দেওবন্দী ও ক্বওমী আলিমদের আরও একটি বিতর্ক;
হযরত আলী(রা.)-এর সাথে হযরত মুয়াবিয়া(রা.)- বিবাদে জড়িয়ে পড়া ইজতিহাদি ভুৃল ছিল বলে মত পোষণ করেন দেওবন্দী ও ক্বওমী আলিমগণ এবং এই বিষয়কে কেন্দ্র করে জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী(রহ.)-কে দোষী সাব্যস্ত করেন।সে বিষয়ে অন্য একদিন আলোচনা করা যেতে পারে।
হযরত আলী(রা.)-এর ব্যাপারে কতিপয় হাদিস জেনে নেয়া যাক।
১. রাসূলুল্লাহ (সা.) ইমাম হাসান ও হুসাইনের হাত ধরে বলেন : ‘যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসে এবং এ দু’জন ও তাদের পিতা-মাতাকে ভালবাসে,সে কিয়ামতের দিন আমার সাথে একই মর্যাদায় অবস্থান করবে।’
২. আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত। রাসূল বলেছেন : ‘আলীর চেহারার দিকে তাকানোও ইবাদত।’
৩. রাসূলুল্লাহ্ (সা.) আলী (আ.)-কে সম্বোধন করে বলেছিলেন : ‘মুমিনরাই তোমাকে মহব্বত করবে এবং মুনাফিকরাই তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে।’
৪. তিরমিযী,নাসাঈ ও ইবনে মাযাহ হুবশী ইবনে জুনাদাহ্ (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন। রাসূল (সা.) বলেছেন : ‘আলী আমা থেকে এবং আমি আলী থেকে। যে ব্যক্তি আলীকে ভালবেসেছে,সে আমাকে ভালোবেসেছে। আর যে ব্যক্তি আলীকে ভালবেসেছে,সে আল্লাহকে ভালবেসেছে। যে ব্যক্তি আলীর সাথে শত্রুতা পোষণ করেছে সে আমার সাথে শত্রুতা পোষণ করেছে। আর যে আমার শত্রু সে আল্লাহর শত্রু। যে ব্যক্তি আলীকে কষ্ট দিয়েছে,সে আমাকে কষ্ট দিয়েছে।’
৫. রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : ‘(হে আলী!) দুনিয়া ও আখেরাতে তুমি আমারই ভাই।’
৬. আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদা (র.) থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘চার ব্যক্তিকে ভালবাসতে আল্লাহ আমাকে আদেশ করেছেন এবং তিনি আমাকে এও অবহিত করেছেন যে,তিনিও তাদের ভালবাসেন। বলা হল : হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের তাদের নামগুলো বলুন। তিনি বলেন : আলীও তাদের অন্তর্ভুক্ত। এ কথা তিনি তিনবার বলেন। (অবশিষ্ট তিনজন হলেন) আবু যার,মিকদাদ ও সালমান।..
৭. জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন : তায়েফ অভিযানের দিন রাসূলুল্লাহ (সা.) আলীকে কাছে ডেকে তার সাথে চুপিসারে আলাপ করেন। লোকেরা বলল : তিনি তাঁর চাচাত ভাইয়ের সাথে দীর্ঘক্ষণ চুপিসারে কথা বললেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : আমি তার সাথে চুপিসারে কথা বলিনি;বরং আল্লাহই তার সাথে চুপিসারে কথা বলেছেন। (অর্থাৎ তার সাথে চুপিসারে কথা বলার জন্য আল্লাহ্ই আমাকে আদেশ করেছেন।
৮. হযরত মুয়াবিয়া (রা.)-এর ব্যাপারে ইমাম শাওকানির মন্তব্য,"সিফফীন বাসীদের বিদ্রোহ একেবারে পরিস্কার।তা ছাড়া এ ব্যাপারে রাসুল(স.)-এর বক্তব্য রয়েছে।তিনি হযরত আম্মার (রা.)-কে বলেছিলেন,'তোমাকে এক বিদ্রোহী দল হত্যা করবে।'হযরত আলী যে হকের উপর ছিলেন তা প্রমাণ করার জন্য রাসুলের এই বাণীই যথেষ্ট।
তারপর মুয়াবিয়া(রা.)-এর জন্য হযরত আলী (রা.)-এর বিরোধীতা করার কোন অধিকার ছিলনা।
কিন্তু তিনি ক্ষমতা এবং দুনিয়া হাসিলের উদ্দেশ্যে এমন সব লোকের সাহায্য নিয়ে হযরত আলী(রা.)-এর বিরোধীতা ও তাঁর সাথে যুদ্ধ করেছেন যারা ছিল মুর্খ এবং যাদের কাছে হক-বাতিল ও ন্যায় অন্যায়ের মধ্যে কেন তফাৎ ছিলনা।
তথ্যসূত্রঃ
১. বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৭০
২. এমদাদীয়া লাইব্রেরী কর্তৃক প্রকাশিত হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (রা.),পৃ. ১৫ ।
৩. বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৭৩ ।
৪. এমদাদিয়া লাইব্রেরী কর্তৃক প্রকাশিত হযরত আলী (রা.),পৃ. ১৫-১৬ ।
৫. বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৫৮;
৬. প্রাগুক্ত,হাদীস নং ৩৬৫৬;
৭. প্রাগুক্ত,হাদীস নং ৩৬৬৪
৮. রাওজাতুন নুদাইয়(২/৩৬০)।
ইজতিহাদ কি? কুরআন ও হাদিসে সরাসরি উল্লেখ নেই এমন ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে উলামাদের গবেষণাকে ইজতিহাদ বলা হয়।ইজতিহাদ করতে হলে মুজতাহিদ হতে হয়।মুজতাহিদ হওয়ার জন্য অবশ্য শর্তও রয়েছে।
প্রশ্ন হল,হযরত আলী(রা.) ও হযরত মুয়াবিয়া(রা.)-এর মধ্যে ক্ষমতা কেন্দ্রিক যে দন্দ্ব সংঘাতের অবতারনা ঘটে এবং বলা হয়ে থাকে এটি হযরত মুয়াবিয়া(রা.)-এর ইজতিহাদি ভুৃল।পাঠক,আমরা জানি যে,খলিফা নির্বাচনের ব্যাপারে একটি সূরা বোর্ড গঠন করা হয়।সেই বোর্ডের সদস্যদের মতামতের তোয়াক্কা না করে হযরত মুয়াবিয়া(রা.)-এর ক্ষমতা গ্রহণকে ইজতিহাদি ভুল বলে চালিয়ে দেওয়া আহলে বাইয়েতের প্রতি জুলুম কিনা সেই মন্তব্যের ভার আপনাদের।
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট।
0 Comments