৭৩ (তিয়াত্তর) ফের্কার মুক্তি লাভকারী ফের্কা কোনটি?
এ প্রশ্নের জওয়াব প্রদান করেছেন প্রখ্যাত আলেমে দীন জাস্টিস মালিক গোলাম আলী।
তিনি এ ব্যাপারে “রাসায়েল ও মাসায়েল-৬ষ্ঠ খ-” কিতাবে যে কথা বলেন তার সার কথা হল, “মুসলিম উম্মাহর বহুধা বিভক্তির ব্যাপারে যে হাদিস সম্পর্কে আপনি জানতে চেয়েছেন , ওটা সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমেতো নেই। তবে আবু দাউদ, তিরমিযী ও ইবনে মাজাতে আছে।
আবু দাউদের ‘কিতাবুস সুন্নাহ’তে বর্ণিত একটি হাদিসের ভাষার অনুবাদ- “ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের মধ্যে ৭১ বা ৭২ ফের্কা জন্মেছে । আর আমার উম্মতের ৭৩ ফের্কা জন্ম নেবে, তন্মধ্যে ৭২টি ফের্কা দোজখে যাবে আর একটি ফের্কা বেহেশতে যাবে। বেহেশতে যে ফের্কাটি যাবে সেটি হল ‘আল জামায়াত ’।..
তিনি লিখেছেন, “ হাদিসের দ্বিতীয় অংশ নিয়ে অবশ্য দু’টি প্রশ্ন থাকা স্বাভাবিক। প্রথমতঃ যে ফের্কার জন্য বেহেশতের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে সেটি কোন ফের্কার?
দ্বিতীয়ত উম্মতে মুহম্মদির অবশিষ্টাংশ যা বাহ্যত বিরাট অংশ,এ সুসংবাদের অধিকারী হবে না কেন?
এদু’টি প্রশ্নের জওয়াব হলো, যে ফের্কাকে হাদিসে বেহেশতবাসী বলা হয়েছে, তা কোনো বিশেষ পরিচিতি নামে আখ্যায়িত ও বর্তমানের বা অতীতের কোন্ যুগে বিদ্যমান তা কোনো বিশেষ ফের্কার ব্যাপারে একচেটিয়া ভাবে প্রযোজ্য নয় এবং গুণমান নির্বিশেষে কোনো ফের্কার সকল সদস্যের জন্যও নয়। এ সব ফের্কার কোনো একটি ফের্কাও স্বীয় যাবতীয় বৈশিষ্ট্য সহকারে রসুল (সঃ) জীবদ্দশায় বিদ্যমান ছিল না।
কেননা সেই সৌভাগ্যম-িত যুগে সেই সব রাজনীতিক,চিন্তাগত ও ইজতেহাদ প্রসূত মতবিরোধের সূত্রপাতই হয়নি, যার দরুণ পরবর্তী কালে রকমারী ফের্কা ও গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটেছে। তাই সাহাবায়ে কেরাম এবং রসূল (সঃ) পবিত্র সত্তা সম্পর্কেও এ কথা বলা যে, তাঁরাও একটি বিশেষ ফের্কার অন্তর্ভুক্ত ছিলেন সম্পূর্ণ অসংগত ও অনভিপ্রেত।
এ ব্যাপারে একোবারে নিরেট নিখুঁত সত্য তো একমাত্র আল্লাহই অবগত আছেন। তবে আমার ধারণা, মুক্তি লাভ কারী এই গোষ্ঠীতে উম্মতে মুহাম্মদীর সকল ফের্কা ও শ্রেণীর লোক অন্তর্ভুক্ত হবে এবং এটি কিয়ামতের দিনই গঠিত করা হবে।
এই জান্নাতবাসী গোষ্ঠীর নির্দিষ্ট গুণ বৈশিষ্ট্য হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই গুণ বৈশিষ্ট্য হলো, যে মহান আদর্শ ও পদ্ধতিকে “আল জামায়াত ” নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত সগৌরবে ও বিজয়ীর বেশে টিকে থাকার ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, এই গোষ্ঠীর লোকেরা সেই ‘আল জামায়াত’-এর নীতি ও আদর্শের আনুগত্য ও অনুসরণে অটল থাকবে এবং তার প্রতিষ্ঠা ও স্থিতির জন্য সদা সচেষ্ট থাকবে।
