে যথেষ্ট হয়)। তিনি বলেনঃ তোমার ও তোমার সন্তানের জন্য যথেষ্ট হতে পারে ততটুকু ন্যায়সংগতভাবে নিতে পারো। 
ইবনে মাজাহঃ ২২৯৩, সহীহুল বুখারী ২২১১, ২৪৬০, ৫৩৫৯, ৫৩৬৪, ৫৩৭০, ৬৬৪১, ৭১৬১, ৭১৮০, মুসলিম ১৭১৪, নাসায়ী ৫৪২০, আবূ দাউদ ৩৫৩২, ৩৫৩৩, ২৩৫৯৭, ২৩৭১১, ২৫১৮৫, ২৫৩৬০, দারেমী ২২৫৯, ইরওয়া ২৬৪৬। 

২) পাপাচারী ব্যক্তিকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য সাহায্য চাওয়ার উদ্দেশ্যে।

৩) পরামর্শ বা ফতওয়া জানার জন্য আলিমের কাছে বলা।

৪) মুসলিমদের সতর্ক করা। যেমন মানুষকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে কোনো সাক্ষী, লেখক বা বক্তার সম্পর্কে সমালোচনা করা বৈধ। বিয়ে, ব্যবসা বা কাউকে প্রতিবেশী হিসেবে গ্রহণ করার ক্ষেত্রেও দোষ-ত্রুটি বলা বৈধ।

حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عُمَرَ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتِ اسْتَأْذَنَ رَجُلٌ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا عِنْدَهُ فَقَالَ ‏"‏ بِئْسَ ابْنُ الْعَشِيرَةِ أَوْ أَخُو الْعَشِيرَةِ ‏"‏ ‏.‏ ثُمَّ أَذِنَ لَهُ فَأَلاَنَ لَهُ الْقَوْلَ فَلَمَّا خَرَجَ قُلْتُ لَهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قُلْتَ لَهُ مَا قُلْتَ ثُمَّ أَلَنْتَ لَهُ الْقَوْلَ ‏.‏ فَقَالَ ‏"‏ يَا عَائِشَةُ إِنَّ مِنْ شَرِّ النَّاسِ مَنْ تَرَكَهُ النَّاسُ أَوْ وَدَعَهُ النَّاسُ اتِّقَاءَ فُحْشِهِ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে দেখা করার জন্য একজন লোক অনুমতি চাইলো। আমি সে সময় তাঁর সামনে উপস্থিত ছিলাম। তিনি বললেনঃ গোত্রের মধ্যে এই লোকটি অথবা গোত্রের এই ভাই কতই না মন্দ! তারপর তিনি তাকে ভিতরে প্রবেশের সম্মতি প্রদান করলেন এবং তার সাথে নম্র ভাষায় কথা বললেন। লোকটি চলে যাওয়ার পর আমি তাকে বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আপনি প্রথম অবস্থায় তার ব্যাপারে এইে এই কথা বললেন, তারপর তার সাথে নম্র ভাষায় কথা বললেন! তিনি বললেন, হে আয়েশা! মানুষের মধ্যে সেই ব্যক্তি সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যার অশালীন আচরণ হতে মুক্তির জন্য জনগণ তাকে পরিত্যাগ করে।
 
সহীহ, সহীহাহ (১০৪৯) , মুখতাসা শামা-ইল (৩০১) , বুখারী, মুসলিম
জামে' আত-তিরমিজিঃ ১৯৯৬

এই হাদীস থেকে দেখা যায় যে, লোকটি খারাপ হওয়া সত্ত্বেও রাসুল (সা.) তার সাথে উত্তমভাবে কথা বলেছেন। কেননা, তিনি ছিলেন সর্বোত্তম আচরণের অধিকারী। কিন্তু তিনি আশংকা করলেন যে, সদাচরণের কারণে তার পরিবার এই লোকটিকে তার বন্ধু ভাবতে পারে। তাই তিনি আইশাহ (রা.)কে সতর্ক করে দিলেন যে, লোকটি খারাপ মানুষ।

