Recent Tube

প্রসঙ্গ হাটাহাজারি মাদরাসা। ইবনে যুবাইর।

         প্রসঙ্গ হাটাহাজারি মাদরাসা

 আমার একজন প্রিয় শায়খ হাটহাজারি মাদরাসার ১০ লক্ষ টাকা আত্নসাতের ঘটনাকে ইঙ্গিত করে চার লাইনের একটি পোষ্ট লিখার কারণে ক্বওমীর সোনার ছেলেরা তাঁর উপর হামলে পড়েছে।
১০ লক্ষ টাকা আত্নসাতের যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সেটা কে করেছেন? ঘটনা কি মিথ্যা? না,মিথ্যা নয়।তাহলে তাদের লুটপাট ও অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরোধীতা করা মানেই কি ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাওয়া? বড় আজিব ব্যাপার।ক্বওমী ও দেওবন্দী আলিমরা মুসলমানদেরকে কাফির ফতুওয়াদানের ঠিকাদারী কোথায় পেলেন?

জন্মের পরে বাচ্চাদের মুখে মানুষ মধু তুলে দেয়।আর ক্বওমী দেওবন্দী আলিমরা তাদের সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের কানে মওদূদী ফেতনা থেকে মুক্তি লাভের জন্য আযান দেন এবং মুখের কাছে মুখ লাগিয়ে মওদূদী ফেতনা থেকে ভগবানের নিকট থেকে পানাহ চায়তে শেখান।একই শর্ত প্রযোজ্য ক্বওমী মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য।তাদের কানে ও মুখে ভগবানের বাণী শুনিয়ে দেয়া হয়।
মাওলানা মওদূদী(রহ.)-এর আক্বিদা খারাপ হল কবে থেকে?
যেদিন থেকে দেওবন্দী আলিম হুসাইন আহমাদ মাদানির হিন্দু,বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান, শিখ সকলেই একজাতি তত্ত্ব মেনে নিতে পারেন নি এবং কংগ্রেসের সর্বভারতীয় জাতীয়তা আন্দোলন তথা অখন্ড ভারতে রামরাজ্য স্হাপনের আন্দোলনে মুসলিম জাতি বিভ্রান্ত পথ হারা হয়ে পড়েছিল আর মাওলনা মওদূদী(রহ.) পথ হারা জাতিকে সঠিক পথের দিশা দিয়ে কংগ্রেসের রামরাজ্য স্হাপনের স্বপ্ন বানচাল করে দিয়েছিলেন সেদিন থেকে মাওলানার আকিদা খারাপ হয়ে গেল।
কারণ,কংগ্রেস চেয়েছিল সকল জাতীর সমন্বয়ে একটা ভৌগলিক ও আঞ্চলিক জাতি গঠন এবং সমগ্র ভারতে এক জাতীয়তা সৃষ্টি করে তারই ভিত্তিতে দেশের স্বাধীনতা লাভ।
আর 'জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ' রাজনৈতিক অঙ্গনে কংগ্রেসকে সমর্থন জানায় এবং 'আল জমিয়ত' পত্রিকায় মাওলানা মওদূদীকে কংগ্রেসের অনুকূলে প্রোগাগান্ডা করতে চাপ দেয় এবং মাওলানা মওদূদী এই অন্যায্য, অনৈতিক দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেন।

শুনা যাচ্ছে,গতকাল থেকে হাটহাজারীর শূরা সদস্যসহ আরো যারা হাটহাজারীর হিতাকাঙ্ক্ষী আছেন তাদেরকে বিভিন্নভাবে চাপে রাখছে প্রশাসন। বিশেষ করে মাদরাসার যেসকল দায়িত্বশীলগণ আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে মুঈনে মুহতামিম মেনে নিয়েছেন, এবং আনাসগংয়ের অন্যায় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আপোষহীন ভূমিকা রাখতে পারেনা তাদেরকে টার্গেট করা হয়েছে। কারো বাড়ি ঘেরাও করে, কাউকে বা ডেকে নিয়ে আবার কাউকে ফোন করে হুশিয়ারী দিচ্ছে প্রশাসনের লোকজন। শুধু হাটহাজারীর দায়িত্বশীলগণই নন, ওলামা পরিষদ সহ আরো যারা হাটহাজারীতে আনাস মদানীর অন্যায় কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন বা ভবিষ্যতে হবার সম্ভাবনা আছে তারাও এখন প্রশাসনের নজরদারীতে৷ গতকাল মাওলানা মীর ইদরিস সাহেবের বাড়িও ঘেরাও করে রেখেছিল প্রশাসনের কিছু লোক।