আল্লাহ তায়াল স্বীয় নির্ভুল জ্ঞানে ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে হাশরের দিন সমগ্র উম্মত থেকে বাছাই করে এই জান্নাতি গোষ্ঠী সংগঠিত করবেন।
এই গোষ্ঠীতে আল্লাহর নবীগণ , নবীসহচরগণ , এই উম্মতের সকল নিষ্ঠাবান অনুসারি , সকল সত্য নিষ্ঠ ও নেককার বান্দা এবং উম্মাতের সংস্কার ও সংশোধনের কাজে নিয়োজিত সকল ব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত হবে, চাই সে দুনিয়াতে হানাফি , শাফেয়ী, আহলে হাদিস, প্রভৃতি নামে আখ্যায়িত হোক কিংবা কোনো পরিচিত গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত না হোক ।
প্রত্যেক মুমিনের এরূপ দোয়া করা উচিত যেনো আল্লাহ তাকে এই গোষ্ঠীর মধ্যে শামিল হবার সৌভাগ্য দান করেন।” [তরজমানুল কোরআন , আগষ্ট ১৯৬৩]
মুসলমানদের সঠিক পরিচয় কি?
আল্লাহর দীনকে দুনিয়ার বুকে প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে , বিদয়াত ও কুসংস্কারের বিরূদ্ধে আমরণ জিহাদ অব্যাহত রাখা।এক কথায় দীন হবে জীবন উদ্দেশ্য এবং তারা সর্বপ্রকার বিদয়াত মুক্ত এবং কুরআন ও সুন্নাহর যথাযথ অনুসরণ করবে। তাঁরা আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী। হজরত মুহম্মদ (সঃ) শেষ নবী , তাঁর পরে আর কোন নবী আসবেন না বলে পূর্ণ বিশ্বাস রাখে।সুন্নীরা চার খলিফাকে রসুল (সঃ)-এর খলিফা হিসেবে সম্মান প্রদর্শন করে।
তারা কবর পূজা ও পীর পূজার ঘোর বিরোধী। কেননা কবরকে সিজদা করা এব্ং পীরকে সিজদা করা শিরকের নামান্তর। কবরে বাতি প্রজ¦লন এবং গোলাপ আচ্ছাদন প্রভৃতি কাজও হারাম।
প্রত্যেকটি দলের একই কর্ম পদ্ধতি হওয়া জরুরী নয়। উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য এক হলে কাজের পদ্ধতির ব্যাপারে ইজতেহাদী পার্থক্য হলে তা দূষণীয় নয়।
মহান আল্লাহ এবং রাসূল (ছাঃ) মুসলমানদের জামাআতবদ্ধ যিন্দেগী যাপনের বহুমুখী নির্দেশনা প্রদান করেছেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সুদৃঢ়ভাবে আল্লাহর রজ্জুকে ধারণ কর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (আলে ইমরান ১০৩)।
ইমাম লালকাঈ বলেন,‘যা আল্লাহর আনুগত্যর অনুকূলে হয়, তাই জামাআত। যদিও এক্ষেত্রে আপনি একাই হন’ (মা‘আলিমুল ইনতিলাকাতিল কুবরা, পৃ. ৫৩)।
আল্লামা ইবনুল কাইয়িম (রহঃ) বলেন,'জেনে রাখুন! ইজমা, দলীল ও বড় দল হল হক্বপন্থী আলেম। যদিও তিনি একাই হন। আর পৃথিবীর সকলে তার বিরোধিতা করে’ (ই‘লামুল মুওয়াক্কিঈন)।
--------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট।
0 Comments