Recent Tube

কুরআন ও হাদীসের আলোকে বিবাহের গুরুত্ব ও ফজিলত না করার পরিনতি এবং করণীয়-বর্জনীয়। --- শামীম আজাদ।

কুরআনহাদীসের আলোকে বিবাহের গুরুত্ব ফজিলত না করার পরিনতি এবং করণীয়-বর্জনীয়। 
                    ৯ম পর্ব ;
বিবাহের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ;

স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিতে হবে,

মোহর কী?

 ইসলামি শরিয়ার পরিভাষায়, মোহর হচ্ছে বিবাহবন্ধন উপলক্ষে স্বামী কর্তৃক বাধ্যতামূলকভাবে স্ত্রীকে নগদ অর্থ, সোনা-রুপা বা স্থাবর সম্পত্তি দান করা। এটা পরিশোধ করা স্বামীর জন্য বাধ্যতামূলক। এটা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর করুণা নয়, স্ত্রীর অধিকার। এই অধিকার মুসলিম আইনের উৎস পবিত্র কুরআন দ্বারা স্বীকৃত। মোহর স্ত্রীর কাছে স্বামীর ঋণ এবং অবশ্যই পরিশোধযোগ্য। বিয়ের সময় যদি মোহর নির্ধারণ করা না হয় এমনকি স্ত্রী পরবর্তীতে কোন মোহর দাবী করবে না এ শর্তেও যদি বিয়ে হয় তাহলেও স্ত্রীকে উপযুক্ত মোহর দিতে স্বামী বাধ্য।

পবিত্র কুরআনে মোহরকে বিভিন্ন শব্দে বিশেষায়িত করে বর্ণনা করা হয়েছে।
যেমন- বলা হয়েছে,

১. ‘নিহলা’( نِحْلَةً) (স্বতঃস্ফূর্তভাবে/সন্তষ্টচিত্তে),

২. ‘ফারিদা’(فَرِيْضَةً) (নির্ধারিত বা বাধ্যবাকতা),

৩. ‘আজর’ (أُجُورَ) (বিনিময়),

৪. ‘সাদুকাহ’(صَدُقٰتِة) (আন্তরিক দান) ইত্যাদি।

সামর্থ্য অনুযায়ী স্ত্রীকে মোহর প্রদান করা প্রত্যেক স্বামীর উপরে ফরয। আল্লাহ বলেন, 

وَ اٰتُوا النِّسَآءَ صَدُقٰتِهِنَّ نِحْلَةًؕ
আর আনন্দের সাথে (ফরয মনে করে) স্ত্রীদের মোহরানা প্রদান কর। 
সূরা নিসাঃ ৪

তিনি আরো বলেন, 
فَآتُوْهُنَّ أُجُوْرَهُنَّ فَرِيْضَةً 
‘তোমরা স্ত্রীদের মোহরানা ফরয হিসাবে প্রদান কর’। 
সূরা নিসাঃ ২৪

فَانكِحُوهُنَّ بِإِذْنِ أَهْلِهِنَّ وَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ
অতএব, তাদের অভিভাবকদের অনুমতিক্রমে তাদেরকে বিবাহ কর, এবং নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর
সূরা নিসাঃ ২৫

أَبُو الْوَلِيدِ هِشَامُ بْنُ عَبْدِ الْمَلِكِ حَدَّثَنَا لَيْثٌ عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي حَبِيبٍ عَنْ أَبِي الْخَيْرِ عَنْ عُقْبَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ أَحَقُّ مَا أَوْفَيْتُمْ مِنَ الشُّرُوطِ أَنْ تُوفُوا بِه„ مَا اسْتَحْلَلْتُمْ بِهِ الْفُرُوجَ.

