Recent Tube

আমেরিকার ১৮ বছরের যুদ্ধের বাস্তবতা।.→ মাওলানা আসে'ম ওমর।

  আমেরিকার ১৮ বছরের যুদ্ধের বাস্তবতা।


১১ সেপ্টেম্বর ২০০১ এর হামলার পরে যুগের ফেরাউন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বুশ মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিল। অহংকারে নিমজ্জিত এই ইহুদীদের গোলাম বলেছিল: আমরা এই যুদ্ধে পিছু হটবো না। দুর্বলও হবো না। পরাজিতও হবো না।

দুনিয়ার বস্তুবাদিরা তার এ কথার উপর নিশ্চিত বিশ্বাস করে বসেছিল এবং মদিনার মুনাফিকদের ন্যায় ঈমানদারদেরকে ভয় দেখাচ্ছিল: “হে ইয়াসরিববাসী! তোমাদের কোন স্থান নেই, তাই তোমরা ফিরে যাও।”
অর্থাৎ এখন তো জি'হাদীদের কোনও আশ্রয়স্থল নেই। ডান্ডার জোরে প্রতিষ্ঠিত শরীয়তের এখন কী হবে? এখন স্বয়ং আমেরিকা মাঠে নামছে। আমেরিকার মোকাবেলা কে করতে পারবে? এজন্য এখন জি'হাদও থাকবে না, জি'হাদের বাণী উচ্চারণকারী কেউও থাকবে না।

কিন্তু যার হৃদয় স্বীয় রবের উপর ঈমানে পরিপূর্ণ ছিল, সে আমেরিকান বো'মাবৃষ্টির মাঝেই ঘোষণা করে দিল:

[هَذَا مَا وَعَدَنَا اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَصَدَقَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَمَا زَادَهُمْ إِلَّا إِيمَانًا وَتَسْلِيمًا]

অর্থাৎ আফ'গানিস্তানে আমে'রিকার আগমন হল আল্লাহ তা’আলার ঐ সকল ওয়াদাসমূহের একটি যে, আল্লাহ দুর্বল ও সহায়-সম্বলহীন মুসলমানদের হাতে শক্তিশালীদেরকে লাঞ্ছিত ও নাস্তনাবুদ করেন।

আজ যুদ্ধের ১৮ বছর পার হওয়ার পর আল্লাহর সেই ওয়াদা দুর্বল মুসলমানদেরকে এই সংবাদ দিচ্ছে যে, আজও বদরের রণাঙ্গন প্রস্তুত করে আপনার সাহায্যের জন্য ফেরেশতাগণ আসমান হতে কাতারে কাতারে অবতীর্ণ হতে পারে।

২০০১ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত মাত্র ১৮ বছরে আফ'গানিস্তানে প্রভুত্ব দাবিকারী আমেরিকার কী অবস্থা হল? এত দ্রুত পতনের দোড়গোড়ায় পৌঁছে গেল। যু'দ্ধের হুমকিদাতা আজ নিজেই যুদ্ধবন্দির ন্যায় মিনতি করছে।

প্রশ্ন হল: আমেরিকার সে সকল সামুদ্রিক জাহাজগুলো কি ডুবে গেছে, যেগুলো সাত সমুদ্রের বুক চিরে পাকিস্তান পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল? আমেরিকার সেই ড্রোনগুলো কি অন্ধ হয়ে গেছে, যেগুলো মাটির সাথে মিশে চলা পিঁপড়াও দেখতে পাওয়ার দাবি করে? আমেরিকান সেই বি ওয়ান ও বি টু তে কি জং ধরে গেছে, যেগুলো জীবন-মৃত্যুর ফায়সালা করার ঘোষণা দিত?  মুসলিমদের এলাকাসমূহকে তোরা'বোরা বানানোর হুমকিদাতা টেকনোলজীগুলোর কী হল যে, এখন নিজেদেরই তোরা'বোরা বানিয়ে পালানোর জন্য তাড়াহুড়া করছে?

