Recent Tube

দ্যা চয়েস ইজ ইউরস্--২৭, জিয়াউল হক।

               দ্যা চয়েস ইজ ইউরস্
                              পর্ব-২৭,;

   বিভিন্ন সিরাতগ্রন্থ অধ্যয়ন শেষে আমরা যে বিষয়টিতে সবার ঐক্যমত দেখতে পাই, সেটা হলো, তিনি সা: রবিউল আওয়াল মাসে জন্মগ্রহণ করেন। আর খোদ প্রিয় রাসুল সা: এঁর বক্তব্য অনুসারে আমরা এটাও জানতে পারি যে, তিনি সা: সোমবারে জন্মেছেন।
প্রশ্ন হলো; জন্মসাল কোনটি? আমরা উপরের উদ্ধৃতিগুলি থেকে জেনেছি যে, তিনি সেই বছর জন্ম নেন, যে বছর আবরাহা ইয়েমেন থেকে হাতিবাহিনী’সহ কাবা ধ্বংস করতে এসেছিল। সেই সাথে আরও দুটি তথ্য পেয়েছি, সেগুলো হলো, কেউ বলেছেন তিনি আবরাহার কাবা আক্রমণের দিনটির ৫০ দিন আগে জন্ম নিয়েছিলেন, কেউ বলেছেন ৫৫ দিন আগে।
কোনটা সঠিক, সেটা নিশ্চিত করে বলা খুব সহজ। তবে তার আগে আমাদেরকে এমন একটা দিন বের করতে হবে, ইতিহাসের পাতায় যে দিনটির ব্যাপারে অকাট্য ও প্রমাণযোগ্য তথ্য রয়েছে। এটা যদি করতে পারি, তবে সেটিকে কেন্দ্র করে আগে বা পরের দিনগুলোর সঠিক হিসাব বের করা আমাদের পক্ষে সহজ হবে।
আরব সমাজে, তথা, মক্কার সমাজে লেখা পড়া জানা লোকের সংখ্যা খুবই কম ছিল। মুহাম্মদ সা: এঁর জন্মের চল্লিশ বছর পরে ৬১০ খৃষ্টাব্দের দিকে, অর্থাৎ তাঁর নবী হিসেবে আবির্ভূত হবার সময় সেখানে লেখা পড়া জানা লোকের সংখ্যা ছিল মাত্র তেইশজন। তারও প্রায় চারটি দশক আগে তাঁর জন্মের সময়, অর্থাৎ ৫৭০ এর দিকে সে সংখ্যা আরও কম ছিল বলেই ধরে নেয়া যায়।
একমাত্র বার্ষিক প্রতিযোগিতায় সেরা হিসেবে বিবেচিত ও নির্বাচিত কিছু কবিতা লিখে কাবার দেয়ালে সেঁটে দেয়া হতো। তা ছাড়া আরব সমাজে লিখিত রেকর্ড রাখার কোনরকম চল ছিল না। তেমন কোন প্রথাও সেখানে কখনও গড়ে উঠেনি। এ কারণে ঐ সমাজে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে অকাট্য দলিলভিত্তিক আকারে পাওয়াটা কঠিন।
প্রিয় রাসুল সা: এর কাজ, কথা, জীবনের খুঁটিনাটি অর্থাৎ হাদিস সংরক্ষিত হয়েছে অত্যন্ত সর্তকতার সাথে। তবে সেটা শুরু হয়েছে তাঁর নবুওয়ত প্রাপ্তি; অর্থাৎ তাঁর জীবনের চল্লিশ বছর বয়সের পর থেকে। আবার তার মধ্যে জাল ও প্রশ্নবিদ্ধ হাদিসের সংখ্যাও অনেক। নবুয়তপূর্ব চল্লিশ বছরের ঘটনাপ্রবাহের সঠিক চিত্র দাঁড় করবার জন্য আমাদেরকে বেগ পেতে হয় বলেই তাঁর জন্ম তারিখ থেকে শুরু করে নবুওয়াত পূর্ব জীবনের নানা ঘটনাপ্রবাহের দিন তারিখ নিয়ে এতো দ্বিমত ও বিতর্ক বিদ্যমান।
তবে ইদানিং আমাদের জন্য কাজটা অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে দুটো কারণে। এক, আমরা নিশ্চিত করেই জানি যে, প্রিয় রাসুল সা; ও তাঁর সঙ্গীসাথীরা নবুওয়তের দ্বাদশ বছরের কোন এক সময় মদিনায় হিজরত করেছিলেন। যারা হিজরত করেছিলেন, এবং যাদের কাছে হিজরত করেছিলেন, আনসার ও মুহাজির উভয় সমাজের হাজার হাজার জীবন্ত সাক্ষির উপস্থিতিতে ও অংশগ্রহণে এই তারিখটি সংরক্ষিত হয়।
একজন আগ্রহী ও পরিশ্রমী ইতিহাস গবেষকের জন্য এক বিরাট এবং একমাত্র নির্ভরযোগ্য সহায়কসুত্র এটা। হিজরতের প্রায় ১৬ বছর পরে (৬৩৮ খৃষ্টাব্দে) দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর রা: তাঁর প্রাশাসনিক সংস্কার কার্যক্রম, ভূমির প্রকারভেদ বার্ষিক খাজনা, সৈন্যবাহিনীর বেতনভাতা, অনাথ, দু:স্থ ও শিশুদের জন্য বায়তুলমাল থেকে সরকারি ভাতা নির্ধারণ ও তা নিয়মিত প্রদানের এক বিরাট কার্যক্রম চালু করেন।
