Recent Tube

উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম রহ:-এর মৃত্যুবার্ষিকী..... ; শামীম আজাদ।

         
                  আজ ১লা অক্টোবর

উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম রহ:-এর মৃত্যুবার্ষিকী..... । 

উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামি চিন্তাবিদ, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, সাবেক সংসদ সদস্য ও ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম রহ:-এর ৩৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী।

 ১৯১৮ সালের ২ মার্চ পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার শিয়ালকাঠি গ্রামে মাওলানা রহীমের জন্ম। ১৯৩৮ সালে শর্ষিনা আলিয়া মাদরাসা থেকে আলিম, ১৯৪০ সালে কলকাতা আলিয়া মাদরাসা থেকে ফাজিল এবং ১৯৪২ সালে একই মাদরাসা থেকে প্রথম শ্রেণীতে টাইটেল পাস করেন মাওলানা রহীম রহ.। তার পিতা হাজি খবিরউদ্দিন, মাতা আকলিমুন্নেসা। পরিবারের ১২ সন্তানের মধ্যে তিনি চতুর্থ। তার ভাইদের মধ্যে পরিচিতজন হিসেবে আছেন তার ভাই এ টি এম আবদুল ওয়াহিদ যিনি কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার স্নাতক ও খ্যাতনামা লেখক। তার আরো দুই ভাই এম এ করিম ও এম এ সাত্তারও খ্যাতনামা লেখক ছিলেন। তিনি ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগের (আইডিএল) ব্যানারে বিভিন্ন ইসলামি রাজনৈতিক দলকে একই কাতারে আনার প্রচেষ্টা চালান। এই দল ১৯৭৯ সালের ১৮ জুন অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে ২০টি আসন লাভ করে।

জামায়াতে ইসলামীতে অংশগ্রহণ সম্পাদনা:
আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্র থাকাবস্থায় মাওলানা আবদুর রহিম সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী কর্তৃক সম্পাদিত ম্যাগাজিন ‘তরজমানুল কুরআন’ নিয়মিত গ্রহণ করতেন। এই ম্যাগাজিন ও সাইয়েদ মওদুদির অন্যান্য রচনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি ১৯৪৬ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিখিল ভারত সম্মেলনে অংশ নেন। এখানে তিনি জামায়াতের অন্যান্য নেতাদের সাথে পরিচিত হন। ১৯৪৬-৪৭ সালের পরে তিনি সংগঠনে যোগ দেন।

মাওলানা আবদুর রহিম বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা চারজন ব্যক্তির অন্যতম। অন্যান্যরা হলেন মাওলানা রফি আহমেদ ইন্দরি, খোরশেদ আহমেদ ভাট ও মাওলানা কারি জলিল আশরাফি নদভি। ১৯৫৫ সালে মাওলানা আবদুর রহিম পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমির নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর (ভাইস চেয়ারম্যান বা ভাইস প্রেসিডেন্ট) হন। এসময় গোলাম আজম পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর নতুন আমীর নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রথম নির্বাচিত নেতা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানে অবস্থান করছিলেন।১৯৭৪ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। ১৯৭১-১৯৭৮ সালের সময়সীমায় জামায়াতসহ ধর্মীয় রাজনীতির সকল রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের রাজনীতিতে নিষিদ্ধ ছিল শুধু মাত্র 

মাওলানা ১৯৪৯-৫০ সালে বরিশাল থেকে সাপ্তাহিক ‘তানজীম’ পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ঢাকা থেকে ১৯৫৬ সালে সাপ্তাহিক জাহানে নও প্রকাশ ও পরিচালনা শুরু করেন তিনি। ১৯৫৯-৬০ সালে দৈনিক নাজাতের জেনারেল ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৫৫ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমির ছিলেন মাওলানা রহীম রহ.। ১৯৬০-৭১ সালে ইসলামী গবেষণা একাডেমির পরিচালকের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।

মাওলানা রহীম ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন এবং বিপুল ভোটে জয় লাভ করেন এবং সংসদে আইডিএল পার্লামেন্টারি গ্রুপের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮২ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন মুহাম্মদ আবদুর রহীম রহ:।

ইসলামি সাহিত্যের শতাধিক মৌলিক ও অনুবাদ গ্রন্থের রচয়িতা মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম রহ:              
তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো-

১. আল কুরআনের আলোকে উন্নত জীবনের আদর্শ (১৯৮০)
২. আজকের চিন্তাধারা (১৯৮০)
৩. পাশ্চাত্য সভ্যতার দার্শনিক ভিত্তি (১৯৮৪)
৪. আল কুরআনের নবুয়ত ও রিসালাত (১৯৮৪)
৫. আল কুরআনের আলোকে শিরক ও তাওহিদ (১৯৮৩)
৬. আল কুরআনের রাষ্ট্র ও সরকার (১৯৮৮)
৭. ইসলামের যাকাত বিধান (১৯৮২-১৯৮৬) – ইউসূফ আল-কারযাভীর বইয়ের অনুবাদ
৯. বিংশ শতাব্দীর জাহিলিয়াত (১৯৮২-১৯৮৬) – সাইয়েদ কুতুবের বইয়ের অনুবাদ
১০. তাফহিমুল কুরআন, ১৯ খন্ড – সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদীর বইয়ের অনুবাদ 
১১. পারিবারিক জীবন,* ইসলামে অর্থনীতি, 
১২. ইসলামে জিহাদ, 
১৩. সুন্নাত ও বিদআত, 
১৪. আল কুরআনের আলোকে উন্নত জীবনের আদর্শ, 
১৫. আল কুরআনে শিরক ও তাওহীদ প্রভৃতি।

তার ক্ষুরধার লিখনির হাত ধরে হেদায়াতের পথের দিশা পেয়েছে অগনিত অসংখ মানুষ! ইক্বামাতে দ্বীনের পথে তার অনবদ্য অবদান চীর স্বরনীয়।
           

মৃত্যু :-১৯৮৭ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ৩০ সেপ্টেম্বর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১ অক্টোবর দুপুর ১২টার দিকে তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন(ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। 

মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর দ্বীনের পথের এই খাদেমের সকল খেদমত  কবুল করে নিন। এবং তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউসের মেহমান বানিয়ে নিন(আমিন)।
-------------------------------------------------------------  

Post a Comment

0 Comments