‘উকবাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সকল শর্তের চেয়ে বিয়ের শর্ত পালন করা তোমাদের অধিক কর্তব্য এজন্য যে, এর মাধ্যমেই তোমাদেরকে স্ত্রী অঙ্গ ভোগ করার অধিকার দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ মোহর।
(আধুনিক প্রকাশনী- ৪৭৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৭৪)
বুখারী ২৭২১, ৫১৫১, মুসলিম ১৪১৮, তিরমিযী ১১২৭, নাসায়ী ৩২৮১, ৩২৮২, আবূ দাউদ ২১৩৯, আহমাদ ১৬৫৫১, ১৬৯১১, দারেমী ২২০৩, ইরওয়াহ ১৮৯২, আবী দাউদ ১৮৫৬, ইবনে মাজাহ ১৯৫৪, মিশকাত ৩১৪৩  

মোহরানা কম হওয়ার প্রতি ইসলামে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে

وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم -: «خَيْرُ الصَّدَاقِ أَيْسَرُهُ» 

ওক্‌বাহ ইবন্‌ ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, উত্তম মোহর হচ্ছে যা দেয়া সহজ হয়।
আবূ দাউদ ২১১৭

অন্য হাদীসে এসেছে 

عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ إِنَّ مِنْ يُمْنِ الْمَرْأَةِ تَيْسِيرَ خِطْبَتِهَا وَتَيْسِيرَ صَدَاقِهَا وَتَيْسِيرَ رَحِمِهَا 
আয়েশা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নারীর অন্যতম বরকত এই যে, তার পয়গাম সহজ হবে, তার মোহর স্বল্প হবে এবং তার গর্ভাশয় সন্তানময় হবে।
আহমাদ ২৪৪৭৮, হাকেম ২৭৩৯, বাইহাক্বী ১৪৭৪৬, সহীহুল জামে’ হা/ ২২৩৫

মূলত মোহর অধিক নির্ধারণের মধ্যে কোন কল্যাণ নেই

عَنْ أَبِي الْعَجْفَاءِ السُّلَمِيِّ قَالَ قَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ لَا تُغَالُوا صَدَاقَ النِّسَاءِ فَإِنَّهَا لَوْ كَانَتْ مَكْرُمَةً فِي الدُّنْيَا أَوْ تَقْوًى عِنْدَ اللهِ كَانَ أَوْلَاكُمْ وَأَحَقَّكُمْ بِهَا مُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم مَا أَصْدَقَ امْرَأَةً مِنْ نِسَائِهِ وَلَا أُصْدِقَتْ امْرَأَةٌ مِنْ بَنَاتِهِ أَكْثَرَ مِنْ اثْنَتَيْ عَشْرَةَ أُوقِيَّةً وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيُثَقِّلُ صَدَقَةَ امْرَأَتِهِ حَتَّى يَكُونَ لَهَا عَدَاوَةٌ فِي نَفْسِهِ وَيَقُولُ قَدْ كَلِفْتُ إِلَيْكِ عَلَقَ الْقِرْبَةِ أَوْ عَرَقَ الْقِرْبَةِ وَكُنْتُ رَجُلًا عَرَبِيًّا مَوْلِدًا مَا أَدْرِي مَا عَلَقُ الْقِرْبَةِ أَوْ عَرَقُ الْقِرْبَةِ

উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেছেন, মহিলাদের মোহরের ব্যাপারে তোমরা বাড়াবাড়ি করো না। কেননা তা যদি পার্থিব জীবনে সম্মান অথবা আল্লাহর কাছে তাকওয়ার প্রতীক হতো, তাহলে তোমাদের মধ্যে মুহাম্মাদ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ ব্যাপারে অধিক যোগ্য ও অগ্রগণ্য ছিলেন। তিনি তার স্ত্রী ও কন্যাদের মোহর বারো উকিয়ার (৫০০ দিরহাম) বেশি ধার্য করেননি। কখনও অধিক মোহর স্বামীর উপর বোঝা হয়ে দাড়ায়। ফলে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর মনে শক্রতা সৃষ্টি হয়, এমনকি সে বলতে থাকে, আমি তোমার জন্য পানির মশক বহনে বাধ্য হয়েছি অথবা তোমার জন্য ঘর্মাক্ত হয়ে পড়েছি। (রাবী বলেন), আমি একজন বেদুইন অতএব আমি “আলাকাল কিরবা” বা “আলাকাল কিরবা”-এর অর্থ কি তা জানি না।” 
তিরমিযী ১১১৪, নাসায়ী ৩৩৪৯, আবূ দাউদ ২১০৬, ২৮৭, দারেমী ২২০০, মিশকাত ৩২০৪, সহীহ আবী দাউদ ১৮৩৪, ইরওয়াহ ১৯২৭, ইবনে মাজাহ ১৮৮৭, মিশকাত ৩২০৪

