Recent Tube

দ্যা চয়েস ইজ ইউরস - ২৩; জিয়াউল হক।

          দ্যা চয়েস ইজ ইউরস
                             পর্ব -২৩, 
                             (সংক্ষিপ্তসার)
  ------------------------------ ----------           
     আবরাহা যে কাবা আক্রমণ করবেই সেটা আব্দুল মুত্তালিবে কিংবা মক্কাবাসীর মনে কোনরকম সন্দেহ ছিল না। তাই সকলেই পরিবার পরিজন নিয়ে আবু কুবাইস থেকে শুরু করে সাফা, মারওয়া’সহ আশেপাশের পাহাড় পাহাড়ের উপরে গিয়ে ঠাঁই নিয়েছে। প্রাণভয়ে সবাই নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়েছে আব্দুল মুত্তালিবের নির্দেশে। তার হুকুম অমান্য করার সাহস কারোরই ছিল না।

      তবে দুজন মাত্র নারী, মা আমিনা আর সেই সাথে তাঁর দাসী কিশোরি বারাকাহ উম্মে আইমান, এঁরা কেউই বাড়ি ছেড়ে যাননি। মাত্র দু’জন নারী একা বাড়িতে! এই ঘটনা আমদের সামনে মা আমিনার মানসিক দৃড়তা ও চরিত্রের অনমনীয়তার দিকটি খুব ভালো করেই তুলে ধরে। 

     আরও একটা দিক রয়েছে। তিনি তখন সাড়ে সাত মাসের অন্তস্বত্তা, স্পষ্টই বুঝেছেন, বলা চলে, নিশ্চিত হয়ে গেছেন যে, তাঁর পেটে অনাগত যে সন্তান, সে কোন সাধারণ মানুষ নয়, সে পৃথিবীতে আসছে বিশেষ ও বিশাল কোন দায়িত্ব নিয়ে। আশে পাশে যাই ঘুটক না কেন,  এ সন্তান নিরাপদই থাকবে।

এ ধরনের বিশ্বাস তাঁর মনে স্বামীবিহীন প্রেগনেন্সিকালীন নারীর মানসিক কষ্ট ও হতাশাকে অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করেছে, তা নি:সন্দেহে বলা যায়। ত ছাড়া, আমরা যথাস্থানেই শেশবেই মা আমিনার মধ্যে বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতা’সহ মানবিক গুণাবলীর যে বিকাশ ঘটেছিল, তাও আলোচনা করবো। সেই সাথে, যে কিশোরি তাঁর সান্নিধ্যে থেকে অনাগত এ সন্তানের সাথে অদৃশ এক মানসিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়ছেন, সেই কিশোরি বারাকাহ উম্মে আইমানকে নিয়েও আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ। 

    পাহাড়ের উপরে রাত কাটিয়েছে মক্কাবাসী। সঙ্গত কারণেই তারা সারারাত পাহাড় থেকেই অদূরে আবরাহা বাহিনীর তাঁবুতে প্রজ্জলিত মশাল ও তাদের গতিবিধিতে নজর রেখেছে। রাতের প্রায় উল্লেখযোগ্য অংশ আকাশজুড়ে জোস্না ছিল, কারণ, সেটা ছিল মুহাররম মাসের কুড়ি তারিখের দিবাগত রাত, মাত্র চারদিন আগে ছিল পূর্ণিমা। তাই সঙ্গত কারণেই আকাশজুড়ে রাতের অধিকাংশ সময়ই জোস্না থাকার কথা। রাতের বেলা তেমন কোন অঘটন ঘটেনি।

    রাত্রিশেষে ২রা মার্চ সোমবার, একুশে মুহাররাম। মক্কায় এসময় ফজরের নামাজ ভোর ৫. ২৪ মিনিটে (তখনও নামাজ ফরজ হয়নি)। আর সেদিন সূর্য উঠেছে সকাল ৬.৪১ মিনিটে। সুদূর ইয়েমেন থেকে আগত আবরাহার জন্য সূর্যের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ার আগে এটাই সবচেয়ে উত্তম সময় আক্রমণের। তাই সে বাহিনী’সহ কাবা অভিমূখে রওয়ানা দিল। কেউ যখন কোনরকম প্রতিরোধই করবে না, তখন তার কাজটা অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে!

    তবে সমস্যা বাধলো তার হাতি মাহমুদকে নিয়ে। মাহমুদ কোনমতেই কাবার দিকে এগুচ্ছে না, তাকে মেরে পিটিয়েও কাবার দিকে নেয়া যাচ্ছে না, সে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ছে। এর কোন কারণ আবরাহা ও তার জেনারেলরা কেউই বুঝে উঠতে পারছে না। কাবা ছাড়া অন্য যে কোন দিকে হাতিটিকে নেয়া হলে সে ঠিকই যাচ্ছে, কিন্তু যেই না তার মুখটা কাবার দিকে ঘুরিয়ে সেদিকে নেবার চেষ্টা করা হচ্ছ্,ে ওমনি সে আবার পূর্বের মতোই হাঁটু গেড়ে বসে পড়ছে!