সব কিছু আছে, কিন্তু আমার রবের নীতি এই আধুনিক টেকনোলজীর যুগেও বহাল ও কার্যকর আছে। তিনি যখন অহংকারীদেরকে ধরেন, তখন তাদের উত্থানের সময়ই ধরেন, যখন দাম্ভিকরা নিজেদের শক্তির নেশায় ‘আনা রাব্বুকুমুল আলা’ (আমিই তোমাদের সর্বোচ্চ রব) ঘোষণা করতে থাকে।
আর তখন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রবও ধরার পর ঘোষণা করেন: 

[فَمَا كَانَ لَهُ مِنْ فِئَةٍ يَنْصُرُونَهُ مِنْ دُونِ اللَّهِ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُنْتَصِرِينَ] [القصص   ]

তিনি যখন জালিমদেরকে ধরেন, তখন তাদের কোন শক্তি, কোন রাজনীতি ও কোন ব্যবস্থাপনাই তাদেরকে রাজাধিরাজ থেকে বাঁচাতে পারে না। আল্লাহ যেসকল অহংকারীদেরকে ধরেছেন, সকলকে তাদের উত্থানের সময়ই ধরেছ
[فَدَمْدَمَ عَلَيْهِمْ رَبُّهُمْ بِذَنْبِهِمْ فَسَوَّاهَا . وَلَا يَخَافُ عُقْبَاهَا]

তিনি কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ভয় করেন না। তিনি কোন শক্তির পাল্টা একশনের ভয় করেন না। তখন তার কোন বাহিনীও তার কাজে আসে না এবং তার রাজত্বও তাকে আল্লাহ থেকে বাঁচাতে পারে না।

ইমা'রাতে ইসলা'মিয়ার বিজয় মুসলিম উম্মাহর জন্য সুসংবাদ। আল্লাহ তার সবচেয়ে বড় দুশমনকে জি'হাদী আক্র'মণের মাধ্যমে এমন নাজেহাল করেছেন যে, সুপার পাওয়ারের বাহিনী লড়াই করতেই অস্বীকৃতি জানিয়ে দিয়েছে। অন্যথায় ইহুদীদের নিকট কি টাকা পয়সা শেষ হয়ে গেছে, যে তারা আমেরিকাকে অর্থদান বন্ধ করে দিয়েছে? যদি আমেরিকান ফৌজ লড়তে প্রস্তুত থাকত, তাহলে ইহুদীরা আজও তাদেরকে অর্থ দিতে পারত। ইহুদীরা নিজেদের টেকনোলজী ও নিজেদের কল-কারখানা আমেরিকা থেকে সরিয়ে চীনে নিত না, যদি আমেরিকানরা নিজেদের সন্তানদেরকে এই যুদ্ধের ইন্ধন বানাতে প্রস্তুত থাকত। কিন্তু আমেরিকান ফৌজ লড়াই করতে পরিস্কার অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

২০০১ এর আমেরিকাকে দেখুন, সে সময় সংবাদপত্র, প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও টিভিতে যে সকল শব্দগুলো বলতে বলতে ফেনা তুলে ফেলা হত, তা স্মরণ করুন। তারপর এই আঠারো বছরের যুদ্ধের ইতিহাস অধ্যয়ন করুন। তাহলে আল্লাহর শক্তির উপর মজবুত ঈমান এসে যাবে যে, আল্লাহ জিহা'দের ময়দানে দুর্বলদের মাধ্যমে শক্তিশালীদেরকে পেটাতে এখনো সক্ষম।    

আমেরিকার বিরুদ্ধে এই জিহাদ সেই অবস্থায় শুরু করা হয়েছিল, যখন ইমা'রাতে ইসলা'মিয়াকে ধ্বংস করে দেওয়ার দাবি করা হয়েছিল। তালে'বানদের জমানো সকল পূজিঁ শেষ করে দেওয়া হয়েছিল। অধিকাংশ নেতা বন্দি অথবা শহীদ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আল্লাহর ওয়াদার উপর এই বিশ্বাস ছিল যে, তিনি মাটিতে লুটিপুটি খাওয়া নিঃসম্বল বাহিনীকেই আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য দাঁড় করিয়ে দিবেন।