  ততোদিন ইসলামি খেলাফতের পরিধি পঁয়ত্রিশ লক্ষ বর্গমাইলে বিস্তৃত হয়েছে প্রায়। পুরো খেলাফতকে সাতটি প্রদেশেও ভাগ করা হয়েছে। এই যে বিশাল কার্যক্রম তা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য সেক্রেটারিয়েটও চালু করা হয়েছে তাঁরই উদ্যোগে।
  এই সেক্রেটারিয়েটে লেখাপড়া জানা ও হিসাব নিকাশে দক্ষ লোকের নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন হয়। ততোদিনে পারস্য বিজয়ের সুত্র ধরে পারসিক মুসলমানদের আগমণ ঘটেছে। তারা শিক্ষিত ও অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন ছিলেন। একইভাবে জেরুজালেম ও মিশর বিজয়ের কারণে ঐসব অঞ্চল থেকেও মিশরীয় কিবত্বি’সহ অনেক শিক্ষিত ও যোগ্য নওমুসলিমের আগমণ ঘটেছে।
তবে সমস্যা ছিল এই উভয়াঞ্চল হতে আগত নওমুসলিমরা নিজ নিজ দেশ ও জনপদ থেকে তাদের পূর্বতন সংস্কৃতিকে ধারণ করেই এসেছিলেন। ফলে সাংস্কৃতিক দুষণে ইসলামি সমাজ মারাত্মকভাবে কলুষিত হবার আশংকায় পড়ে। প্রাশাসনিক কাজের সুবিধাসহ এই সাংস্কৃতিক দূষণ থেকে ইসলামি সমাজ রক্ষার বহুবিধ উদ্দেশ্যই দূরদর্শী খলিফা হজরত ওমর রা: আলাদা ইসলামি বর্ষগণনা চালু করেন। আর এটা তিনি করেন যে বছরে তারা মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় এসে ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন, সেই বছরকে ভিত্তি করে।
  হজরত ওমর রা:, হজরত আলি রা: মা আয়েশা রা: সহ শত শত, হাজার হাজার সাহাবি তখনও বেঁচে। মাত্র ষোলো বছর আগে তারা মক্কা থেকে এসেছেন মদিনায়। নিজেদের বাড়ি ঘর ছেড়ে আসার স্মৃতি তখনও তাঁদের মনে ভাস্বর। কেউ আগে পরে এসেছেন হয়তো, কিন্তু যে বছরটিতে তারা এসেছেন, সেই বছর বা সেই মাস তারা ঠিকই জানতেন। তারা যে বছরটিতে ইয়সারিব, তথা, মদিনায় হিজরতে করেছেন, সেই বছরটিতে আরবি মুহাররম মাসের শুরুটা হয়েছিল ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১৪ই জুলাই, বুধবার, ৬২২ খৃষ্টাব্দ।
   ইসলামের প্রাথমিক ইতিহাসে এই একটি দিন সন্মন্ধ্যে আমরা নিশ্চিত হতে পারি লিখিত রেকর্ডের সুত্র ধরে।  ৬২২ খৃষ্টাব্দের ১৪ই জুলাই যে সত্যিকারার্থেই নতুন চাঁদের উদয় হয়েছিল, সেটাও নিশ্চিত করে আমাদের সামনে আমেরিকার নাসার রেকর্ড। ঐ রেকর্ড আমাদের সামনে অকাট্যভাবে প্রমাণ করে যে, ঐ দিনটাতে প্রকতৃপক্ষেই আরবে (নাসার রেকর্ড অনুযায়ী রিয়াদ শহরে) নতুন চাঁদ দেখা গিয়েছে।
    অতএব এটা নিশ্চিতভাবে প্রতিষ্ঠিত হলো যে, ৬২২ খৃষ্টাব্দের ১৪ই জুলাই, ১লা মুহাররম, বুধবার হলো প্রথম হিজরি সালের প্রথম মাসের প্রথম দিন, ১লা হিজরি, তথা, ১-১-১ হিজরি তারিখ।
এবারে আমরা যদি এই ১৪ই জুলাই বুধবার, ৬২২ (১লা মুহাররাম) থেকে পিছিয়ে যাই প্রতিটি মাস গুণে গুণে, তা হলেই ৫৭১ বা ৫৭০ সালের রবিউল আওয়াল মাস পর্যন্ত পৌছানো আমাদের জন্য খুব সহজ হয়ে পড়ে। তবে সেক্ষেত্রে আমাদের নিশ্চিত হতে হবে, কোন মাসের চাঁদ ২৮ বা ২৯ বা  ৩০ দিনে উদিত হয়েছে, সেই বিষয়টা। সেটাও এখন আমাদের হাতের নাগালেই রয়েছে। (ক্রমশ, সংক্ষিপ্তকৃত)।
----------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ও বিশ্লেষক।       

Post a Comment

0 Comments