Recent Tube

ইসলামি নিদর্শন চালু করে শাহাদত বরণকারী তুর্কি প্রধানমন্ত্রী ; শামীম আজাদ।


ইসলামি নিদর্শন চালু করে শাহাদত বরণকারী তুর্কি প্রধানমন্ত্রী 

কামাল আতাতুর্ক তুরস্ক থেকে ইসলামি সব নিদর্শন মুছে ফেলেছিলেন। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট ও তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী (১৯৫০-১৯৬০) আদনান মেন্দেরেস কিছু ইসলামি নিদর্শন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। তিনি ফের আরবিতে আজান দেওয়ার অনুমতি দেন, পোশাকের স্বাধীনতা ও ধর্মীয় শিক্ষার স্বাধীনতা প্রদান করেন। মেন্দেরেস ইসরাইলের বিরুদ্ধে আরবদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলেন। ইসরাইলের প্রস্তুতকৃত ওষুধ ও পণ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি ইসরাইলি রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেন। এতেই মেন্দেরেসের বিরুদ্ধে ইহুদিদের বৈশ্বিক আক্রমণ শুরু হয়ে যায়। কট্টর ইহুদি আহমদ আমিন বালমান তার পত্রিকা ‘ওয়াতান’-এ বিস্ফোরকের সলতেয় আগুন ধরান এবং যুদ্ধের আগুন জ্বালিয়ে দেন। তুরস্কের দোনমেহ সংঘের সদস্যরা তাকে সহায়তা করে। ফ্রিম্যাসনারির ইহুদিরা তুর্কি সেনাবাহিনীকে উসকানি দেয়। ফ্রিম্যাসন জেনারেল জামাল গুরসেলের নেতৃত্বে ১৯৬০ সালের মে মাসে তুর্কি সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থান ঘটে এবং ১৭ ই সেপ্টেম্বর ১৯৬০ সালে তারা আদনান মেন্দেরেসকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে। 
আদনান মেন্দেরেস ১৮৯৯ সালে আইদিন প্রদেশের কোচারলিতে একটি ক্রিমিয়ান তাতার বংশোদ্ভূত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের পর তিনি ইজমিরের আমেরিকান কলেজে লেখাপড়া করেছেন। তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি গ্রিকদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। এজন্য তাকে পদক প্রদান করা হয়। তিনি আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে স্নাতক হন। ১৯৩০ সালে তিনি আইদিনে লিবারেল রিপাবলিকান পার্টির একটি শাখা সংগঠিত করেন। দলটি বিলুপ্ত হওয়ার পর মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক তাকে রিপাবলিকান পিপলস পার্টিতে আমন্ত্রণ জানান এবং ১৯৩১ সালে দলের নেতৃবৃন্দ কর্তৃক তাকে আইদিনের ডেপুটি নির্বাচিত করা হয়। ১৯৪৫ সালে ইসমত ইনোনুর জাতীয়করণ নীতি নিয়ে দলের মধ্যে বিরোধিতার কারণে তিনি ও তার দুই সহকর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
১৯৪৬ সালের ৭ জানুয়ারি আদনান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী জালাল বায়ার ডেমোক্র্যাটিক পার্টি গঠন করেন। ১৯২৪ সালে গঠিত কাজিম কারাবেকিরের প্রোগ্রেসিভ রিপাবলিক পার্টি, ১৯৩০ সালে গঠিত আলী ফেতহি ওকাইরের লিবারেল রিপাবলিকান পার্টি ও ১৯৪৫ সালে গঠিত নুরি দেমিরাগের ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট পার্টির পরে এটি ছিল তুরস্কের চতুর্থ বৈধ বিরোধী দল। তিনি ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে কুতাহিয়ার ডেপুটি নির্বাচিত হন। ১৯৫০ সালের ১৪ মে তুরস্কের প্রথম স্বাধীন নির্বাচনে তাদের দল ৫২ শতাংশ ভোট পায়। এরপর মেন্দেরেস প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৫৫ সালে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও গ্রহণ করেন। ১৯৫৪ ও ১৯৫৭ সালের নির্বাচনেও তিনি জয়ী হন।
ইহুদি সাংবাদিক সামি কোহেন লন্ডনের জেন ক্রনিকল পত্রিকায় আদনান মেন্দেরেসের ফাঁসির কারণ সম্পর্কে কলম ধরেছেন। তিনি লিখেছেন, 
‘যে প্রত্যক্ষ কারণটি আদনান মেন্দেরেসকে ফাঁসির দড়ির দিকে টেনে নিয়ে যায় তা হলো তার ইসলামি বিশ্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনের নীতি এবং ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান কঠোরতা ও হ্রাসমানতা।’

পশ্চিমা বিশ্ব কামালবাদের গভীর অভিজ্ঞতা ও অনুশীলন তুর্কি জাতির মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাইল। তারা ইসমত ইনোনুকে রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করতে বাধ্য করল। ইনোনু জালাল বায়ারকে মনোনীত করলেন। তিনি তাকে বিরোধী দল ও গণতান্ত্রিক দল গঠন করার দায়িত্ব দিলেন। জালাল বায়ারকে সাহায্য করতেন আদনান মেন্দেরেস। ফলে তিনিই দলের মধ্যে কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠলেন।  
আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় এই সময় আদনান মেন্দেরেসের ভাগ্যে এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে। তিনি উড়োজাহাজে চড়ে কোথাও ভ্রমণ করছিলেন। অকস্মাৎ বিমানের একটি ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে। বৈমানিক দুর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে বলে ঘোষণা করেন। আদনান মেন্দেরেস তখন তার প্রতিপালকের সঙ্গে অঙ্গীকার করেন যে, হে আল্লাহ, আপনি যদি আমাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করেন তাহলে আমি তুরস্কে ইসলাম ফিরিয়ে আনব। গোটা উড়োজাহাজ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। উড়োজাহাজের একজনমাত্র যাত্রী প্রাণে বেঁচে যান, তিনি হলেন আদনান মেন্দেরেস। 
১৯৫৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ইস্তানবুল থেকে লন্ডন যাওয়ার সময় আদনান মেন্দেরেস ও সরকারি কর্মকর্তাদের বহনকারী তুর্কি এয়ারলাইন্সের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয় এবং এতে আগুন ধরে যায়। এতে ৫ যাত্রী ও ৮ ক্রু নিহত হন। আদনান এই দুর্ঘটনায় প্রায় অক্ষত ছিলেন। তাকে এরপর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সাইপ্রাস ইস্যুতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড ম্যাকমিলান ও গ্রিক প্রধানমন্ত্রী কনস্টান্টাইন কারামানলিসের সঙ্গে লন্ডন চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য তিনি যাত্রা করেছিলেন। ১৯৫৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে থাকা অবস্থায় তিনি লন্ডন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি দেশে ফিরে আসেন।

আদনান মেন্দেরেস তুরস্কের নবম প্রেসিডেন্ট (২২ মে ১৯৫০ থেকে ২৭ মে ১৯৬০)। এ সময় প্রেসিডেন্ট ছিলেন জালাল বায়ার। অর্থাৎ তিনি এই দুর্ঘটনার এক বছর পর ক্ষমতাচ্যুত হন।  আদনান মেন্দেরেস তার শাসনকালের শুরু থেকে ইসলামের প্রতি অনুরাগী ছিলেন এবং ইসলামের প্রচার-প্রসারে কাজ করে যাচ্ছিলেন।
---------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট । 

Post a Comment

0 Comments