সে সময় মুজা'হিদদের কত গ্রুপ এমন ছিল যে, তাদের সকলের নিকট ক্লাশিনকোভও ছিল না। বরং কারো নিকট কুড়াল, কারো নিকট পুরোনো দিনের তরবারি ইত্যাদি ছিল।
প্রাথমিক যুদ্ধগুলোতে মুজা'হিদগণের ক্লাশিনকোভের গুলি আমেরিকান মোর্চাসমূহের সাথে আঘাত খেয়েই ঠাণ্ডা হয়ে যেত। সাধারণভাবে অবলোকনকারী ও বিশ্লেষকরা বলতে পারত যে, এ সকল ক্লাশিনকোভ দিয়ে কিভাবে আমেরিকার মোকাবেলা করা সম্ভব? কিন্তু আল্লাহর হুকুম পালনকারী এবং পরিণতির ব্যাপারে ভ্রুক্ষেপহীন লোকেরা নিজেদের ফরজ আদায় করে এবং নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহ তাদের জন্য দু’টি পুরস্কারের যেকোন একটি অবশ্যই প্রস্তুত করে রেখেছেন।

সুতরাং শক্ত পাথরের সাথে টক্কর দেওয়ার এই উম্মাদনা বাড়তে লাগল। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্তানেরা নিজেদের উম্মতকে বাঁচানোর জন্য উত্তাল তরঙ্গের সাথে সঙ্ঘাতে জড়াল, ডুবতে আর ভাসতে লাগল। আকাশের চক্ষুরাজী আত্মমর্যাদাশীলদের এই ভূমিতে এক নতুন ইতিহাস রচিত হতে দেখল।

একজন মুজা'হিদ মাইন পোতার জন্য সড়কে গেল। অমনি ড্রোন বিমান মিসাইলের মাধ্যমে তাকে শহীদ করে দিল। তার খুলি উড়ে গেল। এটা দেখে অন্য মুজা'হিদ মাইন নিয়ে সেই জায়গাতেই গেল। অমনি আরেকটি মিসাইল এসে বাতাসে শহীদের রক্তের খুশবু ছড়িয়ে দিল। তখন তৃতীয় মুজা'হিদ চোখে দেখা মৃত্যুর দিকে তৃতীয় মাইন নিয়ে অগ্রসর হল। ড্রোন বিমান তাকেও তার স্থানে পৌঁছে দিল।

একের পর এক তিনটি শাহাদাত। তারা নিজেদের সাথীদেরকে নিজেদের চোখের সামনে শেষ হতে দেখে নিজেদের মিশন ছেড়ে পালান নি। জি'হাদ থেকে তাওবা করে বসে পড়েননি। ফিরে গিয়ে নিজেদের লোকদেরকে জি'হাদের ব্যাপারে এভাবে বিতৃষ্ণ করে তুলেন নি যে, আমেরিকানদের সাথে টক্কর দিয়ে কী লাভ? আমেরিকান টেকনোলজীর মোকাবেলা করা কিভাবে সম্ভব? আমরা কোথায় আর তারা কোথায়? বরং চতুর্থ মুজাহিদ চতুর্থ মাইন নিয়ে একই জায়গায় গেলেন। ড্রোনও বিদ্যমান। তার চালকও ঘুমিয়ে যায়নি। সব কিছু ঠিকমত আছে। সমস্ত টেকনোলজী উপস্থিত। কিন্তু উক্ত মুজাহিদ মাইন নিয়ে সড়কে গেলেন, খনন করলেন এবং মাইন পুঁতে ফিরে এসে নিজের জায়গায় আমেরিকান কনভয়ের অপেক্ষা করতে থাকলেন।
স্থলপথে ও আকাশ পথে সর্বপ্রকার প্রহরার মধ্য দিয়ে কনভয় এগিয়ে চলল। অতঃপর একেকটি ট্যাংক মাইনের উপর আসতেই শূণ্যে উড়ে গেল।