ফাতেমি মোহর

حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ الطَّالْقَانِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدَةُ، حَدَّثَنَا سَعِيدٌ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ لَمَّا تَزَوَّجَ عَلِيٌّ فَاطِمَةَ قَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ أَعْطِهَا شَيْئًا ‏"‏ ‏.‏ قَالَ مَا عِنْدِي شَىْءٌ ‏.‏ قَالَ ‏"‏ أَيْنَ دِرْعُكَ الْحُطَمِيَّةُ ‏"‏ ‏.‏

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, যখন ‘আলী (রাঃ), ফাতিমা (রাঃ)-কে বিয়ে করেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তাকে (মোহরানা স্বরূপ) কিছু প্রদান করো। তিনি বললেন, আমার নিকট কিছুই নেই। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার হুতামীয়া বর্মটি কোথায়? (সেটাই দাও)।
আবু দাউদ ২১২৫, নাসাঈ ৩৩৭৫

রাসূল সা. হযরত ফাতিমা রা.কে আলী রা. এর নিকট একটি লৌহ বর্মকে মোহর
ধার্য করে বিবাহ দিয়েছেন।
যার মূল্য ছিল ৪৮০ দিরহাম।
৪৮০ দিরহাম বর্তমান প্রচলিত হিসাবে ১২৬
তোলা রূপার সমপরিমাণ হয়।
তা এভাবে:
১ দিরহাম = ৩.১৫ মাশা।
অতএব ৪৮০ দিরহাম X ৩.১৫ মাশা = ১৫১২ মাশা।
অতপর ১ মাশা = ৮ রতি।
অতএব ১৫১২ মাশা X ৮ রতি = ১২০৯৬ রতি।
অতপর ৯৬ রতি = ১ তোলা বা ১ ভরি রূপা।
অতএব ১২০৯৬ রতি ÷ ৯৬ = ১২৬ তোলা বা ভরি রূপা।
বর্তমানে  বাংলাদেশী ১০০০ টাকা তোলা রূপা। ১২৬ তোলা রূপার মূল্য ১২৬ X ১০০০ টাকা = ১,২৬,০০০/- টাকা।
সুতরাং এই দুই বর্ণনার কোনো এক বর্ণনা অনুযায়ী মোহর নির্ধারণ করলেই
মোহরে ফাতেমী বলে গণ্য হবে।
তবে উত্তম সতর্কতা হলো ১৩১.২৫
তোলা রূপা বা তার মূল্য মোহর
হিসেবে নির্ধারণ করা, যাতে করে উভয় বর্ণনার উপর আমল হয়ে যায়। 

অন্য বর্ণনায় এসেছে, 

নবী করীম (সাঃ) এক ব্যক্তিকে বললেন, 
تَزَوَّجْ وَلَوْ بِخَاتَمٍ مِنْ حَدِيْدٍ 
‘তুমি বিবাহ কর, একটি লোহার আংটির বিনিময়ে হ’লেও’।
বুখারী ৫১৫০ ‘বিবাহ’ অধ্যায়।

কুরআন তেলাওয়াত শিক্ষাদানকে মোহর নির্ধারণ করেও বিবাহ সম্পন্ন করা যায়।

দেনমোহরের পরিমাণ কী হওয়া উচিত ইসলামী শারীআতে এ সম্পর্কে বিশেষভাবে কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি, কোন সুস্পষ্ট পরিমাণ ঠিক করে দেয়া হয়নি। তবে এ কথা স্পষ্ট যে, প্রত্যেক স্বামীরই কর্তব্য হচ্ছে তার আর্থিক সামর্থ্য ও স্ত্রীর মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রেখে উভয় পক্ষের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোন পরিমাণ নির্দিষ্ট করে বেঁধে দেয়া। আর মেয়ে পক্ষেরও তাতে সহজেই রাজী হয়ে যাওয়া উচিত।