এরচেয়েও আশংকাজনক সংবাদ হচ্ছে, প্রশাসনের এই চাপ শুধু হকপন্থী ওলামাদের উপরই সীমাবদ্ধ থাকেনি বরং স্থানীয় যারা আনাস মাদানীর অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করার সম্ভাবনা আছে তাদেরও চাপে রাখা হয়েছে৷ গতকাল হাটহাজারী স্থানীয় মেম্বার চেয়ারম্যানদের ডেকে নিয়েছে ইউএনও। হুশিয়ার করে দিয়েছে মাদ্রাসার কোনো বিষয়ে যাতে তাদের লোকেরা না আসে। এটা উপরের নির্দেশ৷ এর মাধ্যমেই বোঝা যায় হাটহাজারী মাদরাসার মুহতামিম পদে দালালদের তাবেদার কাউকে বসানোর প্রচেষ্টা কোন পর্যায় থেকে করা হচ্ছে। 

হাটহাজারীর এক দোকানদারের জবানবন্দি শুনুন, 
"মাদ্রাসার গেইটের সামনে যে হোটেল আছে সেখানে কয়েকজন পুলিশ এসে বসেছে। তারা দোকানদারকে জিজ্ঞেস করছে, এলাকার লোকেরা কাকে চায় হাটহাজারীর মুহতামিম হিসেবে? 
দোকানদার বললো,
"এটা তো স্পষ্ট কথা। আপনারা একটা বাচ্চা ছেলেকে জিজ্ঞেস করলে সেও আল্লামা শফি সাহেবের পর মুহতামিম হিসেবে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর নাম বলবে।"
এই কথা শুন পুলিশ বলে, 
"আমরাও চাই জুনায়েদ বাবুনগরী মুহতামিম হোক। কিন্তু সরকার তো চায় না। আমরা সরকারের গোলাম। আমাদের কিছুই করার নেই।"

ব্যাপারটি ঠিক এই রকম,যিয়াদের মূত্যুর(৫০ হিজরী)পর হযরত মুয়াবিয়া (রা.) ইয়াজীদকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে প্রভাবশালী লোকদের সমর্থন লাভের চেষ্টা শুরু করেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর(রা.)-এর নিকট এক লক্ষ দিরহাম পাঠিয়ে ইয়াজীদের বাইয়াতের জন্য তাঁকে সম্মত করাবার চেষ্টা করেন।তিনি বলেন,'ওহো, এ উদ্দেশ্যে আমার জন্য এ টাকা পাঠান হয়েছে।তাহলে তো আমার দীন আমার জন্য খুবই সস্তা।' এ বলে তিনি টাকা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন।ইবনুল আসীর,৩য় খন্ড,পৃ-খন্ড।আল বেদায়,৮ম খন্ড,পৃ-৮৯।
তথ্য সূত্র,খেলাফত ও রাজতন্ত্র, সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী(রহ.) পৃ-১৪৯। 
আনাস মাদানির বিপক্ষে প্রতিবাদি মাথাগুলো সরকার কতৃক ক্রয় করার চেষ্টা করা হবে,কাউকে জীবনের ভয় দেখানো হবে,হচ্ছে।শেষ পরিনতী কি হয় সেটা দেখার জন্য আর কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।আমার আজকের এই আলোচনার মূল বক্তব্য হলো, জীবনভরে মাওলানা মওদূদী(রহ.)-এর বিরোধীতা করে তাদের অর্জনটা কি? অর্জন তো অবশ্যই আছে।
অর্থ, স্বার্থ ও চেয়ারের জন্য এক পরিবার সাত ভাগে ভাগ হয়ে টুকরো টুকরো হচ্ছে,চেয়ারের জন্য ছেলে বাপের গলায়,উস্তাদের গলায় ছুরি ধরছে,এই পরিস্হিতি ভিবিষ্যত আরও ভয়ঙাকর হবে সেই আলামত দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে।পক্ষান্তরে মাওলানা মওদূদীর প্রতিষ্ঠিত জামায়াত শত জুৃলুম নির্যাতনের মাঝেও আরও বেশি মজবুত ও শক্ত হচ্ছে,দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে জনবল।এখানে চেয়ার নিয়ে,অর্থ ও স্বার্থ নিয়ে কামড়াকামড়ি করার নূন্যতম সুযোগ নেই,সেই শিক্ষায় শিক্ষিত করে এখানে কাউকে গড়ে তোলা হয়না।আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই,ক্বওমীদের মধ্যে ব্যাপকহারে সমকামীতা ও বলৎকার ছড়িয়ে পড়েছে,প্রতিষ্ঠানের টাকা নিয়ে নয় ছয় চলছে এটি তাদের দুহাতের কামাই।উপর দিকে থুথু নিক্ষেপ করলে নিজের গায়ে এসে পড়ে।জামায়াত নেতাদেরকে খুনি,ধর্ষক,রাজাকার লুটেরা তারাই বানিয়েছে।প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে৷আরশের মালিকের পক্ষে থেকে সেগুলো তাদেরকে আজ ফেরত দেওয়া হচ্ছে।সেই চোখ যদি তাদের থাকত,তবে অনুসুচনা ও অনুতপ্ত আত্নার দাবদাহনে লজ্জা লুকাবার অভিপ্রায়ে পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত তারা ছুটে বেড়াত।কিন্তু হায়,লজ্জা তো তাদের সংবিধানে নেই।
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট।           

Post a Comment

0 Comments