এই জি'হাদ এ সকল নজির বিহীন কুরবানির মাধ্যমেই সামনে অগ্রসর হয়েছে। একের পর এক কুরবানি। একেকটি মাইন পোতার জন্য তিন তিন জন মুজা'হিদ নিজেদের জানের নজরানা পেশ করেছেন। নিশ্চয়ই এটা স্মরণীয় করে রাখার
একজন একাকী মুজা'হিদ একটি পাকিস্তানী মেশিনগান নিয়ে আমেরিকান কনভয়ের সামনে দাঁড়িয়ে গেল। রাস্তায় সোজা দাঁড়ানো। এই কনভয়টিকে ঠেকাবে, যাতে তার সাথীরা নিরাপদে বের হয়ে যেতে পারে। ট্যাংক, বিমান, সাঁজোয়া যান সবকিছুর সামনে এক আল্লাহর সৈনিক একাকী দাঁড়িয়ে গেছে। কিন্তু  কোন আমেরিকানের পক্ষে তার মোকাবেলা করা সম্ভব ছিল না। বরং কনভয় পিছনের দিকে পলায়ন করল। এটা ছিল রুওব (প্রভাব বা গাম্ভীর্য), যা আল্লাহ কাফেরদের অন্তরে ঢেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু তা ঐ সময়, যখন তার সৈনিক, তার নিকট প্রার্থনাকারী ময়দানে অবিচল থেকেছে এবং ধৈর্য্যরে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।

জনৈক মুজা'হিদ পুরোনো যুগের রাইফেলের উপর ভাঙ্গা দুরবিন লাগিয়ে রোমাল দ্বারা তা জোড়া লাগাল। অতঃপর এক এক সপ্তাহ জঙ্গলে বসে শরীয়তের দুশমনদেরকে খুঁজে খুঁজে মারতে থাকল। সপ্তাহব্যাপী শুকনো রুটির টুকরো ও চা খেয়ে অতিবাহিত করে দিত। 
একজন আল্লাহর বান্দী চব্বিশজন আমেরিকানকে মৃত্যুর জগতে পাঠিয়ে দিয়েছে। একটি পুরোনো যুগের বন্দুক ও ভাঙ্গা দুরবিন দিয়ে, যেটাকে সে নিজের রোমাল দিয়ে জোড়া দিয়েছে। এটা নব্য যুগের কাহিনী!

চল্লিশ রাষ্ট্রের বাহিনী এমনি এমনিই ময়দান ছেড়ে পলায়ন করেনি। এখন আপনি কোন বিশ্লেষণ করবেন? যুদ্ধবিশ্লেষকদের নিকট জিজ্ঞেস করুন, এটা কেমন মোকাবেলা? যেখানে ড্রোন আছে, স্যাটেলাইট আছে। যেখানে কনভয় হেফাজতের জন্য সামনে পিছনে হেলিকপ্টার আছে। কিন্তু তারপরও মুজা'হিদগণ তাদেরকে মারছে।  এসকল ড্রোন, স্যাটেলাইট এবং বিমানের সামনেই।

যদি এটা এক-দু’দিনের ঘটনা হত, তাহলে বলে দেওয়া যেত যে, ড্রোন চালক ঘুমিয়ে গিয়েছিল অথবা  নেশায় বুদ হয়েছিল। কিন্তু এটা তো সতের আঠার বছরের কাহিনী। এই আধুনিক টেকনোলজী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গোলামদেরকে ভীত করতে পারেনি। শাহাদাতের পর শাহাদাত উম্মতের মায়েদেরকে পিছনে হটাতে পারেনি। বরং নবীর শরীয়তের জন্য মায়েরা নিজেদের কলিজার টুকরোগুলোকে এই যুদ্ধে পেশ করতে লাগল।