দেনমোহর যে কতটা গুরুতপূর্ণ বিষয়, তা বুখারীর হাদীসই প্রমাণ বহন করে।

قُتَيْبَةُ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ أَبِي حَازِمٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيِّ قَالَ جَاءَتْ امْرَأَةٌ إِلٰى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ يَا رَسُوْلَ اللهِ جِئْتُ أَهَبُ لَكَ نَفْسِي قَالَ فَنَظَرَ إِلَيْهَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلمفَصَعَّدَ النَّظَرَ فِيهَا وَصَوَّبَه“ ثُمَّ طَأْطَأَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم رَأْسَه“ فَلَمَّا رَأَتَ الْمَرْأَةُ أَنَّه“ لَمْ يَقْضِ فِيهَا شَيْئًا جَلَسَتْ فَقَامَ رَجُلٌ مِنْ أَصْحَابِه„ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنْ لَمْ يَكُنْ لَكَ بِهَا حَاجَةٌ فَزَوِّجْنِيهَا فَقَالَ وَهَلْ عِنْدَكَ مِنْ شَيْءٍ قَالَ لاَ وَاللهِ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَقَالَ اذْهَبْ إِلٰى أَهْلِكَ فَانْظُرْ هَلْ تَجِدُ شَيْئًا فَذَهَبَ ثُمَّ رَجَعَ فَقَالَ لاَ وَاللهِ مَا وَجَدْتُ شَيْئًا فَقَالَ رَسُوْلُ الله صلى الله عليه وسلم انْظُرْ وَلَوْ خَاتَمًا مِنْ حَدِيدٍ فَذَهَبَ ثُمَّ رَجَعَ فَقَالَ لاَ وَاللهِ يَا رَسُوْلَ اللهِ وَلاَ خَاتَمًا مِنْ حَدِيدٍ وَلٰكِنْ هٰذَا إِزَارِي قَالَ سَهْلٌ مَا لَه“ رِدَاءٌ فَلَهَا نِصْفُه“ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَا تَصْنَعُ بِإِزَارِكَ إِنْ لَبِسْتَه“ لَمْ يَكُنْ عَلَيْهَا مِنْه“ شَيْءٌ وَإِنْ لَبِسَتْه“ لَمْ يَكُنْ عَلَيْكَ مِنْه“ شَيْءٌ فَجَلَسَ الرَّجُلُ حَتّٰى إِذَا طَالَ مَجْلِسُه“ قَامَ فَرَآه“ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مُوْلِّيًا فَأَمَرَ بِه„ فَدُعِيَ فَلَمَّا جَاءَ قَالَ مَاذَا مَعَكَ مِنَ الْقُرْآنِ قَالَ مَعِي سُوْرَةُ كَذَا وَسُوْرَةُ كَذَا عَدَّدَهَا فَقَالَ تَقْرَؤُهُنَّ عَنْ ظَهْرِ قَلْبِكَ قَالَ نَعَمْ قَالَ اذْهَبْ فَقَدْ مَلَّكْتُكَهَا بِمَا مَعَكَ مِنَ الْقُرْآنِ.

