মহানবী (সাঃ) ধর্ম প্রচারের জন্য তায়েফ গমন স্থির করলেন। মহানবী (সাঃ) ভেবেছিলেন, সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা তায়েফের মানুষের মন হয়তো আরও নরম পাওয়া যাবে।
মহানবী (সাঃ) তায়েফ চললেন। তায়েফের প্রধান গোত্র ছিল বনু সাকিফ। আবদ ইয়ালিল, মাসউদ ও হাবিব নামে তিন ভাই ছিল সে গোত্রের প্রধান। মহানবী (সাঃ) প্রথমে তাদের কাছে গেলেন, আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত দিলেন তাদেরকে। তারা দাওয়াত তো গ্রহণ করলই না বরং তাকে নানা রকমের ব্যঙ্গ-বিদ্রূপে জর্জরিত করলো।
তারা যখন দাওয়াত কবুল করলনা, তখন মহানবী সাঃ তাদেরকে নিরপেক্ষ থাকতে অনুরোধ করলেন যাতে করে তাদের মত দ্বারা সাধারণ মানুষ প্রভাবিত হতে না পারে।
কিন্তু উল্টোই করলো তারা। লেলিয়ে দিল ছেলে-ছোকরা ও দাসদের। মহানবী সাঃ রাস্তায় বের হলেন তারা তাঁর পেছনে ছুটত, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করতো, পাথর ছুরতো।
এর মধ্যেই মহানবী সত্যের আহবান তায়েফের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে লাগলেন। পথের দুধার থেকে তাঁর পা লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করা হতে লাগলো। রক্ত রঞ্জিত হয়ে গেল তাঁর পা। চলতে না পেরে মাঝে মাঝে তিনি বসে পরতেন। লোকরা তাঁকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে আবার সেই আগের মতই পাথর নিক্ষেপ করতো। এভাবে ক্রমে তাঁর জীবন সংশয় দেখা দিল।
অবশেষে মহানবী সাঃ মক্কায় ফেরার সিদ্ধান্ত নিলেন। এই সময় অত্যাচার ভীষণ আকার ধারণ করলো। একদিন তারা পাথরের আঘাতে আঘাতে তাঁর দেহ জর্জরিত করে তুললো। সর্বাঙ্গ থেকে রক্তের ধারা গড়িয়ে পরতে লাগলো। এক সময় অবসন্ন হয়ে পড়ে গেলেন নবী। ক্লান্ত অবসন্ন দেহটা নিয়ে মহানবী সাঃ ঢুকে পড়লেন একটি আঙ্গুর বাগানে।
দেহের প্রবাহিত রক্ত জুতায় প্রবেশ করে পায়ের সাথে জমাট বেঁধে গিয়েছিল। জুতা খুলতে খুবই কষ্ট হলো তাঁর। ওযু করে মহানবী সাঃ বিশ্ব জগতের
মালিক প্রভুর উদ্দেশ্যে নামাযে তন্ময় হয়ে গেলেন। নামায শেষে প্রভুর উদ্দেশ্যে দুটি প্রার্থনার হাত উত্তোলন করলেন। কি প্রার্থনা করলেন তিনি? তিনি কি নিজের কষ্ট লাঘবের জন্য দোয়া করলেন? নাকি তিনি তায়েফবাসীর জন্য বদদোয়া করলেন? না তিনি এ সবের কিছুই করেন নি। তিনি প্রভুর সমীপে দুটি হাত তুলে বললেন, “হে আমার আল্লাহ, তোমাকে ডাকছি। নিজের এই দুর্বলতা, নিরুপায় অবস্থা সম্বন্ধে তোমার কাছেই অভিযোগ পেশ করছি। হে পরম দয়াময়, তুমিই যে দুর্বলের বল। প্রভুহে, তোমার সন্তোষই আমার একমাত্র কাম্য। তোমার সন্তোষ পেলে এসকল বিপদ-আপদের কোন পরওয়াই করি না।”
মহানবী সাঃ মক্কায় ফিরে চলেন।যখন তিনি তায়েফ ছাড়ছিলেন, তখন আল্লাহর নির্দেশে পাহাড়ের ফিরিশতা এসে তায়েফবাসীদেরকে পাহাড় চাপা দিয়ে মেরে ফেলার অনুমতি চাইলেন। মহানবী(সাঃ) বললেন, আমি চাই তারা বেঁচে থাকুক। তাদের বংশধরগণ তো ইসলাম গ্রহণ করতে পারে।
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট।
0 Comments