   এরই মধ্যে আরও এক বিপদ দেখা দিল। পাখিরা গাছ পালা বা উঁচু পাহাড়ের কোন খানা খন্দরে যেখানেই রাত কাটাক না কেন, আলো ফোটার আগেই ভোরে তারা খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে। আজও তারা বেরিয়েছে। 

   তবে আজ তার ব্যতিক্রম দেখা গেল। আচমকা অস্বাভাবিক সংখক, বলা চলে, হাজার হাজার ছোট্ট ছোট্ট কালো রংয়ের পাখিতে আকাশটা কালো বর্ণে ছেয়ে গেল। পাখিগুলো কেবলমাত্র আবরাহার বাহিনীর উপর দিয়েই ঘুরপাক খেয়ে চললো কিচির মিচির করতে করতে। সেই সাথে তাদের মুখ বা পা থেকে বৃষ্টির মতো ছোট ছোট পাথরকণা এসে আবরাহার সৈন্য এবং হাতি ঘোড়ার উপরে পড়তে লাগলো! 

   মক্কবাসী কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে না, সেরকম কোন সঙ্গতিও তাদের ছিল না, তারা তা জানতো খুব ভালো করেই। কিন্তু নিরাপদ দুরত্বে বসে বসে তাদের কাবা ঘর ধ্বংস হতে দেখবে, তাও তো চীর স্বাধীনচেতা মক্কাবাসীর পক্ষে সম্ভব ছিল না। তারা পাহাড়ের উপর থেকেই ছোট বড়ো পাথর ছোঁড়া শুরু করলো। যাদের পক্ষে সম্ভবপর ছিল, তারা বড়ো বড়ো পাথর পাহাড়ের উপর থেকে গড়িয়ে দিতে শুরু করলো নীচের দিকে, ওগুলো গড়িয়ে এসে সৈন্যদের পথে কিংবা উট, ঘোড়া বা হাতির উপরে পড়তে লাগলো। 
  উঁচু উঁচু পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে সরু রুক্ষ পথ, মাথার উপরে লক্ষ লক্ষ অজানা অচেনা পাখির কিচির মিচির শব্দ, পাথরবৃষ্টি আর পাহাড় থেকে ছুঁড়ে মারা মক্কাবাসীর পাথরের আঘাতে আবরাহার সৈন্যরা বিভ্রান্ত। উঁট ঘোড়াগুলো এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি কোনদিন। তারাও এ সময়ে পিঠের উপরে আরোহীদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল, আরোহিকে ছুঁড়ে ফেলে দৌড়াতে শুরু করলো।

   সংকীর্ণ গিরিপথে ঘোড়া আর উঁটের লাফালাফিতে তেরটা হাতিও দিকভ্রান্ত, উন্মাদ প্রায়। হাতি যদি একবার ক্ষেপে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে তা যে কি বিভৎসতার সৃষ্টি করে, তা সম্ভবত যারা পাহাড়ি জনপদে বাস করেন, তারা খুব ভালো করেই জানেন। 

   আবরাহার সৈন্যরা পেশাদার যোদ্ধা, যুদ্ধে অভ্যস্ত, কিন্তু  এমন অপ্রত্যাশিত ভয়ংকর দৃশ্যের মুখোমুখি হয়ে তারাও উল্টোপথ ধরলো। আর পদাতিক বাহিনীর বেশিরভাগ সৈন্য’সহ যারা উঠ, ঘোড়া ও হাতির উন্মত্তায় সে সবের পিঠ থেকে নীচে পড়েছে, তারা সেইসব জন্তুর পায়ের নীচে পিষ্ট হতে থাকলা। ওদিকে উর্ধ্বশ্বাসে পলায়নরত আবারাহ বাহিনীর মাথার উপর দিয়ে তাদের তেড়ে তেড়ে নিয়ে যাচ্ছে অচেনা, অদেখা আবাবিল পাখির বিশাল একটি ঝাঁক!

এ এক অভাবিতপূর্ব দৃশ্য! পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। আবরাহা বাহিনীকে পালাতে দেখে পাহাড় থেকে দলে দলে হৈ হুল্ল্ড়ো করতে করতে তেড়ে এলো মক্কাবাসী। আানচে কানাচে পড়ে আছে আবরাহার সৈন্য আর তাদের তাঁবুগুলো। আবরাহা বাহিনী ইয়েমেন থেকে বয়ে এনেছে বেশুমার গণিমত! বিনাযুদ্ধেই এতো গণিমত! আজ ২১ শে মুহাররাম, সোমবার। তাদের সীমাহীন আনন্দের দিন! (ক্রমশ)
------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ও বিশ্লেষক।              

Post a Comment

0 Comments