সাহ্‌ল ইব্‌নু সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, এক মহিলা রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি আমার জীবনকে আপনার হাতে সমর্পণ করতে এসেছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার দিকে তাকালেন এবং সতর্ক দৃষ্টিতে তার আপাদমস্তক লক্ষ্য করলেন। তারপর তিনি মাথা নিচু করলেন। যখন মহিলাটি দেখল, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সম্পর্কে কোন ফয়সালা দিচ্ছেন না, তখন সে বসে পড়ল। এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর সহাবীদের মধ্যে একজন দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! যদি আপনার বিয়ের প্রয়োজন না থাকে, তবে আমার সঙ্গে এর বিয়ে দিন। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কাছে কিছু আছে কি? সে উত্তর করলো- না, আল্লাহ্‌র কসম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার কাছে কিছুই নেই। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি তোমার পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে গিয়ে দেখ, কিছু পাও কিনা। এরপর লোকটি চলে গেল। ফিরে এসে বলল, আল্লাহ্‌র কসম! আমি কিছুই পাইনি। এরপর রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আবার দেখ, লোহার একটি আংটিও যদি পাও। তারপর লোকটি আবার ফিরে গেল। এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! তাও পেলাম না, কিন্তু এই আমার লুঙ্গি (শুধু এটাই আছে)। (রাবী) সাহ্‌ল (রাঃ) বলেন, তার কাছে কোন চাদর ছিল না। লোকটি এর অর্ধেক তাকে দিতে চাইল। তখন রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সে তোমার লুঙ্গি দিয়ে কী করবে? তুমি যদি পরিধান কর, তাহলে তার কোন কাজে আসবে না, আর সে যদি পরিধান করে, তবে তোমার কোন কাজে আসবে না। তারপর বেশ কিছুক্ষণ লোকটি নীরবে বসে থাকল। তারপর উঠে দাঁড়াল। সে যেতে উদ্যত হলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ডেকে আনলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কী পরিমাণ কুরআন মাজীদ মুখস্থ আছে? সে বলল, আমার অমুক অমুক সূরা মুখস্থ আছে এবং সে গণনা করল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, এগুলো কি তোমার মুখস্থ আছে। সে বলল, হাঁ। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যে পরিমাণ কুরআন তোমার মুখস্থ আছে তার বিনিময়ে তোমার কাছে এ মহিলাটিকে তোমার অধীনস্থ করে (বিয়ে) দিলাম।  (আধুনিক প্রকাশনী- ৪৭১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭১৬)
বুখারী ২৩১১, ৫০২৯, ৫০৩০, ৫০৮৭, ৫১২১, ৫১২৬, ৫১৩২, ৫১৩৫, ৫১৪১, ৫১৪৯, ৫৮৭১, মুসলিম ১৪১৫, নাসায়ী ৩২০০, ৩২৮০, ৩৩৫৯, আবূ দাউদ ২১১১, আহমাদ ২২২৯২, ২২৩২০, ২২৩৪৩, মুয়াত্তা মালেক ১১১৮, দারেমী ২২০১, ইরওয়াহ ১৮২৩, ১৯২৫, আবী দাউদ ১৯৩৮

উপরোক্ত হাদীসটি দ্বারা পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে মহিলাকে মোহর প্রদান করা অত্যাবশ্যক।

মোহর একজন নারীর হক, যদি কোনো ব্যক্তি মোহর অনাদায়ের ইচ্ছা নিয়ে বিয়ে করে তাহলে সে ব্যাভিচারী হবে। সে বিষয়েই রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যা মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে।

রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো মেয়েকে মোহর দেওয়ার ওয়াদায় বিয়ে করেছে, কিন্তু মোহর দেওয়ার ইচ্ছে নেই, সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট ব্যাভিচারী হিসেবে দাঁড়াতে বাধ্য হবে।”- মুসনাদে আহমাদ

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হ’ল আজকাল অনেকে বিবাহে মোহরানার মত ফরয কাজকে মর্যাদার বিষয় বা তালাক থেকে রক্ষার জন্য নারীর হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেন। এজন্য ছেলের সামর্থ্যের দিকে খেয়াল না করে মেয়েপক্ষ তাদের বংশমর্যাদা অনুযায়ী লক্ষ লক্ষ টাকা মোহর নির্ধারণ করেন। আবার অনেকের ধারণা যে, বিবাহে মোহর বেশী ধার্য করা থাকলে ছেলেপক্ষ মেয়েকে তালাক দিতে পারবে না কিংবা তালাক দিতে চাইলে প্রচুর টাকা দিতে হবে। এই উভয় ধারণাই ইসলাম বিরোধী। রাসূল (সাঃ)-এর যুগে লোকেরা এক মুষ্টি খাদ্যের বিনিময়েও বিবাহ করতেন।
আবুদাউদ ১৮৫৫।