وَعَنْ فَاطِمَةَ بِنتِ قَيسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ : أَتَيتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، فَقُلْتُ : إِنَّ أَبَا الجَهْمِ وَمُعَاوِيَةَ خَطَبَانِي ؟ فَقَالَ رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم : «أَمَّا مُعَاوِيَةُ، فَصُعْلُوكٌ لاَ مَالَ لَهُ، وَأَمَّا أَبُو الجَهْمِ، فَلاَ يَضَعُ العَصَا عَنْ عَاتِقِهِ». متفق عَلَيْهِ

ফাত্বেমাহ বিন্তে ক্বাইস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, একদা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হয়ে নিবেদন করলাম, ‘আবুল জাহম ও মুয়াবিয়াহ আমাকে বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছেন। (এ ক্ষেত্রে আমি কী করব?)’ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘‘মুআবিয়াহ তো গরীব মানুষ, তার নিকট মালধনই নেই। আর আবুল জাহম, সে তো নিজ কাঁধ হতে লাঠিই নামায় না (স্ত্রীদের বেদম প্রহার করে)।’’

(মুসলিম ১৪৮০, তিরমিযী ১১৩৫, ১১৮০, নাসায়ী ৩২২২, ৩২৩৭, ৩২৪৪, ৩২৪৫, ৩৪০৩, ৩৪০৪, ৩৪০৫, ৩৪১৮, ৩৫৪৫ ৩৫৪৯, ৩৫৫১, ৩৫৫২, আবূ দাউদ ২২৮৪, ২২৮৮, আহমাদ ২৬৫৬০, ২৬৭৭৫, ২৬৭৮৭, ২৬৭৯১, ২৬৭৯৩, ২৬৭৯৭, মুওয়াত্তা মালিক ১২৩৪, দারেমী ২১৭৭, ২২৭৪, ২২৭৫) রিয়াদুস সলেহিনঃ ১৫৪১

 এখানে একজন নারীর ভবিষ্যৎ জীবনের প্রশ্ন জড়িত ছিল। তাই নবী (সাঁ.) তাদের দুজনের ত্রুটি তাকে জানিয়ে দেওয়াটা জরুরী মনে করলেন।

৫) কোন ব্যক্তি প্রকাশ্যে পাপ করলে তার নাম উল্লেখ করা। যেমন, কোন বিদআতি, মদ্যপায়ী।

৬) কাউকে ছোট করার উদ্দেশ্যে নয় বরং চেনার উদ্দেশ্যে এমন কোনো বৈশিষ্ট্য বলে ডাকা; যা না বললে তাকে চেনা যায় না।

কাফিরের গীবত করা

হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, অমুসলিমদের সম্পর্কে নিন্দা করলে তা গীবতের পর্যায়ে পড়ে না। তবুও, একটা বিষয় স্মরণ রাখা উচিত, অন্যের সম্পর্কে খারাপ কথা বলা কখনো একজন মুসলিমের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। আর কেউ যদি অন্যের ব্যাপারে কুৎসা করে সেটা যেই হোক না কেন; এক সময় তা তার অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে এবং সে তখন মুসলিম ব্যক্তিরও নিন্দা করবে। কেননা হাদীসে এসেছে, 
وَعَنِ النُّعمَانِ بنِ بَشِيرٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: «إنَّ الحَلاَلَ بَيِّنٌ، وَإنَّ الحَرامَ بَيِّنٌ، وَبَيْنَهُمَا مُشْتَبَهَاتٌ لاَ يَعْلَمُهُنَّ كَثيرٌ مِنَ النَّاسِ، فَمَنِ اتَّقَى الشُّبُهَاتِ، اسْتَبْرَأَ لِدِينهِ وَعِرْضِهِ، وَمَنْ وَقَعَ فِي الشُّبُهَاتِ وَقَعَ في الحَرَامِ، كَالرَّاعِي يَرْعَى حَوْلَ الحِمَى يُوشِكُ أنْ يَرْتَعَ فِيهِ، ألاَ وَإنَّ لكُلّ مَلِكٍ حِمَىً، ألاَ وَإنَّ حِمَى اللهِ مَحَارِمُهُ، ألاَ وَإنَّ فِي الجَسَدِ مُضْغَةً إِذَا صَلَحَت صَلَحَ الْجَسَدُ كُلُّهُ، وَإِذَا فَسَدَتْ فَسَدَ الْجَسَدُ كُلُّهُ، ألاَ وَهِيَ القَلْبُ » متفقٌ عَلَيْهِ