ইতিহাস স্মরণীয় করে রাখবে, পশ্চিমা সভ্যতা নিজেদের সন্তানদেরকে এই যুদ্ধে পাঠাতে অক্ষমতা প্রদর্শন করেছে। কিন্তু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতের মায়েরা একের পর এক নিজেদের সন্তানদেরকে রণসাজে সজ্জিত করে রওয়ানা করিয়ে দিয়েছে।
এ সকল কুরবানির বদৌলতে আল্লাহ তা’আলা নিজের সাহায্য অবতীর্ণ করলেন। ফলে পরববর্তীতে এমন সময় আসল, যখন এক একটি ঘাটিতে আট দশটি করে আমেরিকান ট্যাংক ধ্বংস হতে লাগল। এখন আপনি একটু কোন যুদ্ধ বিশ্লেষককে বলুন তো যে, শুধুমাত্র এক জেলায় আটশো আমেরিকান ট্যাংক উড়ে গেছে। তাদের চিন্তাশক্তি অকেজো হয়ে যাবে। কিভাবে এটা বিশ্লেষণ করবে?!

আল্লাহর নীতি এখনো কার্যকর ও  বহাল আছে।

[إِنْ تَنْصُرُوا اللَّهَ يَنْصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ]
 
যদি তোমরা আল্লাহর দ্বীনের সাহায্য কর, তবে আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন। আল্লাহ এমন সাহায্য করবেন যে, দুনিয়া হতবাক হয়ে যাবে। আজও আল্লাহর নীতি বহাল আছে। এই যামানায়ও সেই এক ও একক আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, ইনিল মুলকু ইল্লা লিল্লাহ। 

এখনও এই ভূ-পৃষ্ঠের উপর তাঁরই রাজত্ব চলে। আজও পৃথিবীর প্রতি ইঞ্চি জায়গা ও প্রতিটি অনু-পরমাণু তাঁরই হুকুমের অনুগামী। আল্লাহ তা’আলা নিজের খোদায়ীকে আমেরিকান টেকনোলজীর হাতে ন্যস্ত  করে দেননি। কেউ তাঁর বাদশাহির মধ্যে শরীক নেই। তাঁর কিতাবের নিম্নোক্ত আয়াত এখনো পর্যন্ত  ঈমান ও ইয়াকীন ওয়ালাদের সামনে দ্বীপ্তিমান আছে।

[ فَخَسَفْنَا بِهِ وَبِدَارِهِ الْأَرْضَ فَمَا كَانَ لَهُ مِنْ فِئَةٍ يَنْصُرُونَهُ مِنْ دُونِ اللَّهِ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُنْتَصِرِينَ]

তিনি নিজ দ্বীনের দুশমনদেরকে যখন যমীনে ধ্বসিয়ে দেন, তখন কোন ফৌজ বা সেনাবাহিনী তাদেরকে বাঁচাতে পারে না। তাঁর দ্বীপ্তিমান বাণী এই আধুনিক যুগের আলোকিত চিন্তার দাবিদারকে বলছে:

[لِلَّهِ الْأَمْرُ مِنْ قَبْلُ وَمِنْ بَعْدُ وَيَوْمَئِذٍ يَفْرَحُ الْمُؤْمِنُونَ
. بِنَصْرِ اللَّهِ يَنْصُرُ مَنْ يَشَاءُ وَهُوَ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ]

হে স্বল্পতা ও আধিক্যের পিছে ধাবমান লোকেরা! হে জিহাদ থেকে উম্মতকে নিরাশকারীরা! হে ইসলামী মাদরাসাগুলোকে জাহিলী কৃষ্টি-কালচারের ময়লায় নিমজ্জিতকারীরা!  আমেরিকার পূর্বেও সমস্ত ফায়সালা আল্লাহর হাতে ছিল এবং আমেরিকার পতনের পরেও সমস্ত বিষয়ের দায়িত্ব তাঁর হাতেই থাকবে। আমেরিকার পতনের পর এই ক্ষমতা চীন অথবা ভারতের কাছে স্থানান্তরিত হবে না।
لِلَّهِ الْأَمْرُ مِنْ قَبْلُ وَمِنْ بَعْدُ 