এছাড়া কিছু না থাকায় কেবল কুরআন শিক্ষাদানের বিনিময়ে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) জনৈক সাহাবীকে বিবাহ দিয়েছে।
বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৩২০২, ‘মোহর’ অনুচ্ছেদ।

যা উপরোক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

উল্লেখ্য যে, কারণবশতঃ মোহর বাকী রাখা যায়। তবে সেটা ঋণের অন্তর্ভুক্ত। তাই যত দ্রুত সম্ভব তা পরিশোধ করা কর্তব্য। মোহর বাকী থাকলে সন্তান অবৈধ হবে একথা ঠিক নয়। কেননা বিবাহ শুদ্ধ হওয়ার জন্য মোহর পরিশোধ করা শর্ত নয়। 

فَاٰتُوْهُنَّ اُجُوْرَهُنَّ فَرِیْضَةًؕ وَ لَا جُنَاحَ عَلَیْكُمْ فِیْمَا تَرٰضَیْتُمْ بِهٖ مِنْۢ بَعْدِ الْفَرِیْضَةِؕ
তাদের মাধ্যমে গ্রহণ করো, তার বদলে তাদের মোহরানা ফরয হিসেবে আদায় করো। তবে মোহরানার চুক্তি হয়ে যাবার পর পারস্পরিক রেজামন্দির মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে যদি কোন সমঝোতা হয়ে যায় তাহলে তাতে কোন ক্ষতি নেই।
সূরা নিসাঃ ২৪

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى بْنِ فَارِسٍ الذُّهْلِيُّ، وَمُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، وَعُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ، - قَالَ مُحَمَّدٌ - حَدَّثَنَا أَبُو الأَصْبَغِ الْجَزَرِيُّ عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ يَحْيَى، أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحِيمِ، خَالِدِ بْنِ أَبِي يَزِيدَ عَنْ زَيْدِ بْنِ أَبِي أُنَيْسَةَ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي حَبِيبٍ، عَنْ مَرْثَدِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لِرَجُلٍ ‏"‏ أَتَرْضَى أَنْ أُزَوِّجَكَ فُلاَنَةَ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ نَعَمْ ‏.‏ وَقَالَ لِلْمَرْأَةِ ‏"‏ أَتَرْضِينَ أَنْ أُزَوِّجَكِ فُلاَنًا ‏"‏ ‏.‏ قَالَتْ نَعَمْ ‏.‏ فَزَوَّجَ أَحَدُهُمَا صَاحِبَهُ فَدَخَلَ بِهَا الرَّجُلُ وَلَمْ يَفْرِضْ لَهَا صَدَاقًا وَلَمْ يُعْطِهَا شَيْئًا وَكَانَ مِمَّنْ شَهِدَ الْحُدَيْبِيَةَ وَكَانَ مَنْ شَهِدَ الْحُدَيْبِيَةَ لَهُ سَهْمٌ بِخَيْبَرَ فَلَمَّا حَضَرَتْهُ الْوَفَاةُ قَالَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم زَوَّجَنِي فُلاَنَةَ وَلَمْ أَفْرِضْ لَهَا صَدَاقًا وَلَمْ أُعْطِهَا شَيْئًا وَإِنِّي أُشْهِدُكُمْ أَنِّي أَعْطَيْتُهَا مِنْ صَدَاقِهَا سَهْمِي بِخَيْبَرَ فَأَخَذَتْ سَهْمًا فَبَاعَتْهُ بِمِائَةِ أَلْفٍ ‏.‏ قَالَ أَبُو دَاوُدَ وَزَادَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ - وَحَدِيثُهُ أَتَمُّ - فِي أَوَّلِ الْحَدِيثِ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ خَيْرُ النِّكَاحِ أَيْسَرُهُ ‏"‏ ‏.‏ وَقَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لِلرَّجُلِ ثُمَّ سَاقَ مَعْنَاهُ ‏.‏ قَالَ أَبُو دَاوُدَ يُخَافُ أَنْ يَكُونَ هَذَا الْحَدِيثُ مُلْزَقًا لأَنَّ الأَمْرَ عَلَى غَيْرِ هَذَا ‏.‏