নু‘মান ইবনে বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘অবশ্যই হালাল বিবৃত ও স্পষ্ট এবং হারাম বিবৃত ও স্পষ্ট, আর উভয়ের মাঝে রয়েছে বহু সন্দিহান বস্তু; যা অনেক লোকেই জানে না। অতএব যে ব্যক্তি এই সন্দিহান বস্তুসমূহ হতে দূরে থাকবে, সে তার দ্বীন ও ইজ্জতকে বাঁচিয়ে নেবে এবং যে ব্যক্তি সন্দিহানে পতিত হবে (সন্দিগ্ধ বস্তু ভক্ষণ করবে), সে হারামে পতিত হবে। (এর উদাহরণ সেই) রাখালের মত, যে নিষিদ্ধ চারণভূমির আশেপাশে পশু চরায়, তার পক্ষে নিষিদ্ধ সীমানায় পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শোন! প্রত্যেক বাদশাহরই সংরক্ষিত চারণভূমি থাকে। আর শোন! আল্লাহর সংরক্ষিত চারণভূমি হল তাঁর হারামকৃত বস্তুসমূহ। শোন! দেহের মধ্যে একটি মাংসপিন্ড রয়েছে; যখন তা সুস্থ থাকে, তখন গোটা দেহটাই সুস্থ হয়ে থাকে। আর যখন তা খারাপ হয়ে যায়, তখন গোটা দেহটাই খারাপ হয়ে যায়। শোন! তা হল হৃৎপিন্ড (অন্তর)।’’

(সহীহুল বুখারী ৫২, ২০৫১, মুসলিম ১৫৯৯, তিরমিযী ১২০৫, নাসায়ী ৪৪৫৩, ৫৭১০, আবূ দাউদ ৩৩২৯, ইবনু মাজাহ ৩৯৮৪, আহমাদ ১৭৮৮৩, ১৭৯০৩, ২৭৬৩৮, ১৭৯৪৫, দারেমী ২৫৩১) 
রিয়াদুস সলেহিনঃ ৫৯৩

তাই কাফিরের নিন্দা করার ব্যাপারেও একজন মুমিনের সতর্ক থাকা উচিত। 

দ্বিতীয়ত, কোন কাফিরের শারীরিক ত্রুটি যেগুলো স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন তা নিয়ে নিন্দা করা যাবে না। যেমন কালো, বেটে ইত্যাদি। কেননা, তা আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে উপহাস করার নামান্তর। তবে, তার প্রকাশ্য পাপকর্ম নিয়ে সমালোচনা করতে বাঁধা নেই। যেমন: জুয়া, ব্যভিচার ইত্যাদি।

তবে, সাধারণভাবে কাফিরের নিন্দা করার ক্ষেত্রেও কয়েক বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যেমন:

ইসলামি শরী’আহ দ্বারা পরিচালিত মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাসরত ও জিজিয়া প্রদানকারী অমুসলিম তথা যিম্মিদের নিন্দা করা যাবে না। কেননা, রাসুল (সাঁ.) বলেন, ‘যে কোনো যিম্মির সম্পর্কে বাজে কথা বলে সে জাহান্নামে যাবে।’ (ইবন হিব্বান)    

মুসলিমদের সাথে যুদ্ধরত কাফিরের নিন্দা করা যাবে এবং তাদের মনোবল নষ্ট করার জন্য এমনটি করার উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।

গীবতের প্রায়শ্চিত্ত কীভাবে করতে হবে?

কেউ যদি তার মুসলিম ভাইয়ের গীবত করেই ফেলে তবে সে প্রথমত আল্লাহর হুকুম অমান্য করল এবং দ্বিতীয়ত বান্দার হক নষ্ট করল। আল্লাহর হুকুম অমান্য করার কারণে সে যে অপরাধ করেছে, তার জন্য তাকে তওবা করতে হবে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। তবে এতটুকুই যথেষ্ট নয়। কেননা সে তার মুসলিম ভাইয়ের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করে তার হক নষ্ট করেছে। এক্ষেত্রে দুটি অবস্থা হতে পারে—

১) গীবতকারী যদি জানে যে অপর ব্যক্তি বিষয়টি জেনে ফেলেছে: তখন তার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে, তার জন্য দুআ করতে হবে এবং তার অনুপস্থিতিতে লোকদের কাছে তার সম্পর্কে ভালো কথা বলতে হবে।

২) যদি ব্যক্তি বিষয়টি না জানে। এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ঘটনা তার কাছে বলার প্রয়োজন নেই। বরং তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে, তার জন্য দুআ করতে হবে এবং তার অনুপস্থিতিতে লোকদের কাছে তার সম্পর্কে ভালো কথা বলতে হবে। আর যদি এমন হয় যে, অপরাধের ক্ষমা চাইতে গেলে তার সাথে শত্রুতা সৃষ্টি হওয়ার আশংকা থাকে; বা সে মনঃক্ষুণ্ণ হয় তবে শুধু তার জন্য দুআ করতে হবে এবং তার অনুপস্থিতিতে লোকদের কাছে তার সম্পর্কে ভালো কথা বলতে হবে।

وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ كَانَتْ عِنْدَهُ مَظْلمَةٌ لأَخِيه، مِنْ عِرضِهِ أَوْ مِنْ شَيْءٍ، فَلْيَتَحَلَّلْهُ مِنْهُ اليَوْمَ قبْلَ أنْ لاَ يَكُونَ دِينَار وَلاَ دِرْهَمٌ ؛ إنْ كَانَ لَهُ عَمَلٌ صَالِحٌ أُخِذَ مِنْهُ بِقَدْرِ مَظْلمَتِهِ، وَإنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ حَسَنَاتٌ أُخِذَ مِنْ سَيِّئَاتِ صَاحِبِهِ فَحُمِلَ عَلَيهِ». رواه البخاري

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি তার (কোন মুসলিম) ভাইয়ের উপর তার সম্ভ্রম অথবা কোন বিষয়ে যুলুম করেছে, সে যেন আজই (দুনিয়াতে) তার কাছে (ক্ষমা চেয়ে) হালাল করে নেয়, ঐ দিন আসার পূর্বে যেদিন দ্বীনার ও দিরহাম কিছুই থাকবে না। তার যদি কোন নেক আমল থাকে, তবে তার যুলুমের পরিমাণ অনুযায়ী তা হতে নিয়ে নেওয়া হবে। আর যদি তার নেকী না থেকে, তবে তার (মযলূম) সঙ্গীর পাপরাশি নিয়ে তার (যালেমের) উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।’’ 
বুখারী ২৪৪৯, ৬৫৩৪, আহমাদ ৯৩৩২, ১০১৯৫, রিয়াদুস সলেহিনঃ ২১৫

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ বলেন, কেউ যদি অন্য কারও গীবত করে, অপবাদ দেয় বা অপমান করে তওবা করে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার তওবা কবুল করবেন। কিন্তু যার বিরুদ্ধে এই অন্যায় করা হয়েছে সে জানতে পারলে অপরাধীর থেকে নিজের হক আদায় করে নিতে পারবে। কিন্তু ব্যক্তি যদি না জানে সেক্ষেত্রে ইমাম আহমদের দুটি মত আছে। অধিকতর সঠিক মতটি হলো—গীবতের কথা তাকে বলার প্রয়োজন নেই। বরং সে যেমনভাবে তার নামে খারাপ কথা বলেছে তেমনি তার সম্পর্কে ভালো কথা বলবে। হাসান আল-বসরি বলেন: গীবতের প্রায়শ্চিত্ত হলো যার সম্পর্কে সে গীবত করেছে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। মাজমু আল ফতওয়া

আর ব্যক্তি যদি কারও নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে থাকে, তবে যাদের কাছে সে অপবাদ দিয়েছে তাদের সামনে ঐ ব্যক্তির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
--------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট।             

Post a Comment

0 Comments