এটা কত চমৎকার আয়াত, যা এই যামানার শক্তির পূজারীদেরকে একথা বুঝাচ্ছে যে, হে বৈষয়িক শক্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণকারীরা! প্রথমে তোমরা বৃটিশদের ইবাদত করেছ, তার পতনের পর তোমরা আমেরিকার সামনে সেজদায় পড়ে গেলে। আর এখন যখন তোমরা দেখছ যে, আমেরিকান ভূত জিহাদের আঘাতের কারণে যমীনে লুটিপুটি খাচ্ছে, তখন দৌড়ে চীনের দিকে চলে যাচ্ছো। আল্লাহকে ছেড়ে, আল্লাহর দ্বীনকে ছেড়ে মুহাম্মদের উম্মতকে ছেড়ে এবং কোটি কোটি চায়না, তুর্কিস্তানী মুসলিমদেরকে ছেড়ে তোমরা চীনের সামনে ঝুকে যাচ্ছ। তার প্রশংসা করছ এবং তাদের গুণ-গান করছ। নিজের মুসলিম ভাইদেরকে ভুলে যাচ্ছ?

এই আয়াতই আল্লাহ ওয়ালাদের মনে নিশ্চিত বিশ্বাস জন্ম দেয় যে, আমেরিকার পরে অন্য কাউকে সুপার পাওয়ার হতে দেখে পেরেশান হওয়া উচিত নয়। যেই আল্লাহর শরীয়তের জন্য তোমরা সমস্ত কুফরী শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে লড়েছ, পূর্বে-পরে সমস্ত বিষয় তাঁরই হাতে। তিনি যখন আমেরিকার বিরুদ্ধে তোমাদেরকে সাহায্য করতে পেরেছেন, তখন তার পরের দুশমনের ক্ষেত্রেও তাঁর শক্তি দুর্বল হয়ে যাবে না। তার বাদশাহির মধ্যে কোন কমতি আসবে না। জি'হাদ সর্বদা দ্বীপ্তিমান ও সতেজ থাকবে। যদি তোমরা জি'হাদ করতে থাক, তবে আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন। 

لَا يَزَالُ الْجِهَادُ حُلْوًا أَخْضَرَ  

অর্থাৎ যারা জি'হাদ করে, যারা এর জন্য নিবেদিত, তারা সর্বদা এমনসজীব-সতেজ থাকবে, যেন আজই এটা শুরু হয়েছে। চল্লিশ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও তারা ক্লান্ত হয়ে পড়বে না, দুর্বল হয়ে পড়বে না।

হে আমার মুসলমান ভাইয়েরা! আফগানিস্তানে আমেরিকার পরাজয় আর ইমা'রাতে ইসলা'মিয়ার বিজয়, এটা সমস্ত উম্মতের বিজয়। নির্যাতিত ও দুর্বলদের জন্য এটা এক নতুন প্রভাতের সুসংবাদ। এটা দুর্বল মুসলমানদেরকে আল্লাহর এ আয়াত স্মরণ করিয়ে দেয় :

 كَمْ مِنْ فِئَةٍ قَلِيلَةٍ غَلَبَتْ فِئَةً كَثِيرَةً

অর্থাৎ অনেক এমন হয়েছে যে, দুর্বল দল শক্তিশালী দলের উপর বিজয়ী হয়ে গেছে। যে আল্লাহ পূর্ববর্তীদের সাথে এই ওয়াদা করেছেন, বর্তমান ওয়ালাদের জন্যও তাঁর সেই ওয়াদা বাকি আছে।
আফ'গানিস্তানে আমেরিকার পরাজয় এবং ইমা'রাতে ইসলা'মিয়ার বিজয়, এটা উলামা ও তলাবাদেরকে বালাকোট ও শামেলীর আন্দোলন এবং রেশমী আন্দোলনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। যার শিক্ষা ছিল: ইলমে দ্বীনের বাহকরা কোন শক্তি ও ক্ষমতার সামনে মাথা ঝুকায় না। যেমন আমীরুল মুমিনীন মোল্লা ওমর রহ. কোন শক্তির কাছে মাথা নত করেননি। বরং শুধুমাত্র একজন মুসলমানকে বাঁচানোর জন্য, ইসলামের এক আত্মমর্যাদা ও ইজ্জতের প্রতীককে বাঁচানোর জন্য সমস্ত কুফরীবিশ্বেরসাথে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে দেন।
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ ও মাওলানা।       

Post a Comment

0 Comments