’উক্ববাহ ইবনু ‘আমীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে বললেনঃ আমি তোমার সাথে অমুক মহিলার বিয়ে দিতে চাই, তুমি কি এতে খুশি আছো? সে বললো, হ্যাঁ। এরপর তিনি উক্ত মহিলাকে বললেন, আমি তোমাকে অমুক পুরুষের সাথে বিয়ে দিলে তুমি কি রাজি হবে? সে বললো, হ্যাঁ। সুতরাং তারা একে অপরকে বিয়ে করলো। তারপর লোকটি তার সাথে সঙ্গম করলো, কিন্তু তার জন্য কোন মোহরানা নির্ধারণ করেনি এবং তাকে নগদ কিছু প্রদান করেনি। লোকটি হুদায়বিয়াতে উপস্থিত ছিলো। হুদায়বিয়ায় উপস্থিত সকলকে খায়বারের এক এক অংশ দেয়া হয়েছিল। অতঃপর লোকটির মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে সে বললো, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার সাথে অমুক মহিলার বিয়ে দিয়েছিলেন, অথচ আমি তার জন্য কোন মোহর নির্ধারণ করিনি এবং তাকে নগদ কিছুই দেইনি। সুতরাং আমি আপনাদের সাক্ষী করছি যে, আমি খায়বারের অংশটুকু তাকে মোহরানা বাবদ প্রদান করলাম। অতঃপর মহিলাটি (স্ত্রী) তা গ্রহণ করে এবং তা এক লক্ষ দিরহামের বিনিময়ে বিক্রয় করে দেয়। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, হাদীসের শুরুতে ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) অতিরিক্ত বর্ণণা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে বিবাহ সহজে সম্পন্ন হয় তাই উত্তম বিবাহ। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ লোককে বললেন,...। অতঃপর বাকী অংশটুকু একইরূপ বর্ণণা করেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আমি আশংকা, এ হাদীসে সংযোজন হয়েছে। কেননা বিষয়টি ব্যতিক্রম।
আবু দাউদ ২১১৭

নবী করীম (সাঃ) একদা মোহর বাকী রেখে এক ব্যক্তির বিবাহ দেন এবং কুরআন শিক্ষাদানের মাধ্যমে ধীরে ধীরে তা আদায় করতে বলেন।
বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৩২০২

সূরা নিসার ২৪ নম্বর আয়াত, “এবং নারীদের মধ্যে সধবা নারী ছাড়া সকল নারীকে তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে যে, তোমরা তোমাদের অর্থের বিনিময়ে তাদেরকে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য, অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত হওয়ার জন্য নয়। সুতরাং তাদের মধ্যে তোমরা যাদেরকে ভোগ করেছ তাদেরকে তাদের নির্ধারিত মোহর দিয়ে দাও। আর নির্ধারণের পর যে ব্যাপারে তোমরা পরস্পর সম্মত হবে তাতে তোমাদের উপর কোন অপরাধ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।” 

এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়, মোহর হতে হবে বিক্রয়যোগ্য বস্তু সম্পদ।

মোহরের সর্বোচ্চ কোনো পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়নি। 

ন্যূনতম পরিমান হানাফি মাজহাবের মতে ১০ দিরহাম। অর্থাৎ ৩০.৬১৮ গ্রাম রুপা অথবা এর সমপরিমাণ মূল্য নির্ধারণ করা। এর চেয়ে কম পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করা স্ত্রী রাজি হলেও তা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ হবে না।

এ প্রসঙ্গে হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, ১০ দিরহামের কম কোনো মোহর নেই (বায়হাকি শরীফ, ৭/২৪০)। 

কিন্তু এর উপরে যে কোনো পরিমাণকেই মোহর নির্ধারণ করা যাবে। তবে স্বামী যেহেতু মোহর পরিশোধ করতে বাধ্য- তাই তার পরিশোধের সামর্থ্য বিবেচনা করে তা নির্ধারণ করা উচিৎ। এমন কোনো সিদ্ধান্ত তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া আদৌ উচিৎ হবে না- যাতে সে তা পরিশোধ না করতে পেরে গুনাহগার হয়।

মোহরের জন্য আমাদের সমাজে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত পরিমান হল মোহরে ফাতেমি।

মোহরে ফাতেমি বলা হয় ঐ পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করা, যা রাসূলুল্লাহ সাঃ-এর মেয়ে হযরত ফাতেমা রাঃ-এর জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। হযরত ফাতেমা রাঃ-এর মোহর ৫০০ দিরহাম নির্ধারণ করা হয়েছিল, ১৫৩০.৯ গ্রাম রুপা (জাওয়াহিরুল ফাতাওয়া, ৪/৩৫০)।  

হযরত উমর (রা.) এর খেলাফতকালে যখন মুসলমানদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসে- তখন সাহাবারা (রাঃ) তাদের সন্তানদের বিয়েতে মোহরে ফাতেমির চেয়ে অনেক গুণ বেশি মোহর নির্ধারণ করতে শুরু করেন। হযরত উমর (রা.) মোহরের ক্রমবৃদ্ধির গতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিলেন। তিনি এত বেশি পরিমান মোহরের পক্ষে ছিলেন না। কিন্তু সূরা নিসার ৪ নম্বর আয়াত এর কারনে তা পারেননি।

সূরা নিসার ৪ নাম্বার আয়াতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জানিয়েছেন, 

وَ اٰتُوا النِّسَآءَ صَدُقٰتِهِنَّ نِحْلَةًؕ
“তোমরা স্ত্রীদের তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশি মনে”।
সূরা নিসাঃ ৪

এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় মোহর অনেক বেশিও হতে পারে।

বিয়ের ইতিবাচক প্রভাব

তাই, কোনো প্রকার বিচার-বিবেচনা ছাড়া ঢালাওভাবে সবার জন্য মোহরে ফাতেমি নির্ধারণ করলে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে- যা ইসলাম আদৌ পছন্দ করে না।

আবার মোহরে ফাতেমির চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ দেনমোহর পরিশোধের সামর্থ্য যদি স্বামীর থাকে তবে সেক্ষেত্রে মোহরে ফাতেমিকে মোহর নির্ধারণ করার দ্বারা স্ত্রীকে ঠকানো হয় ও নারীত্বের অবমাননা করা হয়। তাই দেনমোহরে ফাতেমিকে নয়, বরং স্বামীর সামর্থ্যরে সর্বোচ্চ পরিমাণকে দেনমোহর করা উচিৎ।

অন্যসব অধিকারের মতো স্বামীর কাছে মোহর দাবি করা স্ত্রীর জন্য দোষের কিছু নয়। অনেকেই মনে করেন, মোহরের টাকা স্ত্রীকে দিতে হয় শুধুমাত্র বিয়ের বিচ্ছেদ ঘটলে। এটা অজ্ঞতা ও চরম ভুল ধারণা। বিয়ে বিচ্ছেদ না হলেও মোহরের টাকা পরিশোধ করা ফরজ।

তবে মোহরানা পরিশোধ না করে মৃত্যুর সময় স্ত্রীর নিকট থেকে তা মাফ করিয়ে নেওয়ার যে রীতি সমাজে চালু আছে, তা চরম অন্যায় ও প্রতারণাপূর্ণ। এ থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে এবং হাতে অর্থ এলেই সর্বাগ্রে স্ত্রীর মোহর পরিশোধ করতে হবে।

অতএব এর যাবতীয় দিক শরীয়ত অনুযায়ী ও পরিষ্কারভাবে হওয়া উচিত এবং সে হিসেবেই তা পরিশোধের চিন্তা-ভাবনা করা উচিত।

ইনশাআল্লাহ চলবে...। 
--------------------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments